তাঁরা দুজনায় by ইকবাল হোসাইন চৌধুরী
একজন অস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী, আরেকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটেনের খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী। কীভাবে এক হলেন তাঁরা দুজনে?
‘আপনাকে ধন্যবাদ। সুযোগ পেলে একদিন বাংলাদেশে আসবেন।’
‘আপনাকে ধন্যবাদ। সুযোগ পেলে একদিন বাংলাদেশে আসবেন।’
>>অস্কার বিজয়ী ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েত বিনোশ ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নৃত্যশিল্পী আকরাম খান
ফরাসি
অভিনেত্রী জুলিয়েত বিনোশ প্রস্তাবটা শুনে হাসলেন। যাকে বলে রহস্যময় হাসি।
কায়দা করে মাইক্রোফোনের খুব কাছে মুখ এনে বললেন, ‘কেন নয়...আমি...চিনি।’
এই বলে আবারও হাসলেন বিশ্ব সিনেমার প্রিয় মুখ জুলিয়েত বিনোশ। সেই হাসিতে
এবার একচিলতে দুষ্টুমিও কি ঝিলিক দিয়ে গেল? কার কথা বললেন এই অস্কার বিজয়ী
অভিনেত্রী? বাংলাদেশের কাকে চেনেন তিনি? সেই রহস্যের জট খোলার সুযোগ ঘটল
না। সামনে বর্ষীয়ান কানাডিয়ান সাংবাদিক ততক্ষণে অস্থির হয়ে উঠেছেন জুলিয়েত
বিনোশকে প্রশ্ন করার অপেক্ষায়।
মে, ২০১৪। ৬৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের শেষবেলায় এসে ফরাসি সৌরভে চারদিক মোহিত করে ফেলেছেন জুলিয়েত বিনোশ। ফরাসি সিনেমার অন্যতম দিকপাল জঁ লুক গদার থেকে শুরু করে ইরানি সিনেমা-গুরু আব্বাস কিয়ারোস্তামি—কে না মুগ্ধ হয়েছেন জুলিয়েতের অভিনয়গুণে? দ্য ইংলিশ পেশেন্ট ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে বহু আগেই ঘরে তুলেছেন অস্কার।
ফ্রান্সের নন্দিত এই অভিনেত্রীকে পর পর দুটো প্রশ্ন করার দুর্লভ সুযোগ ঘটে গেছে। এটুকুতেই খুশি ছিলাম। উত্তর শেষে তাঁকে বাংলাদেশে আসতে বলেছি স্রেফ বাংলাদেশের নামটা আরেকবার বলার জন্যই। তখনো জানি না জুলিয়েত বিনোশ বড় ধরনের চমক রেখেছিলেন আমার জন্য।
দেশে ফিরে নানা ব্যস্ততায় ভুলতেই বসেছিলাম। হপ্তা দুয়েক আগে সিলস মারিয়া ছবির সংবাদ সম্মেলনের সেদিনের ফুটেজ দেখতে দেখতে হঠাৎ তাজ্জব। একবার নয়, টানা তিনবার শোনার পর পরিষ্কার বোঝা গেল কথাটা। জুলিয়েন বলেছেন, ‘আই নো আকরাম খান।’
আকরাম খান? ঝট করে মন চলে গেল লন্ডনে। লন্ডনের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার আকরাম খানের কথা জানি। জুলিয়েত কি তাঁর কথাই বলেছেন? তবে একজন ক্রিকেটার আকরাম খানও তো আছেন আমাদের।
ত্বরিত জুলিয়েত বিনোশের সঙ্গে সেই ঝটিকা আলাপের ভিডিও পাঠালাম লন্ডনে প্রতিবেদক উজ্জ্বল দাশের কাছে। আগেই জানি, আকরাম খানের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ তাঁর। পরদিন সকালে ঘুম ঘুম চোখে ফেসবুক ইনবক্স খুলতেই আরেক পশলা বিস্ময়। উজ্জ্বল দাশ মারফত বেশ কিছু ছবির লিঙ্ক পাঠিয়েছেন আকরাম খান। আর ছোট্ট বার্তায় লিখেছেন ‘জুলিয়েত বিনোশের সঙ্গে কয়েকটা কাজ করেছি আমি। ছবিগুলো দেখতে পারেন।’
ছবিতে মঞ্চে নাচছেন জুলিয়েত আর আকরাম খান একসঙ্গে! অভিনেত্রী জুলিয়েত বিনোশ নাচতেও পারেন। জানা ছিল না। আকরাম খানের নিজস্ব ওয়েবসাইট আর ইন্টারনেট ঘেঁটে যাবতীয় রহস্যের জবাব মিলল।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। সেবার লন্ডনে রীতিমতো আলোড়ন তুলেছিল একটি পরিবেশনা। ন্যাশনাল থিয়েটারে সেবার নৃত্যশিল্পী হিসেবে অভিষেক হয় অভিনেত্রী জুলিয়েত বিনোশের। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নৃত্যশিল্পী আকরাম খান এবং ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েত বিনোশের সেই মিলিত পরিবেশনা সাড়া ফেলেছিল গার্ডিয়ান, সানডে টাইমসসহ বিলেতের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমে। তাদের ‘ইন–আই’ শিরোনামের পরিবেশনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে মাতামাতি তো ছিলই।
আমাদের আকরাম খানের সঙ্গে জুলিয়েত বিনোশের পরিচয় ঘটে আকরাম খানের প্রযোজকের স্ত্রী সু মানের মাধ্যমে। তিনিই তাঁকে প্রথম প্রস্তাবটা দেন। এর পরই জুলিয়েত বিনোশ আকরামের অনুশীলন দেখতে যান। দুজনের পয়লা দেখাটা হয় লন্ডনের সাউথব্যাংকে।
‘আমার প্রথম ইচ্ছাটা ছিল নতুন কিছু করার। আর অনুশীলন ছিল আমার কাছে পাহাড়ে ওঠার মতো কষ্টকর।’ এই পরিবেশনা সম্পর্কে বলেছেন জুলিয়েত।
অন্যদিকে, আকরাম খানের জন্যও এটি ছিল আশ্চর্য এক অভিজ্ঞতা। তিনি বলেছেন, ‘তাঁর সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় ছিল অসাধারণ একটা ব্যাপার। শুধু শরীর দিয়ে নয়, মঞ্চে পায়ে তাল ঠোকার সঙ্গে কীভাবে আবেগ ফুটিয়ে তোলা যায়, সেটা আমি শিখেছি জুলিয়েতের কাছ থেকে। আমরা চেষ্টা করেছি দুজনের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে নতুন কিছু করার।’
গার্ডিয়ান পত্রিকার জুডিথ ম্যাকরেল আকরাম–জুলিয়েতের নাচ সম্পর্কে লেখেন, ‘এটি ভালোবাসা, কামনা, আচ্ছন্নতা আর রোমাঞ্চের এক মিলিত প্রতিফলন। জুলিয়েত আকরামের মতোই প্রায় একই আত্মবিশ্বাসে নেচেছেন সমান তালে।’
‘ইন-আই’ নামের পরিবেশনাটি লন্ডনে প্রথমবার হয়েছিল। তারপর সেটি ঘুরেছে বিশ্বের বেশ কিছু জায়গায়। এর মধ্যে আকরাম আর জুলিয়েতের বন্ধুত্ব হতে সময় লাগেনি।
হ্যাঁ, কান উৎসবে সেদিন অস্কার বিজয়ী ফরাসি অভিনেত্রী আসলে সত্যি কথাই বলেছিলেন। তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আকরাম খানকে চেনেন। আর সেটা আদতে শুধু ‘চেনা’ থেকে বেশি কিছু। জুলিয়েতের সেই রহস্যময় হাসি। কায়দা করে বলা, ‘আই নো আকরাম খান’ সবকিছুর রহস্যই এখন পরিষ্কার!
মে, ২০১৪। ৬৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের শেষবেলায় এসে ফরাসি সৌরভে চারদিক মোহিত করে ফেলেছেন জুলিয়েত বিনোশ। ফরাসি সিনেমার অন্যতম দিকপাল জঁ লুক গদার থেকে শুরু করে ইরানি সিনেমা-গুরু আব্বাস কিয়ারোস্তামি—কে না মুগ্ধ হয়েছেন জুলিয়েতের অভিনয়গুণে? দ্য ইংলিশ পেশেন্ট ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে বহু আগেই ঘরে তুলেছেন অস্কার।
ফ্রান্সের নন্দিত এই অভিনেত্রীকে পর পর দুটো প্রশ্ন করার দুর্লভ সুযোগ ঘটে গেছে। এটুকুতেই খুশি ছিলাম। উত্তর শেষে তাঁকে বাংলাদেশে আসতে বলেছি স্রেফ বাংলাদেশের নামটা আরেকবার বলার জন্যই। তখনো জানি না জুলিয়েত বিনোশ বড় ধরনের চমক রেখেছিলেন আমার জন্য।
দেশে ফিরে নানা ব্যস্ততায় ভুলতেই বসেছিলাম। হপ্তা দুয়েক আগে সিলস মারিয়া ছবির সংবাদ সম্মেলনের সেদিনের ফুটেজ দেখতে দেখতে হঠাৎ তাজ্জব। একবার নয়, টানা তিনবার শোনার পর পরিষ্কার বোঝা গেল কথাটা। জুলিয়েন বলেছেন, ‘আই নো আকরাম খান।’
আকরাম খান? ঝট করে মন চলে গেল লন্ডনে। লন্ডনের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার আকরাম খানের কথা জানি। জুলিয়েত কি তাঁর কথাই বলেছেন? তবে একজন ক্রিকেটার আকরাম খানও তো আছেন আমাদের।
ত্বরিত জুলিয়েত বিনোশের সঙ্গে সেই ঝটিকা আলাপের ভিডিও পাঠালাম লন্ডনে প্রতিবেদক উজ্জ্বল দাশের কাছে। আগেই জানি, আকরাম খানের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ তাঁর। পরদিন সকালে ঘুম ঘুম চোখে ফেসবুক ইনবক্স খুলতেই আরেক পশলা বিস্ময়। উজ্জ্বল দাশ মারফত বেশ কিছু ছবির লিঙ্ক পাঠিয়েছেন আকরাম খান। আর ছোট্ট বার্তায় লিখেছেন ‘জুলিয়েত বিনোশের সঙ্গে কয়েকটা কাজ করেছি আমি। ছবিগুলো দেখতে পারেন।’
ছবিতে মঞ্চে নাচছেন জুলিয়েত আর আকরাম খান একসঙ্গে! অভিনেত্রী জুলিয়েত বিনোশ নাচতেও পারেন। জানা ছিল না। আকরাম খানের নিজস্ব ওয়েবসাইট আর ইন্টারনেট ঘেঁটে যাবতীয় রহস্যের জবাব মিলল।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। সেবার লন্ডনে রীতিমতো আলোড়ন তুলেছিল একটি পরিবেশনা। ন্যাশনাল থিয়েটারে সেবার নৃত্যশিল্পী হিসেবে অভিষেক হয় অভিনেত্রী জুলিয়েত বিনোশের। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নৃত্যশিল্পী আকরাম খান এবং ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েত বিনোশের সেই মিলিত পরিবেশনা সাড়া ফেলেছিল গার্ডিয়ান, সানডে টাইমসসহ বিলেতের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমে। তাদের ‘ইন–আই’ শিরোনামের পরিবেশনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে মাতামাতি তো ছিলই।
আমাদের আকরাম খানের সঙ্গে জুলিয়েত বিনোশের পরিচয় ঘটে আকরাম খানের প্রযোজকের স্ত্রী সু মানের মাধ্যমে। তিনিই তাঁকে প্রথম প্রস্তাবটা দেন। এর পরই জুলিয়েত বিনোশ আকরামের অনুশীলন দেখতে যান। দুজনের পয়লা দেখাটা হয় লন্ডনের সাউথব্যাংকে।
‘আমার প্রথম ইচ্ছাটা ছিল নতুন কিছু করার। আর অনুশীলন ছিল আমার কাছে পাহাড়ে ওঠার মতো কষ্টকর।’ এই পরিবেশনা সম্পর্কে বলেছেন জুলিয়েত।
অন্যদিকে, আকরাম খানের জন্যও এটি ছিল আশ্চর্য এক অভিজ্ঞতা। তিনি বলেছেন, ‘তাঁর সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় ছিল অসাধারণ একটা ব্যাপার। শুধু শরীর দিয়ে নয়, মঞ্চে পায়ে তাল ঠোকার সঙ্গে কীভাবে আবেগ ফুটিয়ে তোলা যায়, সেটা আমি শিখেছি জুলিয়েতের কাছ থেকে। আমরা চেষ্টা করেছি দুজনের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে নতুন কিছু করার।’
গার্ডিয়ান পত্রিকার জুডিথ ম্যাকরেল আকরাম–জুলিয়েতের নাচ সম্পর্কে লেখেন, ‘এটি ভালোবাসা, কামনা, আচ্ছন্নতা আর রোমাঞ্চের এক মিলিত প্রতিফলন। জুলিয়েত আকরামের মতোই প্রায় একই আত্মবিশ্বাসে নেচেছেন সমান তালে।’
‘ইন-আই’ নামের পরিবেশনাটি লন্ডনে প্রথমবার হয়েছিল। তারপর সেটি ঘুরেছে বিশ্বের বেশ কিছু জায়গায়। এর মধ্যে আকরাম আর জুলিয়েতের বন্ধুত্ব হতে সময় লাগেনি।
হ্যাঁ, কান উৎসবে সেদিন অস্কার বিজয়ী ফরাসি অভিনেত্রী আসলে সত্যি কথাই বলেছিলেন। তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আকরাম খানকে চেনেন। আর সেটা আদতে শুধু ‘চেনা’ থেকে বেশি কিছু। জুলিয়েতের সেই রহস্যময় হাসি। কায়দা করে বলা, ‘আই নো আকরাম খান’ সবকিছুর রহস্যই এখন পরিষ্কার!
No comments