ছকিনার হাতে ভাজা মুড়ি by রিপন আনসারী
সেই বৌ কাল থেকেই মুড়ি ভাজি, এখনো অবিরাম চলছে তো চলছেই। প্রথম প্রথম খুবই কষ্ট হতো, এখন আগুনের তাপ গতরে সইয়ে গেছে। ভুষিভাঙ্গা ধানের হাতে ভাজা বিশেষ মুড়ি তৈরির নারী কারিগর ছকিনা বেগম এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের নবগ্রাম, ধলাই, উপাজানি ও সরুপাই গ্রামের সাগর মিয়া, তাহের আলী, আকবর, আনোয়ারসহ আরো বেশ কয়েকটি বাড়িতে চলছে হাতে ভাজা মুড়ি তৈরির ধুম। পুরুষদের পাশাপাশি বাড়ির গৃহিণীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে মুড়ি তৈরির কাজে। রমজান মাস শুরু হওয়ায় তাদের এই ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েক গুণ। ওই সব অঞ্চলের গৃহিণীদের হাতে ভাজা স্বাদে ভরপুর ও সুগন্ধ মুড়ির কদর সারা বছরের চাইতে রমজানে অনেক বেশি।
সরজমিন মানিকগঞ্জ-হরিরামপুর সড়ক সংলগ্ন নবগ্রাম ইউনিয়নের ধলাই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তাহের আলীর বাড়িজুড়ে হাতে ভাজা গরম মুড়ির অন্যরকম গন্ধ। বাড়ির মাটির চুলোতে মুড়ি ভাজতে দেখা যায় তাহের আলীর স্ত্রী ছকিনা বেগমকে। এখন তার বয়স প্রায় ৬০ বছর। এই বয়সেও ক্লান্তিহীনভাবে তৈরি করেন সু-স্বাদু মুড়ি। তার হাতের যাদুতে ভুষিভাঙ্গা মুড়ির সুনাম রয়েছে জেলা জুড়েই। শুধু মানিকগঞ্জ জেলাতেই নয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি দেশের বাইরেও যাচ্ছে ছকিনার বেগমের হাতে ভাজা মুড়ি।
ছকিনা বেগম বলেন, সেই ছোট্ট বয়সে স্বামীর সংসারে যেদিন পা রেখেছি সেদিন থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়ি মুড়ি তৈরিতে। প্রায় ৪৫ বছরের অধিক সময় ধরেই মিশে আছি মুড়ি ভাজার কাজে। আমাদের মুড়ির কদর আছে সবখানেই। সারা বছর মুড়ি ভাজি কিন্তু রমজান মাসে চাহিদা অনকে বেশি। তাই প্রতিদিনই আজানের সময় ঘুম থেকে উঠতে হয়। উঠেই বসে পড়ি চুলার পাড়ে। প্রায় বিকাল পর্যন্ত মুড়ি ভাজতে হয়। সারা দিন আগুনের পাড়ে বসে মুড়ি ভাজতে প্রথম প্রথম কষ্ট হতো কিন্তু এখন আর আগুনের তাপ গতরে লাগে না।
ছকিনা বেগমের স্বামী তাহের আলী বলেন, প্রায় ৪৫ বছর ধরে আমার বাড়িতে মুড়ি ভাজি। কিন্তু এখন আর আগের মতো সুখ নেই। স্বচ্ছলতা নেই সংসারে। পুঁজি না থাকায় মহাজনদের কাছ থেকে চড়া দামে ধান কিনতে হয়। শুধু তাই নয় কষ্ট করে ভেজে অল্প দামে মুড়িও দিতে হয় তাদের। মোট কথা লাভের অংশ পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলে। সরকার যদি আমাদের অল্প সুদে লোন দিতো তাহলে রবিশাল থেকে নিজেরা ধান কিনে মুড়ি ভাজতে পাড়তাম। লাভও বেশি হতো। মহাজনরা বাজারে নিয়ে এক কেজি মুড়ি বিক্রি করে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। কিন্তু আমাদের কাছ থেকে তারা নিচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া তারা ১ হাজার টাকা মণে ধান আনে বরিশাল থেকে। আর আমাদের তাদের কাছ থেকে কিনতে হয় ১৪৫০ টাকা মণ। ওরা ধান ও মুড়ি দুটোতেই লাভ করে। আমাদের শুধু কষ্ট আর কষ্ট। তারপর পূর্ব এই পেশাটিকে আমরা এখনো ধরে রেখেছি।
তাহের আলীর বাড়ির পাশে সাগর মিয়া। প্রায় ৩০ বছর ধরে হাতে মুড়ি তৈরি করে আসছেন। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে নিয়ে মুড়ি ভাজতে।
সাগর মিয়া জানালেন, প্রতি মণ ধানের দাম পড়ে ১৪৫০ টাকা। তাও আবার সেই ধান বরিশাল থেকে আনতে হয়। আগে আমরা নিজেরাই আনতাম। কিন্তু এখন পুঁজি না থাকায় মহাজনদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হয়। এক মণ ধানে মুড়ি হয় ২২ থেকে ২৪ কেজি। ভোর থেকে শুরু করে সারাদিনই মুড়ি ভাজতে হয়।
তিনি জানান, বাজারে আমাদের তৈরি হাতে ভাজা এই মুড়ির চাহিদা প্রচুর। সারা বছরের চাইতে রমজান মাসে চাহিদা দিগুন থাকে। তবে, খাটা খাটুনি বেশি, লাভ কম আর পুঁজির অভাবে আগ্রহ কমে যাচ্ছে। আগে আমাদের চার গ্রামে শতাধিক পরিবার থেকে কমে এখন মুড়ি তৈরি করছি আমরা মাত্র কিছু পরিবার। সরকারি সহায়তা পেলে নিজেরা ধান কিনে মুড়ি তৈরি করতে পারলে লাভ বেশি হতো।
এলাকার ইউপি সদস্য মো. রশিদ মিয়া জানান, এক সময় এই গ্রামগুলো মুড়ির গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রত্যেকটি বাড়িতে মুড়ি তৈরি করা হতো। কিন্তু বর্তমানে বাজারে আধুনিক মেশিন দিয়ে রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে মুড়ি উৎপাদন করায় এ অঞ্চলের মানুষের হাতে ভাজা মুড়ি তৈরিতে আগ্রহ হারিয়ে গেছে। স্থানীয় নবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাকিব হোসেন ফরহাদ জানালেন, আগে চার গ্রামে ১০০ পরিবারের মুড়ি ভাজার কাজ করতো। এখন কমে হয়েছে ২০ থেকে ২৫ পরিবার। এদের সরকারিভাবে সহযোগিতা দেয়া হলে নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি আবারো ফিরে আসতো এই পেশার লোকবল।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের নবগ্রাম, ধলাই, উপাজানি ও সরুপাই গ্রামের সাগর মিয়া, তাহের আলী, আকবর, আনোয়ারসহ আরো বেশ কয়েকটি বাড়িতে চলছে হাতে ভাজা মুড়ি তৈরির ধুম। পুরুষদের পাশাপাশি বাড়ির গৃহিণীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে মুড়ি তৈরির কাজে। রমজান মাস শুরু হওয়ায় তাদের এই ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েক গুণ। ওই সব অঞ্চলের গৃহিণীদের হাতে ভাজা স্বাদে ভরপুর ও সুগন্ধ মুড়ির কদর সারা বছরের চাইতে রমজানে অনেক বেশি।
সরজমিন মানিকগঞ্জ-হরিরামপুর সড়ক সংলগ্ন নবগ্রাম ইউনিয়নের ধলাই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তাহের আলীর বাড়িজুড়ে হাতে ভাজা গরম মুড়ির অন্যরকম গন্ধ। বাড়ির মাটির চুলোতে মুড়ি ভাজতে দেখা যায় তাহের আলীর স্ত্রী ছকিনা বেগমকে। এখন তার বয়স প্রায় ৬০ বছর। এই বয়সেও ক্লান্তিহীনভাবে তৈরি করেন সু-স্বাদু মুড়ি। তার হাতের যাদুতে ভুষিভাঙ্গা মুড়ির সুনাম রয়েছে জেলা জুড়েই। শুধু মানিকগঞ্জ জেলাতেই নয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি দেশের বাইরেও যাচ্ছে ছকিনার বেগমের হাতে ভাজা মুড়ি।
ছকিনা বেগম বলেন, সেই ছোট্ট বয়সে স্বামীর সংসারে যেদিন পা রেখেছি সেদিন থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়ি মুড়ি তৈরিতে। প্রায় ৪৫ বছরের অধিক সময় ধরেই মিশে আছি মুড়ি ভাজার কাজে। আমাদের মুড়ির কদর আছে সবখানেই। সারা বছর মুড়ি ভাজি কিন্তু রমজান মাসে চাহিদা অনকে বেশি। তাই প্রতিদিনই আজানের সময় ঘুম থেকে উঠতে হয়। উঠেই বসে পড়ি চুলার পাড়ে। প্রায় বিকাল পর্যন্ত মুড়ি ভাজতে হয়। সারা দিন আগুনের পাড়ে বসে মুড়ি ভাজতে প্রথম প্রথম কষ্ট হতো কিন্তু এখন আর আগুনের তাপ গতরে লাগে না।
ছকিনা বেগমের স্বামী তাহের আলী বলেন, প্রায় ৪৫ বছর ধরে আমার বাড়িতে মুড়ি ভাজি। কিন্তু এখন আর আগের মতো সুখ নেই। স্বচ্ছলতা নেই সংসারে। পুঁজি না থাকায় মহাজনদের কাছ থেকে চড়া দামে ধান কিনতে হয়। শুধু তাই নয় কষ্ট করে ভেজে অল্প দামে মুড়িও দিতে হয় তাদের। মোট কথা লাভের অংশ পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলে। সরকার যদি আমাদের অল্প সুদে লোন দিতো তাহলে রবিশাল থেকে নিজেরা ধান কিনে মুড়ি ভাজতে পাড়তাম। লাভও বেশি হতো। মহাজনরা বাজারে নিয়ে এক কেজি মুড়ি বিক্রি করে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। কিন্তু আমাদের কাছ থেকে তারা নিচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া তারা ১ হাজার টাকা মণে ধান আনে বরিশাল থেকে। আর আমাদের তাদের কাছ থেকে কিনতে হয় ১৪৫০ টাকা মণ। ওরা ধান ও মুড়ি দুটোতেই লাভ করে। আমাদের শুধু কষ্ট আর কষ্ট। তারপর পূর্ব এই পেশাটিকে আমরা এখনো ধরে রেখেছি।
তাহের আলীর বাড়ির পাশে সাগর মিয়া। প্রায় ৩০ বছর ধরে হাতে মুড়ি তৈরি করে আসছেন। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে নিয়ে মুড়ি ভাজতে।
সাগর মিয়া জানালেন, প্রতি মণ ধানের দাম পড়ে ১৪৫০ টাকা। তাও আবার সেই ধান বরিশাল থেকে আনতে হয়। আগে আমরা নিজেরাই আনতাম। কিন্তু এখন পুঁজি না থাকায় মহাজনদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হয়। এক মণ ধানে মুড়ি হয় ২২ থেকে ২৪ কেজি। ভোর থেকে শুরু করে সারাদিনই মুড়ি ভাজতে হয়।
তিনি জানান, বাজারে আমাদের তৈরি হাতে ভাজা এই মুড়ির চাহিদা প্রচুর। সারা বছরের চাইতে রমজান মাসে চাহিদা দিগুন থাকে। তবে, খাটা খাটুনি বেশি, লাভ কম আর পুঁজির অভাবে আগ্রহ কমে যাচ্ছে। আগে আমাদের চার গ্রামে শতাধিক পরিবার থেকে কমে এখন মুড়ি তৈরি করছি আমরা মাত্র কিছু পরিবার। সরকারি সহায়তা পেলে নিজেরা ধান কিনে মুড়ি তৈরি করতে পারলে লাভ বেশি হতো।
এলাকার ইউপি সদস্য মো. রশিদ মিয়া জানান, এক সময় এই গ্রামগুলো মুড়ির গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রত্যেকটি বাড়িতে মুড়ি তৈরি করা হতো। কিন্তু বর্তমানে বাজারে আধুনিক মেশিন দিয়ে রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে মুড়ি উৎপাদন করায় এ অঞ্চলের মানুষের হাতে ভাজা মুড়ি তৈরিতে আগ্রহ হারিয়ে গেছে। স্থানীয় নবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাকিব হোসেন ফরহাদ জানালেন, আগে চার গ্রামে ১০০ পরিবারের মুড়ি ভাজার কাজ করতো। এখন কমে হয়েছে ২০ থেকে ২৫ পরিবার। এদের সরকারিভাবে সহযোগিতা দেয়া হলে নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি আবারো ফিরে আসতো এই পেশার লোকবল।
No comments