শিশুশ্রমিক থেকে আগামীর আফ্রিদি
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নাটকীয়ভাবে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলার পথে। আনোয়ারের জীবনটাই যেন নাটক -এএফপি |
ড্রেসিংরুমে
পোশাক পরে মাঠে নামার সময় আনোয়ার আলীর নিশ্চয়ই মনে পড়ে যায় ফেলে আসা
অতীতের কথা। জার্সি আর ট্রাউজার পরার পর পায়ে যেই মোজা গলান, সেই মুহূর্তে
ছোট্ট পলকা শরীরের এক হতদরিদ্র শিশুর কথা তাঁর মনে না পড়ে যায়ই না। যে
শিশু দুটো শুকনো রুটির জন্য স্কুল ফেলে ছুটে যেত মোজার কারখানায়। কাজ
করতেন মোজা ইস্ত্রির। সেই আনোয়ারের জীবন এখন পাল্টে গেছে। এখন পাঁচ
তারকা হোটেলে রাত্রিযাপন। হাওয়াই জাহাজে উড়াল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয়
টি-টোয়েন্টিতে ১৭ বলে ৪৬ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানকে এনে দিয়েছেন
নাটকীয় জয়। রাতারাতি মন জিতে নিয়েছেন পাকিস্তানের সমর্থকদের। বলা হচ্ছে,
আগামীর আফ্রিদিকে এবার পেয়ে গেল পাকিস্তান। হুট করে পেয়ে যাওয়া
তারকাখ্যাতি। আগের তুলনায় অনেক আয়েশি জীবন। কিন্তু নিজের অতীত একটুও ভুলে
যাননি। আনোয়ারের কাছে তাঁর অতীতই সব সময়ের প্রেরণা, ‘আজ যে এ পর্যন্ত আসতে
পেরেছি, এ জন্য সর্বশক্তিমানের কাছে কৃতজ্ঞ। একটা সময় আমার জীবন ছিল অনেক
কঠিন। আমি একটা মোজা তৈরির কারখানায় কাজ করতাম। কিন্তু সেই কঠিন সময়ের
মধ্যেও পাকিস্তানের হয়ে খেলার স্বপ্নটা হারিয়ে ফেলিনি।’
পাকিস্তানের দুর্গম এলাকা সোয়াত উপত্যকা থেকে উঠে এসেছেন। এক সময় এই জায়গাটি মাঝেমধ্যেই খবরের শিরোনাম হতো জঙ্গিবাদের কারণে। মালালা ইউসুফজাইয়ের কারণে এখন ইতিবাচক কারণে শিরোনামে আসে। আনোয়ারের স্বপ্ন, তাঁর কারণেও গর্ব করবে সোয়াতের মানুষ।
অবশ্য সেই ভিটেমাটি অনেক আগেই ছেড়ে আসতে হয়েছে তাঁর পরিবারকে। শৈশবেই বাবাকে হারানো আনোয়ার সপরিবারে জীবিকার খোঁজে চলে আসেন করাচিতে। সেখানেই কারখানায় কাজ নেন দিনে ১৫০ রুপি মজুরিতে। সেই দিনগুলোর কথা আজও মনে পড়ে তাঁর, ‘খুবই কঠিন দিন ছিল। শান্তি আর নিরাপত্তার খোঁজে আমরা করাচিতে এসেছিলেন। পরিবারের ছেলেদের একজন ছিলাম জন্য খেলা বাদ দিয়ে রোজগারের জন্য নেমে পড়তে হয়েছিল।’
কারখানায় আসার পথেই মাঠে দেখতেই ক্রিকেটারদের খেলতে। তাঁরও ভীষণ ইচ্ছে করত। ক্রিকেট খেলাটা যে তাঁর কাছে ছিল নেশার মতো, ‘আমি আমার মালিককে গিয়ে বললাম, আমাকে রাতের শিফটে কাজ দিন, যেন আমি দিনে ক্রিকেট খেলতে পারি। উনি দয়াপরবশ হয়ে রাজিও হলেন।’
আর এই ক্রিকেট খেলতে গিয়েই এলো জীবনের বাঁক পরিবর্তন। চোখে পড়ে গেলেন স্থানীয় কোচ আজম খানের। আজম তাঁকে ট্রায়ালে ডাকলেন। কিন্তু আনোয়ার আসবেন না। কারণ তাতে যে চাকরি যাবে। চাকরি গেলে দৈনিক ১৫০ রুপি মজুরি কোথায় পাবেন? আজমই সমস্যার সমাধান করে দিলেন। বললেন, ‘তুমি খেলতে এসো, আমিই তোমাকে প্রতি দিন ১৫০ রুপি করে দেব।’
২০০৬ যুব বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে জায়গা মিলল এক সময়। ছোটদের সেই বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ফাইনালের নায়ক হয়ে গেলেন আনোয়ার। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান করেছিল মাত্র ১০৯। আনোয়ারের দুর্দান্ত সুইং বোলিংয়ে খাবি খেতে খেতে ভারত অলআউট হয়ে গেল ৭১-এই। ৯ রান তুলতেই প্রথম ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ভারত। ৫ উইকেট নিয়েছিলেন আনোয়ার, ব্যাট হাতেও ১৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন।
জাতীয় দলে ডাক পেলেন দ্রুতই। কিন্তু হারিয়েও গেলেন তার চেয়েও দ্রুত। জাতীয় দলের আশা বাদ দিয়ে পরিবারের সুখের কথা ভেবে ইংল্যান্ডে চলে গেলেন ল্যাঙ্কাশায়ারের স্থানীয় লিগ খেলতে। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম আবার জাতীয় দলে ফিরিয়ে আনল তাঁকে। শ্রীলঙ্কা সফরে এতটাই দুর্দান্ত খেলেছেন, খোদ কোচ ওয়াকার ইউনুসও তাঁকে আগামীর আফ্রিদি হিসেবে দেখছেন, ‘শ্রীলঙ্কা সফরেই ও নিজের সেরাটা খুঁজে পেয়েছে। ওর ফিল্ডিং দুর্দান্ত, ব্যাটসম্যান আর বোলার হিসেবেও দারুণ উন্নতি করেছে। এভাবে কঠোর পরিশ্রম করতে থাকলে সে-ই একদিন আমাদের এক নম্বর অলরাউন্ডার হবে।’ এএফপি অবলম্বনে।
পাকিস্তানের দুর্গম এলাকা সোয়াত উপত্যকা থেকে উঠে এসেছেন। এক সময় এই জায়গাটি মাঝেমধ্যেই খবরের শিরোনাম হতো জঙ্গিবাদের কারণে। মালালা ইউসুফজাইয়ের কারণে এখন ইতিবাচক কারণে শিরোনামে আসে। আনোয়ারের স্বপ্ন, তাঁর কারণেও গর্ব করবে সোয়াতের মানুষ।
অবশ্য সেই ভিটেমাটি অনেক আগেই ছেড়ে আসতে হয়েছে তাঁর পরিবারকে। শৈশবেই বাবাকে হারানো আনোয়ার সপরিবারে জীবিকার খোঁজে চলে আসেন করাচিতে। সেখানেই কারখানায় কাজ নেন দিনে ১৫০ রুপি মজুরিতে। সেই দিনগুলোর কথা আজও মনে পড়ে তাঁর, ‘খুবই কঠিন দিন ছিল। শান্তি আর নিরাপত্তার খোঁজে আমরা করাচিতে এসেছিলেন। পরিবারের ছেলেদের একজন ছিলাম জন্য খেলা বাদ দিয়ে রোজগারের জন্য নেমে পড়তে হয়েছিল।’
কারখানায় আসার পথেই মাঠে দেখতেই ক্রিকেটারদের খেলতে। তাঁরও ভীষণ ইচ্ছে করত। ক্রিকেট খেলাটা যে তাঁর কাছে ছিল নেশার মতো, ‘আমি আমার মালিককে গিয়ে বললাম, আমাকে রাতের শিফটে কাজ দিন, যেন আমি দিনে ক্রিকেট খেলতে পারি। উনি দয়াপরবশ হয়ে রাজিও হলেন।’
আর এই ক্রিকেট খেলতে গিয়েই এলো জীবনের বাঁক পরিবর্তন। চোখে পড়ে গেলেন স্থানীয় কোচ আজম খানের। আজম তাঁকে ট্রায়ালে ডাকলেন। কিন্তু আনোয়ার আসবেন না। কারণ তাতে যে চাকরি যাবে। চাকরি গেলে দৈনিক ১৫০ রুপি মজুরি কোথায় পাবেন? আজমই সমস্যার সমাধান করে দিলেন। বললেন, ‘তুমি খেলতে এসো, আমিই তোমাকে প্রতি দিন ১৫০ রুপি করে দেব।’
২০০৬ যুব বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে জায়গা মিলল এক সময়। ছোটদের সেই বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ফাইনালের নায়ক হয়ে গেলেন আনোয়ার। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান করেছিল মাত্র ১০৯। আনোয়ারের দুর্দান্ত সুইং বোলিংয়ে খাবি খেতে খেতে ভারত অলআউট হয়ে গেল ৭১-এই। ৯ রান তুলতেই প্রথম ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ভারত। ৫ উইকেট নিয়েছিলেন আনোয়ার, ব্যাট হাতেও ১৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন।
জাতীয় দলে ডাক পেলেন দ্রুতই। কিন্তু হারিয়েও গেলেন তার চেয়েও দ্রুত। জাতীয় দলের আশা বাদ দিয়ে পরিবারের সুখের কথা ভেবে ইংল্যান্ডে চলে গেলেন ল্যাঙ্কাশায়ারের স্থানীয় লিগ খেলতে। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম আবার জাতীয় দলে ফিরিয়ে আনল তাঁকে। শ্রীলঙ্কা সফরে এতটাই দুর্দান্ত খেলেছেন, খোদ কোচ ওয়াকার ইউনুসও তাঁকে আগামীর আফ্রিদি হিসেবে দেখছেন, ‘শ্রীলঙ্কা সফরেই ও নিজের সেরাটা খুঁজে পেয়েছে। ওর ফিল্ডিং দুর্দান্ত, ব্যাটসম্যান আর বোলার হিসেবেও দারুণ উন্নতি করেছে। এভাবে কঠোর পরিশ্রম করতে থাকলে সে-ই একদিন আমাদের এক নম্বর অলরাউন্ডার হবে।’ এএফপি অবলম্বনে।
No comments