সংলাপের বার্তা by সাজেদুল হক
ইতিহাসের
পুরোপুরি প্রত্যাবর্তন হয় না। তবে ইতিহাস কখনো কখনো একই সুরে বাজে। বহুল
আলোচিত সংলাপের পর এ কথাটি ফের আলোচনায় এসেছে। এমনিতে গণভবনে এখনো সংলাপ
চলছে। আরো কিছুদিন চলবে। কে না জানে এ সবই আনুষ্ঠানিকতা। সংলাপের সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ পর্বটি এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বহুল
প্রতীক্ষিত সেই সংলাপে অংশ নেন সরকার ও বিরোধী জোটের নেতারা।
এই সংলাপ নিয়ে এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।
অনেক পর্যবেক্ষকই এটাকে অগ্রগতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল। তারা একে-অন্যের নিন্দায় মুখর ছিলেন। কিন্তু এখন তারা একই টেবিলে বসে আলোচনা করেছেন। এটা এক ধরনের অগ্রগতি। বরফ গলার লক্ষণ। যদিও বেশির ভাগ বিশ্লেষকই এই সংলাপে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখছেন না। গণতান্ত্রিক জমানায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি, দুই শিবিরে বিভক্ত রাজনীতিতে একটি কথা প্রায়ই শোনা যায়, ‘আমরা নড়িব না’। এই সংলাপের পরও রাজনীতি আসলে সেখানেই রয়ে গেছে। সংলাপে মোটাদাগে সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। তবে সেটাও আদৌ কতদূর হবে তা নিয়ে বিএনপিতে অনেকেই সন্দিহান। কারণ প্রতিটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পরপরই গ্রেপ্তারের শিকার হচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বুধ ও বৃহস্পতিবার দুইদিনে সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের অন্তত ১৮৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কুমিল্লায় শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিও গ্রেপ্তার হয়েছেন নাশকতার মামলায়।
সংলাপে প্রধান প্রধান ইস্যুগুলো নিয়ে কোনো অগ্রগতিও হয়নি। এসব ইস্যুতে ভবিষ্যতে আলোচনা হবে এমনটাও বলা হয়নি। যদিও আলোচনার দরজা বন্ধ করা হয়নি। তবে সেই আলোচনার জন্য যে আবেদন করতে হবে তা স্পষ্ট। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংলাপের শুরুর দিকেই ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা জানতে চান, এ আলোচনা অব্যাহত থাকবে কি-না? একই সঙ্গে সংলাপে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা না করার আহ্বান জানানো হয় ফ্রন্টের পক্ষ থেকে। কিন্তু সে প্রস্তাব নাকচ করা হয়। মোটাদাগে বিরোধীদের প্রতি সরকারি দলের বার্তা ছিল ক্লিয়ার অ্যান্ড লাউড ১. নির্বাচনকালীন সময়ে এখন যে সরকার আছে তাই বহাল থাকবে। গত নির্বাচনের সময় বিরোধী দলকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয় অফার করা হয়েছিল এবার তাও করা হয়নি ২. সংসদ ভেঙে দেয়া হবে না ৩. খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেবে না। ৪. নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হবে না। তবে সরকারি দলের নেতারা আগে যে বলে আসছিলেন, সাত দফার এক দফাও মানা হবে না সেখান থেকে তাদের অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এখন সাত দফার মধ্যে কয়েকটি দফার অংশ বিশেষ মানার ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
সংলাপ শুরুর আগেই অবশ্য বেশ কিছু বার্তা পাওয়া যাচ্ছিলো। দুইদিনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১৭ বছরের সাজার রায়, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্ব সংক্রান্ত আদেশে বিএনপি’র মধ্যে সংলাপের সফলতা নিয়ে শুরুতেই সংশয় তৈরি হয়। যদিও সরকার যে এতো দ্রুত সংলাপ প্রস্তাবে সাড়া দিবে তা ঐক্যফ্রন্টের অনেক নেতাই ভাবেননি। সংলাপের পর ফ্রন্টের নেতাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজেও কিছুটা পার্থক্য ধরা পড়ে। প্রশ্ন অবশ্য সেটা নয়। এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে সংলাপের পর রাজনীতি কোনদিকে যাচ্ছে। চলতি সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা হয়ে যাবে। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে না আন্তর্জাতিক মহলের অনেকেও তাই মনে করেন। বিশাল মন্ত্রিসভাও পুরোদমেই বহাল থাকবে। এখন এই মন্ত্রী এবং এমপিদের বিরুদ্ধে অন্যপ্রার্থীরা নির্বাচনে কতটা লড়াই করতে পারবেন বাংলাদেশের বাস্তবতায় সে প্রশ্ন থেকেই যাবে। এই অবস্থায় সরকারি দল যে, বড় কোনো ছাড় দেবে না তা খোলাসা হয়ে গেছে। বিরোধী জোট এখন কী করবে? ৬ই নভেম্বর ঢাকায় জনসভা আহ্বান করেছে ঐক্যফ্রন্ট। এ জনসভা থেকে নতুন কোনো দিক নির্দেশনা আসে কি-না সেদিকে খেয়াল রাখছেন বিএনপি’র তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশের রাজনীতি অনিশ্চয়তা ভালোবাসে। বিশেষ করে নির্বাচনের পূর্বসময়টা সবসময়ই অনিশ্চয়তায় ঘেরা। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। যদিও পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা। হরতাল-অবরোধ নেই, জ্বালাও-পোড়াও নেই। সামনের দিকে যে এমন হবে না তার অবশ্য গ্যারান্টি নেই। তবে এখনো কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, ইতিহাসে অভাবনীয় ঘটনা ঘটবে এবার। নাটকীয় সমঝোতা হবে। তাদের দাবি এক আলোচনায় সব সমস্যার সমাধান হয় না, সামনে আরো আলোচনা হবে। সমঝোতাও হবে। শেষ পর্যন্ত কী হয়- তা দেখতে অপেক্ষায় থাকতে হবে।
এই সংলাপ নিয়ে এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।
অনেক পর্যবেক্ষকই এটাকে অগ্রগতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল। তারা একে-অন্যের নিন্দায় মুখর ছিলেন। কিন্তু এখন তারা একই টেবিলে বসে আলোচনা করেছেন। এটা এক ধরনের অগ্রগতি। বরফ গলার লক্ষণ। যদিও বেশির ভাগ বিশ্লেষকই এই সংলাপে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখছেন না। গণতান্ত্রিক জমানায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি, দুই শিবিরে বিভক্ত রাজনীতিতে একটি কথা প্রায়ই শোনা যায়, ‘আমরা নড়িব না’। এই সংলাপের পরও রাজনীতি আসলে সেখানেই রয়ে গেছে। সংলাপে মোটাদাগে সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। তবে সেটাও আদৌ কতদূর হবে তা নিয়ে বিএনপিতে অনেকেই সন্দিহান। কারণ প্রতিটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পরপরই গ্রেপ্তারের শিকার হচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বুধ ও বৃহস্পতিবার দুইদিনে সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের অন্তত ১৮৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কুমিল্লায় শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিও গ্রেপ্তার হয়েছেন নাশকতার মামলায়।
সংলাপে প্রধান প্রধান ইস্যুগুলো নিয়ে কোনো অগ্রগতিও হয়নি। এসব ইস্যুতে ভবিষ্যতে আলোচনা হবে এমনটাও বলা হয়নি। যদিও আলোচনার দরজা বন্ধ করা হয়নি। তবে সেই আলোচনার জন্য যে আবেদন করতে হবে তা স্পষ্ট। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংলাপের শুরুর দিকেই ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা জানতে চান, এ আলোচনা অব্যাহত থাকবে কি-না? একই সঙ্গে সংলাপে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা না করার আহ্বান জানানো হয় ফ্রন্টের পক্ষ থেকে। কিন্তু সে প্রস্তাব নাকচ করা হয়। মোটাদাগে বিরোধীদের প্রতি সরকারি দলের বার্তা ছিল ক্লিয়ার অ্যান্ড লাউড ১. নির্বাচনকালীন সময়ে এখন যে সরকার আছে তাই বহাল থাকবে। গত নির্বাচনের সময় বিরোধী দলকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয় অফার করা হয়েছিল এবার তাও করা হয়নি ২. সংসদ ভেঙে দেয়া হবে না ৩. খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেবে না। ৪. নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হবে না। তবে সরকারি দলের নেতারা আগে যে বলে আসছিলেন, সাত দফার এক দফাও মানা হবে না সেখান থেকে তাদের অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এখন সাত দফার মধ্যে কয়েকটি দফার অংশ বিশেষ মানার ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
সংলাপ শুরুর আগেই অবশ্য বেশ কিছু বার্তা পাওয়া যাচ্ছিলো। দুইদিনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১৭ বছরের সাজার রায়, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্ব সংক্রান্ত আদেশে বিএনপি’র মধ্যে সংলাপের সফলতা নিয়ে শুরুতেই সংশয় তৈরি হয়। যদিও সরকার যে এতো দ্রুত সংলাপ প্রস্তাবে সাড়া দিবে তা ঐক্যফ্রন্টের অনেক নেতাই ভাবেননি। সংলাপের পর ফ্রন্টের নেতাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজেও কিছুটা পার্থক্য ধরা পড়ে। প্রশ্ন অবশ্য সেটা নয়। এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে সংলাপের পর রাজনীতি কোনদিকে যাচ্ছে। চলতি সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা হয়ে যাবে। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে না আন্তর্জাতিক মহলের অনেকেও তাই মনে করেন। বিশাল মন্ত্রিসভাও পুরোদমেই বহাল থাকবে। এখন এই মন্ত্রী এবং এমপিদের বিরুদ্ধে অন্যপ্রার্থীরা নির্বাচনে কতটা লড়াই করতে পারবেন বাংলাদেশের বাস্তবতায় সে প্রশ্ন থেকেই যাবে। এই অবস্থায় সরকারি দল যে, বড় কোনো ছাড় দেবে না তা খোলাসা হয়ে গেছে। বিরোধী জোট এখন কী করবে? ৬ই নভেম্বর ঢাকায় জনসভা আহ্বান করেছে ঐক্যফ্রন্ট। এ জনসভা থেকে নতুন কোনো দিক নির্দেশনা আসে কি-না সেদিকে খেয়াল রাখছেন বিএনপি’র তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশের রাজনীতি অনিশ্চয়তা ভালোবাসে। বিশেষ করে নির্বাচনের পূর্বসময়টা সবসময়ই অনিশ্চয়তায় ঘেরা। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। যদিও পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা। হরতাল-অবরোধ নেই, জ্বালাও-পোড়াও নেই। সামনের দিকে যে এমন হবে না তার অবশ্য গ্যারান্টি নেই। তবে এখনো কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, ইতিহাসে অভাবনীয় ঘটনা ঘটবে এবার। নাটকীয় সমঝোতা হবে। তাদের দাবি এক আলোচনায় সব সমস্যার সমাধান হয় না, সামনে আরো আলোচনা হবে। সমঝোতাও হবে। শেষ পর্যন্ত কী হয়- তা দেখতে অপেক্ষায় থাকতে হবে।
No comments