আখলাকের খুনি বিজেপির মঞ্চে
গরুর
মাংস খাওয়া ও সংরক্ষণের অভিযোগে উত্তর প্রদেশে বাসা থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে
হত্যা করা হয়েছিল মোহাম্মদ আখলাককে। গুরুত্বর জখম করা হয়েছিল তার ছেলে
মোহাম্মদ দানিশকে। এ জন্য পর পর তিনবার দানিশের ব্রেনে সার্জারি করাতে
হয়েছে। স্রেফ ভাগ্যের জোরে বেঁচে এসেছেন তিনি। তার পিতা আখলাকের অভিযুক্ত
১৭ খুনির সবাইকে এবার দেখা গেছে বিজেপির নির্বাচনী র্যালিতে। উত্তর
প্রদেশের বিসারায় মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথের সঙ্গে নির্বাচনী র্যালিতে
তাদেরকে দেখা গেছে সামনের সারিতে বসা। সেখানে গৌতম বুদ্ধ নগরে লোকসভা আসনে
নির্বাচনী র্যালি চলছিল। আখলাক খুনের প্রধান অভিযুক্ত বিশাল রানাকে
সেখানে গত ৩১ শে মার্চ দেখা গেছে একেবারে সামনের সারিতে বসে আছেন।
অভিযুক্ত অন্য ১৬ আসামীকে দেখা গেছে চারদিক ঘুরে ঘুরে স্লোগান দিচ্ছেন ‘ভারত মাতা কি জয়’। এ খবর দিয়েছে কলকাতার অনলাইন টেলিগ্রাফ।
২০১৫ সালের ২৮ শে সেপ্টেম্বর রাত। ওই রাতে গরুর মাংস খেয়েছেন এবং সংরক্ষণ করেছেন এই অভিযোগে দিল্লি থেকে ৫০ কিলোমিটারের কম দূরত্বের দাদ্রি এলাকার বিসারা গ্রামের বাড়ি থেকে মোহাম্মদ আখলাককে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় একদল লোক। তারা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। তার ছেলে মোহাম্মদ দানিশকে এতটাই আহত করে যে, তার বেঁচে থাকা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দেয়। পর পর তিনবার তার ব্রেনে অপারেশন করানো হয়েছে। বাম কানের নিচের দিক থেকে মাথার চুলের ভিতর দিয়ে এখনো তার বাম চোখের ভ্রুর ওপর পর্যন্ত সেই অপারেশনের দাগ স্পষ্ট। তা নিয়েই কোনোমতে বেঁচে আছেন দানিশ। কিন্তু তার পিতাকে হত্যা ও তার ওপর নির্যাতনের বিচার কি তিনি পেয়েছেন ?
আসলে অসহিষ্ণুতাই বড় হয়ে উঠেছে এখানে। অভিযুক্ত প্রধান আসামী বিশাল রানা হলেন স্থানীয় বিজেপির সদস্য সঞ্জয় রানার ছেলে। তাকে এবারের নির্বাচনে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে। আর তাদেরকে বাঁচাতে বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ। তিনি ভাষণে বলেছেন, সবাই জানেন বিসারায় কি ঘটেছিল। এরপরই তিনি ওই ঘটনার জন্য রাজ্যে তখন ক্ষমতাসীন সমাজবাদী পার্টির নেতৃত্বাধীন অখিলেশ যাদবের সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, কিভাবে সমাজবাদী সরকার ওই গ্রামের মানুষের আবেগ ও সেন্টিমেন্টকে চেপে ধরে রেখেছিল। আমাদের সরকার গঠন হওয়া পর পরই সব অবৈধ কসাইখানা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছি কড়াকড়িভাবে। এ সময় তিনি ওই আসনে বিজেপির প্রার্থী মহেশ শর্মাকে পুনরায় বিজয়ী করতে স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানান। আদিত্যনাথ বলেন, পর্যটন ও সংস্কৃতি বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপমন্ত্রী থাকার সময়ে সারাদেশের মন্দিরগুলোর উন্নয়ন করেছেন মহেশ শর্মা। তিনি হিন্দু সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছেন।
ওই অনুষ্ঠানের সামনের সারিতে বসা ছিলেন সেই বিশাল রানা। পুলিশের চার্জশিটে বলা হয়েছে, তিনিই ২০১৫ সালের ২৮ শে সেপ্টেম্বর রাতে গ্রামের মন্দিরের মাইক দিয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আখলাক তার বাড়িতে গরুর মাংস সংরক্ষণ করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের গতিতে একদল মানুষ ছুটে যায় আখলাকের বাড়িতে। তার ফ্রিজে কিছু মাংস পায়। তারা দাবি করে, এই মাংস গরুর। অমনি আখলাক ও তার ছেলে দানিশকে একতলা বাড়ির ভিতর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নেয়। তাদেরকে প্রহার করে লাঠি, ইট ও হকিস্টিক দিয়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান আখলাক। দানিশের শরীরে অসংখ্য ক্ষত সৃষ্টি হয়।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বিশাল রানা বলেছেন, তিনি ও অন্যরা গ্রামের মানুষদের দ্বারা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। বলা হয়েছিল, আখলাক গরু জবাই করেছেন এবং সে খবরে তারা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
আখলাকের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা সেই মাংসের প্রাথমিক পরীক্ষা করা হয় দাদ্রির একটি পশু বিষয়ক ল্যাবরেটরিতে। পরীক্ষা শেষে বলা হয় ওই মাংস গরুর নয়, খাসির। কিন্তু ২০১৬ সালের জুনে ওই মাংসই পরীক্ষা করে উত্তর প্রদেশ ইউনিভার্সিটি অব ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড এনিমেল হাজব্যন্ড্রি। তারা ঘোষণা দেয়, আখলাককে যেখানে হত্যা করা হয়েছে সেখান থেকে সংগৃহীত মাংস পরীক্ষা করে দেখা গেছে তা গরুর মাংস।
দানিশের এখন ন্যায়বিচার প্রার্থনা। তিনি বলেছেন, আমরা ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু আমার পিতার খুনিরা মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিচারবিভাগের ওপর আমাদের আস্থা আছে। আশা করি বিলম্বিত হলেও, ন্যায়বিচার বঞ্চিত হবো না। তিনি আরো বলেন, আমার শরীরে সার্জারির যে দাগ তা প্রতিদিন আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় সেই ভয়াবহতাকে। কোনো কারণ ছাড়াই আমার পিতাকে হত্যা করেছে তারা। তাই খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হলে এই ক্ষতের কথা মনে থাকবে না।
দানিশ তার মা ইকরামান, বোন শেইস্তাকে নিয়ে বড়ভাই সারতাজের বাসায় চলে গিয়েছেন। তার ভাই দক্ষিণ দিল্লির সুব্রোতো পার্কের কাছে বিমান বাহিনীর একটি কোয়ার্টারে বসবাস করেন।
অভিযুক্ত অন্য ১৬ আসামীকে দেখা গেছে চারদিক ঘুরে ঘুরে স্লোগান দিচ্ছেন ‘ভারত মাতা কি জয়’। এ খবর দিয়েছে কলকাতার অনলাইন টেলিগ্রাফ।
২০১৫ সালের ২৮ শে সেপ্টেম্বর রাত। ওই রাতে গরুর মাংস খেয়েছেন এবং সংরক্ষণ করেছেন এই অভিযোগে দিল্লি থেকে ৫০ কিলোমিটারের কম দূরত্বের দাদ্রি এলাকার বিসারা গ্রামের বাড়ি থেকে মোহাম্মদ আখলাককে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় একদল লোক। তারা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। তার ছেলে মোহাম্মদ দানিশকে এতটাই আহত করে যে, তার বেঁচে থাকা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দেয়। পর পর তিনবার তার ব্রেনে অপারেশন করানো হয়েছে। বাম কানের নিচের দিক থেকে মাথার চুলের ভিতর দিয়ে এখনো তার বাম চোখের ভ্রুর ওপর পর্যন্ত সেই অপারেশনের দাগ স্পষ্ট। তা নিয়েই কোনোমতে বেঁচে আছেন দানিশ। কিন্তু তার পিতাকে হত্যা ও তার ওপর নির্যাতনের বিচার কি তিনি পেয়েছেন ?
আসলে অসহিষ্ণুতাই বড় হয়ে উঠেছে এখানে। অভিযুক্ত প্রধান আসামী বিশাল রানা হলেন স্থানীয় বিজেপির সদস্য সঞ্জয় রানার ছেলে। তাকে এবারের নির্বাচনে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে। আর তাদেরকে বাঁচাতে বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ। তিনি ভাষণে বলেছেন, সবাই জানেন বিসারায় কি ঘটেছিল। এরপরই তিনি ওই ঘটনার জন্য রাজ্যে তখন ক্ষমতাসীন সমাজবাদী পার্টির নেতৃত্বাধীন অখিলেশ যাদবের সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, কিভাবে সমাজবাদী সরকার ওই গ্রামের মানুষের আবেগ ও সেন্টিমেন্টকে চেপে ধরে রেখেছিল। আমাদের সরকার গঠন হওয়া পর পরই সব অবৈধ কসাইখানা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছি কড়াকড়িভাবে। এ সময় তিনি ওই আসনে বিজেপির প্রার্থী মহেশ শর্মাকে পুনরায় বিজয়ী করতে স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানান। আদিত্যনাথ বলেন, পর্যটন ও সংস্কৃতি বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপমন্ত্রী থাকার সময়ে সারাদেশের মন্দিরগুলোর উন্নয়ন করেছেন মহেশ শর্মা। তিনি হিন্দু সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছেন।
ওই অনুষ্ঠানের সামনের সারিতে বসা ছিলেন সেই বিশাল রানা। পুলিশের চার্জশিটে বলা হয়েছে, তিনিই ২০১৫ সালের ২৮ শে সেপ্টেম্বর রাতে গ্রামের মন্দিরের মাইক দিয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আখলাক তার বাড়িতে গরুর মাংস সংরক্ষণ করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের গতিতে একদল মানুষ ছুটে যায় আখলাকের বাড়িতে। তার ফ্রিজে কিছু মাংস পায়। তারা দাবি করে, এই মাংস গরুর। অমনি আখলাক ও তার ছেলে দানিশকে একতলা বাড়ির ভিতর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নেয়। তাদেরকে প্রহার করে লাঠি, ইট ও হকিস্টিক দিয়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান আখলাক। দানিশের শরীরে অসংখ্য ক্ষত সৃষ্টি হয়।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বিশাল রানা বলেছেন, তিনি ও অন্যরা গ্রামের মানুষদের দ্বারা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। বলা হয়েছিল, আখলাক গরু জবাই করেছেন এবং সে খবরে তারা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
আখলাকের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা সেই মাংসের প্রাথমিক পরীক্ষা করা হয় দাদ্রির একটি পশু বিষয়ক ল্যাবরেটরিতে। পরীক্ষা শেষে বলা হয় ওই মাংস গরুর নয়, খাসির। কিন্তু ২০১৬ সালের জুনে ওই মাংসই পরীক্ষা করে উত্তর প্রদেশ ইউনিভার্সিটি অব ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড এনিমেল হাজব্যন্ড্রি। তারা ঘোষণা দেয়, আখলাককে যেখানে হত্যা করা হয়েছে সেখান থেকে সংগৃহীত মাংস পরীক্ষা করে দেখা গেছে তা গরুর মাংস।
দানিশের এখন ন্যায়বিচার প্রার্থনা। তিনি বলেছেন, আমরা ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু আমার পিতার খুনিরা মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিচারবিভাগের ওপর আমাদের আস্থা আছে। আশা করি বিলম্বিত হলেও, ন্যায়বিচার বঞ্চিত হবো না। তিনি আরো বলেন, আমার শরীরে সার্জারির যে দাগ তা প্রতিদিন আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় সেই ভয়াবহতাকে। কোনো কারণ ছাড়াই আমার পিতাকে হত্যা করেছে তারা। তাই খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হলে এই ক্ষতের কথা মনে থাকবে না।
দানিশ তার মা ইকরামান, বোন শেইস্তাকে নিয়ে বড়ভাই সারতাজের বাসায় চলে গিয়েছেন। তার ভাই দক্ষিণ দিল্লির সুব্রোতো পার্কের কাছে বিমান বাহিনীর একটি কোয়ার্টারে বসবাস করেন।
No comments