যে উত্তাপ দানা বাঁধছে সিলেটে by ওয়েছ খছরু
সিলেটে
লা-মাযহাবীদের বিরুদ্ধে আলটিমেটামের পাশাপাশি আন্দোলনে নেমেছেন উলামা
পরিষদ। ইতিমধ্যে তারা লা-মাযহাবীদের বিরুদ্ধে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে
সর্বস্তরের মুসলমি জনতার সমাবেশ আহ্বান করেছে। এই সমাবেশ থেকে
লা-মাযহাবীদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা আসবে বলে
জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সিলেটের মীরের ময়দান ও কুমারপাড়া এলাকায় সম্প্রতি
সময়ে দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। বৃটেন থেকে অর্থ সংগ্রহের
মাধ্যমে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজ চলছে। সম্প্রতি সিলেটের জেলা
প্রশাসক নুমেরী জামান ও মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়ার কাছে দেয়া
স্মারকলিপিতে উলামা পরিষদ নেতারা জানিয়েছেন, তথাকথিত আহলে হাদিস নামক
লা-মাযহাবীরা নগরীতে তাদের দুটি সেন্টারের মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ও
ফিতনা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তারা ইসলামের প্রথম যুগ থেকে পবিত্র
মক্কা ও মদিনাসহ মুসলিমবিশ্বে রমজান মাসে চলে আসা ২০ রাকাআত তারাবিহর স্থলে
৮ রাকাআত তারাবিহ আদায়ের দাওয়াত করে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে।
তারা বলেন, সিলেটের সবকটি মসজিদে একই সময়ে আজান হয়ে থাকে। কিন্তু তাদের
পরিচালিত দুটি সেন্টার ও মসজিদে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আজানা হয়ে থাকে বিশেষ করে
পবিত্র রমজান মাসে মাগরিবের ৫ মিনিট আগে আযান প্রদানের মাধ্যমে মুসলমানদের
রোজা নষ্ট করার হীন ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। মহিলাদের পুরুষদের মসজিদে উপস্থিত
করার প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে। এছাড়াও ইসলামের মধ্যে আরো বেশ কিছু মীমাংসিত
মাসয়ালার প্রতি মানুষের মনে বিভ্রান্তি ও ফিতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে
তাদের সেন্টারগুলো। বুধবার রাতে সিলেটের বন্দরবাজার জামে মসজিদে উলামা
পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ঘোষিত কর্মসূচির মধ্য রয়েছে- আজ শুক্রবার
লা-মাযহাবীদের ভ্রান্ত বক্তব্য সংবলিত লিফলেট বিতরণ এবং জুমার খুতবায়
সিলেট নগরীর ৩৫০ মসজিদে তাদের ভ্রান্ত বক্তব্য সম্পর্কে গণসচেতনতামূলক বয়ান
এবং পরদিন শনিবার বিকাল ২টায় নগরীর কোর্ট পয়েন্টে সিলেটের সর্বস্তরের
মুসলিম জনতার সমাবেশ। পরিষদের সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম যাকারিয়ার
সভাপতিত্বে উলামা পরিষদের ২৭ ওয়ার্ডের সর্বস্তরের সদস্যবৃন্দকে নিয়ে
অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের উপদেষ্টা মাওলানা
মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহিব্বুর রহমান
মিঠিপুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন, পরিষদের সহসভাপতি ভার্থখলা
জামেয়ার প্রিন্সিপাল হাফিজ মাওলানা মজদুদ্দীন আহমদ, সহসভাপতি মাওলানা
রেজাউল করীম জলালী, বন্দরবাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুশতাক
আহমদ খান, শায়খুল হাদিস মাওলানা শরীফ উদ্দিন বসন্তপুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক
মাওলানা শামসুদ্দীন মু. ইলিয়াস, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হারুনুর রশীদ
আল-আযাদ, মাওলানা রশিদ আহমদ, মাওলানা মুহিব্বুর রহমান মুক্তির চক মাদরাসা,
মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, মাওলানা মাহমুদ শুয়াইব, মাওলানা আবুল হোসাইন
চতুলী, মাওলানা আহমদ সগীর, মাওলানা মাহমুদ হাসান, সমাজসেবী হারুন মিয়া,
ইমাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মো. হুরায়রা ইফফাত
হোসেন, মো. আবিদ হাসান, অ্যাডভোকেট মো. তানভীর আখতার খান, মাওলানা সালিক
আহমদ ও কাওছার মিয়া। এদিকে তৌহিদী জনতা ও উলামা পরিষদের আলটিমেটামের সময়
গতকাল শেষ হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে সিলেটে। আর এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে সিলেটে তৌহিদী
জনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও সাবেক মেয়র
বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন,
অসাম্প্রদায়িক ও সম্প্রীতির নগরীর এই সিলেটকে কোনোভাবে কলুষিত করতে দেয়া
যাবে না। তাই অঙ্কুরে ফিতনা সৃষ্টিকারীদের কার্যক্রম এর ব্যাপারে প্রশাসন
ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন,
ধর্মকে নিয়ে ফিতনা সৃষ্টিকারী ও ইসলামের অপব্যাখাকারীদের বিপক্ষে সিলেটের
তৌহিদী জনতা সবসময় সোচ্চার তাই মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারী এসব সেন্টার
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায় নিয়ে আসার আহবান জানান ও এসব সেন্টার
পরিচালনাকারীদের টাকার উৎসস্থল তদন্ত করার আহ্বান জানান।
No comments