অবরোধ বিক্ষোভ ধর্মঘট
ছবি: নাসির উদ্দিন, মানবজমিন |
সরকারি
চাকরিতে কোটা বাতিলের ঘোষণার প্রজ্ঞাপন দাবিতে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি
পালন করেছে আন্দোলনকারীরা। একই সঙ্গে সারা দেশে কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে
ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিও অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সকাল থেকে দেশব্যাপী
সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। তালা দেয়া হয়েছে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে। বন্ধ ছিল সব বিভাগের ক্লাস। তবে
কয়েকটি বিভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাজধানী শাহবাগ মোড়ের সড়ক অবরোধ করে। এসময়
আশেপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।
তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন অবরোধের আওতামুক্ত ছিল।
কোটা সংস্কারের দাবিতে গঠিত প্ল্যাটফরম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার
সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। কোটা বাতিল নিয়ে
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ৩২ দিনেও প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় বেশ কয়েক দফায়
আলটিমেটাম শেষে গত রোববার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের
ডাক দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফরম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র
অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এদিকে দুপুর থেকে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে সন্ধ্যা
৭টার দিকে তা স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। তবে পূর্বঘোষিত ক্লাস-পরীক্ষা
বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জনান আন্দোলনকারীদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল
হক নুর। এদিকে একই দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের
অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সড়ক অবরোধসহ
বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায়
আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয়। এরপর
দুপুর ১১টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল কলা ভবন, মল চত্বর, ব্যবসায় শিক্ষা
অনুষদ, সূর্যসেন হল, প্রশাসনিক ভবন, ভিসি চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার,
কার্জন হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে
আন্দোলনকারীরা। এরপর দুপুর পৌনে ১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে
তারা। সেখানে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনের দাবিতে ‘প্রজ্ঞাপন নিয়ে টালবাহানা,
চলবে না চলবে না’; ‘আর নয় কালক্ষেপণ, দিতে হবে প্রজ্ঞাপন’; ‘হামলা করে
আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’; ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নেই’;
‘কোটা দিয়ে কামলা নয়, মেধা দিয়ে আমলা চাই’; ‘শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত, বৃথা
যেতে দিবো না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়
না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলে জানায় তারা। কোনো অনুপ্রবেশকারী
আন্দোলনে ঢুকে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে
লক্ষ্যে কর্মসূচি ঘিরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ১৫০ জন
স্বেচ্ছাসেবককে দায়িত্ব দেয়া হয়। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বলছে,
এর বাইরে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে তারা দায় নেবেন না। এছাড়া, দুষ্কৃতকারী পেলে
প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়া হবে। এসময় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ
পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক বলেন, ‘যতক্ষণ কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি
হবে না ততক্ষণ আমাদের অবরোধ কর্মসূচি চলবে। প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের
ঘোষণা দেয়ার এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে
প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি, তাই আমরা বাধ্য হয়ে আবারো অন্দোলনে নেমেছি।’ তিনি
বলেন, ‘এবার আমরা দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরে যাবো না। যতক্ষণ আমাদের দাবি
পূরণ (প্রজ্ঞাপন জারি) হবে না ততক্ষণ আমরা শাহবাগে অবস্থান করবো। কেউ ঘরে
ফিরে যাবো না।’
বিকালে আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর সন্ধ্যা ৭টায় শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় আন্দোলনকারীরা। এসময় আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোটা বাতিল ঘোষণার ৩৩ দিন পরও প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় ছাত্র সমাজ বিক্ষুব্ধ হয়েছে। এছাড়া আমাদের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর সারা দেশে হামলা করায় তারা ক্ষুব্ধ। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে আজকের অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করছি। তবে পূর্বঘোষিত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলবে।
এদিকে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। জেলায় জেলায় বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরাও গতকাল একই আন্দোলন করেছে। বিক্ষোভের পাশাপাশি তারা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। পালন করেছে অবস্থান কর্মসূচি। কোটাবিরোধী মিছিলে প্রদক্ষিণ করেছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। যোগ দেয় শত-সহস্র শিক্ষার্থী। এতে বিভিন্ন জেলায় যান ও ট্রেন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। দৈনিক মানবজমিনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে জানা যায়-
জাবিতে বিক্ষোভ: জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণাকে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার সোয়া ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি ইউনিট’র ব্যানারে মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে তা শেষ হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েকটি বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা।
জাবিতে সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণায় ছাত্রসমাজের মাঝে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। কিন্তু সেই ঘোষণাকে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ না করায় বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। সরকারের মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেয়ায় তা আরো বাড়ছে। এ সময় দ্রুত কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের দাবি জানান তারা। বিক্ষোভ মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।
চবিতে শাটল ট্রেন অবরোধ: কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণার পর সোমবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ জেলার প্রায় সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে ধর্মঘট পালন করেছে। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর ষোলশহর রেল স্টেশনে সমবেত হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন আটকে দেয় আন্দোলনকারীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তারা সোমবার সকাল থেকে ধর্মঘট পালন শুরু করেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক ধর্মঘট চলবে।
সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের চবি শাখার প্রধান সমন্বয়ক আরজু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে সরকারি চাকরি থেকে সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পর এক মাস পেরিয়ে গেলেও গেজেট জারি না হওয়ায় এ ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সোমবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে নগরীর ষোলশহর রেল স্টেশনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা রেললাইন অবরোধ করে রাখেন। এতে বন্ধ হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় রুটে শাটল ট্রেন চলাচল। ফলে চট্টগ্রাম শহর থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি।
ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. শাহাবউদ্দিন জানান, আন্দোলকারী কিছু শিক্ষার্থী সকালে ক্যামপাসগামী প্রথম শাটল ট্রেনটি আটকে দেয়। দ্বিতীয় শাটল ট্রেনটিও নগরীর কদমতলি বটতলী রেল স্টেশন থেকে ছাড়া সম্ভব হয়নি।
রাবি শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন: দ্রুত কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ক্লাস বর্জন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা ‘গেজেট প্রজ্ঞাপনে কত দেরি পাঞ্জেরি’, ‘আর নয় কালক্ষেপণ, জারি কর প্রজ্ঞাপন’, ‘আর কোনো দাবি নাই, কোটা বাতিলের গেজেট চাই’, ‘আর নয় ছলচাতুরী, প্রজ্ঞাপন চাই তাড়াতাড়ি’ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয়। বেলা ৩টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে আবার সেখানে গিয়ে শেষ হয়।
আন্দোলনকারী সংগঠনের রাবি শাখার সমন্বয়ক মাসুদ মোন্নাফ বলেন, প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, আন্দোলনকারীরা সকালে বাস চলতে দেয়নি। তবে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হওয়ায় বিশৃঙ্খলা এড়াতে তাদেরকে বাধা দেয়া হয়নি।
শাবিতে অবস্থান কর্মসূচি: একই দাবিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট এর সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার সকাল ৮টায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ডাকা ছাত্রধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান ফটক হতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে এসে শিক্ষার্থীরা সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। কিন্তু তার কোটা বাতিলের নির্দেশ দেয়ার এক মাসের বেশি সময় অতিক্রম হওয়ার পরও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় আমরা আশাহত হয়েছি। আমাদের আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। কোনো সরকারবিরোধী আন্দোলন নয়। আজ যদি প্রজ্ঞাপন জারি হয়, আজই আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যাব। এদিকে বিভিন্ন বিভাগে চলমান সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ধর্মঘটের আওতামুক্ত থাকায় বিভিন্ন বিভাগে ক্লাস ও পরীক্ষা অব্যাহত ছিল। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে।
ইবিতে মানববন্ধন: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একই বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। সোমবার বেলা ১১টা থেকে একই সংগঠনের ব্যানারে ওই কর্মসূচি পালন করে তারা। দুই ঘণ্টাব্যাপী ক্লাস বর্জন করে তারা বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসের ডায়না চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি বিভিন্ন অনুষদ ও সড়ক প্রদক্ষিণ করে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিবের সামনে গিয়ে জড়ো হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। বাড়তে থাকে সমাবেশ। পরে তারা মেইন গেট পেরিয়ে খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশে মানববন্ধন করে। এ সময় তারা কোটা সংস্কার ও প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে।
মানববন্ধন শেষে আন্দোলনকারীরা রমজানের মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। সেই সঙ্গে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রের সকল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি শেষ করা হয়।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত। বাকি ৪৪ শতাংশ পদ পূরণ হয় সাধারণ প্রতিযোগিতায়। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত। ওই কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি তুলেছিল আন্দোলনকারী ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। একই সঙ্গে কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণের দাবিও ছিল তাদের। ওই আন্দোলনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ই এপ্রিল জাতীয় সংসদে আর কোনো কোটাই থাকবে না বলে ঘোষণা দেন। এর এক মাসেও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় আবার মাঠে নেমেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিকালে আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর সন্ধ্যা ৭টায় শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় আন্দোলনকারীরা। এসময় আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোটা বাতিল ঘোষণার ৩৩ দিন পরও প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় ছাত্র সমাজ বিক্ষুব্ধ হয়েছে। এছাড়া আমাদের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর সারা দেশে হামলা করায় তারা ক্ষুব্ধ। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে আজকের অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করছি। তবে পূর্বঘোষিত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলবে।
এদিকে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। জেলায় জেলায় বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরাও গতকাল একই আন্দোলন করেছে। বিক্ষোভের পাশাপাশি তারা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। পালন করেছে অবস্থান কর্মসূচি। কোটাবিরোধী মিছিলে প্রদক্ষিণ করেছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। যোগ দেয় শত-সহস্র শিক্ষার্থী। এতে বিভিন্ন জেলায় যান ও ট্রেন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। দৈনিক মানবজমিনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে জানা যায়-
জাবিতে বিক্ষোভ: জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণাকে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার সোয়া ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি ইউনিট’র ব্যানারে মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে তা শেষ হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েকটি বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা।
জাবিতে সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণায় ছাত্রসমাজের মাঝে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। কিন্তু সেই ঘোষণাকে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ না করায় বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। সরকারের মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেয়ায় তা আরো বাড়ছে। এ সময় দ্রুত কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের দাবি জানান তারা। বিক্ষোভ মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।
চবিতে শাটল ট্রেন অবরোধ: কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণার পর সোমবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ জেলার প্রায় সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে ধর্মঘট পালন করেছে। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর ষোলশহর রেল স্টেশনে সমবেত হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন আটকে দেয় আন্দোলনকারীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তারা সোমবার সকাল থেকে ধর্মঘট পালন শুরু করেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক ধর্মঘট চলবে।
সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের চবি শাখার প্রধান সমন্বয়ক আরজু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে সরকারি চাকরি থেকে সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পর এক মাস পেরিয়ে গেলেও গেজেট জারি না হওয়ায় এ ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সোমবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে নগরীর ষোলশহর রেল স্টেশনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা রেললাইন অবরোধ করে রাখেন। এতে বন্ধ হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় রুটে শাটল ট্রেন চলাচল। ফলে চট্টগ্রাম শহর থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি।
ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. শাহাবউদ্দিন জানান, আন্দোলকারী কিছু শিক্ষার্থী সকালে ক্যামপাসগামী প্রথম শাটল ট্রেনটি আটকে দেয়। দ্বিতীয় শাটল ট্রেনটিও নগরীর কদমতলি বটতলী রেল স্টেশন থেকে ছাড়া সম্ভব হয়নি।
রাবি শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন: দ্রুত কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ক্লাস বর্জন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা ‘গেজেট প্রজ্ঞাপনে কত দেরি পাঞ্জেরি’, ‘আর নয় কালক্ষেপণ, জারি কর প্রজ্ঞাপন’, ‘আর কোনো দাবি নাই, কোটা বাতিলের গেজেট চাই’, ‘আর নয় ছলচাতুরী, প্রজ্ঞাপন চাই তাড়াতাড়ি’ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয়। বেলা ৩টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে আবার সেখানে গিয়ে শেষ হয়।
আন্দোলনকারী সংগঠনের রাবি শাখার সমন্বয়ক মাসুদ মোন্নাফ বলেন, প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, আন্দোলনকারীরা সকালে বাস চলতে দেয়নি। তবে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হওয়ায় বিশৃঙ্খলা এড়াতে তাদেরকে বাধা দেয়া হয়নি।
শাবিতে অবস্থান কর্মসূচি: একই দাবিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট এর সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার সকাল ৮টায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ডাকা ছাত্রধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান ফটক হতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে এসে শিক্ষার্থীরা সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। কিন্তু তার কোটা বাতিলের নির্দেশ দেয়ার এক মাসের বেশি সময় অতিক্রম হওয়ার পরও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় আমরা আশাহত হয়েছি। আমাদের আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। কোনো সরকারবিরোধী আন্দোলন নয়। আজ যদি প্রজ্ঞাপন জারি হয়, আজই আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যাব। এদিকে বিভিন্ন বিভাগে চলমান সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ধর্মঘটের আওতামুক্ত থাকায় বিভিন্ন বিভাগে ক্লাস ও পরীক্ষা অব্যাহত ছিল। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে।
ইবিতে মানববন্ধন: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একই বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। সোমবার বেলা ১১টা থেকে একই সংগঠনের ব্যানারে ওই কর্মসূচি পালন করে তারা। দুই ঘণ্টাব্যাপী ক্লাস বর্জন করে তারা বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসের ডায়না চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি বিভিন্ন অনুষদ ও সড়ক প্রদক্ষিণ করে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিবের সামনে গিয়ে জড়ো হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। বাড়তে থাকে সমাবেশ। পরে তারা মেইন গেট পেরিয়ে খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশে মানববন্ধন করে। এ সময় তারা কোটা সংস্কার ও প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে।
মানববন্ধন শেষে আন্দোলনকারীরা রমজানের মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। সেই সঙ্গে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রের সকল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি শেষ করা হয়।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত। বাকি ৪৪ শতাংশ পদ পূরণ হয় সাধারণ প্রতিযোগিতায়। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত। ওই কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি তুলেছিল আন্দোলনকারী ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। একই সঙ্গে কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণের দাবিও ছিল তাদের। ওই আন্দোলনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ই এপ্রিল জাতীয় সংসদে আর কোনো কোটাই থাকবে না বলে ঘোষণা দেন। এর এক মাসেও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় আবার মাঠে নেমেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
No comments