ঢাকায় কবরের জায়গা মিলছে না by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
মোশাররফ
মিয়ার বড় ইচ্ছা ছিল ঢাকার যেকোনো কবরস্থানে স্থায়ীভাবে তার মৃত মাকে কবর
দেবেন। অন্তত দিনে না হোক সপ্তাহে তার মায়ের কবর দেখাশোনা করবেন। কিন্তু
তার সেই ইচ্ছা পূরণ হলো না। মা জেবুন্নেসাকে শেষ পর্যন্ত গাজীপুরের গ্রামেই
সমাহিত করতে হলো। এই কষ্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি কেঁদে ফেলেন। দু’বছর আগের
কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাময়িক সময়ের জন্য কবর দেয়ার কথা বলেছিল
কবরস্থান কর্তৃপক্ষ।
এতে আমাদের পরিবারের কেউ রাজি হননি। রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ৭০ বছরের পুরনো স্থায়ী (সংরক্ষিত) একটি কবরে একই পরিবারের তিন সদস্যকে পরপর সমাহিত করা হয়েছে। প্রথমে স্বামী মরহুম মো. আফাজ উদ্দিন, পরে স্ত্রী এবং সর্বশেষ চলতি বছরের ২৯শে জানুয়ারি মেয়েকে কবরটিতে দাফন করা হয়। এ প্রসঙ্গে আজিমপুর কবরস্থানের মোহরার মো. নুরুল হুদা বলেন, তাদের পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী তারা তিন সদস্যকে এখানে সংরক্ষিত জায়গায় কবর দিয়েছেন। ১৯৯৩ সালের পর থেকে স্থায়ী কবরের কোনো সুযোগ নেই। তবে সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী সংরক্ষিত কবরে কাউকে সমাহিত করতে হলে ১৫ হাজার ৫শ’ টাকা ফি দিতে হবে। আর সাধারণ সাময়িক ছোট-বড় যেকোনো কবরের জন্য নির্ধারিত ফি ২০০ টাকা। প্রতি দু’বছর পরপর তা ভেঙে ফেলা হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো জানান, এখন গড়ে প্রতিদিন ৩০টি লাশ আসে। ৫ বছর আগে ২০ থেকে ২৫টি লাশ আসতো। শুধু জেবুন্নেসা নন, ঢাকায় জায়গার অভাবে অনেকে এখন লাশ গ্রামে নিয়ে যান। আবার ঢাকায় এরকম বহু কবর রয়েছে যেখানে একের অধিক ব্যক্তির জায়গা হয়েছে। ঢাকা শহরে মরদেহ সৎকারের জায়গা সীমিত হয়ে গেছে। ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসলাম ধর্ম কবরের উপরে কবর দেয়াকে
স্বীকৃতি দেয়। ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে দেখা গেল, অসংখ্য কবর একটি আরেকটির গায়ে লাগানো। কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। প্রচুর কবরের উপরে দেখা যায় একের অধিক সাইনবোর্ড লাগানো। অর্থাৎ একের অধিক মানুষের জায়গা হয়েছে একেকটি কবরে। কখনো কখনো সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবার থেকে, ভিন্ন এলাকা থেকে তারা এসেছেন।
ঢাকায় ৮টি সরকারি কবরস্থান রয়েছে। ২০১২ সাল থেকে ঢাকা উত্তরের ৬টি কবরস্থানে স্থায়ী ভাবে আর কোনো কবরের জায়গা দেয়া হচ্ছে না। আজিমপুরের কবরস্থানটিতে ৩০ হাজারের মতো কবরের জায়গা আছে। এর মধ্যে স্থায়ী আছে প্রায় ৭ হাজার। ঢাকার বনানী কবরস্থানে রয়েছে ২২ হাজার কবরের জায়গা। ঢাকার রায়েরবাজারে প্রায় ৮১ একর জায়গার ওপর নতুন একটি কবরস্থান হয়েছে। যেখানে ৯০ হাজার কবর ধরবে। জুরাইনে ১৭ একর জায়গায় ২০ হাজার কবরের জায়গা আছে। ২০০৫ সাল থেকে দক্ষিণের জুরাইনে স্থায়ীভাবে কবর দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে যারা কবরের জায়গা আগে সংরক্ষিত করেছেন তারা স্থায়ীভাবে কবর দিচ্ছেন বলে জুরাইন কবরস্থানের দায়িত্বরত কর্মকর্তা হাফেজ মাওলানা মো. শোয়াইব হোসেন জানিয়েছেন। অনেকে আবার স্থায়ী কবরে পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়-স্বজনকে কবর দিচ্ছেন। তিনি আরো জানান, এখানে গড়ে ৮ থেকে ১০টা লাশ আসে। মাওলানা মো. শোয়াইব বলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে কবরের উপর কবর দেয়া জায়েজ আছে। দেড় থেকে দু’বছর পর কবর ভাঙা যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যক্তিগত আবাসিক ভূমি উন্নয়ন আইনে ঢাকা শহরে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য শূন্য দশমিক শূন্য চার একর জমি রাখার কথা বলা হয়েছে ধর্মীয় উপাসনায়, মরদেহ সৎকার ও কমিউনিটির অন্যান্য সামাজিক সুবিধার জন্য। যেকোনো নতুন আবাসিক এলাকা তৈরির ক্ষেত্রে এই নীতি অনুসরণ করেই এর পরিকল্পনা পাস করানোর নিয়ম। এটা হয়েছে ২০০৪ সালে। ১৯৫৯ সালে ঢাকার জন্য একটা মাস্টার প্ল্যান হয়েছিলো। এরপর ১৯৯৫ এবং ২০১৫ সালে আবারো প্ল্যান করা হয়। নগরবিদরা বলছেন, ঢাকার জনসংখ্যা এখন দেড় কোটির উপরে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. নূরুল ইসলাম নাজেম মানবজমনিকে বলেন, আমাদের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। কবর, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টারসহ সামাজিক যেসব সুবিধার দরকার তাতে পরিকল্পনার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তিনি বলেন, কবরস্থান কাছাকাছি থাকলে ভালো হয়। বড় বড় কবরস্থান না করে কমিউনিটি বেইজ করা উত্তম বলে তিনি মনে করেন। বলেন, কবর বৃহৎ স্বার্থে ভেঙে ফেলা যাবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হলে ভাঙাভাঙির বিষয়টি আসবে না।
এতে আমাদের পরিবারের কেউ রাজি হননি। রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ৭০ বছরের পুরনো স্থায়ী (সংরক্ষিত) একটি কবরে একই পরিবারের তিন সদস্যকে পরপর সমাহিত করা হয়েছে। প্রথমে স্বামী মরহুম মো. আফাজ উদ্দিন, পরে স্ত্রী এবং সর্বশেষ চলতি বছরের ২৯শে জানুয়ারি মেয়েকে কবরটিতে দাফন করা হয়। এ প্রসঙ্গে আজিমপুর কবরস্থানের মোহরার মো. নুরুল হুদা বলেন, তাদের পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী তারা তিন সদস্যকে এখানে সংরক্ষিত জায়গায় কবর দিয়েছেন। ১৯৯৩ সালের পর থেকে স্থায়ী কবরের কোনো সুযোগ নেই। তবে সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী সংরক্ষিত কবরে কাউকে সমাহিত করতে হলে ১৫ হাজার ৫শ’ টাকা ফি দিতে হবে। আর সাধারণ সাময়িক ছোট-বড় যেকোনো কবরের জন্য নির্ধারিত ফি ২০০ টাকা। প্রতি দু’বছর পরপর তা ভেঙে ফেলা হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো জানান, এখন গড়ে প্রতিদিন ৩০টি লাশ আসে। ৫ বছর আগে ২০ থেকে ২৫টি লাশ আসতো। শুধু জেবুন্নেসা নন, ঢাকায় জায়গার অভাবে অনেকে এখন লাশ গ্রামে নিয়ে যান। আবার ঢাকায় এরকম বহু কবর রয়েছে যেখানে একের অধিক ব্যক্তির জায়গা হয়েছে। ঢাকা শহরে মরদেহ সৎকারের জায়গা সীমিত হয়ে গেছে। ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসলাম ধর্ম কবরের উপরে কবর দেয়াকে
স্বীকৃতি দেয়। ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে দেখা গেল, অসংখ্য কবর একটি আরেকটির গায়ে লাগানো। কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। প্রচুর কবরের উপরে দেখা যায় একের অধিক সাইনবোর্ড লাগানো। অর্থাৎ একের অধিক মানুষের জায়গা হয়েছে একেকটি কবরে। কখনো কখনো সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবার থেকে, ভিন্ন এলাকা থেকে তারা এসেছেন।
ঢাকায় ৮টি সরকারি কবরস্থান রয়েছে। ২০১২ সাল থেকে ঢাকা উত্তরের ৬টি কবরস্থানে স্থায়ী ভাবে আর কোনো কবরের জায়গা দেয়া হচ্ছে না। আজিমপুরের কবরস্থানটিতে ৩০ হাজারের মতো কবরের জায়গা আছে। এর মধ্যে স্থায়ী আছে প্রায় ৭ হাজার। ঢাকার বনানী কবরস্থানে রয়েছে ২২ হাজার কবরের জায়গা। ঢাকার রায়েরবাজারে প্রায় ৮১ একর জায়গার ওপর নতুন একটি কবরস্থান হয়েছে। যেখানে ৯০ হাজার কবর ধরবে। জুরাইনে ১৭ একর জায়গায় ২০ হাজার কবরের জায়গা আছে। ২০০৫ সাল থেকে দক্ষিণের জুরাইনে স্থায়ীভাবে কবর দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে যারা কবরের জায়গা আগে সংরক্ষিত করেছেন তারা স্থায়ীভাবে কবর দিচ্ছেন বলে জুরাইন কবরস্থানের দায়িত্বরত কর্মকর্তা হাফেজ মাওলানা মো. শোয়াইব হোসেন জানিয়েছেন। অনেকে আবার স্থায়ী কবরে পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়-স্বজনকে কবর দিচ্ছেন। তিনি আরো জানান, এখানে গড়ে ৮ থেকে ১০টা লাশ আসে। মাওলানা মো. শোয়াইব বলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে কবরের উপর কবর দেয়া জায়েজ আছে। দেড় থেকে দু’বছর পর কবর ভাঙা যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যক্তিগত আবাসিক ভূমি উন্নয়ন আইনে ঢাকা শহরে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য শূন্য দশমিক শূন্য চার একর জমি রাখার কথা বলা হয়েছে ধর্মীয় উপাসনায়, মরদেহ সৎকার ও কমিউনিটির অন্যান্য সামাজিক সুবিধার জন্য। যেকোনো নতুন আবাসিক এলাকা তৈরির ক্ষেত্রে এই নীতি অনুসরণ করেই এর পরিকল্পনা পাস করানোর নিয়ম। এটা হয়েছে ২০০৪ সালে। ১৯৫৯ সালে ঢাকার জন্য একটা মাস্টার প্ল্যান হয়েছিলো। এরপর ১৯৯৫ এবং ২০১৫ সালে আবারো প্ল্যান করা হয়। নগরবিদরা বলছেন, ঢাকার জনসংখ্যা এখন দেড় কোটির উপরে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. নূরুল ইসলাম নাজেম মানবজমনিকে বলেন, আমাদের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। কবর, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টারসহ সামাজিক যেসব সুবিধার দরকার তাতে পরিকল্পনার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তিনি বলেন, কবরস্থান কাছাকাছি থাকলে ভালো হয়। বড় বড় কবরস্থান না করে কমিউনিটি বেইজ করা উত্তম বলে তিনি মনে করেন। বলেন, কবর বৃহৎ স্বার্থে ভেঙে ফেলা যাবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হলে ভাঙাভাঙির বিষয়টি আসবে না।
No comments