মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক সিরিয়াল কিলারের সন্ধান
বিবিসি’র খবরে বলা হয়, স্যামুয়েলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন মূলত কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা। এদের অনেকেই যৌনকর্মী কিংবা মাদক ব্যবহারকারী। একসময় স্যামুয়েল পেশাদার বক্সার হিসেবে কাজ করতেন।
কাউকে হত্যা করার আগে তিনি আগে ঘুষি দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলতেন। এরপর শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলতেন। ফলে তিনি যে খুবই ভয়ানকভাবে কাউকে হত্যা করছেন, তার স্পষ্ট লক্ষণ দেখা যেত না ভিকটিমের শরীরে।
ফলে এই ঘটনাগুলোর অনেকগুলোই এফবিআই তদন্ত করেনি। অনেক হত্যাকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ভুল করে মাত্রাতিরিক্ত মাদক গ্রহণ বা দুর্ঘটনা হিসেবে অনুসিদ্ধান্তে এসেছিল। কয়েকজন ভিকটিমের লাশ কখনই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সোমবার এক বিবৃতিতে, এফবিআই জানিয়েছে, তাদের বিশ্লেষকদের মতে, স্যামুয়েলের সমস্ত স্বীকারোক্তিই বিশ্বাসযোগ্য। এফবিআই’র অপরাধ বিশ্লেষক ক্রিস্টি পালাজ্জোলো বলেছেন, বহু বছর ধরে স্যামুয়েল মনে করতেন যে, তিনি ধরা পড়বেন না। তার ধারণা ছিল তিনি যাদের হত্যা করছেন তাদের সংখ্যা কেউ গণনা করছে না। ক্রিস্টির ভাষ্য, ‘যদিও স্যামুয়েল এখন কারাবন্দী, এফবিআই মনে করে, প্রত্যেকটি ঘটনার বিচার হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যতগুলো সম্ভব মামলার ইতি টানা উচিত।’ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তার আরও ৪৩টি দাবি খতিয়ে দেখতে কাজ করছে।
সম্প্রতি, কেন্টাকি, ফ্লোরিডা, লুইজিয়ানা, নেভাদা ও আরকানসাস অঙ্গরাজ্যে তার করে আসা ৫টি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সাধারণ মানুষের কাছে তথ্য চেয়েছে কর্তৃপক্ষ। ভিকটিমদের চিহ্নিত করতে স্যামুয়েলের আকা তাদের রঙিন ছবিও প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেকটি খুনের ঘটনার সময় ভিকটিমের বর্ণনা সম্পর্কে স্যামুয়েল যেসব তথ্য দিয়েছেন, তার ভিডিও ক্লিপ প্রচার করা হয়েছে।
উপর্যুক্ত ৫টি হত্যাকাণ্ডের একটির ভিকটিম ছিলেন অল্পবয়সী তৃতীয় লিঙ্গের কৃষ্ণাঙ্গ নারী। মারিয়েন বা ম্যারি অ্যান নামে ওই ভিকটিমের সঙ্গে স্যামুয়েলের সাক্ষাত হয়েছিল সত্তরের দশকের শুরুর দিকে মিয়ামিতে। ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণীকে তিনি রাস্তার পাশের একটি আখের ক্ষেতে হত্যা করার কথা জেনিয়েছেন। আরেকটি হত্যাকাণ্ড হয়েছে ১৯৯৩ সালে। লাস ভেগাসের একটি মোটেল কক্ষে এই ঘটনা ঘটে। স্যামুয়েল বলেছেন, সেই মহিলাকে হত্যার আগে তার ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। তাকে হত্যার পর মহিলার লাশ গাড়িতে করে একটি ঢালে ফেলে দেন তিনি।
কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাকাণ্ড অনেক পুরোনো হলেও স্যামুয়েলের স্মৃতিশক্তি বেশ প্রখর। এখন পর্যন্ত প্রত্যেকটি ঘটনায় তার বর্ণনা মিলে গেছে। কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট দিনতারিখ মনে করতে পারছেন না। সাম্প্রতিক এই স্বীকারোক্তির কারণে এই সিরিয়াল কিলারের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আনা হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
২০১২ সালে মাদক পরিবহনের অভিযোগে স্যামুয়েলকে কেন্টাকিতে আটক করা হয়। এরপর তাকে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাঠানো হয়। সেখানে তার ডিএনএ টেস্ট করানো হয়। তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সশস্ত্র ডাকাতি ও ধর্ষণের অভিযোগ ছিল প্রচুর।
কিন্তু হত্যার কোনো অভিযোগ তখন পর্যন্ত ছিল না। তার ডিএনএ পরীক্ষা করার পরই মূলত লস অ্যাঞ্জেলস-এ হওয়া ৩টি মামলায় তার সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়। মামলায় তিনি অপরাধ স্বীকার করেননি। তবুও তার তিনটি যাবজ্জীবন হয়। প্যারোল দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর তাকে এফবিআইর একটি বিশেষ বিভাগে পাঠানো হয়। গত বছর টেক্সাস রেঞ্জার্স-এর কর্মকর্তা জেমস হল্যান্ড আসেন স্যামুয়েলের সাক্ষাতকার নিতে। প্রায় প্রতিদিনই জেমস তার সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপর তার করা প্রত্যেকটি অপরাধের চিত্র দাঁড় করানো সম্ভব হয়।
No comments