বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরানোর প্রক্রিয়া জটিল -পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্রে
পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে এনে আদালতের দেয়া দণ্ড
কার্যকর করতে চায় সরকার। এ নিয়ে সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক
পম্পেও’র সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের।
আইনের শাসনে বিশ্বাসী যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একজন আত্মস্বীকৃত খুনির
বিরুদ্ধে আদালতের রায় কার্যকরে আন্তরিক সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। জবাবে
মার্কিন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি পম্পেও বিষয়টি নিয়ে ঢাকাকে আইনি
লড়াইয়ের পরামর্শ দিয়েছেন।
ওয়াশিংটনের একাধিক কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এই প্রথম মার্কিন প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে আইনিভাবে লড়তে বাংলাদেশকে বললো। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর স্থানীয় গণমাধ্যমে দেয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মন্ত্রী মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনা জটিল প্রক্রিয়া। এত দিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছেই দাবি জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখন দেশটির বিচার বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন জানান, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি মার্কিন বিচার বিভাগের কাজ।
সেখানে যথাযথ প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ করতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি আমাদের কাছে নতুন। আমরা এতদিন মার্কিন প্রশাসনে এ নিয়ে যোগাযোগ করছিলাম।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি জটিল প্রক্রিয়া এবং দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। বৈঠকে বাংলাদেশে মার্কিন নাগরিকদের ভ্রমণে সতর্কতা নিয়ে কোনো কথা হয়নি বলে দাবি করেন মন্ত্রী। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য মোমেন-পম্পেও বৈঠক বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে। গণমাধ্যমে দেয়া পৃথক প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওয়ের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।
তিনি বলেন, পম্পেও’র সঙ্গে আলোচনার লক্ষ্য ছিল দুই দেশের সম্পর্ককে আরও মজবুত করা। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন। মন্ত্রী জানান, আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি পেলে কেবল বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্রও লাভবান হবে। জ্বালানি খাতে অধিকতর মার্কিন বিনিয়োগের ওপর জোর দিয়েছেন জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, আমাদের ৩৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুত রয়েছে। এর সদ্ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চাই আমরা।
ক্যারিবিয়ান বেসিন ইনিশিয়েটিভ নামে পরিচিত মার্কিন বাণিজ্য উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এই বাণিজ্যব্যবস্থার অধীনে ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কমুক্ত দ্রব্য রপ্তানির সুযোগ পেয়েছে। বাংলাদেশও একই সুবিধা আশা করে। পম্পেও-মোমেন আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল রোহিঙ্গা সংকট। রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আশ্রয় এবং তাদের প্রতি অব্যাহতভাবে উদারতা দেখানোর জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মার্কিন মন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি সমস্যার মূলে যাওয়া এবং রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন বাড়াতে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সঙ্গে কীভাবে দুই দেশ একযোগে কাজ করতে পারে তা নিয়ে কথা বলেছেন। পম্পেও রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে রাখাইনে প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টিতে বার্মার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তায় পম্পেও আশ্বাস দিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সাহায্যের পরিমাণ কমে যাওয়া প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দেশটির সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন। মোমেন জানান, মাইক পম্পেও বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য শিক্ষার তাগিদ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রধান সংকট রোহিঙ্গাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষাদানে সক্ষম শিক্ষকের। মন্ত্রী বলেন, আমি পম্পেওকে বলেছি, আপনারা সে রকম শিক্ষকের ব্যবস্থা করে এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করতে পারেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তিনি মাইক পম্পেওকে বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি যাতে একটা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় পরিণত না হয়, সে ব্যাপারে সচেতন থাকা প্রয়োজন। সমস্যাটি যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, জঙ্গিবাদের প্রসারের আশঙ্কা তত বাড়বে।
নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দায়িত্ব মিয়ানমারকেই নিতে হবে: ওদিকে মোমেন-পম্পেও বৈঠকের বিষয়ে ওয়াশিংটস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের জারি করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ১০ লাখ রোহিঙ্গার ভয়ভীতিহীন ও নিপীড়ন ছাড়া নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দায়িত্ব মিয়ানমারকেই নিতে হবে। উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়া মিয়ানমার সরকার ও সেনা বাহিনীর দায়িত্ব। বৈঠককালে পম্পেও রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।
এ সময় পম্পেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। মোমেন জানান, বাংলাদেশ নিজ ব্যয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও এইড গ্রুপগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পরিকল্পনায় ভাষানচর দ্বীপ বাসযোগ্য করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তুলতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কামনা করেন।
এছাড়া বঙ্গবন্ধুর খুনী রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আনা, অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশ এবং বহুমুখী খাতে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের অংশিদারিত্ব নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি একজন দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী। তিনি বলেন, এটা সন্ত্রাস ও চরমপন্থা প্রতিরোধ এবং আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে দুুদেশের মধ্যকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উভয় নেতা একমত পোষণ করেন যে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অধিকতর উন্নয়নে আঞ্চলিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে জ্বালানি ও অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এ লক্ষ্যে এ অঞ্চলের নেতৃবৃন্দকে সুশাসন, জবাবদিহিতা, আইনের শাসন ও সামুদ্রিক নিরাপত্তার ব্যাপারে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ তার অসাধারণ উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত উল্লেখ করে ড. মোমেন তেল ও গ্যাস খাতে এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহবান জানান। তিনি ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) আসন্ন নির্বাচনে ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল পদে বাংলাদেশের প্রর্থিতার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কামনা করেন। পরে বাংলাদেশের সফররত মন্ত্রী পররাষ্ট্র দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি এ্যাডভাইজার চার্লস কুপারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন বৈঠকগুলোতে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, পরবর্তীতে মঙ্গলবার ইউএনএআইডি প্রশাসক ও একজন জ্যেষ্ঠ সিনেটরের সঙ্গে মন্ত্রী মোমেনের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। পম্পেও’র আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন সফরে যাওয়া মন্ত্রী মোমেন কাল তিনি দেশের পথে রওনা করবেন।
ওয়াশিংটনের একাধিক কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এই প্রথম মার্কিন প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে আইনিভাবে লড়তে বাংলাদেশকে বললো। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর স্থানীয় গণমাধ্যমে দেয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মন্ত্রী মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনা জটিল প্রক্রিয়া। এত দিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছেই দাবি জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখন দেশটির বিচার বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন জানান, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি মার্কিন বিচার বিভাগের কাজ।
সেখানে যথাযথ প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ করতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি আমাদের কাছে নতুন। আমরা এতদিন মার্কিন প্রশাসনে এ নিয়ে যোগাযোগ করছিলাম।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি জটিল প্রক্রিয়া এবং দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। বৈঠকে বাংলাদেশে মার্কিন নাগরিকদের ভ্রমণে সতর্কতা নিয়ে কোনো কথা হয়নি বলে দাবি করেন মন্ত্রী। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য মোমেন-পম্পেও বৈঠক বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে। গণমাধ্যমে দেয়া পৃথক প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওয়ের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।
তিনি বলেন, পম্পেও’র সঙ্গে আলোচনার লক্ষ্য ছিল দুই দেশের সম্পর্ককে আরও মজবুত করা। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন। মন্ত্রী জানান, আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি পেলে কেবল বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্রও লাভবান হবে। জ্বালানি খাতে অধিকতর মার্কিন বিনিয়োগের ওপর জোর দিয়েছেন জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, আমাদের ৩৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুত রয়েছে। এর সদ্ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চাই আমরা।
ক্যারিবিয়ান বেসিন ইনিশিয়েটিভ নামে পরিচিত মার্কিন বাণিজ্য উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এই বাণিজ্যব্যবস্থার অধীনে ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কমুক্ত দ্রব্য রপ্তানির সুযোগ পেয়েছে। বাংলাদেশও একই সুবিধা আশা করে। পম্পেও-মোমেন আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল রোহিঙ্গা সংকট। রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আশ্রয় এবং তাদের প্রতি অব্যাহতভাবে উদারতা দেখানোর জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মার্কিন মন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি সমস্যার মূলে যাওয়া এবং রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন বাড়াতে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সঙ্গে কীভাবে দুই দেশ একযোগে কাজ করতে পারে তা নিয়ে কথা বলেছেন। পম্পেও রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে রাখাইনে প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টিতে বার্মার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তায় পম্পেও আশ্বাস দিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সাহায্যের পরিমাণ কমে যাওয়া প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দেশটির সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন। মোমেন জানান, মাইক পম্পেও বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য শিক্ষার তাগিদ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রধান সংকট রোহিঙ্গাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষাদানে সক্ষম শিক্ষকের। মন্ত্রী বলেন, আমি পম্পেওকে বলেছি, আপনারা সে রকম শিক্ষকের ব্যবস্থা করে এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করতে পারেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তিনি মাইক পম্পেওকে বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি যাতে একটা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় পরিণত না হয়, সে ব্যাপারে সচেতন থাকা প্রয়োজন। সমস্যাটি যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, জঙ্গিবাদের প্রসারের আশঙ্কা তত বাড়বে।
নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দায়িত্ব মিয়ানমারকেই নিতে হবে: ওদিকে মোমেন-পম্পেও বৈঠকের বিষয়ে ওয়াশিংটস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের জারি করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ১০ লাখ রোহিঙ্গার ভয়ভীতিহীন ও নিপীড়ন ছাড়া নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দায়িত্ব মিয়ানমারকেই নিতে হবে। উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়া মিয়ানমার সরকার ও সেনা বাহিনীর দায়িত্ব। বৈঠককালে পম্পেও রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।
এ সময় পম্পেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। মোমেন জানান, বাংলাদেশ নিজ ব্যয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও এইড গ্রুপগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পরিকল্পনায় ভাষানচর দ্বীপ বাসযোগ্য করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তুলতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কামনা করেন।
এছাড়া বঙ্গবন্ধুর খুনী রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আনা, অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশ এবং বহুমুখী খাতে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের অংশিদারিত্ব নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি একজন দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী। তিনি বলেন, এটা সন্ত্রাস ও চরমপন্থা প্রতিরোধ এবং আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে দুুদেশের মধ্যকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উভয় নেতা একমত পোষণ করেন যে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অধিকতর উন্নয়নে আঞ্চলিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে জ্বালানি ও অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এ লক্ষ্যে এ অঞ্চলের নেতৃবৃন্দকে সুশাসন, জবাবদিহিতা, আইনের শাসন ও সামুদ্রিক নিরাপত্তার ব্যাপারে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ তার অসাধারণ উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত উল্লেখ করে ড. মোমেন তেল ও গ্যাস খাতে এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহবান জানান। তিনি ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) আসন্ন নির্বাচনে ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল পদে বাংলাদেশের প্রর্থিতার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কামনা করেন। পরে বাংলাদেশের সফররত মন্ত্রী পররাষ্ট্র দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি এ্যাডভাইজার চার্লস কুপারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন বৈঠকগুলোতে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, পরবর্তীতে মঙ্গলবার ইউএনএআইডি প্রশাসক ও একজন জ্যেষ্ঠ সিনেটরের সঙ্গে মন্ত্রী মোমেনের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। পম্পেও’র আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন সফরে যাওয়া মন্ত্রী মোমেন কাল তিনি দেশের পথে রওনা করবেন।
No comments