পাসপোর্ট পেতে প্রবাসীদের দীর্ঘ অপেক্ষা, চরম দুর্ভোগ by দীন ইসলাম
পাসপোর্ট পেতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। যা অনাকাঙ্খিত।
এদিকে মাহমুদ হাসানের মতো এমন শত শত প্রবাসী বাংলাদেশি মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। অনেক ক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও পাসপোর্ট মিলছে না। আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসে খোঁজ নিতে গেলে মুখস্ত বলে দেয়া হয় আপনার রিপোর্টটি এখনও আমাদের হাতে আসেনি। তখন এসবি’র কাছ থেকে নেয়া তদন্ত রিপোর্টের প্রিন্ট কপি দেখালে চুপসে যান পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তড়িঘড়ি করে তদন্ত রিপোর্ট পাসপোর্ট আবেদনের সঙ্গে রাখা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৌদি আরবের রিয়াদ ও জেদ্দা, ইতালির রোম ও মিলান, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডন মিশনে জমা পড়া আবেদন মাসের পর মাস পড়ে থাকছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের আত্মীয়-স্বজনরা ঢাকার পাসপোর্ট অফিসে তদবির না করলে জট যেন খুলছে না। পাসপোর্ট পেতে দেরি হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে এরই মধ্যে বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনগুলো থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এসব চিঠিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট পেতে নানা ঝক্কি ঝামেলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পাশাপাশি পাসপোর্ট পেতে দেরি হওয়ার কারণে বিদেশি শ্রম বাজারে কি ধরনের সমস্যার মুখে বাংলাদেশিরা পড়ছেন তাও উল্লেখ করা হয়েছে। সৌদি আরবের রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, সময় মতো পাসপোর্ট না পেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা দূতাবাস কর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন। এজন্য অনেকটা বাধ্য হয়ে গত ১লা এপ্রিল রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে একটি চিঠি দিয়েছে। দূতাবাসের প্রথম সচিব কাজী নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে রিয়াদ মিশনে স্বল্প সময়ে পাসপোর্ট সরবরাহের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানানো হয়। এতে জানানো হয়, এ বছরের মার্চ থেকে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে রিয়াদ মিশনে অনিয়মিতভাবে পাসপোর্ট সরবরাহ করা হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১০ হাজার ৫১২টি পাসপোর্টের আবেদনের বিপরীতে গেল মার্চ মাসে মাত্র পাঁচ হাজার ১৪০ টি পাসপোর্ট সরবরাহ করা হয়েছে। এটি চাহিদার ৫০ শতাংশেরও কম। এমআরপি অনলাইন সিস্টেম পরীক্ষান্তে দেখা যায়, প্রায় এক থেকে দেড় মাস আগের অনেক আবেদন পাসপোর্ট অধিদপ্তরে প্রিন্টের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।
আবেদনের অনেক দিন পরেও পাসপোর্ট না পেয়ে অনেক প্রবাসী দূতাবাসে এসে অসৌজন্যমূলক আচরন করছেন। দূতাবাসের চিঠিতে জানানো হয়, মেয়াদ উত্তীর্ণ পাসপোর্ট ইকামা নবায়নে গৃহিত না হওয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে চাকুরিরত হাজার হাজার প্রবাসি পাসপোর্টের অভাবে চাকুরি হারানোর ঝুঁকিতে আছে। এছাড়া ঠিক সময়ে ইকামা নবায়ন করতে না পারায় প্রবাসীদের জরিমানা দিতে হচ্ছে। তাই জনস্বার্থে স্বল্প সময়ে রিয়াদ দূতাবাসে পাসপোর্ট সরবরাহের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। এদিকে ইতালির রোম ও মিলানে গেল বছরের জুনে পাসপোর্টের আবেদন জমা দেন শিশু বায়েজিদ মিয়া ও তানহা রহমান এর অভিভাবক। এরপর থেকে নিজেদের পাসপোর্টের জন্য নয় মাস ঘুরেছেন।
গেল মাসের শেষ দিকে আকাঙ্খিত পাসপোর্ট পেয়েছেন তারা। তারা জানান, পাসপোর্টের আবেদন জমা দেওয়ার পর কী কারণে এতো দিন লাগলো তা কেউ বলতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগের এক পর্যায়ে পাসপোর্ট ইতালিতে পাঠানো হয়। এদিকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট দেরিতে পাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ মিশনগুলো থেকে চিঠি পাচ্ছে সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
No comments