গণতন্ত্র, জিয়া ও বিএনপি by সুশীল বড়ুয়া
জাতীয়
অধ্যাপক মরহুম আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ১৯৭২ সালে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাবিধ সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য। সে দিনের অভিজ্ঞতা ও
মন্তব্য আহমদ ছফার সাথে আলাপচারিতায় তিনি বলেছিলেন, ‘সেভেন্টি টু-তে একবার
ইউনিভার্সিটির কাজে তার লগে দেখা করতে গেছিলাম। শেখ সাহেব জীবনে অনেক
মানুষের সাথে মিশছেন ত আদব লেহাজ আছিল খুব ভালা। অনেক খাতির করলেন। কথায়
কথায় আমি জিগাইলাম, আপনার হাতে ত অখন দেশ চালাইবার ভার, আপনে অপজিশনের কী
করবেন। অপজিশন ছাড়া দেশ চালাইবেন কেমনে? জওহরলাল নেহরু ক্ষমতায় বইস্যাই
জয়প্রকাশ নারায়ণরে কইলেন, তোমরা অপজিশন পার্টি গইড়া তোল। শেখ সাহেব বললেন,
আগামী ইলেকশনে অপজিশন পার্টিগুলা ম্যাক্সিমাম পাঁচটার বেশি সিট পাইব না।
আমি একটু আহত হইলাম, কইলাম, আপনে অপজিশনরে একশ সিট ছাইড়া দেবেন না? শেখ
সাহেব হাসলেন। আমি চইল্যা আইলাম। ইতিহাস শেখ সাহেবের স্টেটসম্যান অইবার
একটা সুযোগ দিছিল। তিনি এইডা কামে লাগাইবার পারলেন না।’
১৯৪৭-১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য সামরিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছিলেন, তবুও এ দেশের জনগণ কোনো দিন পাকিস্তানে গণতন্ত্রের স্বাদ পায়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়। এই সময় বঙ্গবন্ধু ছিলেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ এক অগ্রসৈনিক।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেয়া হয়। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত করে।
৭ মার্চের নির্বাচন কী রকম হয়েছিল, তা সে সময়ের রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ন্যাপের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ও পঙ্কজ ভট্টাচার্য ৯ মার্চ একটি যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, কমপক্ষে ৭০টি নির্বাচনী আসনে যেখানে ন্যাপ ও অন্যান্য বিরোধী দলের প্রার্থীদের সুনিশ্চিত বিজয়ের সম্ভাবনা ছিল, শাসক দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, অস্ত্রের ঝনঝনানি, ভয়ভীতি, সন্ত্রাস প্রয়োগ, গুণ্ডাবাহিনী ব্যবহার, ভুয়া ভোট, পোলিং বুথ দখল, পোলিং এজেন্ট অপহরণ, বিদেশী সাহায্য সংস্থা, জাতিসঙ্ঘ, সরকারি গাড়ি এবং রেডক্রসের গাড়ির অপব্যবহার প্রভৃতি চরম অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের মাধ্যমে ওই নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোকে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে এবং বিরোধী দলের প্রার্থীদের জোরপূর্বক পরাজিত করেছে। চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ন্যাপ প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরীকে সংবাদপত্র, বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি, ভয়েস অব আমেরিকা তথা দেশী-বিদেশী পত্রপত্রিকায় বিজয়ী বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের নিকট উদ্বেগজনক খবর এসেছে যে, ন্যাপ প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরীকে পরাজিত বলে ঘোষণা দেয়ার প্রস্তুতি শাসক দল গ্রহণ করছে।’
শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের আহ্বায়ক খান সাইফুর রহমান জাতীয় প্রেস ক্লাবে ১১ মার্চ এক সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন, ‘মেজর জলিল, ড. আলিম আল-রাজি, (ন্যাপ-ভাসানী), মোস্তাক আহমদ চৌং (ন্যাপ) কাজী হাতেম আলী (শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল) এবং আরো কয়েকটি আসনে নিশ্চিতভাবে বিরোধী দল জয়লাভ করিয়াছে।’
একজন মার্কিন কূটনীতিকের পর্যবেক্ষণ ছিল ‘তেহাত্তরের মার্চ মাসের নির্বাচন হলো শেষ যাত্রার শুরু। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতেছিল বিপুলভাবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা ভোট নিয়ে ছেলেখেলা করেছে এবং জালিয়াতি থেকে নিজেদের নিবৃত্ত রাখতে পারেনি।’
নিয়তির নির্মম পরিহাস হলো, খন্দকার মোশতাক আহমদ নির্বাচনে করুণভাবে পরাজিত হয়েছিলেন জাসদের প্রার্থী রশিদ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দাউদকান্দি থেকে ব্যালটবাক্স এনে মোশতাককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করলে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে ছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, গণনির্যাতন। রক্ষীবাহিনী, লালবাহিনী, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ নানা বাহিনীর নির্যাতনে জনগণ অসহায় হয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারি দলের তল্পীবাহকে পরিণত হয়। সেই সময়ের জাসদের এক প্রচারপত্র থেকে জানা যায়, ‘গত ২৫ মাসে গুম ও খুন হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। রক্ষীবাহিনী ও পুলিশের হামলা হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার পরিবারে। জেলে রাজবন্দী আছে ১৮ হাজারের ওপর। হুলিয়া আছে প্রায় ২৫ হাজার নেতা ও কর্মীর নামে। বাড়ি পুড়েছে প্রায় আড়াই হাজার। নারী ধর্ষণ সীমাহীন।
প্রগতিশীল নেতা ও কর্মীদের গুম ও খুন করার জন্য এক ঢাকা শহরেই নামানো হয়েছে প্রায় দেড় শ’ স্কোয়াড। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আজ খুনের আড্ডা।
১৯৭৩-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যত ভোট পেয়েছে, তার শতকরা ৫২ ভাগ জাল, আর প্রায় ২০ শতাংশ মানুষের দারিদ্র্যের সুযোগ লোভ লালসার মাধ্যমে ঠকিয়ে নেয়া। উপনির্বাচন এবং স্কুল-কলেজের নির্বাচনও বস্তুত ব্যালটবাক্স ছিনতাই ও বুলেট ব্যবহারের নির্বাচন। সভা-জমায়েত, মিছিল, ধর্মঘট ইত্যাদি জনগণের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ফরমান জারি করে সেগুলোও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, যাতে কুকুরের মতো মরতে থাকলেও আর প্রতিবাদ করতে না পারে। যত্রতত্র জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা, হয়রানি চলছে নিরীহ মানুষদের ওপর। এটাই মুজিববাদী গণতন্ত্রের স্বরূপ।’
স্বাধীন দেশ ও জনগণের আকাক্সক্ষা ছিল গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও আইনের শাসন তো প্রতিষ্ঠা করেইনি; বরং একদলীয় বাকশালীয় শাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। জাতি-রাষ্ট্রের বিকাশের জন্য দরকার বহুদলীয় গণতন্ত্র ও আইনের শাসন। অন্যথায় দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাকামী জনগণের সামনে মুক্তির দূত হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তেমনিভাবে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আবারো উদয় হন বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেবদূত হয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রের পরিবর্তে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেন। অন্য দিকে, জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে আবির্ভূত হয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে জাতি-রাষ্ট্রের (নেশন স্টেট) ভিত রচনা করেন। জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করেন, বাংলাদেশকে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের বিকল্প নেই। জিয়াউর রহমান দেখলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে দরকার শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। তাই তিনি উদ্যোগ নিলেন একটি শক্তিশালী উদার গণতান্ত্রিক দল প্রতিষ্ঠার। রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পর্যায়ে তার ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মূল বিষয় ছিল রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের অংশ নেয়া। জিয়া মনে করেন বাংলাদেশে বাঙালি ছাড়াও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক জাতিসত্তার অবস্থান রয়েছে। তাদের রাষ্ট্রের মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তার দলের মূলনীতি হবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। অনেক বুদ্ধিজীবী মনে করেন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সাম্প্রদায়িকতায় দুষ্ট। তাদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, ভারতীয় জাতীয়তাবাদও কি তাই? তারা কোনো উত্তর দিতে পারেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতীয় জাতীয়তাবাদের দার্শনিক ভিত্তি দেয়ার জন্য এক মহাকাব্যিক উপন্যাস গোরা সৃষ্টি করেন। ‘গোরা’ উপন্যাসকে মার্কসীয় দৃষ্টিতে পর্যালোচনা করতে গিয়ে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, বোঝা যায় ইংরেজ শাসনের ইতিবাচক দিকগুলোর প্রতিই রবীন্দ্রনাথের বিশেষ আকর্ষণ। রবীন্দ্রনাথ ওজন করছেন না, পাল্লার কোন দিকটা কতটা ভারী তার মাপ নিচ্ছেন না, তবে ওই শাসনের প্রতিক্রিয়ায় ও প্রভাবে নতুন কতগুলো বোধের যে সৃষ্টি হয়েছিল, তাদের বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন। সবচেয়ে বড় সৃষ্টি ভারতবর্ষীয় জাতীয়তাবাদ।
বাংলার পুরনো ইতিহাস পর্যালোচনা করে জিয়াউর রহমান দেখতে পান, একসময় বাংলা ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম। তৎকালে বাংলার গ্রামগুলো ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বশাসিত অঞ্চল। খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ শতক পূর্বে বাংলার ইতিহাসে গ্রাম পঞ্চায়েতের উল্লেখ আছে। বাংলাদেশের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামসরকার তত্ত্ব জিয়াউর রহমানকে গ্রামসরকার গঠন করতে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি তার নতুন দলের কর্মসূচিতে এর প্রাধান্য দেন। গ্রামসরকারের মূল দায়িত্ব খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, গ্রাম প্রশাসনের উন্নয়ন, পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষণ ও স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে স্থানীয় বিরোধ নিষ্পত্তি ও গণশিক্ষা প্রসার। গ্রামসরকার গঠন ছিল দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে।
জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক উত্থান ছিল বাংলাদেশের জনগণের জন্য অন্ধকারের মধ্যে আলোর ছটা এবং আওয়ামী লীগের জন্যও আশীর্বাদ। জিয়াউর রহমান মনে করেছিলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে আওয়ামী লীগের মতো পুরনো প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন।
’৭৪-৭৫ সালে ছিল পুরো দেশ দুর্ভিক্ষপীড়িত। রাজধানী ঢাকায় ছিল কঙ্কালসার মানুষের ভিড়। দেশের অর্থনীতি ছিল শূন্য। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলেন এবং শূন্য অর্থনীতিকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যান। বঙ্গবন্ধুর দক্ষিণহস্ত খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয় এবং মোশতাক রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্য মোশতাকের মন্ত্রিসভায়ও যোগ দেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) যদি ৭ নভেম্বর (১৯৭৫) সিপাহি জনতার অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় আসতে পারত, তাহলে সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের জন্য মহাবিপদ হিসেবে দেখা দিত। কারণ জাসদের সংগঠন প্রতিটি থানায় পর্যন্ত ছিল। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দল হলো জাসদ।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর গণতন্ত্রের পথে দেশকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেন। ১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই রাজনৈতিক দল বিধি জারি করেন। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠনের মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করেছিলেন। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগও বিলপ্ত হয়ে গিয়েছিল। বিলুুপ্ত আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানের সময়ে পুনরুজ্জীবন পেল। ১৯৭৮ সালে ৩ জুন আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট গঠন করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নেয় এবং ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৩৯টি আসনে জয় লাভ করে। জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের প্রতি কত সহনশীল ছিলেন দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে তিনি তা দেখিয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে বলা হয় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে প্রস্তাব করছে যে, ‘বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুতে বাংলাদেশ রাজনীতির জগতে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছে। এই সংসদ তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের নিকট গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।’ পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের দেশে আনার ব্যবস্থা করেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের অনুপস্থিতির কারণে ১৫ আগস্টের মতো বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটে।
জিয়াউর রহমান ছিলেন ভিশনারি রাষ্ট্রনায়ক। তিনি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করার আগে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, দলের এমন নাম ঠিক করতে হবে যে, ভাষা হবে এ দেশের মাটি আর মানুষের আত্মার সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। গণতন্ত্রের ঐতিহাসিক প্রয়োজনে তিনি ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ সালে নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। এর নাম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, সংক্ষেপে বিএনপি।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
১৯৪৭-১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য সামরিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছিলেন, তবুও এ দেশের জনগণ কোনো দিন পাকিস্তানে গণতন্ত্রের স্বাদ পায়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়। এই সময় বঙ্গবন্ধু ছিলেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ এক অগ্রসৈনিক।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেয়া হয়। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত করে।
৭ মার্চের নির্বাচন কী রকম হয়েছিল, তা সে সময়ের রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ন্যাপের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ও পঙ্কজ ভট্টাচার্য ৯ মার্চ একটি যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, কমপক্ষে ৭০টি নির্বাচনী আসনে যেখানে ন্যাপ ও অন্যান্য বিরোধী দলের প্রার্থীদের সুনিশ্চিত বিজয়ের সম্ভাবনা ছিল, শাসক দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, অস্ত্রের ঝনঝনানি, ভয়ভীতি, সন্ত্রাস প্রয়োগ, গুণ্ডাবাহিনী ব্যবহার, ভুয়া ভোট, পোলিং বুথ দখল, পোলিং এজেন্ট অপহরণ, বিদেশী সাহায্য সংস্থা, জাতিসঙ্ঘ, সরকারি গাড়ি এবং রেডক্রসের গাড়ির অপব্যবহার প্রভৃতি চরম অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের মাধ্যমে ওই নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোকে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে এবং বিরোধী দলের প্রার্থীদের জোরপূর্বক পরাজিত করেছে। চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ন্যাপ প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরীকে সংবাদপত্র, বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি, ভয়েস অব আমেরিকা তথা দেশী-বিদেশী পত্রপত্রিকায় বিজয়ী বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের নিকট উদ্বেগজনক খবর এসেছে যে, ন্যাপ প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরীকে পরাজিত বলে ঘোষণা দেয়ার প্রস্তুতি শাসক দল গ্রহণ করছে।’
শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের আহ্বায়ক খান সাইফুর রহমান জাতীয় প্রেস ক্লাবে ১১ মার্চ এক সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন, ‘মেজর জলিল, ড. আলিম আল-রাজি, (ন্যাপ-ভাসানী), মোস্তাক আহমদ চৌং (ন্যাপ) কাজী হাতেম আলী (শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল) এবং আরো কয়েকটি আসনে নিশ্চিতভাবে বিরোধী দল জয়লাভ করিয়াছে।’
একজন মার্কিন কূটনীতিকের পর্যবেক্ষণ ছিল ‘তেহাত্তরের মার্চ মাসের নির্বাচন হলো শেষ যাত্রার শুরু। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতেছিল বিপুলভাবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা ভোট নিয়ে ছেলেখেলা করেছে এবং জালিয়াতি থেকে নিজেদের নিবৃত্ত রাখতে পারেনি।’
নিয়তির নির্মম পরিহাস হলো, খন্দকার মোশতাক আহমদ নির্বাচনে করুণভাবে পরাজিত হয়েছিলেন জাসদের প্রার্থী রশিদ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দাউদকান্দি থেকে ব্যালটবাক্স এনে মোশতাককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করলে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে ছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, গণনির্যাতন। রক্ষীবাহিনী, লালবাহিনী, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ নানা বাহিনীর নির্যাতনে জনগণ অসহায় হয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারি দলের তল্পীবাহকে পরিণত হয়। সেই সময়ের জাসদের এক প্রচারপত্র থেকে জানা যায়, ‘গত ২৫ মাসে গুম ও খুন হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। রক্ষীবাহিনী ও পুলিশের হামলা হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার পরিবারে। জেলে রাজবন্দী আছে ১৮ হাজারের ওপর। হুলিয়া আছে প্রায় ২৫ হাজার নেতা ও কর্মীর নামে। বাড়ি পুড়েছে প্রায় আড়াই হাজার। নারী ধর্ষণ সীমাহীন।
প্রগতিশীল নেতা ও কর্মীদের গুম ও খুন করার জন্য এক ঢাকা শহরেই নামানো হয়েছে প্রায় দেড় শ’ স্কোয়াড। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আজ খুনের আড্ডা।
১৯৭৩-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যত ভোট পেয়েছে, তার শতকরা ৫২ ভাগ জাল, আর প্রায় ২০ শতাংশ মানুষের দারিদ্র্যের সুযোগ লোভ লালসার মাধ্যমে ঠকিয়ে নেয়া। উপনির্বাচন এবং স্কুল-কলেজের নির্বাচনও বস্তুত ব্যালটবাক্স ছিনতাই ও বুলেট ব্যবহারের নির্বাচন। সভা-জমায়েত, মিছিল, ধর্মঘট ইত্যাদি জনগণের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ফরমান জারি করে সেগুলোও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, যাতে কুকুরের মতো মরতে থাকলেও আর প্রতিবাদ করতে না পারে। যত্রতত্র জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা, হয়রানি চলছে নিরীহ মানুষদের ওপর। এটাই মুজিববাদী গণতন্ত্রের স্বরূপ।’
স্বাধীন দেশ ও জনগণের আকাক্সক্ষা ছিল গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও আইনের শাসন তো প্রতিষ্ঠা করেইনি; বরং একদলীয় বাকশালীয় শাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। জাতি-রাষ্ট্রের বিকাশের জন্য দরকার বহুদলীয় গণতন্ত্র ও আইনের শাসন। অন্যথায় দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাকামী জনগণের সামনে মুক্তির দূত হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তেমনিভাবে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আবারো উদয় হন বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেবদূত হয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রের পরিবর্তে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেন। অন্য দিকে, জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে আবির্ভূত হয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে জাতি-রাষ্ট্রের (নেশন স্টেট) ভিত রচনা করেন। জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করেন, বাংলাদেশকে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের বিকল্প নেই। জিয়াউর রহমান দেখলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে দরকার শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। তাই তিনি উদ্যোগ নিলেন একটি শক্তিশালী উদার গণতান্ত্রিক দল প্রতিষ্ঠার। রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পর্যায়ে তার ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মূল বিষয় ছিল রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের অংশ নেয়া। জিয়া মনে করেন বাংলাদেশে বাঙালি ছাড়াও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক জাতিসত্তার অবস্থান রয়েছে। তাদের রাষ্ট্রের মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তার দলের মূলনীতি হবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। অনেক বুদ্ধিজীবী মনে করেন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সাম্প্রদায়িকতায় দুষ্ট। তাদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, ভারতীয় জাতীয়তাবাদও কি তাই? তারা কোনো উত্তর দিতে পারেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতীয় জাতীয়তাবাদের দার্শনিক ভিত্তি দেয়ার জন্য এক মহাকাব্যিক উপন্যাস গোরা সৃষ্টি করেন। ‘গোরা’ উপন্যাসকে মার্কসীয় দৃষ্টিতে পর্যালোচনা করতে গিয়ে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, বোঝা যায় ইংরেজ শাসনের ইতিবাচক দিকগুলোর প্রতিই রবীন্দ্রনাথের বিশেষ আকর্ষণ। রবীন্দ্রনাথ ওজন করছেন না, পাল্লার কোন দিকটা কতটা ভারী তার মাপ নিচ্ছেন না, তবে ওই শাসনের প্রতিক্রিয়ায় ও প্রভাবে নতুন কতগুলো বোধের যে সৃষ্টি হয়েছিল, তাদের বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন। সবচেয়ে বড় সৃষ্টি ভারতবর্ষীয় জাতীয়তাবাদ।
বাংলার পুরনো ইতিহাস পর্যালোচনা করে জিয়াউর রহমান দেখতে পান, একসময় বাংলা ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম। তৎকালে বাংলার গ্রামগুলো ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বশাসিত অঞ্চল। খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ শতক পূর্বে বাংলার ইতিহাসে গ্রাম পঞ্চায়েতের উল্লেখ আছে। বাংলাদেশের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামসরকার তত্ত্ব জিয়াউর রহমানকে গ্রামসরকার গঠন করতে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি তার নতুন দলের কর্মসূচিতে এর প্রাধান্য দেন। গ্রামসরকারের মূল দায়িত্ব খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, গ্রাম প্রশাসনের উন্নয়ন, পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষণ ও স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে স্থানীয় বিরোধ নিষ্পত্তি ও গণশিক্ষা প্রসার। গ্রামসরকার গঠন ছিল দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে।
জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক উত্থান ছিল বাংলাদেশের জনগণের জন্য অন্ধকারের মধ্যে আলোর ছটা এবং আওয়ামী লীগের জন্যও আশীর্বাদ। জিয়াউর রহমান মনে করেছিলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে আওয়ামী লীগের মতো পুরনো প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন।
’৭৪-৭৫ সালে ছিল পুরো দেশ দুর্ভিক্ষপীড়িত। রাজধানী ঢাকায় ছিল কঙ্কালসার মানুষের ভিড়। দেশের অর্থনীতি ছিল শূন্য। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলেন এবং শূন্য অর্থনীতিকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যান। বঙ্গবন্ধুর দক্ষিণহস্ত খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয় এবং মোশতাক রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্য মোশতাকের মন্ত্রিসভায়ও যোগ দেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) যদি ৭ নভেম্বর (১৯৭৫) সিপাহি জনতার অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় আসতে পারত, তাহলে সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের জন্য মহাবিপদ হিসেবে দেখা দিত। কারণ জাসদের সংগঠন প্রতিটি থানায় পর্যন্ত ছিল। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দল হলো জাসদ।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর গণতন্ত্রের পথে দেশকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেন। ১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই রাজনৈতিক দল বিধি জারি করেন। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠনের মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করেছিলেন। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগও বিলপ্ত হয়ে গিয়েছিল। বিলুুপ্ত আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানের সময়ে পুনরুজ্জীবন পেল। ১৯৭৮ সালে ৩ জুন আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট গঠন করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নেয় এবং ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৩৯টি আসনে জয় লাভ করে। জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের প্রতি কত সহনশীল ছিলেন দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে তিনি তা দেখিয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে বলা হয় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে প্রস্তাব করছে যে, ‘বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুতে বাংলাদেশ রাজনীতির জগতে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছে। এই সংসদ তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের নিকট গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।’ পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের দেশে আনার ব্যবস্থা করেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের অনুপস্থিতির কারণে ১৫ আগস্টের মতো বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটে।
জিয়াউর রহমান ছিলেন ভিশনারি রাষ্ট্রনায়ক। তিনি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করার আগে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, দলের এমন নাম ঠিক করতে হবে যে, ভাষা হবে এ দেশের মাটি আর মানুষের আত্মার সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। গণতন্ত্রের ঐতিহাসিক প্রয়োজনে তিনি ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ সালে নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। এর নাম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, সংক্ষেপে বিএনপি।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
No comments