ঈদের আগে ছাত্রদের মুক্তি দিন: ড. কামাল
গণফোরাম
সভাপতি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বর্তমান পরিস্থিতি
নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আমরা তার সঙ্গে দেখা করার
আগ্রহ প্রকাশ করছি। তিনি ব্যস্ত মানুষ। এতবড় দায়িত্ব নিয়ে আমাদের সময়
দিবেন সেটা আমি দাবি করতে পারি না।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি যদি ১০ মিনিট সময়ও দেন, তাহলে এখানে যারা আছেন তাদের থেকে যাকে সময় দিবেন তিনি গিয়ে দেখা করবেন। একটা লিখিত সারসংক্ষেপ আপনার কাছে পাঠাবো।
গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিরাপদ সড়ক ও কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে আয়োজিত এই সভায় সিরাজগঞ্জ থেকে গত বুধবার গ্রেপ্তার হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুর নাহার লুমার মা রাশেদা বেগমের আহাজারি কাঁদিয়েছে দর্শক-স্রোতাদের।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের মালিক জনগণ। তা বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত সংবিধানে স্বীকৃত। তা মুছে ফেলা সম্ভব নয়। দেশের মালিক হিসেবেই এখন জনগণকে দাঁড়াতে হবে। গতমাসে ছাত্ররা যা করেছে তা আমাদের জন্য গর্বের। তারা উচিত কথা বলেছে, উচিত কাজ করেছে। এজন্য তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দিন দিন তা বাড়ছে। নির্যাতন করা হচ্ছে। ছাত্রদের মারধর করা যাবে না। ছাত্রদেরকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হচ্ছে। স্বাধীন দেশে এমন বর্বরতা চলতে পারে না।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ঈদুল আজহার আগে গ্রেপ্তার করা ছাত্রদের মুক্তি দিন। এজন্য ৮১ বছর বয়সে আমি আপনার পা ধরে আবেদন করতে পারি। তারা যেন বাড়ি গিয়ে ঈদ করতে পারে।
তিনি বলেন, এদেশের জন্য বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে উপর-নিচ সবাই রক্ত দিয়েছেন, জীবন দিয়েছেন। এদেশে শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। যে লক্ষ্য বা সমাজ-রাষ্ট্রকে সামনে রেখে এত মানুষ জীবন দিয়েছে তা বৃথা যেতে পারে না। এদেশে অন্যায়, অবিচার, অনুচিত কাজ চলতে পারে না। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে সবাই একমত। তা রাজনৈতিক বা দলীয় বক্তব্য নয়। সবার অন্তরের কথা। রাজনৈতিক নেতা বা সরকারি কর্মকর্তারা দেশের মালিক জনগণের সেবক। পুলিশকে দিয়ে কেউ অন্যায় কাজ করাতে চাইলে সাংবিধানিক বা আইনগতভাবে পুলিশ তা মানতে বাধ্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশ আজ ভয়ানক অসুস্থ। এতটাই অসুস্থ যে, সরকার তা বুঝতেও পারছে না। অসুস্থতা বাড়ছে। চবি ভিসি সাবেক প্রধান বিচারপতিকে জুতা মারতে চান। তা অসুস্থতা। রাষ্ট্রপতি অসুস্থ। দুই-তিন মাস পর পর চিকিৎসা করতে দেশের বাইরে যান। বিচারকরা অসুস্থ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদ ও আওয়াজ সত্ত্বেও ফটোগ্রাফার শহীদুল আলমকে জামিন দেন না। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যে কথা বলছেন তাতে মনে হচ্ছে তিনি নিয়মিত ঔষুধ খাচ্ছেন না। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া নাকি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত। তখন তো খালেদা স্রেফ গৃহবধূ ছিলেন। গুছিয়ে কথাও বলতে পারতেন না। প্রধানমন্ত্রী এসব কী বলেন? ছাত্র আওয়াজ উঠিয়েছিল এই রাষ্ট্রের মেরামত প্রয়োজন। রাষ্ট্রযন্ত্রের চিকিৎসা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, কোটা বা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের চেয়ে যৌক্তিক দাবি আর কী হতে পারে? গণতান্ত্রিক দেশে সে আন্দোলনে রাস্তায় যাওয়া কী অপরাধ? পৃথিবীর কোন দেশে রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে হাসি-তামাশা হয় না? গণতন্ত্র মানে সহনশীল হওয়া।
তার আগে বক্তব্য রাখা লুমার মা রাশেদার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, লুমার মায়ের বিলাপে আমার লজ্জা হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল তার পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নিই। কেন আমরা এই দেশ স্বাধীন করতে যুদ্ধ করেছিলাম। তিনিও আগামী ঈদুল আজহা উপলক্ষে গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রদের মুক্তির দাবি জানান।
ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হৃদয় পাষাণ। ১৫ই আগস্টের আগে অনুরোধ জানিয়েছিলাম গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রদের মুক্তি দিতে। কিন্তু তা হয়নি। নিরাপদ সড়কের মতো এমন ছাত্র আন্দোলন উপমহাদেশে আর হয়নি। কোটা ও নিরাপদ সড়কের এই আন্দোলন মারা যাবে না। তিনি আরো বলেন, এরশাদের আমলে দেশ চালাতো ডিসি, এসপিরা। এখন দেশ চালায় কনস্টেবলরা। সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধীসহ বিভিন্ন ইস্যু কাজে লাগানোর পর এখন টিকে থাকতে দেশ ও সমাজকে বিভক্ত করতে আবার মুক্তিযোদ্ধা ইস্যু ব্যবহার করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধারা এখন চুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে। আমার সঙ্গে চুক্তি করো। আমার দল করো। তাহলে তুমি মুক্তিযোদ্ধা। তারা তো আসলে চুক্তিযোদ্ধা।
অনুষ্ঠানের শেষ দিকে সবাইকে কাঁদিয়ে গেল গ্রেপ্তার হওয়া লুমার মা রাশেদা বেগম। মাইক্রো ফোন হাতে নিয়েই তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বিলাপে হারিয়ে যায় তার অনেক কথা। এ সময় অনুষ্ঠানে পিনপতন নিস্তব্ধতা চলে আসে। লুমার মা রাশেদা বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে ৫ বছর আগে। আমি কষ্ট করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি তিন মেয়েকে। লুমা পড়াশোনা করে চাকরি করতে চেয়েছিল। ছোট মানুষ লুমা হয়তো বুঝে নি। যেদিন আন্দোলনে গেছে সেদিন মামলা হয়েছে। তারপর সে পরীক্ষা না দিয়ে বাড়িতে চলে গেছে। ভয়ে পরীক্ষা দিতে আসেনি। তাকে রাতে এ ঘরে, ও ঘরে লুকিয়ে রেখেছি। ভয়ে সে টেলিভিশনও দেখতো না। এরপর সিরাজগঞ্জে তার দাদার বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। সেখান থেকে আমার মেয়েকে ধরে নিয়ে এসেছে।
বর্তমান সরকারকে প্রতারক সরকার আখ্যা দিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে যে প্রতারণার শুরু হয়েছে তা এখন কোটা ও সড়ক আন্দোলনেও চলছে। প্রধানমন্ত্রী কোটা তুলে দিবেন বলেছিলেন এবং নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করার পর ছাত্রদের এখন চৌদ্দ শিকের ভিতর ঢুকিয়েছেন। দেশকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোটেক সুব্রত চৌধুরী বলেন, এক সড়কেই যদি এত সমস্যা থাকে। তাহলে দেশে কত সমস্যা আছে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি গত দু’দিন আগেও কেঁদেছেন। আপনার কান্নায় আমরা কাঁদি। কিন্তু আপনি এত উপরে উঠে গেছেন যে লুমার মায়ের কান্নায় আপনি কাঁদেন না। এখানেই আপনার সঙ্গে পার্থক্য।
জাতীয় ঐক্য প্রচেষ্টার সদস্য-সচিব মোস্তফা আমিন বলেন, মানুষের মধ্যে ঐক্য হলে সব সমস্যার সমাধান হবে। দেশকে সংবিধান বিধৃত পথে সাংবিধানিক ধারায় নিয়ে যেতে হবে।
আগামী ২২শে সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান এখনও বাতিল হয়নি। চলমান আছে। সেই সংবিধানের আওতায় এমন কোনো কারণ নেই যে, অনুমতি পাওয়া যাবে না।
গণফোরামের যুগ্ম সহসভাপতি শফিউল্লাহ বলেন, বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের কোনো সৌজন্যতাই রক্ষা করছে না। আমরা এখন টার্নিং পয়েন্টে এসে গেছি।
ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন দেয়ায় চাকরিচ্যুত নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিয়াউর রহমান বলেন, ছাত্ররা যৌক্তিক আন্দোলনে মূলত সরকারকে সহযোগিতা করছিল। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল। তাদের যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন দেয়ার অধিকার তো আমার আছে। তারা যোগ্যদের মেধাভিত্তিক সমাজ-রাষ্ট্র চেয়েছিল। কিন্তু এখন এই ভয়ের আবহ থেকে নিজেদেরকে যদি মুক্ত না করি, তাহলে সেই ভয় আমাদেরকে আরো খারাপ জায়গায় নিয়ে যাবে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার কথায় কথায় বলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু কী দেখলাম। পুলিশ আইনের পোশাক পরে অনবরত বেআইনি কাজ করছে। শহীদের রক্তে ভেজা এই মাটি দুর্র্র্নীতি সহ্য করবে না।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ঢাকা মহানগরীর সদস্য-সচিব মোস্তাক আহমেদের পরিচালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, সংগঠনটির ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) লতিফ মল্লিক, যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হুদা চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মো. হাবিবুর রহমান ও ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক মোহাম্মদ উল্লাহ মধু প্রমুখ।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি যদি ১০ মিনিট সময়ও দেন, তাহলে এখানে যারা আছেন তাদের থেকে যাকে সময় দিবেন তিনি গিয়ে দেখা করবেন। একটা লিখিত সারসংক্ষেপ আপনার কাছে পাঠাবো।
গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিরাপদ সড়ক ও কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে আয়োজিত এই সভায় সিরাজগঞ্জ থেকে গত বুধবার গ্রেপ্তার হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুর নাহার লুমার মা রাশেদা বেগমের আহাজারি কাঁদিয়েছে দর্শক-স্রোতাদের।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের মালিক জনগণ। তা বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত সংবিধানে স্বীকৃত। তা মুছে ফেলা সম্ভব নয়। দেশের মালিক হিসেবেই এখন জনগণকে দাঁড়াতে হবে। গতমাসে ছাত্ররা যা করেছে তা আমাদের জন্য গর্বের। তারা উচিত কথা বলেছে, উচিত কাজ করেছে। এজন্য তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দিন দিন তা বাড়ছে। নির্যাতন করা হচ্ছে। ছাত্রদের মারধর করা যাবে না। ছাত্রদেরকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হচ্ছে। স্বাধীন দেশে এমন বর্বরতা চলতে পারে না।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ঈদুল আজহার আগে গ্রেপ্তার করা ছাত্রদের মুক্তি দিন। এজন্য ৮১ বছর বয়সে আমি আপনার পা ধরে আবেদন করতে পারি। তারা যেন বাড়ি গিয়ে ঈদ করতে পারে।
তিনি বলেন, এদেশের জন্য বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে উপর-নিচ সবাই রক্ত দিয়েছেন, জীবন দিয়েছেন। এদেশে শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। যে লক্ষ্য বা সমাজ-রাষ্ট্রকে সামনে রেখে এত মানুষ জীবন দিয়েছে তা বৃথা যেতে পারে না। এদেশে অন্যায়, অবিচার, অনুচিত কাজ চলতে পারে না। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে সবাই একমত। তা রাজনৈতিক বা দলীয় বক্তব্য নয়। সবার অন্তরের কথা। রাজনৈতিক নেতা বা সরকারি কর্মকর্তারা দেশের মালিক জনগণের সেবক। পুলিশকে দিয়ে কেউ অন্যায় কাজ করাতে চাইলে সাংবিধানিক বা আইনগতভাবে পুলিশ তা মানতে বাধ্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশ আজ ভয়ানক অসুস্থ। এতটাই অসুস্থ যে, সরকার তা বুঝতেও পারছে না। অসুস্থতা বাড়ছে। চবি ভিসি সাবেক প্রধান বিচারপতিকে জুতা মারতে চান। তা অসুস্থতা। রাষ্ট্রপতি অসুস্থ। দুই-তিন মাস পর পর চিকিৎসা করতে দেশের বাইরে যান। বিচারকরা অসুস্থ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদ ও আওয়াজ সত্ত্বেও ফটোগ্রাফার শহীদুল আলমকে জামিন দেন না। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যে কথা বলছেন তাতে মনে হচ্ছে তিনি নিয়মিত ঔষুধ খাচ্ছেন না। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া নাকি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত। তখন তো খালেদা স্রেফ গৃহবধূ ছিলেন। গুছিয়ে কথাও বলতে পারতেন না। প্রধানমন্ত্রী এসব কী বলেন? ছাত্র আওয়াজ উঠিয়েছিল এই রাষ্ট্রের মেরামত প্রয়োজন। রাষ্ট্রযন্ত্রের চিকিৎসা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, কোটা বা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের চেয়ে যৌক্তিক দাবি আর কী হতে পারে? গণতান্ত্রিক দেশে সে আন্দোলনে রাস্তায় যাওয়া কী অপরাধ? পৃথিবীর কোন দেশে রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে হাসি-তামাশা হয় না? গণতন্ত্র মানে সহনশীল হওয়া।
তার আগে বক্তব্য রাখা লুমার মা রাশেদার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, লুমার মায়ের বিলাপে আমার লজ্জা হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল তার পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নিই। কেন আমরা এই দেশ স্বাধীন করতে যুদ্ধ করেছিলাম। তিনিও আগামী ঈদুল আজহা উপলক্ষে গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রদের মুক্তির দাবি জানান।
ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হৃদয় পাষাণ। ১৫ই আগস্টের আগে অনুরোধ জানিয়েছিলাম গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রদের মুক্তি দিতে। কিন্তু তা হয়নি। নিরাপদ সড়কের মতো এমন ছাত্র আন্দোলন উপমহাদেশে আর হয়নি। কোটা ও নিরাপদ সড়কের এই আন্দোলন মারা যাবে না। তিনি আরো বলেন, এরশাদের আমলে দেশ চালাতো ডিসি, এসপিরা। এখন দেশ চালায় কনস্টেবলরা। সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধীসহ বিভিন্ন ইস্যু কাজে লাগানোর পর এখন টিকে থাকতে দেশ ও সমাজকে বিভক্ত করতে আবার মুক্তিযোদ্ধা ইস্যু ব্যবহার করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধারা এখন চুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে। আমার সঙ্গে চুক্তি করো। আমার দল করো। তাহলে তুমি মুক্তিযোদ্ধা। তারা তো আসলে চুক্তিযোদ্ধা।
অনুষ্ঠানের শেষ দিকে সবাইকে কাঁদিয়ে গেল গ্রেপ্তার হওয়া লুমার মা রাশেদা বেগম। মাইক্রো ফোন হাতে নিয়েই তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বিলাপে হারিয়ে যায় তার অনেক কথা। এ সময় অনুষ্ঠানে পিনপতন নিস্তব্ধতা চলে আসে। লুমার মা রাশেদা বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে ৫ বছর আগে। আমি কষ্ট করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি তিন মেয়েকে। লুমা পড়াশোনা করে চাকরি করতে চেয়েছিল। ছোট মানুষ লুমা হয়তো বুঝে নি। যেদিন আন্দোলনে গেছে সেদিন মামলা হয়েছে। তারপর সে পরীক্ষা না দিয়ে বাড়িতে চলে গেছে। ভয়ে পরীক্ষা দিতে আসেনি। তাকে রাতে এ ঘরে, ও ঘরে লুকিয়ে রেখেছি। ভয়ে সে টেলিভিশনও দেখতো না। এরপর সিরাজগঞ্জে তার দাদার বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। সেখান থেকে আমার মেয়েকে ধরে নিয়ে এসেছে।
বর্তমান সরকারকে প্রতারক সরকার আখ্যা দিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে যে প্রতারণার শুরু হয়েছে তা এখন কোটা ও সড়ক আন্দোলনেও চলছে। প্রধানমন্ত্রী কোটা তুলে দিবেন বলেছিলেন এবং নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করার পর ছাত্রদের এখন চৌদ্দ শিকের ভিতর ঢুকিয়েছেন। দেশকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোটেক সুব্রত চৌধুরী বলেন, এক সড়কেই যদি এত সমস্যা থাকে। তাহলে দেশে কত সমস্যা আছে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি গত দু’দিন আগেও কেঁদেছেন। আপনার কান্নায় আমরা কাঁদি। কিন্তু আপনি এত উপরে উঠে গেছেন যে লুমার মায়ের কান্নায় আপনি কাঁদেন না। এখানেই আপনার সঙ্গে পার্থক্য।
জাতীয় ঐক্য প্রচেষ্টার সদস্য-সচিব মোস্তফা আমিন বলেন, মানুষের মধ্যে ঐক্য হলে সব সমস্যার সমাধান হবে। দেশকে সংবিধান বিধৃত পথে সাংবিধানিক ধারায় নিয়ে যেতে হবে।
আগামী ২২শে সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান এখনও বাতিল হয়নি। চলমান আছে। সেই সংবিধানের আওতায় এমন কোনো কারণ নেই যে, অনুমতি পাওয়া যাবে না।
গণফোরামের যুগ্ম সহসভাপতি শফিউল্লাহ বলেন, বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের কোনো সৌজন্যতাই রক্ষা করছে না। আমরা এখন টার্নিং পয়েন্টে এসে গেছি।
ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন দেয়ায় চাকরিচ্যুত নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিয়াউর রহমান বলেন, ছাত্ররা যৌক্তিক আন্দোলনে মূলত সরকারকে সহযোগিতা করছিল। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল। তাদের যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন দেয়ার অধিকার তো আমার আছে। তারা যোগ্যদের মেধাভিত্তিক সমাজ-রাষ্ট্র চেয়েছিল। কিন্তু এখন এই ভয়ের আবহ থেকে নিজেদেরকে যদি মুক্ত না করি, তাহলে সেই ভয় আমাদেরকে আরো খারাপ জায়গায় নিয়ে যাবে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার কথায় কথায় বলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু কী দেখলাম। পুলিশ আইনের পোশাক পরে অনবরত বেআইনি কাজ করছে। শহীদের রক্তে ভেজা এই মাটি দুর্র্র্নীতি সহ্য করবে না।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ঢাকা মহানগরীর সদস্য-সচিব মোস্তাক আহমেদের পরিচালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, সংগঠনটির ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) লতিফ মল্লিক, যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হুদা চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মো. হাবিবুর রহমান ও ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক মোহাম্মদ উল্লাহ মধু প্রমুখ।
No comments