সংঘাতের আশঙ্কা সমঝোতার পরামর্শ
নির্বাচন
নিয়ে ধূম্রজাল। মুখোমুখি দুই রাজনৈতিক শিবির। সমঝোতার কোন আলামত নেই।
পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন গোটা দেশ। শুরু হয়েছে উৎকণ্ঠার ক্ষণ গণনা। ডেডলাইন
২৪শে অক্টোবর।
এর পরে কি হবে কেউ জানে না। সার্বিক
পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশের সুশীল সমাজ, পেশাজীবী, রাজনীতিকসহ
বিশিষ্টজনরা। তাদের কথা- চারপাশের আলামত সংঘাতের পূর্ব লক্ষণ। পরিস্থিতি
এখন পয়েন্ট অব নো রিটার্নের দিকে। ক্ষীণ হয়ে আসছে সমঝোতার সব সম্ভাবনা।
রাজনৈতিক সংঘাত দেখা দিলে তা দেশ এবং অর্থনীতিকে ফের পিছনে নিয়ে যাবে।
সঙ্কট আরও ঘনীভূত করবে। অনেকের আশঙ্কা, পরিস্থিতি এক এগারোর চেয়েও ভয়াবহ
হতে পারে। তবে এখনও সমঝোতার সুযোগ ও সম্ভাবনা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি।
প্রধান দুই দলের সদিচ্ছা থাকলে এখনও সমঝোতায় পৌঁছা সম্ভব। আলোচনা
হতে পারে দুই দলের শীর্ষ নেত্রী পর্যায়ে। প্রয়োজনে এটি শুরু করা যেতে পারে
মহাসচিব পর্যায়ে। একটি দেশের রাষ্ট্রদূতের পর্যায়ে এমন প্রস্তাবও এসেছে।
তাই সময় ক্ষেপণ না করে সমঝোতায় আসার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান
জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তাদের পরামর্শ-সংঘাত এড়াতে সমঝোতাই এখন একমাত্র
বিকল্প।
ড. আকবর আলি খান: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, আসছে জাতীয়
সংসদ নির্বাচন অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে। এ নিয়ে কোন ভবিষ্যৎ মন্তব্য
করা অসম্ভব। তবে একটা কথা সব সময় বলে আসছি, এখনও বলছি তা হলো দেশের প্রধান
দু’দলকে সমঝোতায় আসতে হবে। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ভাল হবে। দেশের
জন্যও ভাল হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
এম হাফিজ উদ্দিন খান: সুজনের সভাপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, দুই দলের মধ্যে যদি আন্তরিকতা থাকে এবং তারা যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় তাহলে এটা কোন সমস্যাই নয়। এক বৈঠকেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। আসলে তারা কেউ আন্তরিক নয়। কারণ অতীতে অনেকেই পরিস্থিতি উত্তরণের সমাধান দিয়েছেন। তারা কেউই তা আমলে নেয়নি। দুই দলের অনড় অবস্থানের কারণে সংঘাতময় পরিস্থিতির আভাস দিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কথা-বার্তায় মনে হচ্ছে তারা কোন ধরনের ছাড় দিতে রাজি নন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেনই। এবং যে কোন উপায়ে একটা নির্বাচন করবেনই। অন্যদিকে, বিরোধী দল বিএনপিও বলেছে, ওই একতরফা নির্বাচনে অংশ নেবে না। যে কোন উপায়ে নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, নির্বাচন প্রতিহত করতে চাইলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, সংঘাত অনিবার্য। ইতিহাস থেকে রাজনীতিবিদরা শিক্ষা নেন না উল্লেখ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দুই দলই। অতীতে এ ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তারা এ থেকে শিক্ষা নেননি।
মির্জা আজিজুল ইসলাম: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলেন, আমরা অপেক্ষা করছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার উদ্দেশে কি ধরনের রূপরেখা দেন। তিনি বলেন, শুধু এক পক্ষ নয়, উভয় পক্ষকে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও সমাধানে আসতে হবে। যদি কোন পক্ষই ছাড় দিতে সম্মত না হয়ে এবং এক তরফা নির্বাচন করতে চায় তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হবে। দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন করার পরিস্থিতি আসতে পারে।
এবিএম মূসা: প্রবীণ এ সাংবাদিক বলেন, দুই দলের সমঝোতার কোন সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশে ৪৭ সালের পর থেকে কোনদিন কোন রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সমঝোতা বা সংলাপের মাধ্যমে হয়নি। এখনও হবে না। সংঘাত, সংঘর্ষই একমাত্র পথ। যে যারে মেরে খেতে পারে সে-ই টিকে থাকবে। এভাবেই চলছে রাজনীতি। সংলাপের জন্য বিরোধী দল বিলাপ করছে, কিন্তু সরকারের কোন ইচ্ছা নেই। তিনি মনে করেন, ২৫শে অক্টোবরকে নিয়ে যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তা সত্য নয়। বিএনপি ২৫শে অক্টোবর কিছুই করবে না। এটি নিয়ে কোন দুশ্চিন্তার অবকাশ নেই।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক: প্রবীণ এ আইনজীবী বলেন, প্রধান দুই দলের অবস্থানে এখন খুব ফারাক নেই। আওয়ামী লীগ অন্তর্বর্তী সরকারের কথা বলছে। বিএনপিও বলছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কথা। বিরোধী দলের দাবি এখন আর তত্ত্বাবধায়কে নেই। তাই একটি নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা হলেই সমাধান হয়ে যাবে। এই নিরপেক্ষ সরকার সংসদ সদস্যদের দিয়েও হতে পারে। প্রশ্ন আসতে পারে এই সরকারের প্রধান নিয়ে। এরও সমাধান আছে। যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে এটিও সমাধান করা যাবে। কোন নিরপেক্ষ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে কোন আসন থেকে নির্বাচিত করে এনে সরকার প্রধান করা যেতে পারে। এজন্য একটি আসনের এমপিকে পদত্যাগ করতে হবে। সব কিছু নির্ভর করছে দুই দলের সদিচ্ছার ওপর।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের আশার কোন পরিবর্তন ঘটেনি। আজও আশা নিয়ে অপেক্ষায় আছি। আমাদের প্রত্যাশা সংঘাত ছেড়ে সমঝোতায় ফিরে আসবে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল। আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রচেষ্টা ছিল এবং অব্যাহত আছে। এর বাইরে আর কিছু করার নেই। দুই দলকে আহ্বান এবং পরামর্শ দেয়া ছাড়াতো সাধারণের কাছে কোন কিছু নেই।
মনিরুজ্জামান মিয়া: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ ভিসি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কটের সমাধান চাইছে না আওয়ামী লীগ। তারা চাইছে নিজেদের ইচ্ছেমতো একটা নির্বাচন করতে। সরকার চাইলে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আরও দুই টার্ম নির্বাচন হতে পারতো। এতে ক্ষতির কিছুই ছিল না। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন তা নিয়ে সরকার আলোচনা করতে পারতো। এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, এর আগে ’৯৬ সালে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও করেছিল। আসলে সরকার চাইছে, নির্বাচন পরিস্থিতিটাকে সম্পূর্ণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এ জন্যই তারা আলোচনা করতে চাইছে না। তবে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সমাধান একমাত্র সরকারের কাছে রয়েছে বলে দাবি করেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে জনগণকে অবশ্যই তাদের মতামত জানাতে হবে। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
তালুকদার মনিরুজ্জামান: বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক তালুকদার মনিরুজ্জামান মনে করছেন, সামনের সময়ে একটি সুসংবাদ আসতে পারে। তিনি বলেন, যা ঘটার তা আগামী ১৩ দিনের মধ্যেই ঘটবে। আশা করছি ভাল কিছু ঘটবে। তার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। দু’দলের মহাসচিব পর্যায়ের সংলাপের প্রস্তাবকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন প্রবীণ এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক। মহাসচিব পর্যায়ে বৈঠকের বিষয়ে যে আলোচনা হচ্ছে এটিকে ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ প্রস্তাব মেনে নিলেই একটা সমাধান আসবে। অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, আগামী ১৩ দিনের মধ্যে সুসংবাদ না আসলে তার উল্টোটা হবে। দেশের রাজনীতিতে ভয়ঙ্কর সংঘাত নেমে আসবে। পরিস্থিতি ১/১১’র চেয়ে ভয়ানক হতে পারে। কি ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এ গবেষক বলেন, এটা হিসাবের বাইরে। সংলাপের মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতি সমাধান করতে না এলে বাংলাদেশে ভয়াবহ রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে, সংঘাতময় এবং অনিশ্চিয়তার দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা চলছে। এর মাধ্যমে দুইটি বড় দল জাতীয় ও অন্যান্য ইস্যু আড়াল করে জনগণের দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করছে। পরিস্থিতি যেখানে দাঁড়িয়েছে তাতে কি হবে তা স্থির করে বলা যায় না। তবে কোন ভাল ফলাফল প্রত্যক্ষ করার সম্ভাবনা কম।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: গণতন্ত্রে যে প্রাতিষ্ঠানিক বা প্রক্রিয়াগত দুর্বলতা আছে তা আরও পরিষ্কার হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে নীতিগত বিষয়ের পার্থক্যও সামনে এসেছে। আগামী দিনে এ বিষয়ে নাগরিকদের আরও চিন্তা করার সুযোগ আছে। চলমান সঙ্কট নিয়ে মূলত তিন ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি আমরা। প্রথমত, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থের পরীক্ষা, দ্বিতীয়ত, রাজনীতিবিদদের পরিপক্কতার পরীক্ষা ও তৃতীয়ত, বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের পরীক্ষা। দেশ স্বল্পকালীন কোন বিষয় নয়। দেশ থাকবেই। কাজেই আগামীতে এ বিষয়গুলো নিয়ে আরও ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা ও কাজের সুযোগ আছে।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ২৫শে অক্টোবর কি হবে তা বলা যাচ্ছে না। ২৪ শে জানুয়ারি শেষ হবে সরকারের মেয়াদ। কিন্তু তার আগেই সংঘাতের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সংঘর্ষের ফলাফল ভাবা কঠিন। আলোচনা আগেও হয়েছে। এজেন্ডা ছাড়া আলোচনা সফল হয় না। সঙ্কট সমাধানের বিষয়ে বিভিন্ন ফর্মুলা আলোচনায় আছে। অনেক ফর্মুলা এসেছে সেগুলো আলোচনার সময় বিবেচনায় নিতে হবে। ।
ড. শাহদীন মালিক: সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে একদলীয় নির্বাচন হবে তবে তাতে রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ হবে খুবই কম। আর এক তরফা নির্বাচন প্রতিহতের যে কথা বলা হচ্ছে তা যদি রাজনৈতিক কর্মসূচি না হয়ে জঙ্গিবাদের প্রশ্রয়ে সহিংসতার আশ্রয় নেয়া হয় তাহলে আশঙ্কা থাকবে নিরপরাধ মানুষ ও জানমালের ক্ষতির। এতে দেশের স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে পড়বে।
ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম মনে করেন, আগামী ২৪শে অক্টোবরের মধ্যে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কোন ধরনের সমাধান না হলে এরপর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা দেশের জন্য বিপর্যয়কর হবে। কারণ, জামায়াতে ইসলামী ইতিমধ্যে সহিংস রূপের প্রমাণ দিয়েছে। এই সঙ্কট সমাধানের কোন সম্ভাবনা আছে কিনা এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের প্রত্যেকটি মানুষই শান্তি চায়। কিন্তু সরকার গোঁ-ধরে বসে আছে। তারা কোন অবস্থাতেই ছাড় দিতে রাজি নয়। বিরোধী দলও ২৪শে অক্টোবরের মধ্যে সংসদে যাবে না। ফলে সমঝোতার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে সংসদের ভেতরে সমঝোতা হলে ভাল হতো। তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হলো- দুই দলের কেউই দেশের কথা ভাবছে না। দেশের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। একদিকে সরকারি দল একগুঁয়েমি করে একতরফা নির্বাচন করতে চাইছে। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেত্রী দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ের সংলাপের প্রস্তাব দিয়ে আবার সংগ্রাম কমিটি ঘোষণা করেছেন। তারা আন্দোলনের জন্য একমাসের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা করেছেন। এতে দেশের যে ক্ষয়ক্ষতি হবে বিএনপি ক্ষমতায় আসলেও তিন বছরে সেটা পোশাতে পারবে না। তাই দুই দলকেই দেশের ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখে সংলাপে বসতে হবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না: নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটি নির্দিষ্ট হয়েছে যে, ২৪শে অক্টোবর থেকে ২৪শে জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ এই সময়টুকু হলো নির্বাচনকালীন সময়। কিন্তু আইন অনুসারে এই সময়ে সরকার ক্ষমতায় থাকবে না এমনটিতো নয়। বিরোধী দল আওয়ামী লীগকে নির্বাচনকালীন কোন সরকার হিসেবে মানছে না। সেই কারণে বলছে ক্ষমতায় থাকার ‘নৈতিক অধিকার হারিয়েছে’। এবং তারা আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাবে। দুই দলের এই অবস্থানকে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে উত্তেজনা, সংঘাত ও বিপর্যয়ে সৃষ্টির আশস্কা আছে। তবে তা ২৫শে অক্টোবরেই হবে এমনটি নয়। তবে ঈদের পর থেকে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
আনিসুল হক: এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বিরোধী দল ও সরকারি দল যেভাবে কঠোর অবস্থান নিয়েছে তাতে আমাদের দেশের অর্থনীতিই বেশি ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, এমনিতেই দেশের অর্থনীতি বেশ ভাল যাচ্ছে না। এর মাঝে আবার ২৫শে অক্টোবরের ডেডলাইন। ওই দিন কি হবে আমরা কেউ জানি না। যদি কিছু হয়, তাহলে অর্থনীতি আরও হুমকির মধ্যে পড়বে। তাছাড়া আমরা ব্যবসায়ীরা আরও বেশি ভোগান্তির শিকার হব। তিনি বলেন, আমাদের আবেদন আসন্ন সঙ্কট নিয়ে নেতারা এক টেবিলে বসে নির্বাচন বিষয়ে একটা সন্তোষজনক ফলাফল দেশবাসীকে উপহার দেবেন। হরতাল, প্রতিহিংসা রাজনীতি ও জ্বালাও-পোড়াও কখনই অর্থনীতির ক্ষতি ছাড়া সুফল বয়ে আনেনি বলে জানান তিনি। তার মতে, আমরা চাই একটা ভাল নির্বাচন যাতে করে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
ড. আসিফ নজরুল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এ অধ্যাপক বলেন, বিএনপির এখন যে জনপ্রিয়তা এক তরফা নির্বাচন প্রতিহত করতে তারা ব্যাপক আন্দোলন করবে। সরকার যদি মনে করে বিএনপি আন্দোলন করতে পারবে না, তাহলে সেটা হবে তাদের জন্য চরম ভুল। বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে সমমনা সব দলই যোগ দেবে। তখন যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে এর ফলে দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন হতে পারে। মানুষের মৌলিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হতে পারে। এবং সংঘর্ষ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আগামী ২৪শে অক্টোবরের মধ্যে সমঝোতার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কিনা এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর মধ্যে সমঝোতার কোন প্রশ্নই আসে না। তবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও যদি সরকার সমঝোতায় রাজি হয় তাহলেও সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। তিনি বলেন, সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সাধারণ মানুষের ভাগ্য আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। কারণ, পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণ করলে তারা ভিকটিম হবেই।
এম হাফিজ উদ্দিন খান: সুজনের সভাপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, দুই দলের মধ্যে যদি আন্তরিকতা থাকে এবং তারা যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় তাহলে এটা কোন সমস্যাই নয়। এক বৈঠকেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। আসলে তারা কেউ আন্তরিক নয়। কারণ অতীতে অনেকেই পরিস্থিতি উত্তরণের সমাধান দিয়েছেন। তারা কেউই তা আমলে নেয়নি। দুই দলের অনড় অবস্থানের কারণে সংঘাতময় পরিস্থিতির আভাস দিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কথা-বার্তায় মনে হচ্ছে তারা কোন ধরনের ছাড় দিতে রাজি নন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেনই। এবং যে কোন উপায়ে একটা নির্বাচন করবেনই। অন্যদিকে, বিরোধী দল বিএনপিও বলেছে, ওই একতরফা নির্বাচনে অংশ নেবে না। যে কোন উপায়ে নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, নির্বাচন প্রতিহত করতে চাইলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, সংঘাত অনিবার্য। ইতিহাস থেকে রাজনীতিবিদরা শিক্ষা নেন না উল্লেখ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দুই দলই। অতীতে এ ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তারা এ থেকে শিক্ষা নেননি।
মির্জা আজিজুল ইসলাম: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলেন, আমরা অপেক্ষা করছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার উদ্দেশে কি ধরনের রূপরেখা দেন। তিনি বলেন, শুধু এক পক্ষ নয়, উভয় পক্ষকে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও সমাধানে আসতে হবে। যদি কোন পক্ষই ছাড় দিতে সম্মত না হয়ে এবং এক তরফা নির্বাচন করতে চায় তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হবে। দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন করার পরিস্থিতি আসতে পারে।
এবিএম মূসা: প্রবীণ এ সাংবাদিক বলেন, দুই দলের সমঝোতার কোন সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশে ৪৭ সালের পর থেকে কোনদিন কোন রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সমঝোতা বা সংলাপের মাধ্যমে হয়নি। এখনও হবে না। সংঘাত, সংঘর্ষই একমাত্র পথ। যে যারে মেরে খেতে পারে সে-ই টিকে থাকবে। এভাবেই চলছে রাজনীতি। সংলাপের জন্য বিরোধী দল বিলাপ করছে, কিন্তু সরকারের কোন ইচ্ছা নেই। তিনি মনে করেন, ২৫শে অক্টোবরকে নিয়ে যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তা সত্য নয়। বিএনপি ২৫শে অক্টোবর কিছুই করবে না। এটি নিয়ে কোন দুশ্চিন্তার অবকাশ নেই।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক: প্রবীণ এ আইনজীবী বলেন, প্রধান দুই দলের অবস্থানে এখন খুব ফারাক নেই। আওয়ামী লীগ অন্তর্বর্তী সরকারের কথা বলছে। বিএনপিও বলছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কথা। বিরোধী দলের দাবি এখন আর তত্ত্বাবধায়কে নেই। তাই একটি নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা হলেই সমাধান হয়ে যাবে। এই নিরপেক্ষ সরকার সংসদ সদস্যদের দিয়েও হতে পারে। প্রশ্ন আসতে পারে এই সরকারের প্রধান নিয়ে। এরও সমাধান আছে। যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে এটিও সমাধান করা যাবে। কোন নিরপেক্ষ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে কোন আসন থেকে নির্বাচিত করে এনে সরকার প্রধান করা যেতে পারে। এজন্য একটি আসনের এমপিকে পদত্যাগ করতে হবে। সব কিছু নির্ভর করছে দুই দলের সদিচ্ছার ওপর।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের আশার কোন পরিবর্তন ঘটেনি। আজও আশা নিয়ে অপেক্ষায় আছি। আমাদের প্রত্যাশা সংঘাত ছেড়ে সমঝোতায় ফিরে আসবে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল। আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রচেষ্টা ছিল এবং অব্যাহত আছে। এর বাইরে আর কিছু করার নেই। দুই দলকে আহ্বান এবং পরামর্শ দেয়া ছাড়াতো সাধারণের কাছে কোন কিছু নেই।
মনিরুজ্জামান মিয়া: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ ভিসি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কটের সমাধান চাইছে না আওয়ামী লীগ। তারা চাইছে নিজেদের ইচ্ছেমতো একটা নির্বাচন করতে। সরকার চাইলে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আরও দুই টার্ম নির্বাচন হতে পারতো। এতে ক্ষতির কিছুই ছিল না। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন তা নিয়ে সরকার আলোচনা করতে পারতো। এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, এর আগে ’৯৬ সালে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও করেছিল। আসলে সরকার চাইছে, নির্বাচন পরিস্থিতিটাকে সম্পূর্ণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এ জন্যই তারা আলোচনা করতে চাইছে না। তবে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সমাধান একমাত্র সরকারের কাছে রয়েছে বলে দাবি করেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে জনগণকে অবশ্যই তাদের মতামত জানাতে হবে। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
তালুকদার মনিরুজ্জামান: বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক তালুকদার মনিরুজ্জামান মনে করছেন, সামনের সময়ে একটি সুসংবাদ আসতে পারে। তিনি বলেন, যা ঘটার তা আগামী ১৩ দিনের মধ্যেই ঘটবে। আশা করছি ভাল কিছু ঘটবে। তার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। দু’দলের মহাসচিব পর্যায়ের সংলাপের প্রস্তাবকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন প্রবীণ এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক। মহাসচিব পর্যায়ে বৈঠকের বিষয়ে যে আলোচনা হচ্ছে এটিকে ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ প্রস্তাব মেনে নিলেই একটা সমাধান আসবে। অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, আগামী ১৩ দিনের মধ্যে সুসংবাদ না আসলে তার উল্টোটা হবে। দেশের রাজনীতিতে ভয়ঙ্কর সংঘাত নেমে আসবে। পরিস্থিতি ১/১১’র চেয়ে ভয়ানক হতে পারে। কি ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এ গবেষক বলেন, এটা হিসাবের বাইরে। সংলাপের মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতি সমাধান করতে না এলে বাংলাদেশে ভয়াবহ রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে, সংঘাতময় এবং অনিশ্চিয়তার দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা চলছে। এর মাধ্যমে দুইটি বড় দল জাতীয় ও অন্যান্য ইস্যু আড়াল করে জনগণের দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করছে। পরিস্থিতি যেখানে দাঁড়িয়েছে তাতে কি হবে তা স্থির করে বলা যায় না। তবে কোন ভাল ফলাফল প্রত্যক্ষ করার সম্ভাবনা কম।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: গণতন্ত্রে যে প্রাতিষ্ঠানিক বা প্রক্রিয়াগত দুর্বলতা আছে তা আরও পরিষ্কার হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে নীতিগত বিষয়ের পার্থক্যও সামনে এসেছে। আগামী দিনে এ বিষয়ে নাগরিকদের আরও চিন্তা করার সুযোগ আছে। চলমান সঙ্কট নিয়ে মূলত তিন ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি আমরা। প্রথমত, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থের পরীক্ষা, দ্বিতীয়ত, রাজনীতিবিদদের পরিপক্কতার পরীক্ষা ও তৃতীয়ত, বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের পরীক্ষা। দেশ স্বল্পকালীন কোন বিষয় নয়। দেশ থাকবেই। কাজেই আগামীতে এ বিষয়গুলো নিয়ে আরও ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা ও কাজের সুযোগ আছে।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ২৫শে অক্টোবর কি হবে তা বলা যাচ্ছে না। ২৪ শে জানুয়ারি শেষ হবে সরকারের মেয়াদ। কিন্তু তার আগেই সংঘাতের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সংঘর্ষের ফলাফল ভাবা কঠিন। আলোচনা আগেও হয়েছে। এজেন্ডা ছাড়া আলোচনা সফল হয় না। সঙ্কট সমাধানের বিষয়ে বিভিন্ন ফর্মুলা আলোচনায় আছে। অনেক ফর্মুলা এসেছে সেগুলো আলোচনার সময় বিবেচনায় নিতে হবে। ।
ড. শাহদীন মালিক: সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে একদলীয় নির্বাচন হবে তবে তাতে রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ হবে খুবই কম। আর এক তরফা নির্বাচন প্রতিহতের যে কথা বলা হচ্ছে তা যদি রাজনৈতিক কর্মসূচি না হয়ে জঙ্গিবাদের প্রশ্রয়ে সহিংসতার আশ্রয় নেয়া হয় তাহলে আশঙ্কা থাকবে নিরপরাধ মানুষ ও জানমালের ক্ষতির। এতে দেশের স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে পড়বে।
ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম মনে করেন, আগামী ২৪শে অক্টোবরের মধ্যে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কোন ধরনের সমাধান না হলে এরপর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা দেশের জন্য বিপর্যয়কর হবে। কারণ, জামায়াতে ইসলামী ইতিমধ্যে সহিংস রূপের প্রমাণ দিয়েছে। এই সঙ্কট সমাধানের কোন সম্ভাবনা আছে কিনা এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের প্রত্যেকটি মানুষই শান্তি চায়। কিন্তু সরকার গোঁ-ধরে বসে আছে। তারা কোন অবস্থাতেই ছাড় দিতে রাজি নয়। বিরোধী দলও ২৪শে অক্টোবরের মধ্যে সংসদে যাবে না। ফলে সমঝোতার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে সংসদের ভেতরে সমঝোতা হলে ভাল হতো। তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হলো- দুই দলের কেউই দেশের কথা ভাবছে না। দেশের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। একদিকে সরকারি দল একগুঁয়েমি করে একতরফা নির্বাচন করতে চাইছে। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেত্রী দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ের সংলাপের প্রস্তাব দিয়ে আবার সংগ্রাম কমিটি ঘোষণা করেছেন। তারা আন্দোলনের জন্য একমাসের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা করেছেন। এতে দেশের যে ক্ষয়ক্ষতি হবে বিএনপি ক্ষমতায় আসলেও তিন বছরে সেটা পোশাতে পারবে না। তাই দুই দলকেই দেশের ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখে সংলাপে বসতে হবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না: নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটি নির্দিষ্ট হয়েছে যে, ২৪শে অক্টোবর থেকে ২৪শে জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ এই সময়টুকু হলো নির্বাচনকালীন সময়। কিন্তু আইন অনুসারে এই সময়ে সরকার ক্ষমতায় থাকবে না এমনটিতো নয়। বিরোধী দল আওয়ামী লীগকে নির্বাচনকালীন কোন সরকার হিসেবে মানছে না। সেই কারণে বলছে ক্ষমতায় থাকার ‘নৈতিক অধিকার হারিয়েছে’। এবং তারা আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাবে। দুই দলের এই অবস্থানকে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে উত্তেজনা, সংঘাত ও বিপর্যয়ে সৃষ্টির আশস্কা আছে। তবে তা ২৫শে অক্টোবরেই হবে এমনটি নয়। তবে ঈদের পর থেকে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
আনিসুল হক: এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বিরোধী দল ও সরকারি দল যেভাবে কঠোর অবস্থান নিয়েছে তাতে আমাদের দেশের অর্থনীতিই বেশি ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, এমনিতেই দেশের অর্থনীতি বেশ ভাল যাচ্ছে না। এর মাঝে আবার ২৫শে অক্টোবরের ডেডলাইন। ওই দিন কি হবে আমরা কেউ জানি না। যদি কিছু হয়, তাহলে অর্থনীতি আরও হুমকির মধ্যে পড়বে। তাছাড়া আমরা ব্যবসায়ীরা আরও বেশি ভোগান্তির শিকার হব। তিনি বলেন, আমাদের আবেদন আসন্ন সঙ্কট নিয়ে নেতারা এক টেবিলে বসে নির্বাচন বিষয়ে একটা সন্তোষজনক ফলাফল দেশবাসীকে উপহার দেবেন। হরতাল, প্রতিহিংসা রাজনীতি ও জ্বালাও-পোড়াও কখনই অর্থনীতির ক্ষতি ছাড়া সুফল বয়ে আনেনি বলে জানান তিনি। তার মতে, আমরা চাই একটা ভাল নির্বাচন যাতে করে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
ড. আসিফ নজরুল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এ অধ্যাপক বলেন, বিএনপির এখন যে জনপ্রিয়তা এক তরফা নির্বাচন প্রতিহত করতে তারা ব্যাপক আন্দোলন করবে। সরকার যদি মনে করে বিএনপি আন্দোলন করতে পারবে না, তাহলে সেটা হবে তাদের জন্য চরম ভুল। বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে সমমনা সব দলই যোগ দেবে। তখন যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে এর ফলে দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন হতে পারে। মানুষের মৌলিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হতে পারে। এবং সংঘর্ষ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আগামী ২৪শে অক্টোবরের মধ্যে সমঝোতার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কিনা এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর মধ্যে সমঝোতার কোন প্রশ্নই আসে না। তবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও যদি সরকার সমঝোতায় রাজি হয় তাহলেও সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। তিনি বলেন, সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সাধারণ মানুষের ভাগ্য আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। কারণ, পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণ করলে তারা ভিকটিম হবেই।
No comments