চাকরিতে বয়স ৩৫ প্রত্যাশীদের অবস্থান টিয়ারশেল

সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করণের দাবিতে গতকাল আন্দোলনকারীরা দিনভর বিক্ষোভ করেছেন। শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়ে দিনভর নিজেদের দাবি তুলে ধরেন। তাদের অবস্থানের কারণে ওই এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। তারপরও আন্দোলনকারীরা অবস্থান চালিয়ে যান। তারা ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ ছাড়া অবস্থান ছাড়বেন না। সন্ধ্যার পর আন্দোলনকারীদের একটি দল আলোচনা করতে যমুনায় প্রবেশ করেন। আলোচনা শেষে রাত সাড়ে আটটার দিকে তারা জানান, আপাতত আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তাদের দাবি যৌক্তিক। দাবি আদায়ে সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দাবির বিষয়ে মঙ্গলবার সরকার গঠিত কমিটি প্রধানের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথাও জানান আন্দোলনকারীরা। চাকরিতে প্রবেশে বয়স বাড়ানোর আন্দোলন চলার মধ্যেই গতকাল সরকার একটি কমিটি গঠনের তথ্য জানায়।

বৈঠক শেষে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি রাসেল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছেন এজন্য তাকে ধন্যবাদ। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন জানিয়ে রাসেল বলেন, মঙ্গলবার জনপ্রশাসন সচিব ও কমিটি প্রধানের সঙ্গে দাবি বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করা হবে।
বেলা ১২টার পর থেকেই প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের আশপাশে জড়ো হতে থাকেন ‘সরকারি চাকরিতে ৩৫ প্রত্যাশী’ আন্দোলনকারীরা। এ সময় এই সড়কটি যান চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। পুলিশ তাদের ছাত্রভঙ্গ করতে দুপুর দেড়টার দিকে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এসময় দু’জন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। এ বিষয়ে ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) মো. ইসরাইল হাওলাদার গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে সভা-সমাবেশ করার বিষয়ে আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু আন্দোলনকারীরা পুলিশের নিষেধ অমান্য করে প্রধান উপদেষ্টার বাসার সামনে যান।
দুপুর ২টার দিকে যমুনার সামনে তারা আবার অবস্থান নেন। এসময় ৪ জনের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তারা সরকারি কর্ম কমিশনের একজন কমিশনারের পিএসের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন। বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর হেয়ার রোডে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাতের আবেদন জানান। প্রধান উপদেষ্টা ছাড়া কারও সঙ্গে তারা আলোচনা করতে চান না। এসময় সাক্ষাৎ না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর বিকাল পাঁচটার দিকে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রবেশ করেন। দীর্ঘ আলোচনার পর রাত আটটার দিকে তারা যমুনা থেকে বের হন।

চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির দাবি পর্যালোচনায় কমিটি গঠন:
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে সাবেক সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে, যিনি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান। কমিটির সদস্য সচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। এই কমিটি আগামী ৭ দিনের মধ্যে পরামর্শ দেবে। গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস-উর রহমান। তিনি বলেন, কমিটিতে যে ক’জন সদস্য নেয়ার তা নেবেন, সেই এখতিয়ার কমিটির আহ্বায়ককে দেয়া হয়েছে।
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন একদল চাকরিপ্রত্যাশী। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কয়েক দফায় কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।
mzamin

No comments

Powered by Blogger.