দল গোছাচ্ছে বিএনপি: মে’র মধ্যেই থানা ওয়ার্ড কমিটি গঠনের নির্দেশনা by কাফি কামাল
খালেদা
জিয়ার কারামুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ের
আন্দোলনকে সামনে রেখে দল গোছানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। সময়সীমা বেঁধে দিয়ে
বিভিন্ন সাংগঠনিক ইউনিট কমিটি গঠনে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন
নীতিনির্ধারকরা। ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ
প্রতিটি অঙ্গ সংগঠনকে মে মাসের মধ্যেই থানা-ওয়ার্ড কমিটি গঠনের চূড়ান্ত
সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ৩১শে মে’র মধ্যে এসব কমিটি অনুমতির
জন্য কেন্দ্রের কাছে পাঠাতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ড ৭১ সদস্য ও প্রতিটি থানায়
১২১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি হবে। তবে মহানগর কমিটির পরিধি সীমিত থাকবে ২০০
সদস্যের মধ্যে। এছাড়া মহানগর বিএনপির দপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট নেতাদের
পদত্যাগপত্রের ফরমও পাঠানো হয়েছে। যারা মহানগরে থাকবেন তারা থানা কমিটিতে
থাকতে পারবেন না। সবখানেই একনেতা একপদ নীতি কার্যকর করতে হবে। দলের শীর্ষ
নেতৃত্বের তরফে নির্দেশনা পাওয়ার পর দল গোছানোর লক্ষ্যে জোরালোভাবে কাজও
শুরু করেছেন দায়িত্বশীল নেতারা। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগরের একাধিক নেতা
বিএনপির এ উদ্যোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় প্রথম থেকেই আইনি লড়াইকে গুরুত্ব দিয়েছে বিএনপি। মামলার রায় হওয়ার পর খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হলেও তার মুক্তির জন্য দীর্ঘ সাড়ে তিনমাস ধরে বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদান, অনশন, অবস্থানসহ নানা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে দলটি। কিন্তু দলটির এসব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও সরকার ও প্রশাসনের তরফে আসছে নানামুখী বাধা। প্রশাসনের বাধার কারণে একাধিক কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বিএনপি। তবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন কর্মসূচিতে প্রতিনিয়ত ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে তৃণমূলে। চিত্র উঠে এসেছে সারা দেশে দলটির সিনিয়র নেতাদের সাংগঠনিক সফরে। অন্যদিকে নিয়ম অনুযায়ী এ বছরের শেষদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। মাঝখানে মাত্র কয়েক মাস সময় বাকি থাকলেও একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রাথমিক কোনো লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে না সরকারের আচরণে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের কঠোর মনোভাবে সিনিয়র নেতারাও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন থেকে রাজপথের কর্মসূচিতে যাওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন দলীয় ফোরামে। আর কঠোর আন্দোলনের প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে সংগঠনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটির নীতিনির্ধারক ফোরাম। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, একমাত্র আইন-আদালত করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তার একমাত্র পথ হলো রাজপথ। কোনো আন্দোলন ছাড়া জনগণের কোনো দাবি আদায় করা সম্ভবপর হয়নি। যে পথে দাবি আদায় করা যাবে সেই পথ তাদের বেছে নিতে হবে। তাই রমজান মাসের পরে তাদের কঠোর কর্মসূচির পথ বেছে নিতে হবে। সেই প্রস্তুতি রয়েছে দলটির। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু এভাবে তাকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এখন ছাত্রদল-স্বেচ্ছাসেবক দলকে আন্দোলন করতে হবে।
এদিকে দলের ৭৮ সাংগঠনিক জেলার কমিটি পুনর্গঠনের একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে সবমিলিয়ে ৫১ সাংগঠনিক জেলা কমিটি পুনর্গঠন করতে পেরেছে দলটি। বাকি জেলাগুলোর মধ্যে খসড়া কমিটি প্রস্তুত রয়েছে ১৫টির। অন্য কমিটিগুলোর ব্যাপারে খোঁজখবরও নেয়া শুরু হয়েছে। এদিকে ২০১৭ বছরের ১৮ই এপ্রিল ঢাকা মহানগর বিএনপিকে উত্তর-দক্ষিণ দুইভাগে ভাগ করে নতুন কমিটি অনুমোদন দেয় বিএনপি। সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দুই কমিটির আওতায় রয়েছে ৪৯টি থানা কমিটি ও ৯০টি ওয়ার্ড কমিটি। যার সবগুলোই মেয়াদোত্তীর্ণ। কিন্তু দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময়েও সে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো পুনর্গঠন ও সক্রিয় করতে পারেনি মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির শীর্ষ নেতারা। দীর্ঘ এ সময়ে সংগঠন গোছানোর দিকে কার্যত কোনো দৃষ্টিই ছিল না তাদের। মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল মামলাজনিত কারণে বেশিরভাগ সময় থাকেন আড়ালে-আবডালে। সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারও এ ব্যাপারে তৎপর ছিলেন না। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ুম ইতালীয় নাগরিক হত্যা মামলার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই অবস্থান করছেন মালয়েশিয়ায়। কমিটি গঠনের আগে থেকে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করলেও তার সাংগঠনিক দক্ষতা ও প্রভাবের কারণে ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতৃত্ব পেয়েছিলেন তিনি। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সাবেক কমিশনার আহসান উল্লাহ হাসান। কিন্তু বিগত এক বছরে দলের সকল কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ দলের নীতিনির্ধারক মহল। অন্যদিকে ২০১৬ সালের ২৭শে অক্টোবর স্বেচ্ছাসেবক দল ও ২০১৭ সালের ১৬ই জানুয়ারি রাতে যুবদলের কমিটি গঠন হলেও এখন পর্যন্ত দুইটি সংগঠনই তাদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি। অন্য অঙ্গ সংগঠনগুলোর অবস্থাও একই। মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ায় দলীয় কর্মসূচিগুলোতে গা-ছাড়া ভাব দেখাচ্ছেন বিএনপির জেলা, মহানগরসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কমিটির নেতারা। নেতাকর্মীরা জানান, দলের গঠনতান্ত্রিক নিয়ম অনুযায়ী কমিটি পুনর্গঠন না হওয়ায় একদিকে নেতাদের মধ্যে থেকে হারিয়ে গেছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে প্রতিযোগিতার মনোভাব, অন্যদিকে তৈরি হচ্ছে না নতুন নেতৃত্ব। বিএনপিসহ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল সংগঠনই জোড়াতালির কমিটি দিয়েই পরিচালনা করছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। কিছু কিছু অঙ্গ সংগঠনের জেলা কমিটিগুলোর বয়স পেরিয়ে গেছে এক থেকে দেড় দশকের বেশি। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে বিগত বছরগুলোতে বারবার হোঁচট খেয়েছে বিএনপির নানা আন্দোলন-কর্মসূচি। এমন পরিস্থিতিতে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলন সফল করতে এবার সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার ওপর জোর দিয়েছে বিএনপি। তারই প্রেক্ষিতে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর নির্দেশনা পেয়ে রাতদিন কাজ করছেন ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ মহানগরসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন ও সাংগঠনিক ইউনিট। দলের দায়িত্বশীল নেতারা জানান, সরকারের হামলা-মামলা আর নির্যাতনের কারণে এতদিন তারা সংগঠনকে গোছাতে না পারলেও এখন আন্দোলনের স্বার্থে যেভাবেই হোক তারা তৃণমূলের সাংগঠনিক ইউনিট কমিটি গঠন করতে চাইছেন। দলের ত্যাগী আর সক্রিয় নেতাদের সমন্বয়ে এসব কমিটি গঠনের জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। মে মাসের মধ্যে তাদেরকে এসব কমিটি জমা দেয়ার জন্যও তিনি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন।
সাংগঠনিক পুনর্গঠনের ব্যাপারে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রায় প্রতিটি থানা কমিটি প্রস্তুত করা হলেও রাজনৈতিক কারণে তা ঘোষণা দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এখন কেন্দ্রের নির্দেশনার কারণে খুব তাড়াতাড়ি তা সম্ভব হবে। জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব বলেন, সাংগঠনিক পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। তারা সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই কাজ করছেন। যথাযথ সময়েই কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করা হবে। এদিকে শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে স্বল্পসময়ের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশনাকে ভিন্নভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট নেতাদের কেউ কেউ। অভিযোগ উঠেছে, দায়িত্বশীল নেতারা নানা অনিয়মের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে পছন্দের লোকজনকে দিয়ে পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা মহানগর উত্তরের রূপনগর ও পল্লবী থানা বিএনপির প্রস্তাবিত কমিটিতে মৌসুমী নেতাদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে- এমন অভিযোগ করছেন স্থানীয় নেতারা। তারা জানান, বিগত দিনে এই থানায় আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদেরকে সাইডলাইনে বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে পল্লবী থানার বিএনপি নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর কাজী আলি ইমাম আসাদ বলেন, বিগত দিনের রাজনৈতিক মূল্যায়ন হলে সেভাবেই কমিটি হবে, তা না হলে নিজেদের লোক ভারী করার জন্য পকেট কমিটি হবে। আর পকেট কমিটি হলে দলও তার খেসারত দেবে। এদিকে মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক এজিএম শামসুল হকের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তুলেছেন একাধিক থানা বিএনপি নেতৃবৃন্দ। তাদের অভিযোগ, মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এমএ কাইয়ুমের আস্থাকে পুঁজি করে বিভিন্ন থানা কমিটি গঠনে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করছেন শামসুল হক। যা একদিকে এমএ কাইয়ুমকে বিতর্কিত ও অন্যদিকে কমিটি গঠনকে করছে বাধাগ্রস্ত।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় প্রথম থেকেই আইনি লড়াইকে গুরুত্ব দিয়েছে বিএনপি। মামলার রায় হওয়ার পর খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হলেও তার মুক্তির জন্য দীর্ঘ সাড়ে তিনমাস ধরে বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদান, অনশন, অবস্থানসহ নানা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে দলটি। কিন্তু দলটির এসব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও সরকার ও প্রশাসনের তরফে আসছে নানামুখী বাধা। প্রশাসনের বাধার কারণে একাধিক কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বিএনপি। তবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন কর্মসূচিতে প্রতিনিয়ত ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে তৃণমূলে। চিত্র উঠে এসেছে সারা দেশে দলটির সিনিয়র নেতাদের সাংগঠনিক সফরে। অন্যদিকে নিয়ম অনুযায়ী এ বছরের শেষদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। মাঝখানে মাত্র কয়েক মাস সময় বাকি থাকলেও একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রাথমিক কোনো লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে না সরকারের আচরণে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের কঠোর মনোভাবে সিনিয়র নেতারাও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন থেকে রাজপথের কর্মসূচিতে যাওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন দলীয় ফোরামে। আর কঠোর আন্দোলনের প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে সংগঠনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটির নীতিনির্ধারক ফোরাম। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, একমাত্র আইন-আদালত করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তার একমাত্র পথ হলো রাজপথ। কোনো আন্দোলন ছাড়া জনগণের কোনো দাবি আদায় করা সম্ভবপর হয়নি। যে পথে দাবি আদায় করা যাবে সেই পথ তাদের বেছে নিতে হবে। তাই রমজান মাসের পরে তাদের কঠোর কর্মসূচির পথ বেছে নিতে হবে। সেই প্রস্তুতি রয়েছে দলটির। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু এভাবে তাকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এখন ছাত্রদল-স্বেচ্ছাসেবক দলকে আন্দোলন করতে হবে।
এদিকে দলের ৭৮ সাংগঠনিক জেলার কমিটি পুনর্গঠনের একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে সবমিলিয়ে ৫১ সাংগঠনিক জেলা কমিটি পুনর্গঠন করতে পেরেছে দলটি। বাকি জেলাগুলোর মধ্যে খসড়া কমিটি প্রস্তুত রয়েছে ১৫টির। অন্য কমিটিগুলোর ব্যাপারে খোঁজখবরও নেয়া শুরু হয়েছে। এদিকে ২০১৭ বছরের ১৮ই এপ্রিল ঢাকা মহানগর বিএনপিকে উত্তর-দক্ষিণ দুইভাগে ভাগ করে নতুন কমিটি অনুমোদন দেয় বিএনপি। সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দুই কমিটির আওতায় রয়েছে ৪৯টি থানা কমিটি ও ৯০টি ওয়ার্ড কমিটি। যার সবগুলোই মেয়াদোত্তীর্ণ। কিন্তু দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময়েও সে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো পুনর্গঠন ও সক্রিয় করতে পারেনি মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির শীর্ষ নেতারা। দীর্ঘ এ সময়ে সংগঠন গোছানোর দিকে কার্যত কোনো দৃষ্টিই ছিল না তাদের। মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল মামলাজনিত কারণে বেশিরভাগ সময় থাকেন আড়ালে-আবডালে। সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারও এ ব্যাপারে তৎপর ছিলেন না। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ুম ইতালীয় নাগরিক হত্যা মামলার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই অবস্থান করছেন মালয়েশিয়ায়। কমিটি গঠনের আগে থেকে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করলেও তার সাংগঠনিক দক্ষতা ও প্রভাবের কারণে ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতৃত্ব পেয়েছিলেন তিনি। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সাবেক কমিশনার আহসান উল্লাহ হাসান। কিন্তু বিগত এক বছরে দলের সকল কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ দলের নীতিনির্ধারক মহল। অন্যদিকে ২০১৬ সালের ২৭শে অক্টোবর স্বেচ্ছাসেবক দল ও ২০১৭ সালের ১৬ই জানুয়ারি রাতে যুবদলের কমিটি গঠন হলেও এখন পর্যন্ত দুইটি সংগঠনই তাদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি। অন্য অঙ্গ সংগঠনগুলোর অবস্থাও একই। মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ায় দলীয় কর্মসূচিগুলোতে গা-ছাড়া ভাব দেখাচ্ছেন বিএনপির জেলা, মহানগরসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কমিটির নেতারা। নেতাকর্মীরা জানান, দলের গঠনতান্ত্রিক নিয়ম অনুযায়ী কমিটি পুনর্গঠন না হওয়ায় একদিকে নেতাদের মধ্যে থেকে হারিয়ে গেছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে প্রতিযোগিতার মনোভাব, অন্যদিকে তৈরি হচ্ছে না নতুন নেতৃত্ব। বিএনপিসহ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল সংগঠনই জোড়াতালির কমিটি দিয়েই পরিচালনা করছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। কিছু কিছু অঙ্গ সংগঠনের জেলা কমিটিগুলোর বয়স পেরিয়ে গেছে এক থেকে দেড় দশকের বেশি। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে বিগত বছরগুলোতে বারবার হোঁচট খেয়েছে বিএনপির নানা আন্দোলন-কর্মসূচি। এমন পরিস্থিতিতে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলন সফল করতে এবার সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার ওপর জোর দিয়েছে বিএনপি। তারই প্রেক্ষিতে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর নির্দেশনা পেয়ে রাতদিন কাজ করছেন ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ মহানগরসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন ও সাংগঠনিক ইউনিট। দলের দায়িত্বশীল নেতারা জানান, সরকারের হামলা-মামলা আর নির্যাতনের কারণে এতদিন তারা সংগঠনকে গোছাতে না পারলেও এখন আন্দোলনের স্বার্থে যেভাবেই হোক তারা তৃণমূলের সাংগঠনিক ইউনিট কমিটি গঠন করতে চাইছেন। দলের ত্যাগী আর সক্রিয় নেতাদের সমন্বয়ে এসব কমিটি গঠনের জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। মে মাসের মধ্যে তাদেরকে এসব কমিটি জমা দেয়ার জন্যও তিনি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন।
সাংগঠনিক পুনর্গঠনের ব্যাপারে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রায় প্রতিটি থানা কমিটি প্রস্তুত করা হলেও রাজনৈতিক কারণে তা ঘোষণা দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এখন কেন্দ্রের নির্দেশনার কারণে খুব তাড়াতাড়ি তা সম্ভব হবে। জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব বলেন, সাংগঠনিক পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। তারা সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই কাজ করছেন। যথাযথ সময়েই কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করা হবে। এদিকে শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে স্বল্পসময়ের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশনাকে ভিন্নভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট নেতাদের কেউ কেউ। অভিযোগ উঠেছে, দায়িত্বশীল নেতারা নানা অনিয়মের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে পছন্দের লোকজনকে দিয়ে পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা মহানগর উত্তরের রূপনগর ও পল্লবী থানা বিএনপির প্রস্তাবিত কমিটিতে মৌসুমী নেতাদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে- এমন অভিযোগ করছেন স্থানীয় নেতারা। তারা জানান, বিগত দিনে এই থানায় আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদেরকে সাইডলাইনে বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে পল্লবী থানার বিএনপি নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর কাজী আলি ইমাম আসাদ বলেন, বিগত দিনের রাজনৈতিক মূল্যায়ন হলে সেভাবেই কমিটি হবে, তা না হলে নিজেদের লোক ভারী করার জন্য পকেট কমিটি হবে। আর পকেট কমিটি হলে দলও তার খেসারত দেবে। এদিকে মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক এজিএম শামসুল হকের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তুলেছেন একাধিক থানা বিএনপি নেতৃবৃন্দ। তাদের অভিযোগ, মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এমএ কাইয়ুমের আস্থাকে পুঁজি করে বিভিন্ন থানা কমিটি গঠনে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করছেন শামসুল হক। যা একদিকে এমএ কাইয়ুমকে বিতর্কিত ও অন্যদিকে কমিটি গঠনকে করছে বাধাগ্রস্ত।
No comments