ঈদের পর ‘অপারেশন ধরপাকড়’ by মাকসুদুল আলম
১৬ই অক্টোবর দেশব্যাপী উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। সর্বোচ্চ ত্যাগের উৎসব। জাপানে তা আগের দিন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজাও কাছাকাছি সময়ে। দু’টি বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব থাকলেও খুশির আমেজ নেই জনমনে।
নির্বাচন, ঈদ ও পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতি চোখে পড়ার মতো। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রয়েছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। ২৫শে অক্টোবর রাজপথ দখলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জনসভা। আর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ। একদল বলছে ‘নির্বাচন হবেই। কে এলো না এলো, কিছু যায় আসে না’। আরেক দল বলছে ‘প্রহসনের নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হবে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। হটাও সরকার বাঁচাও দেশ’। জনমত জরিপে ৯৩ শতাংশ মানুষ বলছে বিরোধী দল ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। ফলাফল বিপক্ষে যাওয়ায় জরিপের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিরক্তি ও হতাশা প্রকাশ করেছে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারে জনমত বাড়লেও বাস্তবে নির্বাচনকালীন সঙ্কট সমাধানে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই সরকারের। স্বপ্নের ছকে বাঁধা নির্বাচন চায় তারা। সাংবিধানিক জটিলতার ইস্যুতে কোন আলোচনাই হয়নি সংসদের অধিবেশনে। যোগ দেয়নি বিরোধী দল। কাজকর্ম না করেও বেতন-ভাতাদি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে তারা। দপ্তরবিহীন মন্ত্রীর মতো। এর আগে সরকারের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেবে না বলে সভা-সমাবেশে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছেন তারা। ধাপে ধাপে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে সরকারের পতন ঘটাবেন বলে হুঙ্কার ছেড়েছেন। সংখ্যার অজুহাত দেখিয়েছেন। বলেছেন মাত্র ৩৩ জন। তাই সংসদে কোন প্রস্তাব আনলে তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যাবে। আন্দোলন দীর্ঘায়িত করেছে। জনদুর্ভোগ বাড়িয়েছে। গরমে নরম কর্মসূচি দিয়ে দলীয় কার্যালয়ে বসে এসির বাতাস খেয়েছে। বিদেশীদের সমর্থন আদায়ে ব্রিফিং করেছে। সঙ্কট উত্তরণে নির্বাচনকালীন সরকারের কোন রূপরেখাই জাতির সামনে প্রকাশ করেনি। অন্যদিকে, ক্ষমতায় এসে সংখ্যার জোরে সংবিধানে ছুরি চালানো হয়েছে। আদালতের আংশিক রায়ের দোহাই দিয়ে তালগাছের মালিকানা ঠিকঠাক করা হয়েছে। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। ফলে সাংবিধানিক জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দেশে কোন দল একবার ক্ষমতায় যেতে পারলে কেয়ামত পর্যন্ত থাকার চেষ্টা করে। জোর করে নামাতে হয়। বিতাড়িত না হলে ক্ষমতা থেকে কেউ নামতে চায় না। এর মূল কারণ বর্ণনা করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান। তার মতে ‘বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা চর্চার অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে। ক্ষমতায় থেকে যা খুশি তাই করা যায়। এই স্বাধীনতার পুরোটাই আমাদের পরিবারতান্ত্রিক সরকার প্রধানরা ভোগ করে আসছে’। সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী ২৫শে অক্টোবর থেকে নির্বাচনকালীন সরকার শুরু। ৯০ দিনের পরিবর্তে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট ৪৫ দিনের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের গুঞ্জন রয়েছে। জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়ার কথা প্রধানমন্ত্রীর। সমগ্র জাতির আশা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সঠিক দিক নির্দেশনা থাকবে। বিদ্যমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর হবে। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে দু’দলের শীর্ষ নেতৃত্বে একটি সমঝোতা হবে। জাতির সঙ্কট মুহূর্তে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো দূরদর্শিতাপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক সমাধান বাতলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী। গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবেন। একগুঁয়েমির পথ পরিহার করে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য ও অর্থবহ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন। ভোগের রাজনীতিকে দূরে ঠেলে পিতার মতো ত্যাগের রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ হবেন। জাতিসংঘে প্রদত্ত ভাষণের মতো গতানুগতিক অন্ত:সারশূন্য রাজনৈতিক বিষোদগার করা হলে তা শুধুই হবে আগুনে ঘি ঢালা। যা দু’টি দলের পারস্পরিক অনাস্থা ও অবিশ্বাসকেই বিষিয়ে তুলবে। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে আরও বেশি উস্কে দেবে। দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে। লগি-বৈঠার আঘাতে রক্তারক্তি হবে। দেশের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত হবে। যা কারো কাম্য নয়।
দিন দুয়েক আগেই শেষ হলো নোবেল পুরস্কারের মওসুম। অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল যে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য ফাউন্ডেশনের কাছে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সে চিঠি লিখেছেন সমরেশ দেবনাথ। তিনি একটি সংগঠনের সভাপতি। নোবেল অনুরোধ তদবিরের কোন পুরস্কার নয়। টাকা দিয়ে কেনা গেলে তা আমরাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় পেতাম। রেকর্ড গড়তাম। নিউ ইয়র্কে সুটকেস ভর্তি হীরা-মুক্তা কেনাকাটার চিত্র থেকে মোটামুটি হলফ করেই বলা যায়। লবিং করায় সমরেশ বাবু কোন সেলামি পেয়েছেন কিনা জানা নেই। অতীতে রাষ্ট্রীয় খরচে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রি কেনার মুখরোচক গল্পগুজব পত্রপত্রিকায় এসেছে। সেই ডিগ্রি কি কাজে লেগেছে জানা নেই। ফিরে আসা যাক দেশের প্রসঙ্গে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিমের মতে ‘এরশাদ কিংবা আইয়ুব আমলের চেয়েও আওয়ামী আমলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক বেশি বেপরোয়া’। পুলিশ বাহিনীকে আমরা দলীয় ক্যাডার হিসাবে ব্যবহৃত হতে দেখেছি। তাই সরকারের শেষ সময়ে ঢাকার বাইরে বদলি হওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বিতর্কিত ও বেপরোয়া পেটোয়া বাহিনীর পুলিশ কর্মকর্তারা। সেই সুযোগে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির প্রতিযোগিতায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের দাগি সন্ত্রাসীরা। প্রতিদিন প্রকাশ্যে দোকানপাট লুটপাট, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুনোখুনি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তারা। চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। যাত্রাবাড়ীতে মায়ের সামনে ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছে বাসের হেলপার। দিনদুপুরে নৃশংসভাবে খুন হয়েছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টার কর্মকর্তা। লুটে নেয়া হয়েছে টিকিটের ১৭ লাখ টাকা। গাজীপুরে ট্রেনের ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে তিনজনকে। মোহাম্মদপুরে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তা কর্মীকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছাত্রলীগ নেতার হাত-পায়ের রগ ও ফুসফুস কেটে দেয়া হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদেরকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। সরকার সমর্থক ভিসি শিক্ষকদের সঙ্গে হাতাহাতি করেছে। চট্টগ্রামের মাদরাসায় বিতর্কিত বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে থানার ভেতরেই পাঁচ কনস্টেবল গণধর্ষণ করেছে ১৭ বছর বয়সী কিশোরীকে। মাদারীপুরে জেলা যুবলীগ নেতা ও তার বন্ধুরা চাকরির লোভ দেখিয়ে তরুণীকে বাসায় ডেকে নিয়ে গণধর্ষণ করেছে। প্রতিদিন ঘটে যাওয়া হাজারো লোমহর্ষক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা লিখতে গেলে পত্রিকার পাতা ফুরিরে যাবে। চাঞ্চল্যকর এসব অপরাধের মাঝেও ফেসবুকে নতুন তথ্য এসেছে। মার্কিন নাগরিক তথ্য উপদেষ্টার মতে ‘সাধারণ মানুষ যারা বিগত ৫ বছর নিরাপদে আছে, তা বর্তমান সরকারের বদৌলতে। ক্ষমতাসীন সরকারই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার একমাত্র ভরসাস্থল। আগামী নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করলে দেশে নৈরাজ্য কায়েম হবে। তারা নির্বিচারে বোমা হামলা চালাবে। তাতে সবার প্রাণহানি ঘটবে’। বিলকুল ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
ছোটবেলায় প্রবাদ পড়েছি, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। কয়্লা ধুইলেও ময়লা যায় না। কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না। বিলাতের কলম সন্ত্রাসীও ব্যতিক্রম নয়। তাকে নিয়ে লেখা মানে জাতীয় দৈনিকের মূল্যবান পাতা নষ্ট করা। সময়ের অপচয় করা। গঠনমূলক ইতিবাচক কোন লেখা নেই তার। বিগত ১৫ বছরেও চোখে পড়েনি। ধ্বংসাত্মক ও নেতিবাচক লেখার ছড়াছড়ি। লন্ডনে বসে কলাম লেখার নামে মৃত মানুষকে সাক্ষী রেখে নিরপেক্ষ ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীদেরকে তুলাধোনা করাই তার কাজ। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সিপিডি রিসার্চ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, আন্তর্জাতিক আইনবিদ ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করাই তার মূল উদ্দেশ্য। সময় কাটে রাষ্ট্রের নুন (কমিশন) খেয়ে সরকারের গুণ গেয়ে। নেশা আর দালালিতে। বর্তমানে বামপন্থি রাজনীতিকদের (সিপিবি ও ন্যাপ) তোষামোদি করেন। গুরু মানেন প্রবীণ ন্যাপ নেতা মোজাফফর আহমদকে। কট্টর সরকারদলীয় পত্রিকায় ‘পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রে’র নামে যা খুশি লিখে নিজেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। পক্ষান্তরে, ইতিহাস লিখতে বারণ সাধারণ মানুষের। খোলা চিঠি ‘রাজাকারের উকিল নোটিস’ লেখায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। টিভি টকশোতে সত্য বলে সমালোচনা করায় মুঠোফোনে হুমকি দেয়া হয়েছে নিউএজের স্পষ্টভাষী ও জনপ্রিয় সম্পাদককে। নির্বাচনের আগে সরকারি কর্মচারীদের ভাগে আনতে ২০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতার মূলা ঝুলানো হয়েছে। উপলক্ষ যাই হোক দেশের মানুষ বাড়তি কিছু পেলে অসুবিধা নেই। সুন্দরবনে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বিধ্বংসী ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জনরোষের ভয়ে ভেড়ামারায় বসে রিমোট কন্ট্রোলে বোতাম টিপে বাগেরহাটের রামপালে বিতর্কিত বিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে। পরিবেশের ক্ষতি অগ্রাহ্য করে দাদাদের মন জয় করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন সরকারি দলের এক সদস্য। ‘আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসতে না পারলে সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা বাসায় থাকতে পারবে না। নেতাকর্মীদের গায়ের চামড়াও থাকবে না’। এমন কথা বলেছেন স্বয়ং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ। নিশ্চয় জনস্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা হয়েছে বলেই আগেভাগেই তা স্বীকার করা হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ঈদের পর দেশব্যাপী ব্যাপক ধরপাকড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। চালানো হতে পারে অপারেশন ধরপাকড়। ঘটতে পারে ভয়াবহ কোন বিপর্যয়। সমঝোতার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। শিগরিই দু’দলের শীর্ষ নেতৃত্বে সমঝোতা না হলে সংঘাত ও নৈরাজ্য অনিবার্য। জারি হতে পারে জরুরি অবস্থা। হতে পারে নির্বাচন স্থগিত। কেউ না চাইলেও ক্ষমতায় আসতে পারে সেনা-সমর্থিত সরকার। সঙ্কট এড়াতে দু’দলের শীর্ষ নেতৃত্বে সমঝোতার কোন বিকল্প নেই। সভ্য দেশে সহিংসতা, রক্তারক্তি আর প্রাণহানি কেউ চায় না। যত তাড়াতাড়ি সবার বোধোদয় হবে ততই মঙ্গল। সবাইকে জানাই ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
দিন দুয়েক আগেই শেষ হলো নোবেল পুরস্কারের মওসুম। অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল যে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য ফাউন্ডেশনের কাছে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সে চিঠি লিখেছেন সমরেশ দেবনাথ। তিনি একটি সংগঠনের সভাপতি। নোবেল অনুরোধ তদবিরের কোন পুরস্কার নয়। টাকা দিয়ে কেনা গেলে তা আমরাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় পেতাম। রেকর্ড গড়তাম। নিউ ইয়র্কে সুটকেস ভর্তি হীরা-মুক্তা কেনাকাটার চিত্র থেকে মোটামুটি হলফ করেই বলা যায়। লবিং করায় সমরেশ বাবু কোন সেলামি পেয়েছেন কিনা জানা নেই। অতীতে রাষ্ট্রীয় খরচে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রি কেনার মুখরোচক গল্পগুজব পত্রপত্রিকায় এসেছে। সেই ডিগ্রি কি কাজে লেগেছে জানা নেই। ফিরে আসা যাক দেশের প্রসঙ্গে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিমের মতে ‘এরশাদ কিংবা আইয়ুব আমলের চেয়েও আওয়ামী আমলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক বেশি বেপরোয়া’। পুলিশ বাহিনীকে আমরা দলীয় ক্যাডার হিসাবে ব্যবহৃত হতে দেখেছি। তাই সরকারের শেষ সময়ে ঢাকার বাইরে বদলি হওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বিতর্কিত ও বেপরোয়া পেটোয়া বাহিনীর পুলিশ কর্মকর্তারা। সেই সুযোগে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির প্রতিযোগিতায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের দাগি সন্ত্রাসীরা। প্রতিদিন প্রকাশ্যে দোকানপাট লুটপাট, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুনোখুনি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তারা। চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। যাত্রাবাড়ীতে মায়ের সামনে ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছে বাসের হেলপার। দিনদুপুরে নৃশংসভাবে খুন হয়েছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টার কর্মকর্তা। লুটে নেয়া হয়েছে টিকিটের ১৭ লাখ টাকা। গাজীপুরে ট্রেনের ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে তিনজনকে। মোহাম্মদপুরে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তা কর্মীকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছাত্রলীগ নেতার হাত-পায়ের রগ ও ফুসফুস কেটে দেয়া হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদেরকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। সরকার সমর্থক ভিসি শিক্ষকদের সঙ্গে হাতাহাতি করেছে। চট্টগ্রামের মাদরাসায় বিতর্কিত বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে থানার ভেতরেই পাঁচ কনস্টেবল গণধর্ষণ করেছে ১৭ বছর বয়সী কিশোরীকে। মাদারীপুরে জেলা যুবলীগ নেতা ও তার বন্ধুরা চাকরির লোভ দেখিয়ে তরুণীকে বাসায় ডেকে নিয়ে গণধর্ষণ করেছে। প্রতিদিন ঘটে যাওয়া হাজারো লোমহর্ষক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা লিখতে গেলে পত্রিকার পাতা ফুরিরে যাবে। চাঞ্চল্যকর এসব অপরাধের মাঝেও ফেসবুকে নতুন তথ্য এসেছে। মার্কিন নাগরিক তথ্য উপদেষ্টার মতে ‘সাধারণ মানুষ যারা বিগত ৫ বছর নিরাপদে আছে, তা বর্তমান সরকারের বদৌলতে। ক্ষমতাসীন সরকারই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার একমাত্র ভরসাস্থল। আগামী নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করলে দেশে নৈরাজ্য কায়েম হবে। তারা নির্বিচারে বোমা হামলা চালাবে। তাতে সবার প্রাণহানি ঘটবে’। বিলকুল ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
ছোটবেলায় প্রবাদ পড়েছি, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। কয়্লা ধুইলেও ময়লা যায় না। কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না। বিলাতের কলম সন্ত্রাসীও ব্যতিক্রম নয়। তাকে নিয়ে লেখা মানে জাতীয় দৈনিকের মূল্যবান পাতা নষ্ট করা। সময়ের অপচয় করা। গঠনমূলক ইতিবাচক কোন লেখা নেই তার। বিগত ১৫ বছরেও চোখে পড়েনি। ধ্বংসাত্মক ও নেতিবাচক লেখার ছড়াছড়ি। লন্ডনে বসে কলাম লেখার নামে মৃত মানুষকে সাক্ষী রেখে নিরপেক্ষ ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীদেরকে তুলাধোনা করাই তার কাজ। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সিপিডি রিসার্চ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, আন্তর্জাতিক আইনবিদ ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করাই তার মূল উদ্দেশ্য। সময় কাটে রাষ্ট্রের নুন (কমিশন) খেয়ে সরকারের গুণ গেয়ে। নেশা আর দালালিতে। বর্তমানে বামপন্থি রাজনীতিকদের (সিপিবি ও ন্যাপ) তোষামোদি করেন। গুরু মানেন প্রবীণ ন্যাপ নেতা মোজাফফর আহমদকে। কট্টর সরকারদলীয় পত্রিকায় ‘পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রে’র নামে যা খুশি লিখে নিজেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। পক্ষান্তরে, ইতিহাস লিখতে বারণ সাধারণ মানুষের। খোলা চিঠি ‘রাজাকারের উকিল নোটিস’ লেখায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। টিভি টকশোতে সত্য বলে সমালোচনা করায় মুঠোফোনে হুমকি দেয়া হয়েছে নিউএজের স্পষ্টভাষী ও জনপ্রিয় সম্পাদককে। নির্বাচনের আগে সরকারি কর্মচারীদের ভাগে আনতে ২০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতার মূলা ঝুলানো হয়েছে। উপলক্ষ যাই হোক দেশের মানুষ বাড়তি কিছু পেলে অসুবিধা নেই। সুন্দরবনে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বিধ্বংসী ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জনরোষের ভয়ে ভেড়ামারায় বসে রিমোট কন্ট্রোলে বোতাম টিপে বাগেরহাটের রামপালে বিতর্কিত বিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে। পরিবেশের ক্ষতি অগ্রাহ্য করে দাদাদের মন জয় করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন সরকারি দলের এক সদস্য। ‘আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসতে না পারলে সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা বাসায় থাকতে পারবে না। নেতাকর্মীদের গায়ের চামড়াও থাকবে না’। এমন কথা বলেছেন স্বয়ং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ। নিশ্চয় জনস্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা হয়েছে বলেই আগেভাগেই তা স্বীকার করা হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ঈদের পর দেশব্যাপী ব্যাপক ধরপাকড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। চালানো হতে পারে অপারেশন ধরপাকড়। ঘটতে পারে ভয়াবহ কোন বিপর্যয়। সমঝোতার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। শিগরিই দু’দলের শীর্ষ নেতৃত্বে সমঝোতা না হলে সংঘাত ও নৈরাজ্য অনিবার্য। জারি হতে পারে জরুরি অবস্থা। হতে পারে নির্বাচন স্থগিত। কেউ না চাইলেও ক্ষমতায় আসতে পারে সেনা-সমর্থিত সরকার। সঙ্কট এড়াতে দু’দলের শীর্ষ নেতৃত্বে সমঝোতার কোন বিকল্প নেই। সভ্য দেশে সহিংসতা, রক্তারক্তি আর প্রাণহানি কেউ চায় না। যত তাড়াতাড়ি সবার বোধোদয় হবে ততই মঙ্গল। সবাইকে জানাই ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
No comments