ফুঁসছে ফিলিস্তিন, বিশ্বনেতাদের নিন্দা, তুরস্কে ৩ দিনের শোক
ইসরাইলি
সেনাদের নৃশংস হামলায় কমপক্ষে ৫৫ জন নিহত হওয়ার পর ক্ষোভে ফুঁসছে পুরো
ফিলিস্তিন। আজ মঙ্গলবারও সেখানে নতুন করে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ হওয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা থাকবে বিশেষ করে গাজায়। সোমবার
সেখানে যেসব মানুষকে হত্যা করেছে ইসরাইলিরা আজ তাদেরকে দাফন করার কথা।
ইসরাইলের এই হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ব। সহিংসতার বিষয়ে
নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি খসড়া
প্রস্তাব উত্থাপন করেছে কুয়েত। এতে তীব্র ক্ষোভ ও বেদনা প্রকাশ করা হয়েছে।
কিন্তু কুয়েতের উদ্যোগকে জাতিসংঘে আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয়
ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মঘেরিনি ও বৃটেন উভয় পক্ষকে বিরত
থাকার আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিক্রিয়া দিয়েছে জার্মানিও। তারা বলেছে,
আত্মরক্ষার অধিকার আছে ইসরাইলের। কিন্তু সেটা হতে হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বিক্ষোভকারীদের ওপর ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নৃশংস হামলার কড়া নিন্দা প্রকাশ
করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। ফিলিস্তিনিদের ওপর
ইসরাইলের ‘গণহত্যা’র দায় যুক্তরাষ্ট্রের। এমন কথা বলেছে তুরস্ক। তারা
প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের তলব করার কথা
জানিয়েছে। তবে সবচেয়ে কড়া প্রতিবাদ ও নিন্দা এসেছে মানবাধিকার বিষয়ক
জাতিসংঘের হাই কমিশনার জায়েদ রাদ আল হোসেনের পক্ষ থেকে। তিনি এতগুলো মানুষ
হত্যায় হতাশা প্রকাশ করে নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, ইসরাইলের সরাসরি গুলিতে
এত মানুষ মরেছেন। আহত হয়েছেন কয়েক শত। অন্যদিকে ইসরাইলে নিযুক্ত
রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে দক্ষিণ আফ্রিকাও। তারা ইসরাইলের হামলার তীব্র
নিন্দা জানিয়েছে। বলেছে, ইসরাইলের সর্বশেষ এই হামলা বৈষম্যমুলক ও ভয়াবহ
প্রকৃতির। সোমবার ছিল ফিলিস্তিনিদের কাছে ‘নাকবা’ বা ধ্বংসযজ্ঞ দিবসের ৭০তম
বার্ষিকী। ১৯৪৮ সালে ইসরাইলকে সৃষ্টি করার পর এদিন হাজার হাজার মানুষকে
পালাতে হয়েছিল। এ ছাড়া সোমবারই যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমে তার দূতাবাস
উদ্বোধন করেছে। এ নিয়ে বিশ্বজোড়া ক্ষোভ ও বিতর্ক রয়েছে। বিশ্বের কারো কথায়
কান দিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কোনো প্রেসিডেন্টের পথ অনুসরণ না করে,
পররাষ্ট্রনীতির তোয়াক্কা না করে, একতরফাভাবে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প
জেরুজালেমকে গত ডিসেম্বরে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। ঘোষণা দেন
তেল আবিবে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সেখানে স্থানান্তর করবেন। সেই
কথামতো সোমবার দূতাবাস স্থানান্তর কর হয়। এ দুটি ইস্যুতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে
ফিলিস্তিনিরা। কারণ, তারা পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের
রাজধানী হিসেবে দাবি করেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যে স্বীকৃতি ইসরাইলকে
দিয়েছে তাতে ফিলিস্তিনিরা মনে করছেন, পুরো জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ ইসরাইলের
হাতে থাকবে আর তাতে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবারের সহিংসতা নিয়ে
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, নিহত হওয়া ছাড়াও ওইদিন কমপক্ষে ২৭০০ মানুষ
আহত হয়েছে। ২০১৪ সালে গাজায় যে যুদ্ধ করে ইসরাইলিরা তারপর এটাই সবচেয়ে
ভয়াবহ হামলার দিন। তবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু উল্টো
দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, গাজার ইসলামপন্থি শাসকগোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে
আত্মরক্ষামুলক ব্যবস্থা নিয়েছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। হামাস চায় ইসরাইলকে
ধ্বংস করতে। কিন্তু তার এ দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছেন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। তারা
এই হত্যাযজ্ঞকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছে। ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন
নিয়ে কথা বলেছে জাতিসংঘ। এর ফলে মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসির জরুরি বৈঠক
আহ্বান করেছে তুরস্ক। সোমবার তুরস্ক সরকারের এক মুখপাত্র এ কথা বলেছেন।
তুরস্কের আহ্বানে ৫৭ সদস্যের এই সংগঠনের বৈঠক ডাকা হয়েছে শুক্রবার।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সরানোকে কেন্দ্র করে ও গাজা সহিংসতায়
সবচেয়ে কড়া সমালোচনাকারী দেশ তুরস্ক। গাজায় সোমবার যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে
তাদের জন্য তুরস্কে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট
রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান ইসরাইলকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত
করেছেন।
No comments