পশ্চিমবঙ্গে কুমারী পুঁজায় মুসলিম কন্যা
দুর্গা
পুজোর অষ্টমীতে বা নবমীতে কুমারী পুজোর প্রচলন হয়েছিল অনেক দিন আগেই। এক
থেকে ষোলো বছরের অজাতপুষ্পা কন্যাকে কুমারী হিসেবে পুজো করা হয়। সাধারনভাবে
ব্রাহ্মন কন্যাকেই কুমারী পুজোর জন্য নির্বাচন করা হয়। তবে এ বছর
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কালনায় কুমারী পুজো নেবেন এক মুসলিম কন্যা।
অবশ্য এটা সাধারনত না ঘটলেও একেবারে নতুন নয়। ১৮৯৮ সালে স্বামী বিবেকানন্দ
অমরনাথ দর্শনের পর নৌকার মুসলমান মাঝির শিশু কন্যাকে কুমারী হিসেবে পুজো
করেছিলেন। আর এবার কালনার কাঁশারিপাড়ার একটি সেবা প্রতিষ্ঠানের বারোয়ারি
পুজোয় কুমারী হিসেবে বন্দিত হবে গ্রামেরই পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা
খাতুন। বর্ষার পরিবার যেমন বিভোর মেয়ের দেবী রুপের কল্পনায়। আর বর্ষাও
বইয়ের পাতা ওল্টানো বন্ধ রেখে এখন পুজোর সময় তাকে কি করতে হবে সবই জেনে
নিতে চায় মায়ের কাছ থেকে। মা ফিরোজা বিবি পড়েছেন বিড়ম্বনায়। তিনি কিইবা
জানেন এসবের। তবু আশে পাশের লোকজনের কাছ থেকে জেনে মেয়েকে বোঝাচ্ছেন পুজোর
দিন তাকে কি করতে হবে। মেয়েও খুশিতে একেবাওে ডগমগ। বর্ষার পরিবার অবশ্য
মেয়ের এই মর্যাদাকে উপরওয়ালার আশীর্বাদ হিসেবেই দেখছেন। বর্ষাকে কুমারী
হবার প্রস্তাব নিয়ে তার পরিবারের কাছে হাজির হয়েছিলেন খাঁশারিপাড়ার এক সেবা
প্রতিষ্ঠানের কর্ণদার ষষ্ঠী মল্লিক। পেশায় চিকিৎসক ষষ্ঠীবাবু তার
প্রতিষ্ঠানের বারোয়ারি পুজোর জন্য বর্ষাকে বাছাই করেন। ধর্মেও ভ্রুকুটিকে
তিনি ভয় করেন নি। বরং জানিয়েছেন, ধর্ম আলাদা হোক, ভগবান তো এক। সমাজ যেভাবে
ভেঙ্গেচুওে যাচ্ছে তাতে মানুষের মঙ্গল হবে না। তাই সোজা পথের দিশা দেখাতে
এটা একটা পথ মাত্র। তিনি জানান, পরষ্পরের ধর্মেও প্রতি শ্রদ্ধাবোধ গড়ে
তুলতেই বর্ষাকে মাতৃরুপে পুজো করব বলে ঠিক করি। বর্ষার মা ফিরোজা বিবি
জানিয়েছেন, ডাক্তারবাবুর কাছে মেয়েকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাবার পর তিনিই
মেয়েকে কুমারী হওয়ার প্রস্তাব দেন। তবে প্রস্তাব পেয়ে আমরা তো ভেবেই পাই নি
কী করা উচিত্। প্রথমে স্বামীকে বলি। তিনি বলে তার দাদাকে জিঞ্জস করতে। সেই
মত ভাসুরকে গিয়ে কথাটা বলি। তিনি এককথায় রাজি হয়ে যান। ধর্মের গোঁড়ামি
বর্ষার জেঠু তাহের হোসেন বলেছেন, ধর্মে ধর্মে তো কোনও বিভেদ নেই। তাই
প্রস্তাবটা শুনে সম্মতি দিয়েছি। আর এই সিদ্ধাÍই প্রাচীন জনপদ হিসেবে পরিচিত
কালনার এবারের উৎসবের পরিবেশটাই স্বতন্ত্র মর্যাদা এন দিয়েছে। কালনার
মানুষ ধন্য ধন্য করছেন।
No comments