এত্ত এত্ত লাশ!
ধ্বংসস্তূপের ভিতরে লাশ। হাসপাতালের মর্গে
লাশ। সেখানেও আর জায়গা হচ্ছে না। লাশ রাখা হচ্ছে ফ্রিজে। একটা দু’টা নয়-
শত শত লাশ। রাস্তায় পড়ে আছে লাশ। কোল্ড স্টোরেজে যেভাবে আলুর বস্তা রাখা হয়
তারচেয়েও এলোমেলো ফেলে রাখা হয়েছে লাশ। ঊষর মাটি আর সইতে পারছে না এত্ত
লাশ। তার বুক আজ হু হু করে কাঁদছে। এত্ত লাশ দেখে কাঁদছে ভিনধর্মী সাধারণ
মানুষের অন্তরাত্মা। কিন্তু কিছুতেই মন গলছে না ইসরাইল নামের দানব
রাষ্ট্রের। শিশুর লাশ। সদ্যজাত শিশুর লাশ। সবেমাত্র ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর
লাশ। এখন তার গা থেকে মুছে যায় নি গর্ভধারিণী মায়ের রক্তের ছাপ। এসব শিশুর
লাশ বুকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদছেন পিতা-মাতা। অথবা তারা দু’জনেই হয়েছেন
অতীত। বিধ্বস্ত কংক্রিটের মাঝ থেকে উঁকি দিয়ে আছে মৃত শিশুর মুখ। পড়ে আছে
যুবকের লাশ। যুবতীর লাশ। বৃদ্ধ-বৃদ্ধার লাশ। স্বামীর লাশ। স্ত্রীর লাশ।
চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ। এতটুকু গাজায় লাশের সংখ্যা ২ হাজার ছুঁই ছুঁই।
দৃষ্টিসীমা যতদূর যায় ততদূর শুধু লাশ আর লাশ। ধ্বংসস্তূপ সরালেই লাশ।
রেডক্রিসেন্টের উদ্ধারকর্মীরা সে লাশ দেখে, রক্তপাত দেখে কান্নায় ভেঙে
পড়ছেন। আর যা-ই হোক তারা তো রক্তমাংসের মানুষ। তাদের অন্তরাত্মা কাঁছছে। এত
লাশ দেখে, এত নির্মম মৃত্যু দেখে তারা দিশাহারা। তাইতো একজন আরেকজনকে
জড়িয়ে ধরে কান্নায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছেন- এত্ত লাশ! হায় সৃষ্টিকর্তা তুমি
কিভাবে সইছো! ইসরাইল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের এই শুদ্ধ উচ্চারণেই কি এতগুলো মৃতের, তার
স্বজনের ফরিয়াদ শেষ হয়ে যাবে! এর বিচার কে করবে! ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর হাত এখন ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর রক্তে রঞ্জিত। তার
হাত থেকে টপ টপ করে এ রক্ত ঝরে পড়ছে। তিনি যে পরিমাণ মানুষ হত্যা করছেন
ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন কি তার চেয়েও বেশি কুর্দিকে হত্যা
করেছিলেন? যদি সে জন্য সাদ্দাম হোসেনের বিচার হয়, তার ফাঁসি হয়- তাহলে
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কি পুরস্কার পাওয়া উচিত? তার কি বিচার হবে! কে করবে
বিচার! উল্টো তাকে ২২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের অস্ত্র পুরস্কার তুলে দেয়া হচ্ছে।
আর যা-ই হোক তার তো আত্মরক্ষার অধিকার আছে! লিবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট
মুয়াম্মার গাদ্দাফি কত মানুষ হত্যা করেছিলেন? তার বিরুদ্ধে যত দ্রুত ন্যাটো
পদক্ষেপ নিয়েছে ইসরাইলের বেলায় কেন তারা বেমালুম বেহুঁশ। তাদের হুঁশ
ফিরাবে কে! কোথায় জাতিসংঘ! বিবৃতির মধ্যে কেন আজ তারা বন্দি! কোথায়
নিরাপত্তা পরিষদ! এত্ত লাশেও কি কারো মন ভরছে না! আর কত! আর কত লাশ হলে
বিশ্ববিবেক জাগ্রত হবে! মানবতার সংজ্ঞা আজ কি নতুন করে লিখতে হবে
গুনীজনদের! গাজায় চারদিকে শুধু বিধ্বস্ত ভবনের হাহাকার। দূরে দাঁড়িয়ে আছে
শুধু একটি মিনার। ওখানে মসজিদ ছিল। তারই সাক্ষ্য বহন করছে সে। কতগুলো মসজিদ
ধ্বংস করেছে ইসরাইল! একটি, দুটি, তিনটি! না, কমপক্ষে ৬টি। এসব মসজিদে
মিনার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শুধু। আল্লাহর দরবারে তাদের ফরিয়াদ কি
পৌঁছায় না! কোথায় হামলা করে নি ইসরাইল! হাসপাতাল, জাতিসংঘের আশ্রয়কেন্দ্র,
মসজিদ, লোকালয়- কোথায় করে নি হামলা! রাস্তার কালো পিচে লেগে আছে তরতাজা
রক্ত। বহমান নদীর মতো বয়ে চলেছে তা। আর কত রক্ত! আর কত লাশ! এত্ত লাশ
এতটুকু গাজা ঠাঁই দেবে কোথায়! এত্ত এত্ত লাশ।
No comments