ঝিনাইদহে ভোটের জেরে তাণ্ডব, ঘরছাড়া শ’ শ’ পরিবার by আমিনুল ইসলাম লিটন
এক
বিভীষিকাময় পরিস্থিতি চলছে ঝিনাইদহের শৈলকুপায়। চলছে মধ্যযুগীয় কারবার।
কথায় কথায় লুটপাট, বড়িঘর ভাঙচুর এখানে কোনো বিষয়ই নয়। গত উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনের পর পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের
সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহ। এক সময় শৈলকুপা ঝগড়াপ্রবণ এলাকা হিসাবে ছিল
পরিচিত। গত ক’বছরে এ তকমা থেকে তারা বেরিয়ে আসে। কিন্তু শৈলকুপা উপজেলা
পরিষদ নির্বাচনের পর বদলে যায় দৃশ্যপট।
পুরোনো সেই চেহারায় যেন ফিরেছে মানুষ। নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। তীব্র হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি। আওয়ামী লীগের শুত্রু হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। যখন তখন চলছে আদিম যুগের মতো সহিংসতা। হচ্ছে বাড়িঘর ভাঙচুর। জিনিসপত্র লুটপাট ও গরু-ছাগল ছিনতাই। শুধু তাই নয়, ওই ছাগল গৃহস্থের বাড়ির সামনে জবাই করে আয়োজন করা হয় ভূরিভোজেরও। এমন নির্মম অত্যাচারে শত শত পরিবার নিজ বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। নিয়েছে অন্যত্র আশ্রয়।
সূত্র মতে, নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নায়েব আলী জোয়াদ্দার দলের মনোনয়ন পান। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিকদার মোশাররফ হোসেন সোনা। এই দুই নেতাকে ঘিরে দলের নেতা-কর্মীরা দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। শুরু হয়ে যায় উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যায়ে নেতা-র্মীদের মধ্যে রেষারেষি ও শত্রুতা। দলের উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আরিফ মন্নু নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন করেন। তার সঙ্গে ছিলেন শৈলকুপা পৌর কমিটির সভাপতি ও পৌর মেয়র কাজী আশরাফুল আজম। দলের ইউপি চেয়ারম্যানরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও মহিলা লীগের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রচারণা শুরু করেন। নির্বাচনের আগে ছোটখাটো দু-একটি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। কিন্তু প্রশাসন তা কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণে আনে।
নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী শিকদার মোশাররফ হোসেন সোনা বিজয়ী হন। এরপর উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। চলতে থাকে বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, মারপিট, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট।
ভোট শেষে ফলাফল ঘোষণার রাতে দোহা নাগিরাট গ্রামে নৌকা সমর্থক তিন জনের বাড়িতে হামলা চালায় স্বতন্ত্র আনারস প্রতীকের সমর্থকের লোকজন। তারা ব্যাপক ভাঙচুর করে। বগুড়া গ্রামে নৌকা সমর্থক আবু মিয়ার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। পরের দিন পাঁচপাখিয়া গ্রামের ৫ বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। ২৫শে মার্চ গবিন্দপুর গ্রামে নৌকা সমর্থক কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে এক শিশুসহ পাঁচজনকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। ওই দিনই উপজেলার ধর্মপাড়া গ্রামে নৌকা সমর্থকদের ১০টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়, তুলে নেয়া হয় মাঠের ফসল। ২৬শে মার্চ রুপদা গ্রামে নৌকা সমর্থক ৫ জনকে কুপিয়ে আহত কর হয়। ২৭শে মার্চ ভুলুন্দিয়া গ্রামে নিয়ামত আলীকে পিটিয়ে আহত করে আনারস প্রতীকের সমর্থকরা। শুক্রবার রাতে তার বাড়ি থেকে একটি ছাগল লুট করা হয়। পরে তার বাড়ির সমনে ওই ছাগল জবাই করে ভূরিভোজ করে। উপজেলার পুটিমারি গ্রামে কয়েক জনের বাড়িঘরে হামলা ও বাড়িঘর ভাঙচুর লুটপাট করা হয়। ধর্মপাড়া গ্রামের টেন্টু, লিটন, কোবাদ আলী জানান, ভোটের দিন রাত থেকেই তাদের ওপর চরম অত্যাচার শুরু হয়। কেউ কেউ প্রাণ ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তাদের জমিতে পাকা পিয়াজ রসুন উঠাতে দিচ্ছে না সন্ত্রাসীরা। জমির ফসল জমিতেই পচে নষ্ট হচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রুপদা গ্রামে কাজী তোয়াজ উদ্দীন অভিযোগ করেন, তারা আওয়ামী লীগ করে এবং নৌকায় ভোট দিয়েছে এজন্য আনারস সমর্থকরা বাড়িতে ঢুকে তাকে ও তার ছেলে সাইদুর কাজী, নাতনি শিলাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ করি, আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়, তবুও নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের লোক জনের হাতেই মার খেতে হচ্ছে আবর ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) নেতা আবু তাহের বলেন, নির্বাচনের আগে ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে শৈলকুপায় দুই প্রতিন্দ্বী প্রাথী-সমর্থকদের মাঝে যে মারামারি ভাঙচুর চলছে তা কোনো সভ্য মানুষের কাম্য নয়। তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী একত্রে বসে এ সমস্যা মিটিয়ে ফেলা উচিত। প্রয়োজনে প্রশাসনকে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই সহিংসতায় সাধারণ মানুষের জানমালের চরম ক্ষতি হচ্ছে।
একই চিত্র ঝিনাইদহ সদর, হরিণাকুণ্ডু উপজেলা ও কালিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শত শত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ প্রাণ ভয়ে বাড়িঘর ফেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, সহিংসতা বন্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। যারা অশান্তির সঙ্গে জড়িত তাদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে হাটফাজিল বাজারে ও হাটগোপালপুর বাজারে সহিংসতা রোধে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ এ সভার আয়োজন করেন। যেসব নেতা-কর্মীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তারা নির্দিষ্ট অভিযোগ না দেয়ার কারণে আমরা সন্ত্রাসীদের ধরতে পারছি না। যারা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত, যারা শান্তি বিঘ্নিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হেয়েছে এবং বলা হয়েছে সন্ত্রাসী যত ক্ষমতা ধর হোক, আর যে দলেরই হোক না কেন তাদের আটক করে আইনের আওতায় এনে অবশ্যই বিচার করা হবে।
পুরোনো সেই চেহারায় যেন ফিরেছে মানুষ। নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। তীব্র হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি। আওয়ামী লীগের শুত্রু হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। যখন তখন চলছে আদিম যুগের মতো সহিংসতা। হচ্ছে বাড়িঘর ভাঙচুর। জিনিসপত্র লুটপাট ও গরু-ছাগল ছিনতাই। শুধু তাই নয়, ওই ছাগল গৃহস্থের বাড়ির সামনে জবাই করে আয়োজন করা হয় ভূরিভোজেরও। এমন নির্মম অত্যাচারে শত শত পরিবার নিজ বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। নিয়েছে অন্যত্র আশ্রয়।
সূত্র মতে, নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নায়েব আলী জোয়াদ্দার দলের মনোনয়ন পান। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিকদার মোশাররফ হোসেন সোনা। এই দুই নেতাকে ঘিরে দলের নেতা-কর্মীরা দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। শুরু হয়ে যায় উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যায়ে নেতা-র্মীদের মধ্যে রেষারেষি ও শত্রুতা। দলের উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আরিফ মন্নু নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন করেন। তার সঙ্গে ছিলেন শৈলকুপা পৌর কমিটির সভাপতি ও পৌর মেয়র কাজী আশরাফুল আজম। দলের ইউপি চেয়ারম্যানরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও মহিলা লীগের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রচারণা শুরু করেন। নির্বাচনের আগে ছোটখাটো দু-একটি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। কিন্তু প্রশাসন তা কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণে আনে।
নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী শিকদার মোশাররফ হোসেন সোনা বিজয়ী হন। এরপর উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। চলতে থাকে বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, মারপিট, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট।
ভোট শেষে ফলাফল ঘোষণার রাতে দোহা নাগিরাট গ্রামে নৌকা সমর্থক তিন জনের বাড়িতে হামলা চালায় স্বতন্ত্র আনারস প্রতীকের সমর্থকের লোকজন। তারা ব্যাপক ভাঙচুর করে। বগুড়া গ্রামে নৌকা সমর্থক আবু মিয়ার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। পরের দিন পাঁচপাখিয়া গ্রামের ৫ বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। ২৫শে মার্চ গবিন্দপুর গ্রামে নৌকা সমর্থক কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে এক শিশুসহ পাঁচজনকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। ওই দিনই উপজেলার ধর্মপাড়া গ্রামে নৌকা সমর্থকদের ১০টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়, তুলে নেয়া হয় মাঠের ফসল। ২৬শে মার্চ রুপদা গ্রামে নৌকা সমর্থক ৫ জনকে কুপিয়ে আহত কর হয়। ২৭শে মার্চ ভুলুন্দিয়া গ্রামে নিয়ামত আলীকে পিটিয়ে আহত করে আনারস প্রতীকের সমর্থকরা। শুক্রবার রাতে তার বাড়ি থেকে একটি ছাগল লুট করা হয়। পরে তার বাড়ির সমনে ওই ছাগল জবাই করে ভূরিভোজ করে। উপজেলার পুটিমারি গ্রামে কয়েক জনের বাড়িঘরে হামলা ও বাড়িঘর ভাঙচুর লুটপাট করা হয়। ধর্মপাড়া গ্রামের টেন্টু, লিটন, কোবাদ আলী জানান, ভোটের দিন রাত থেকেই তাদের ওপর চরম অত্যাচার শুরু হয়। কেউ কেউ প্রাণ ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তাদের জমিতে পাকা পিয়াজ রসুন উঠাতে দিচ্ছে না সন্ত্রাসীরা। জমির ফসল জমিতেই পচে নষ্ট হচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রুপদা গ্রামে কাজী তোয়াজ উদ্দীন অভিযোগ করেন, তারা আওয়ামী লীগ করে এবং নৌকায় ভোট দিয়েছে এজন্য আনারস সমর্থকরা বাড়িতে ঢুকে তাকে ও তার ছেলে সাইদুর কাজী, নাতনি শিলাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ করি, আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়, তবুও নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের লোক জনের হাতেই মার খেতে হচ্ছে আবর ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) নেতা আবু তাহের বলেন, নির্বাচনের আগে ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে শৈলকুপায় দুই প্রতিন্দ্বী প্রাথী-সমর্থকদের মাঝে যে মারামারি ভাঙচুর চলছে তা কোনো সভ্য মানুষের কাম্য নয়। তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী একত্রে বসে এ সমস্যা মিটিয়ে ফেলা উচিত। প্রয়োজনে প্রশাসনকে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই সহিংসতায় সাধারণ মানুষের জানমালের চরম ক্ষতি হচ্ছে।
একই চিত্র ঝিনাইদহ সদর, হরিণাকুণ্ডু উপজেলা ও কালিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শত শত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ প্রাণ ভয়ে বাড়িঘর ফেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, সহিংসতা বন্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। যারা অশান্তির সঙ্গে জড়িত তাদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে হাটফাজিল বাজারে ও হাটগোপালপুর বাজারে সহিংসতা রোধে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ এ সভার আয়োজন করেন। যেসব নেতা-কর্মীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তারা নির্দিষ্ট অভিযোগ না দেয়ার কারণে আমরা সন্ত্রাসীদের ধরতে পারছি না। যারা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত, যারা শান্তি বিঘ্নিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হেয়েছে এবং বলা হয়েছে সন্ত্রাসী যত ক্ষমতা ধর হোক, আর যে দলেরই হোক না কেন তাদের আটক করে আইনের আওতায় এনে অবশ্যই বিচার করা হবে।
No comments