টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা কঠিন
বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে চলেছে; বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বলে গেলেন, আমাদের অর্থনীতি ‘উড্ডয়ন-সূচনা’র পর্যায়ে আছে। এই প্রীতিকর সংবাদের বিপরীতে জানা গেল, ব্যবসাবান্ধব দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ নিচের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ব্যবসা- বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী ফোর্বস এ বছর ব্যবসাবান্ধব দেশগুলোর যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১২১ নম্বরে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও এটা বেশ হতাশাব্যঞ্জক অবস্থান। আমাদের ওপরে আছে শ্রীলঙ্কা, ভারত, ভুটান, নেপাল; এমনকি জাতিগোষ্ঠীগত সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদ ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যুদস্ত দেশ পাকিস্তানও। কোনো দেশের পরিবেশ ব্যবসাবান্ধব না হলে উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি হয়। জানা দরকার কী ধরনের সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা ব্যবসাবান্ধব দেশগুলোর তালিকায় দৃষ্টিকটুভাবে পিছিয়ে আছি। ফোর্বস-এর ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে,
তালিকার নিচের দিকের দেশগুলোতে দুর্নীতির মাত্রা অত্যন্ত ব্যাপক এবং বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা খুব কম। সবচেয়ে কম ব্যবসাবান্ধব দেশগুলোর পিছিয়ে থাকার প্রধান দুটি কারণ হলো এই। বাংলাদেশ দুর্নীতির ক্যাটাগরিতে ১২৭তম অবস্থানে। এর চেয়েও খারাপ অবস্থা বাণিজ্যক্ষেত্রে স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতায়—এ দুটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে ১৩৭তম ও ১৩১তম। তবে ব্যবসার পরিবেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেমন পুঁজিবাজারের সক্ষমতা, করভার, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান অপেক্ষাকৃত ভালো। এই ইতিবাচক ক্ষেত্রগুলোর সুফল আরও বেশি মাত্রায় পেতে হলে দুর্নীতি কমাতে হবে, বাণিজ্যক্ষেত্রে স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সহিংসতা, দারিদ্র্য, বৈষম্য ইত্যাদি কমানো; অবকাঠামো, অকৃষি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ প্রয়োজন। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নত করার কোনো বিকল্প নেই।
No comments