মধ্যস্থতা করতে চান ওবামা
শুক্রবারের সকালটিও ফিলিস্তিনের রাফাবাসীর শুরু হয় বিভীষিকার মধ্য দিয়ে। সূর্য ওঠার আগেই হামলে পড়ে ইসরায়েলি জঙ্গি বিমান। শহরবাসীর মাথার ওপর পড়তে থাকে একটার পর একটা শক্তিশালী বোমা। |
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলা চলছেই। বিমান থেকে বেপরোয়াভাবে ফেলা হচ্ছে বোমা। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত টানা চার দিন ধরে এ হামলায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হলেও তা থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় হামলা বন্ধে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, তিনি গাজায় অস্ত্রবিরতিতে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির। গাজা উপত্যকায় ক্রমবর্ধমান সংঘাতের
প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করেন। এ সময় ওবামা বলেন, অস্ত্রবিরতিতে মধ্যস্থতা করতে তাঁর সরকার রাজি। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, চলমান সহিংসতা আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে ওবামা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বেসামরিক লোকের প্রাণহানি ঠেকাতে সব পক্ষকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র শত্রুতার অবসান ঘটাতে প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১২ সালের নভেম্বর মাসের অস্ত্রবিরতিতে ফিরে যাওয়া। তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও মিসরের মধ্যস্থতায় ২০১২ সালে ওই অস্ত্রবিরতি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এর মাধ্যমে গাজার ইসলামপন্থী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আট দিনের বিমান হামলা বন্ধ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি জাতিসংঘও গাজা উপত্যকায় চলমান হানাহানি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদের একটি জরুরি বৈঠকের পর বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অস্ত্রবিরতি ‘সবচেয়ে বেশি জরুরি’। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ফোন করে অবিলম্বে রক্তপাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন এবং বেসামরিক লোক হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে শিগগিরই বিমান হামলা বন্ধের কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। নেতানিয়াহু বারবার বলছেন, অস্ত্রবিরতির বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে নেই।
গতকাল বিমান হামলা শুরু হয় ভোর থেকে। পাশাপাশি নৌ-হামলাও চালানো হয়। গাজা সিটির একটি বাড়িতে বিমান হামলায় একজন চিকিৎসক নিহত হন। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফার একটি তিনতলা বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান থেকে ফেলা বোমায় নিহত হয় আরও তিনজন। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার বিমান হামলাতেই নারী ও শিশুসহ ৩০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ যায়। সব মিলিয়ে গত চার দিনে নিহত হয়েছে প্রায় ৯০ জন। ইসরায়েলের বিমান হামলার জবাবে গাজা থেকে মাঝেমধ্যে রকেট ছোড়া হচ্ছে। তবে এতে এখন পর্যন্ত কেউ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। আংশিকভাবে মার্কিন অর্থায়নে নির্মিত ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম বেশির ভাগ রকেটই ভূপাতিত করেছে। অবশ্য, গতকাল ইসরায়েলের বন্দর শহর আসদদের একটি পেট্রোল স্টেশনে একটি রকেটের আঘাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আটজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। গাজা থেকে বেশির ভাগ রকেটই ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব লক্ষ্য করে ছোড়া হচ্ছে। গতকালও তেল আবিবের আকাশ থেকে তিনটি রকেট ভূপাতিত করা হয়েছে বলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে। ইসরায়েরের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তেও সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ইসরায়েলি তিন কিশোরকে অপহরণ ও হত্যার পর উত্তেজনা শুরু হয়। ইসরায়েল এ জন্য হামাসকে দায়ী করলেও তারা তা অস্বীকার করে। পরে ফিলিস্তিনি এক কিশোর একইভাবে অপহরণ ও হত্যার শিকার হওয়ার পর উত্তেজনা নতুন মোড় নেয়। গাজা থেকে রকেট ছোড়া হচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলে ইসরায়েল গত মঙ্গলবার ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ নামের অভিযান শুরু করে।
No comments