একটি অন্যরকম প্রতিবাদ by মারুফ কিবরিয়া
এটা
হয়তো অন্যরকম এক প্রতিবাদ। বর্তমান শাসনব্যবস্থা, বাকস্বাধীনতা হরণ ও
প্রশ্নবিদ্ধ গণতন্ত্রের প্রতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুশফিক
মাহবুব ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখে গেছেন কষ্টের কথা। ক্ষোভের কথা। গত ১৫ই
আগস্ট নিজ বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার পর তার এ ফেসবুক স্ট্যাটাসকে
অনেকেই দেখছেন সুইসাইড নোট হিসাবে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেমুশফিকের সেই
স্ট্যাটাস এখন ‘ভাইরাল’। সর্বত্র এ নিয়ে চলছে আলোচনা।
ঢাবির সংগীত বিষয়ের এই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করার প্রায় দশ ঘণ্টা আগে ফেসবুকে লেখেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন ব্যবস্থায় কিছু বলার ন্যূনতম অধিকার থাকে না। এখন এটা বোঝার সময় হয়েছে যে, তোমার কণ্ঠস্বরের কোনো মূল্য নেই। তাই কথা বলা বন্ধ করুন ও সরকারের ভৃত্য হিসেবে তাদের প্রশংসা করা শুরু করুন। কি করতে হবে এবং কি করা যাবে না, শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদেরকে তা বলে দেয়। যেন সমাজ আমাদেরকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যে সমাজ আমাদেরকে জেলে পাঠানো বা হত্যা করার ক্ষমতা রাখে। এমনকি আমাদের মৃতদেহ এমন জায়গায় ছুড়ে ফেলার ক্ষমতা তাদের আছে, যেখান থেকে কেউ তা খুঁজে পাবে না। এ বিষয়ে আপনাদের অনুভূতি কি? কে তাদেরকে এই ক্ষমতা দিয়েছে? গণতন্ত্র? নাকি এটা গণতন্ত্রের নামে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ, যেখানে আমাদেরকে ক্ষমতাসীনদের প্রশংসা করতে হবে, তাদেরকে মেনে চলতে হবে। এটা কি শুধু আপনাদের হাতে বন্দুক আছে বলে? এটাই বিশ্বের সব ক্ষমতা না। বাংলাদেশি হিসেবে আমি স্বাধীনতা চাই। এমনকি এই চাওয়ার জন্য তারা যদি আমাকে হত্যা করে, তাও আমি এটা চাই’। আত্মহত্যার পর নিহত মুশফিকের বন্ধুমহলও বলেছে, মৃত্যুর আগে প্রায়ই দেশ নিয়ে, দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে নানা আড্ডায় কথা বলতো। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অনেকটাই অসন্তুষ্ট ছিল ২৪ বছর বয়সী এ শিক্ষার্থী। কিছুতেই অন্যায় দুঃশাসনকে সমর্থন করতেন না মুশফিক। তবে এসবই যে তার আত্মহত্যার মূল কারণ হতে পারে তা ভাবতে নারাজ বন্ধুরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন্ধু বলেন, আমি মুশফিকের সঙ্গে পড়াশোনা করেছি। ওর এমন চলে যাওয়াটা মোটেও মেনে নিতে পারছি না। মুশফিক আমাদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী ছিল। যেকোনো বিষয় নিয়ে খুব গভীরভাবে ভাবতো। আমাদের অন্য বন্ধুদের চেয়ে ওকে দেখেছি খুব ভিন্ন ধাঁচের। ক্যাম্পাসে আসতো যেতো। পড়াশোনায় বেশ মনোনিবেশ করতো সে। আড্ডায় খুব কমই বসতো। হ্যাঁ এটা ঠিক যে আড্ডার মাঝে দেশ নিয়ে, দেশের নানাদিক নিয়ে খুব গভীরভাবে আলোচনা করতো। তবে এটা নিয়ে খুব বেশি যে হতাশায় ভুগতো তা বলা যাবে না। মুশফিক সংগীতের শিক্ষার্থী হলেও ব্যবসার দিকে তার খুব মনোযোগ ছিল। যতদূর জানি, স্বেচ্ছায় সংগীতে পড়তে আসেনি। তার ইচ্ছা ছিল ব্যবসা নিয়ে পড়াশোনা করার। এ নিয়ে অনেক পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু সেসব কখনো খোলাসা করে বলেনি মুশফিক। মুশফিকের এ বন্ধু আরো বলেন, আমি ওর কাছের বন্ধু হলেও জীবনের অনেক ব্যক্তিগত কথা আড়ালেই রাখতো। যতটা জানি ওর পার্সোনাল কোনো কথা স্কুল কিংবা কলেজের বন্ধুরাও জানতো না। শিক্ষাজীবনে অনেকেরই প্রেমঘটিত কোনো ঝামেলা থাকে। এসব মুশফিকের ছিল না। তাই সব দিক চিন্তা করে আমরা মুশফিকের আত্মহত্যার বিশেষ কোনো কারণ বলতে পারছি না। এটা ধারণা করছি, হয়তো পারিবারিক কোনো কারণে হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছে মুশফিক। কিন্তু তারা বন্ধুর আত্মহত্যা নিয়ে অনেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কথা বলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুশফিকের আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহপাঠী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সে অনেক হাসিখুশিতে থাকতো। তার কোনো আর্থিক সমস্যা ছিল না। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, সে তার বাবার সঙ্গে কথা বলে রুম থেকে বের হয়েছিল। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তার মধ্যে ক্ষোভ ছিল। সেটা আমরা আড্ডার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে কী কারণে সে আত্মহত্যা করেছে তা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যান্টনমেন্ট থানার এক কর্মকর্তা জানান, এটি আত্মহত্যা। তাছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আর কোনো অভিযোগ আসেনি। আর এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইএসপিআর-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একজন কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে মন্তব্য করার মতো এখনও কোনো অবস্থা হয়নি।
আত্মহত্যার আগে দেয়া স্ট্যাটাসটি মুশফিকের প্রথম স্ট্যাটাস নয়। এর আগেও অনেকবার দেশের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সদ্য শেষ হওয়া নিরাপদ সড়কের দাবিতে নামা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে তার ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট ছিল। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘অভিনন্দন, আন্দোলন মানেই যে শুধু সরকারের দোষ তা না। আন্দোলন আত্মসমালোচনার একটি উপায়। প্রায় ১০ বছর আগে আমরাই ২২৩ আসন দিয়ে এই সরকারকে এনেছিলাম, এখন ক্ষমতা রক্ষা করার জন্য যদি পদক্ষেপ নেয়া হয় সেটার দায় কোনো না কোনভাবে আপনার আমার সবার। আজ আওয়ামী লীগ যা করছে বিএনপি হলে তার থেকে কম করতো না এটুকু আমি নিশ্চিত। বর্তমান পরিস্থিতি অনুসারে যেকোনো আন্দোলনে বিএনপি তাদের বাম হাত দিবে যাতে ক্ষমতার কিছুটা ক্ষতি তারা করতে পারে। আর আওয়ামী লীগ এই কারণটাকে পুঁজি করে আন্দোলন বন্ধ করবে। যা দেখছি তা সত্য না, যা শুনছি তাও বিশ্বাসযোগ্য না। সব গুজব। অভিনন্দন বাংলাদেশের রাজনীতিকে, গণতন্ত্রের পোস্টমর্টেম রিপোর্টও গুম করে দিয়েছে।’
ঢাবির সংগীত বিষয়ের এই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করার প্রায় দশ ঘণ্টা আগে ফেসবুকে লেখেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন ব্যবস্থায় কিছু বলার ন্যূনতম অধিকার থাকে না। এখন এটা বোঝার সময় হয়েছে যে, তোমার কণ্ঠস্বরের কোনো মূল্য নেই। তাই কথা বলা বন্ধ করুন ও সরকারের ভৃত্য হিসেবে তাদের প্রশংসা করা শুরু করুন। কি করতে হবে এবং কি করা যাবে না, শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদেরকে তা বলে দেয়। যেন সমাজ আমাদেরকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যে সমাজ আমাদেরকে জেলে পাঠানো বা হত্যা করার ক্ষমতা রাখে। এমনকি আমাদের মৃতদেহ এমন জায়গায় ছুড়ে ফেলার ক্ষমতা তাদের আছে, যেখান থেকে কেউ তা খুঁজে পাবে না। এ বিষয়ে আপনাদের অনুভূতি কি? কে তাদেরকে এই ক্ষমতা দিয়েছে? গণতন্ত্র? নাকি এটা গণতন্ত্রের নামে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ, যেখানে আমাদেরকে ক্ষমতাসীনদের প্রশংসা করতে হবে, তাদেরকে মেনে চলতে হবে। এটা কি শুধু আপনাদের হাতে বন্দুক আছে বলে? এটাই বিশ্বের সব ক্ষমতা না। বাংলাদেশি হিসেবে আমি স্বাধীনতা চাই। এমনকি এই চাওয়ার জন্য তারা যদি আমাকে হত্যা করে, তাও আমি এটা চাই’। আত্মহত্যার পর নিহত মুশফিকের বন্ধুমহলও বলেছে, মৃত্যুর আগে প্রায়ই দেশ নিয়ে, দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে নানা আড্ডায় কথা বলতো। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অনেকটাই অসন্তুষ্ট ছিল ২৪ বছর বয়সী এ শিক্ষার্থী। কিছুতেই অন্যায় দুঃশাসনকে সমর্থন করতেন না মুশফিক। তবে এসবই যে তার আত্মহত্যার মূল কারণ হতে পারে তা ভাবতে নারাজ বন্ধুরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন্ধু বলেন, আমি মুশফিকের সঙ্গে পড়াশোনা করেছি। ওর এমন চলে যাওয়াটা মোটেও মেনে নিতে পারছি না। মুশফিক আমাদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী ছিল। যেকোনো বিষয় নিয়ে খুব গভীরভাবে ভাবতো। আমাদের অন্য বন্ধুদের চেয়ে ওকে দেখেছি খুব ভিন্ন ধাঁচের। ক্যাম্পাসে আসতো যেতো। পড়াশোনায় বেশ মনোনিবেশ করতো সে। আড্ডায় খুব কমই বসতো। হ্যাঁ এটা ঠিক যে আড্ডার মাঝে দেশ নিয়ে, দেশের নানাদিক নিয়ে খুব গভীরভাবে আলোচনা করতো। তবে এটা নিয়ে খুব বেশি যে হতাশায় ভুগতো তা বলা যাবে না। মুশফিক সংগীতের শিক্ষার্থী হলেও ব্যবসার দিকে তার খুব মনোযোগ ছিল। যতদূর জানি, স্বেচ্ছায় সংগীতে পড়তে আসেনি। তার ইচ্ছা ছিল ব্যবসা নিয়ে পড়াশোনা করার। এ নিয়ে অনেক পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু সেসব কখনো খোলাসা করে বলেনি মুশফিক। মুশফিকের এ বন্ধু আরো বলেন, আমি ওর কাছের বন্ধু হলেও জীবনের অনেক ব্যক্তিগত কথা আড়ালেই রাখতো। যতটা জানি ওর পার্সোনাল কোনো কথা স্কুল কিংবা কলেজের বন্ধুরাও জানতো না। শিক্ষাজীবনে অনেকেরই প্রেমঘটিত কোনো ঝামেলা থাকে। এসব মুশফিকের ছিল না। তাই সব দিক চিন্তা করে আমরা মুশফিকের আত্মহত্যার বিশেষ কোনো কারণ বলতে পারছি না। এটা ধারণা করছি, হয়তো পারিবারিক কোনো কারণে হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছে মুশফিক। কিন্তু তারা বন্ধুর আত্মহত্যা নিয়ে অনেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কথা বলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুশফিকের আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহপাঠী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সে অনেক হাসিখুশিতে থাকতো। তার কোনো আর্থিক সমস্যা ছিল না। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, সে তার বাবার সঙ্গে কথা বলে রুম থেকে বের হয়েছিল। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তার মধ্যে ক্ষোভ ছিল। সেটা আমরা আড্ডার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে কী কারণে সে আত্মহত্যা করেছে তা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যান্টনমেন্ট থানার এক কর্মকর্তা জানান, এটি আত্মহত্যা। তাছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আর কোনো অভিযোগ আসেনি। আর এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইএসপিআর-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একজন কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে মন্তব্য করার মতো এখনও কোনো অবস্থা হয়নি।
আত্মহত্যার আগে দেয়া স্ট্যাটাসটি মুশফিকের প্রথম স্ট্যাটাস নয়। এর আগেও অনেকবার দেশের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সদ্য শেষ হওয়া নিরাপদ সড়কের দাবিতে নামা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে তার ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট ছিল। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘অভিনন্দন, আন্দোলন মানেই যে শুধু সরকারের দোষ তা না। আন্দোলন আত্মসমালোচনার একটি উপায়। প্রায় ১০ বছর আগে আমরাই ২২৩ আসন দিয়ে এই সরকারকে এনেছিলাম, এখন ক্ষমতা রক্ষা করার জন্য যদি পদক্ষেপ নেয়া হয় সেটার দায় কোনো না কোনভাবে আপনার আমার সবার। আজ আওয়ামী লীগ যা করছে বিএনপি হলে তার থেকে কম করতো না এটুকু আমি নিশ্চিত। বর্তমান পরিস্থিতি অনুসারে যেকোনো আন্দোলনে বিএনপি তাদের বাম হাত দিবে যাতে ক্ষমতার কিছুটা ক্ষতি তারা করতে পারে। আর আওয়ামী লীগ এই কারণটাকে পুঁজি করে আন্দোলন বন্ধ করবে। যা দেখছি তা সত্য না, যা শুনছি তাও বিশ্বাসযোগ্য না। সব গুজব। অভিনন্দন বাংলাদেশের রাজনীতিকে, গণতন্ত্রের পোস্টমর্টেম রিপোর্টও গুম করে দিয়েছে।’
No comments