বিজেপির আপাতত ‘সংকটমুক্তি’
বৃত্তকে চতুষ্কোণে পরিণত করা যত কঠিন, ততটা কঠিন হয়ে ওঠা লালকৃষ্ণ আদভানি ও নরেন্দ্র মোদির দ্বন্দ্বের আপাতত একটা সমাধানের খোঁজ পাওয়া গেল, যদিও তা খুবই দুর্বল। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে গোয়ায় যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা থেকে বিন্দুমাত্র সরে না এসে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সভাপতি রাজনাথ সিংসহ শীর্ষ নেতারা আদভানির বাড়িতে বসে জানিয়ে দেন, সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। তবে কী সেই সমাধান, সে কথা জানানো হয়নি। যাঁকে ঘিরে সমস্যা, সেই আদভানিই নিজের বাড়ির সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না। ফলে, সংকট আদৌ কাটল কি না, সেই প্রশ্ন রয়েই গেল। ইস্তফার প্রশ্নে অটল আদভানির মানভঞ্জনের যে চেষ্টা তাঁর কাছের নেতারা চালাচ্ছিলেন, গতকাল রাত পর্যন্ত তা ফলপ্রসূ হয়নি। কীভাবে আদভানির অভিমানে প্রলেপ লাগানো যায়, কীভাবে একটা সম্মানজনক সমাধান সূত্রের খোঁজ পাওয়া যায়, সেই চেষ্টায় যদিও কোনো খামতি ছিল না। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত প্রথমে কথা বলেন আদভানির সঙ্গে। তারপর রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে। আদভানিকে জানানো হয়, মোদির দায়িত্ব একই রেখে আদভানির অভিমতকেও গুরুত্ব দিতে দল প্রস্তুত। তাঁকে শুধু দলীয় অনুশাসন মানতে হবে ও ইস্তফার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসতে হবে। সন্ধ্যায় রাজনাথ যান আদভানির বাড়ি। তাঁর আগে পরে শীর্ষস্থানীয় অন্তত ১০-১২ জন নেতা। সবার সম্মিলিত অনুরোধে শেষ পর্যন্ত আদভানি নিমরাজি হন। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে আসতে অস্বীকার করেন। ফলে যে যে প্রশ্ন আদভানি তুলেছিলেন, সেগুলোর উত্তর অনুচ্চারিতই রয়ে গেল। যাঁকে ঘিরে তাঁর আপত্তি, এক সময়ের শিষ্য সেই নরেন্দ্র মোদি আদভানির মন ভেজাতে দিল্লির পথে হাঁটেননি। সংকট যে কাটল না, তা বলাই যায়। কারণ, আপাতত আদভানির প্রাপ্তির ঘর শূন্যই। ফলে এনডিএর শরিকদের মধ্যেও যে সংশয় ছিল, তা থেকেই যাচ্ছে। মোদির তুলনায় আদভানির গ্রহণযোগ্যতা বেশি বলে এই বিভাজনে তাঁরা আদভানির পাশেই দাঁড়াচ্ছেন। জনতা দল (সংযুক্ত) ও শিবসেনা ইতিমধ্যেই আদভানির পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছেন। আকালি দলও তাদের অবস্থা পুরোপুরি প্রকাশ করেনি। এই অবস্থাকেই আদভানি হাতিয়ার করতে চাইছেন। ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের মুহূর্তে গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন যখন উঠবে, তখন তিনি এগিয়ে আসবেন দাবিদার হয়ে, সেই সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ, লড়াইটা থেকেই যাচ্ছে।
No comments