সিলেটে কাউন্সিলর শেপীর ‘ক্ষোভ’ by ওয়েছ খছরু
এবার
ক্ষুব্ধ সিলেটের কাউন্সিলর সালেহা কবির শেপী। আর সেই ক্ষোভের বিচার পেতে
যাচ্ছেন সহকর্মী কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারে। তিনি অপমানের বিচার চান। সিটি
করপোরেশনের ভেতরেই তাকে অপদস্থ করা হয়েছে। এর আগে তার মতো মহিলা কাউন্সিলর
দিবা রানী দে, আমেনা বেগম রুমি, অ্যাডভোকেট রোকশানা বেগম শাহনাজ ও শামীমা
স্বাধীনকে বিভিন্ন সময় অপদস্থ করা হয়েছিল। কোনো বিচার হয়নি। বরং প্রতিটি
ঘটনাই ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। এ কারণে সিলেট সিটি করপোরেশন থেকে অনেক মহিলা
কাউন্সিলর ক্রমেই বিমুখ হচ্ছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের ২২, ২৩ ও ২৪ নম্বর
ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সালেহা কবির শেপী। তিনি এ নিয়ে পরপর
তিনবারের সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর। বিএনপি দলীয় এই মহিলা কাউন্সিলর
ব্যাপক জনপ্রিয় এলাকায়। মানুষের সুখে দুঃখে তিনি সব সময় ছুটে যান। এ কারণে
এলাকার উন্নয়ন করতে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই চেষ্টার অংশ হিসেবে ১৫
দিন আগে তিনটি মসজিদ ও একটি গোরস্তানকে আলোকিত করতে সিলেট সিটি করপোরেশনের
ইলেট্রনিক শাখার প্রধান রুহুল আলমের কাছে ৫টি এলইডি লাইট চান। কাউন্সিলর
শেপীর দাবির প্রেক্ষিতে তাকে লাইট দেয়ার বিষয়ের আশ্বস্ত করেন রুহুল আমীন।
এরপর তিনি কিছুদিন কর্মস্থলের বাইরে ছিলেন। ফিরে আসার পর গত বৃহস্পতিবার
সিলেট সিটি করপোরেশনে যান কাউন্সিলর সালেহা কবির শেপী। তিনি ইলেকট্রিক
শাখার প্রধান রুহুল আলমের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। কিন্তু রুহুল আলম তাকে
সামনের চেয়ারে বসিয়ে রেখে প্রায় ১৫ মিনিট মোবাইল ফোনে কথা বলেন। এ সময় তার
আচরণে আহত হন কাউন্সিলর শেপী। শেপী জানান, ‘রুহুল আলম তাকে চেয়ারে বসিয়ে
রেখে উল্টোদিকে ঘুরে দেয়ালে পা তুলে মোবাইল ফোনে কথা বলতে থাকেন। একজন
মহিলা কাউন্সিলরকে সামনে রেখে এ রকম আচরণ করায় তিনি অপমান বোধ করেন।’ প্রায়
১৫ মিনিট কথা বলার পর তিনি উল্টোদিকে ঘুরে কাউন্সিলর শেপীর কাছে জানতে
চান, ‘কেন এসেছেন’। এ সময় শেপী বলেন, ‘আমাকে ৫টি এলইডি লাইট দেয়ার কথা
ছিল।’ জবাবে- ‘ইলেকট্রিক শাখার প্রধান জানান কোনো লাইট নেই। দেয়া যাবে না।’
কাউন্সিলর শেপী সিটি করপোরেশনের ইলেট্রনিক শাখার প্রধানের আচরণে ক্ষুব্ধ
হন। তিনি কথা না বাড়িয়ে সরাসরি চলে যান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কক্ষে। এ
সময় নিজেদের স্টাফদের নিয়ে বসা ছিলেন মেয়র। তার কাছেও ৫টি এলইডি লাইট চান
শেপী। পাশাপাশি তিনি ইলেট্রনিক শাখার প্রধানের আচরণের বিষয়টিও তুলে ধরেন
মেয়রের কাছে। শেপীর কথা শুনে মেয়র ফোন দেন ইলেট্রিক শাখার প্রধানকে। ফোন
রেখে মেয়র শেপীকে বলেন, ‘তোমাকে তো দেয়ার কথা ছিল না।’ এ সময় শেপীকে মেয়র
জানান, ‘আপনি আমাদের আন্ডার ইস্টিমেট করেন বিধায় স্টাফরা আমাদের আন্ডার
ইস্টিমেট করে।’ এ কথা বলার পর মেয়র আবারো ক্ষুব্ধ হন। এবং যা ইচ্ছে তাই
আচরণ করেন বলে জানান শেপী। এদিকে শেপীর কথায় ক্ষুব্ধ মেয়র আরিফ আরো রেগে
উঠেন। এবং নানা ভাবে শাসাতে থাকেন। এ ঘটনার পর মেয়রের কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে
কাউন্সিলরদের কক্ষে যান শেপী। তার সঙ্গে ইলেট্রনিক শাখার প্রধান রুহুল
আমীন ও সর্বশেষ মেয়রের আচরণের বিচার দেন। তার কথা শুনে উপস্থিত সিনিয়র
কাউন্সিলররাও আহত হন। তারা বিষয়টি নিয়ে মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও
জানান। এদিকে উদ্ভূত ঘটনা নিয়ে শনিবার নিজের বাসায় বৈঠক ডাকেন কাউন্সিলর
সালেহা কবির শেপী। ওই বৈঠকে উপস্থিত হন মহিলা কাউন্সিলররা। এর মধ্যে
উপস্থিত ছিলেন- কাউন্সিলর শাহানারা বেগম, আমেনা বেগম রুমী, বাবলী রানী দে,
রেবেকা বেগম রেনু, জাহানারা ইয়াসমিন মিলন। তাদের সঙ্গে বৈঠকে শেপী মেয়র
আরিফ ও ইলেট্রনিক শাখার প্রধানের আচরণের ঘটনা জানান। এ সময় সিটি
কাউন্সিলররাও তাদের সঙ্গে অতীত আচরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করেন। মহিলা
কাউন্সিলররা জানিয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে সব
সময় রূঢ় আচরণ করেন। এসব আচরণের মাত্রা এখন ক্রমেই বাড়ছে। এজন্য অনেক মহিলা
কাউন্সিলর নীরব হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ সিটি করপোরেশন থেকে বিমুখ হয়ে পড়েছেন।
এছাড়া নিয়মিত মাসিক সভা না হওয়ার কারণে মহিলা কাউন্সিলররা কথা বলার জায়গা
পাচ্ছেন না। এতে করে মহিলা কাউন্সিলররা যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত
হয়েছিলেন তারা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছেন। গতকাল সিলেট সিটি
করপোরেশনের সিনিয়র মহিলা কাউন্সিলর শাহানারা বেগম জানিয়েছেন, মহিলা
কাউন্সিলররা নানাভাবে অপদস্থ হচ্ছেন- এটা সত্য। কিন্তু কোনো প্রতিকার মিলছে
না। তিনি নিজেও ৪-৫ মাস ধরে সিটি করপোরেশনে যাচ্ছেন না। সিলেট সিটি
করপোরেশনের মহিলা কাউন্সিলর শামীমা স্বাধীন কয়েক মাস আগে অপদস্থ হয়েছিলেন।
তাকে কয়েক ঘণ্টা সিটি করপোরেশনের একটি কক্ষে বন্দি করে রাখা হয়। পরবর্তীতে
শামীমাকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছিলেন কর্মকর্তারা। শামীমা স্বাধীন বলেন,
‘নারী কাউন্সিলররা সিটি করপোরেশনের যথাযথ মূল্যায়ন পাচ্ছেন না।’ এ ব্যাপারে
সিলেট সিটি করপোরেশনের ইলেক্ট্রনিক শাখার প্রধান রুহুল আলম জানিয়েছেন-
কাউন্সিলর শেপী এলইডি লাইট চেয়েছিলেন। কিন্তু সিটি করপোরেশনে কাছে লাইট ছিল
না। এ কারণে তাকে দিতে পারেননি। তবে- তার সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার করা
হয়নি। পরবর্তীতে মেয়রের কক্ষে তিনি চলে যান। এর বেশি কিছু তিনি বলতে
পারেননি।
No comments