ন্যায্য হিস্যা বুঝিয়ে দেয়নি পাকিস্তান
পেরিয়ে
গেছে ৪৪ বছর, এখনও আমাদের সম্পদের ন্যায্য হিস্যা বুঝিয়ে দেয়নি পাকিস্তান।
বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় সম্পদ ফিরিয়ে দেয়ার দাবি তুললেও পাকিস্তান
নানা কৌশলে তা এড়িয়ে গেছে। সম্প্রতি ‘দোসর বন্ধুদের’ বিচারে পাকিস্তানের
নাখোশ ভঙ্গি নতুন করে ভাবনায় এনেছে, পাকিস্তানের কাছে পাওনার বিষয়টি।
বিশেষজ্ঞরা সম্পদ ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানিয়ে বলছেন, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক
তৎপরতার মাধ্যমে খুব সহজেই সমাধান করা যায় বিষয়টি। ২৪ বছরের অর্থনীতিক
বঞ্চনা পেরিয়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। তবে যুদ্ধ শেষ হলেও
বাংলাদেশের বঞ্চিত হওয়ার ইতিহাস শেষ হয়নি এখনও। পাকিস্তান আমাদের সম্পত্তির
হিস্যা বুঝিয়ে দেয়নি আজও। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট
জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকা সফরে এলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৪,০০০
মিলিয়ন ডলার পাওনা দাবি করে। তখন ডলারের মূল্য ছিল আট টাকা। ৪৪ বছরে যা
দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকায়। এর মানে পাকিস্তানের কাছে আমাদের এখনকার পাওনা ১০ গুণ
বেশি হয়ে ৪০০০* ১০= ৪০,০০০ মিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা টাকার অঙ্কে ৩২ হাজার
কোটি টাকা। এছাড়াও দেশি-বিদেশি বেশ কিছু গবেষণা পত্রের হিসেবে অনুযায়ী
বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে তৎকালীন হিসাবে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা পাওনা
রয়েছে। এছাড়াও পাকিস্তানের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ
নির্ধারণ করা হয় ১,২৪৯ কোটি টাকা। জাতিসংঘের হিসেবে যা ১২ লাখ ডলার। এ
অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সম্পত্তির দাবি উপস্থাপনের সময় শেষ হয়নি এখনও। এ
বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার
হোসেন বলেন, “বাংলাদেশ সরকার '৭৮ সালের ভেতরেই দাতা দেশগুলোকে সমস্ত ঋণ
দিয়ে দেয় এই শর্তে যে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছ থেকে প্রাপ্য সম্পদের
হিস্যা পাবে। আমরা তখন জনসংখ্যার দিক দিয়ে ৫৪ শতাংশ ছিলাম। সেই হিসেবে আমরা
৫৪ শতাংশ সম্পত্তি দাবি করতে পারি।” ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম.
এম আকাশ বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কমনওয়েলথ সম্মেলনে এটা
উপস্থাপনের পর আজ পর্যন্ত এ দাবি আর কেউ তোলেনি। তবে নীতিগতভাবে
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটা তোলার সুযোগ এখনও আছে।” অন্যদিকে, পাওনার
বিষয়টি উপস্থাপিত না হওয়াকে আমলাতান্ত্রিক ব্যর্থতা বলে মনে করেন
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান। তিনি বলেন,
“আন্তর্জাতিক আইনে স্পষ্ট বলা আছে যে, একটি রাষ্ট্রের কাছে যদি আরেকটি
রাষ্ট্র পাওনা থাকে তাহলে সেই পাওনা দিতে ওই রাষ্ট্র বাধ্য। ফলে এই আইন
ব্যবহার করেও দ্বিপাক্ষিকভাবে আমরা পাওনা আদায় করতে পারি।” দাবি আদায়ে জনমত
গঠনের দিকে দৃষ্টি দেয়ার কথা বললেন সংশ্লিষ্টরা।-ওয়েবসাইট

No comments