নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গাদের ওপর ধ্বংসলীলার বর্ণনা দিল বৃটেন
রাখাইনে
রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও ধ্বংসলীলা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বৃটেন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এ নিয়ে শুনানিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরে আসা
জাতিসংঘে নিযুক্ত বৃটিশ রাষ্ট্রদূত ক্যারেন পিয়ার্স তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে
ধরেন। তিনি জাতিসংঘে বৃটেনের স্থায়ী প্রতিনিধি। সাক্ষ্যে তিনি বলেছেন,
রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান নেই। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ভূমি ও
গ্রামগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে সব।
মিয়ানমারে অবস্থানরত যেসব রোহিঙ্গা জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা
বলেছেন, তাদেরকে খুঁজছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের। তাদেরকে হুমকি
দেয়া হচ্ছে। আগে থেকেই তাদেরকে মুখ খুলতে বারণ করা হয়েছিল। এ ছাড়া রোহিঙ্গা
সঙ্কটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধান কি সে বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য পান নি তিনি। ১৪ই মে
তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি
রোহিঙ্গা সঙ্কট প্রত্যক্ষ করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করেন জাতিসংঘের
প্রতিনিধি দল। তাতে ছিলেন বৃটিশ রাষ্ট্রদূত ক্যারেন পিয়ার্স। তিনি এ নিয়ে
জাতিসংঘে যে বিবৃতি তিনি ৫ দফা পর্যবেক্ষণ বা সুপারিশ উপস্থাপন করেছেন।
তিনি বলেছেন, রাখাইন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। আমরা
হেলিকপ্টারে করে উত্তর রাখাইন পরিদর্শন করেছি। এ সময় আমাদের সঙ্গে ছিলেন
মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী ইউ কিয়াও তিন এ ছাড়া ইউনিয়ন
এন্টারপ্রাইজ ফর হিউম্যানিটারিয়ান এসিসট্যান্স, রিসেটেলমেন্ট অ্যান্ড
ডেভেলপমেন্ট (ইউইএইজআরডি) বিষয়ক মন্ত্রী ড. অং হতুন থেট। ক্যারেন আরো
বলেছেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের টিমের সদস্যরা আক্রান্ত এলাকার ওপর দিয়ে
উড়ে গিয়েছেন। এ সময় দেখা গেছে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে। মিয়ানমার
সরকার ফেরত যাওয়া রোহিহিঙ্গাদের জন্য যে আবাসনের ব্যবস্থা করেছে তা
পর্যবেক্ষণ করেছি আমরা। এর মধ্যে তালাত এলাকায় রয়েছে একটি অভ্যর্থনা
কেন্দ্র ও একটি ট্রানজিট সেন্টার। সেখানে ৩০ হাজার মানুষকে আবাসিক সুবিধা
দেয়া হতে পারে। ক্যারেন বলেন, উত্তর রাখাইনের স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে
আমরা সাক্ষাত করেছে। কথা বলেছি মুসলিম ও হিন্দু গ্রুপগুলোর সঙ্গে। আরসা
কট্টরপন্থিদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের
সঙ্গে সাক্ষাত করেছি। যেসব রোহিঙ্গার বাড়ি সরকার নির্মাণ করে দিয়েছে তাদের
সঙ্গে কথা হয়েছে। সিতওয়ে বিমানবন্দরে আমাদের সঙ্গে সাক্ষাত হয়েছে নাগরিক
সমাজের সদস্যদের। এরপরই নিজের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি।
ক্যারেন বলেন, আমরা যা প্রত্যক্ষ করেছি সেখান থেকে কিছুটা নিরাপত্তা
পরিষদের সামনে তুলে ধরবো।
১. প্রথমত আমি যে বিষয়টিতে নজর দেবো তা হলো ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতা। আমার পেশাগত জীবনে এমন একটি ক্যাম্প এর আপগে কখনো দেখি নি। শরণার্থীরা সেখানে কি পরিমাণ প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছে, সরকার কি অবস্থায় ছিল, জাতিসংঘ সেখানে কি পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে তা দেখে আমি অত্যন্ত বিস্মিত। আকাশ থেকে আমরা দেখতে পেয়েছি ব্যাপক ধ্বংসলীলা। এ টাই বাংলাদেশে এত বিশাল শরণার্থী শিবিরের একটি বড় কারণ।
২. দ্বিতীয়ত মিয়ানমার সরকাররকে তার দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে হবে। তাদের সাড়া বৃদ্ধি করতে হবে। তাদেরকে সহায়তা করতে শর্তহীন সুযোগ দিতে হবে জাতিসংঘকে। শুধু জাতিসংঘের আছে টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ। তারা জানে কিভাবে এই ভয়াবহ মাত্রার ঘটনা মোকাবিলা করতে হয়। মিয়ানমারে দুটি রিসিপশন সেন্টার আছে। এ দুটি সেন্টার দিয়ে তারা দিনে সর্বোচ্চ ৩০০ মানুষকে ফেরত নিতে পারবে। এমনিতেই সেখানে আছেন ৯০ হাজার শরণার্থী। ফলে এতটা জায়গা সেখানে নেই, যাতে খুব বেশি সংখ্যক শরণার্থী দেশে ফিরে যেতে পারবে। আমি বলেছি, এ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে জড়িত করা উচিত। কারণ বিশ্বে এটিই একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান যাদের এত বড় ভয়াবহতায় সহায়তা দেয়ার সক্ষমতা আছে।
৩. দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান কি সে সম্পর্কে আমাদেরকে যথেষ্ট তথ্য দেয়া হয় নি। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা জানতে পেরেছেন যে, শরণার্থীরা ফিরে গেলে তাদেরকে অস্থায়ী ভিত্তিতে ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হবে। কিন্তু কিভাবে এবং কোন সময়সীমার মধ্যে তারা প্রকৃতপক্ষে তাদের গ্রামে ফিরে যেতে পারবেন সে বিষয়ে আস্থা রাখা যায় এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। নিরাপত্তা পরিষদ এটা জেনে আহত হয়েছে যে, ২০১২ সাল থেকে সিতওয়েতে এমন ক্যাম্প আছে।
৪. আমার চতুর্থ পর্যবেক্ষণ হলো, ইউইএইচআরডির উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা জানতে পেরেছেন। এ পরিকল্পনায় বেসরকারি পর্যায়ে অর্থায়ন করা হচ্ছে। এর অধীনে রয়েছে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া আয়োজানের সুস্পষ্ট আয়োজন। এক্ষেত্রে আমার দুটি পয়েন্ট আছে। তা হলো- বেসরকারি অর্থায়নের ঝুঁকি রয়েছে। রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণ ছাড়া যাই করা হোক তাতে বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। এটা কোনো সমাধান নয়। রাখাইনের উন্নয়ন নিয়ে মিয়ানমার সরকার যে গভীরভাবে সচেতন সে বিষয়টি আমরা মেনে নিয়েছি। তবে এ াবস্থায় রোহিঙ্গাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানো শুরু হলে তা নিরাপদ হবে না। মিয়ানমার সরকার ও সমস্যার গভীরতার প্রেক্ষিতে আমি আহত হই। রাজনৈতিক ইস্যু মোকাবিলায় সামান্যই অগ্রগতি আছে। রাজনৈতিক এসব ইস্যুতে সুপারিশ উত্থাপন করেছেন আনান কমিশন। তারা বলেছেন, সাম্প্রদায়িক পুনরেকত্রীকরণের কথা। রোহিঙ্গাদেরকে নিয়মিত নাগরিক দেয়ার কথা। স্বাধীনভাএব চলাচল ও শিক্ষা ও জীবিকা নির্বাহের মতো স্বাধীন অধিকারগুলো তাদেরকে দিতে হবে। আরসার হামলা চালানো সম্পর্কে আমরা কিছু গ্রামবাসী ও কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। তাই সব মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগ আছে তা জবাবদিহিতায় আনা উচিত। তবু আমি আবার পয়েন্টে ফিরে আসছি। তাহলো আমরা গিয়েছিলাম রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে। এ সঙ্কটের সবচেয়ে বড় অংশ হলো রোহিঙ্গা।
৫. সম্প্রতি আমরা রিপোর্ট পাচ্ছি। তাতে বরা হচ্ছে, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের যারা কথা বলেছেন তাদেরকে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা হুমকি দিচ্ছে। তারা আগেই রোহিঙ্গা গ্রামবাসীকে হুমকি দিয়েছিল। বলেছিল, কোনোভাবেই যেন নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তারা অবাধে কথা না বলে। কিন্তু তারা বলেছেন। তাই নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলার জন্য কাউকে হুমকি, ভীতি প্রদর্শন করা হবে এটা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি আশা করি এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকার জরুরি ভিত্তিতে ব্যাখ্যা দেবে।
১. প্রথমত আমি যে বিষয়টিতে নজর দেবো তা হলো ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতা। আমার পেশাগত জীবনে এমন একটি ক্যাম্প এর আপগে কখনো দেখি নি। শরণার্থীরা সেখানে কি পরিমাণ প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছে, সরকার কি অবস্থায় ছিল, জাতিসংঘ সেখানে কি পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে তা দেখে আমি অত্যন্ত বিস্মিত। আকাশ থেকে আমরা দেখতে পেয়েছি ব্যাপক ধ্বংসলীলা। এ টাই বাংলাদেশে এত বিশাল শরণার্থী শিবিরের একটি বড় কারণ।
২. দ্বিতীয়ত মিয়ানমার সরকাররকে তার দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে হবে। তাদের সাড়া বৃদ্ধি করতে হবে। তাদেরকে সহায়তা করতে শর্তহীন সুযোগ দিতে হবে জাতিসংঘকে। শুধু জাতিসংঘের আছে টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ। তারা জানে কিভাবে এই ভয়াবহ মাত্রার ঘটনা মোকাবিলা করতে হয়। মিয়ানমারে দুটি রিসিপশন সেন্টার আছে। এ দুটি সেন্টার দিয়ে তারা দিনে সর্বোচ্চ ৩০০ মানুষকে ফেরত নিতে পারবে। এমনিতেই সেখানে আছেন ৯০ হাজার শরণার্থী। ফলে এতটা জায়গা সেখানে নেই, যাতে খুব বেশি সংখ্যক শরণার্থী দেশে ফিরে যেতে পারবে। আমি বলেছি, এ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে জড়িত করা উচিত। কারণ বিশ্বে এটিই একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান যাদের এত বড় ভয়াবহতায় সহায়তা দেয়ার সক্ষমতা আছে।
৩. দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান কি সে সম্পর্কে আমাদেরকে যথেষ্ট তথ্য দেয়া হয় নি। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা জানতে পেরেছেন যে, শরণার্থীরা ফিরে গেলে তাদেরকে অস্থায়ী ভিত্তিতে ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হবে। কিন্তু কিভাবে এবং কোন সময়সীমার মধ্যে তারা প্রকৃতপক্ষে তাদের গ্রামে ফিরে যেতে পারবেন সে বিষয়ে আস্থা রাখা যায় এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। নিরাপত্তা পরিষদ এটা জেনে আহত হয়েছে যে, ২০১২ সাল থেকে সিতওয়েতে এমন ক্যাম্প আছে।
৪. আমার চতুর্থ পর্যবেক্ষণ হলো, ইউইএইচআরডির উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা জানতে পেরেছেন। এ পরিকল্পনায় বেসরকারি পর্যায়ে অর্থায়ন করা হচ্ছে। এর অধীনে রয়েছে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া আয়োজানের সুস্পষ্ট আয়োজন। এক্ষেত্রে আমার দুটি পয়েন্ট আছে। তা হলো- বেসরকারি অর্থায়নের ঝুঁকি রয়েছে। রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণ ছাড়া যাই করা হোক তাতে বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। এটা কোনো সমাধান নয়। রাখাইনের উন্নয়ন নিয়ে মিয়ানমার সরকার যে গভীরভাবে সচেতন সে বিষয়টি আমরা মেনে নিয়েছি। তবে এ াবস্থায় রোহিঙ্গাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানো শুরু হলে তা নিরাপদ হবে না। মিয়ানমার সরকার ও সমস্যার গভীরতার প্রেক্ষিতে আমি আহত হই। রাজনৈতিক ইস্যু মোকাবিলায় সামান্যই অগ্রগতি আছে। রাজনৈতিক এসব ইস্যুতে সুপারিশ উত্থাপন করেছেন আনান কমিশন। তারা বলেছেন, সাম্প্রদায়িক পুনরেকত্রীকরণের কথা। রোহিঙ্গাদেরকে নিয়মিত নাগরিক দেয়ার কথা। স্বাধীনভাএব চলাচল ও শিক্ষা ও জীবিকা নির্বাহের মতো স্বাধীন অধিকারগুলো তাদেরকে দিতে হবে। আরসার হামলা চালানো সম্পর্কে আমরা কিছু গ্রামবাসী ও কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। তাই সব মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগ আছে তা জবাবদিহিতায় আনা উচিত। তবু আমি আবার পয়েন্টে ফিরে আসছি। তাহলো আমরা গিয়েছিলাম রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে। এ সঙ্কটের সবচেয়ে বড় অংশ হলো রোহিঙ্গা।
৫. সম্প্রতি আমরা রিপোর্ট পাচ্ছি। তাতে বরা হচ্ছে, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের যারা কথা বলেছেন তাদেরকে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা হুমকি দিচ্ছে। তারা আগেই রোহিঙ্গা গ্রামবাসীকে হুমকি দিয়েছিল। বলেছিল, কোনোভাবেই যেন নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তারা অবাধে কথা না বলে। কিন্তু তারা বলেছেন। তাই নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলার জন্য কাউকে হুমকি, ভীতি প্রদর্শন করা হবে এটা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি আশা করি এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকার জরুরি ভিত্তিতে ব্যাখ্যা দেবে।
No comments