রাজশাহী সিটি নির্বাচন সরকারি গাড়ি নিয়ে নির্বাচনী সভায় পৌর মেয়ররা by শরিফুল হাসান ও আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ
রাজশাহীকে লিটনমুক্ত আর দেশকে হাসিনামুক্ত
করতে হবে। খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। তারেক রহমানকে ক্ষমতায়
আনতে হবে। ইসলামের শত্রু জালিমদের কবর দিতে হবে।
রাজশাহী
সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৮ দল-সমর্থিত প্রার্থী মোসাদ্দেক
হোসেনের জন্য আয়োজিত এক নির্বাচনী প্রচারণা সভায় এভাবে বক্তব্য দিয়েছেন
একাধিক পৌরসভার মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা
এই সভায় মেয়রদের অনেকেই এসেছিলেন সরকারি গাড়ি নিয়ে। সাংবাদিকেরা ছবি তুলতে
শুরু করার পর অনেক চালক গাড়ি নিয়ে সটকে পড়েন।
রাজশাহী শহরের কাদিরগঞ্জে একটি চায়নিজ রেস্তোরাঁয় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওই নির্বাচনী সভা হয়। রাজশাহী ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন পৌরসভার ৫০ জন মেয়র ও কাউন্সিলর সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভার আয়োজক হিসেবে ব্যানারে রাজশাহী অঞ্চলের বিএনপি-সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলররা লেখা ছিল।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ১০-এর (ক) ধারায় বলা আছে, ‘কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচনী প্রচারণাকালে ব্যক্তিগত চরিত্র হরণ করে বা কোনো ধরনের তিক্ত বা উসকানিমূলক কিংবা সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এরূপ কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না।’
গতকালের ওই সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল মতিন বলেন, ‘ইমানের শক্তিতে বলছি, রাজশাহীর মেয়র নির্বাচনে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। কারণ, পীর-আম্বিয়া-আলেম-ওলামা-হাফেজ-কারি-মুনিশ-মাওলানাদের ওপর সরকার নির্যাতন করেছে। এখন তাঁরা প্রস্তুত। যার যা আছে তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। জালিমের কবর দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। রাতের ঘুমকে হারাম করে দিতে হবে। লিডাররা যে হুকুম দেবেন আমরা তা পালনের জন্য প্রস্তুত আছি।’
সভার প্রধান অতিথি রাজশাহীর সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান বলেন, ‘আপনারা ৩৭ জন মেয়র আজকে উপস্থিত আছেন। ১৫ জুনের সিটি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাংলাদেশকে রক্ষার লড়াই।’ মিজানুর রহমান বলেন, ‘খায়রুজ্জামান লিটন আজ জনবিচ্ছিন্ন। তিনি সাতজন ঠিকাদার নিয়ে কাজ করেন। তাঁর নাম সেভেন বিলিয়ন ডলার ম্যান। তিনি দুর্নীতিবাজ মেয়র।’
বক্তব্যের একপর্যায়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের লিটনমুক্ত রাজশাহী গড়তে হবে। হাসিনামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে। খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে ক্ষমতায় আনতে হবে।’
বিএনপির রাজশাহী জেলার সভাপতি ও সাবেক সাংসদ নাদিম মোস্তফা মেয়রদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সৈনিক। রাজশাহীতে লিটনের গুন্ডাবাহিনীর নির্যাতন আপনারা দেখেছেন। আপনাদের এখন বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেককে জয়ী করতে হবে।’
নাদিম আরও মোস্তফা বলেন, ‘তাঁর (খায়রুজ্জামান) কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। তাঁর জ্বর এসে গেছে। যেকোনো সময় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।’ তিনি বলন, ‘এই নির্বাচনে জিতলে সামনের সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসবেন। রাজশাহীর মাটি খালেদা-তারেকের ঘাঁটি। আমরা জান দেব তবু লিটনকে ভোট দেব না। ব্যালট বাক্স ছিনতাই হতে দেব না।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ হারুন আল রশিদ বলেন, এই সরকার নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও যে গণহত্যা চালিয়েছে তার জবাব দিতে হবে। ১৫ জুন কঠিন পরীক্ষা। নির্বাচন নিয়ে কোনো তামাশা হলে আগুন জ্বলে যাবে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী আসাদুল হাবিব বলেন, ‘খায়রুজ্জামান শেখ হাসিনার প্রতিনিধি। শেখ হাসিনার খুনের দায়ভার তাঁর ওপর এসে বর্তাবে। ১৫ জুনের নির্বাচন সেমিফাইনাল। এরপর সংসদ নির্বাচনে সব ফাইনাল হয়ে যাবে।’
বগুড়া পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ নির্বাচনের সঙ্গে জাতীয় রাজনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন পৌরসভার মেয়রেরা আজকে উপস্থিত আছেন। আপনাদের খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আপনারা আমাদের পক্ষে ভোট চাইবেন।’
সভায় উপস্থিত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘আপনারা সবাই অনেকবার নির্বাচন করেছেন। আপনাদের সহযোগিতা দরকার। আপনাদের আত্মীয়স্বজন যাঁরা রাজশাহীতে আছেন, তাঁদের বলবেন তাঁরা যেন আমাকে ভোট দেন। এই নির্বাচনে জিতলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রতিষ্ঠিত হবে। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের অহমিকা গুঁড়িয়ে দিতে হবে।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাটোরের সিংড়া পৌরসভার মেয়র শামিম আল রাজি। গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম, চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ, পাবনার চাটমোহরের মেয়র হাছাদুল ইসলাম, বাগাতীপাড়ার পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন, শাহজাদপুরের মেয়র নজরুল ইসলাম, বগুড়ার শেরপুরের মেয়র স্বাধীন কুমার কুণ্ডু, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর পৌর মেয়র আবদুস সালাম, নাটোরের গোপালপুরের মেয়র মনজুরুল ইসলাম, নওগাঁর মেয়র নাজমুল হক, নাটোরের নলডাঙ্গার মেয়র আব্বাছ আলী, জামালপুরের মেয়র ওয়ারেছ আলী, পঞ্চগড়ের মেয়র তৌহিদুল ইসলাম ও পাবনা পৌরসভার মেয়র কামরুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন মেয়র ও কাউন্সিল সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে তাঁরা সেখানে দুপুরের খাবার খান।
সরকারি গাড়ি নির্বাচনী প্রচারণায়: নির্বাচনী আচরণবিধির ১৪(গ) ধারায় বলা আছে, ‘তফসিল ঘোষণার পর সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো প্রার্থী বা তাঁহার পক্ষের কেহ নির্বাচনী কাজে সরকারি যানবাহন ব্যবহার করিতে পারিবেন না।’
তবে গতকাল মোসাদ্দেক হোসেনের নির্বাচনী সবায় অনেক মেয়রই পৌরসভার সরকারি গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। এর মধ্যে পাবনা সদর পৌরসভার মেয়র কামরুল ইসলাম তাঁর (পাবনা ঘ-১১-০০১৯) সরকারি প্রাডো গাড়িটি নিয়ে আসেন। নাটোরের একজন মেয়র নাটোর ঠ-১১-০০২০ নম্বর জিপটি নিয়ে এসেছিলেন। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌরসভার সরকারি একটি প্রকল্পের গাড়ি (সিরাজগঞ্জ ঠ-১১-০০৩৩) নিয়ে আসেন শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম। আরেকটি গাড়ির (১৩-০৮০০) সামনে লেখা ছিল মেয়র বাগাতীপাড়া পৌরসভা।
এ ছাড়া আরও কয়েকটি সরকারি গাড়ি ছিল ওই রেস্টুরেন্টের সামনে। তবে সাংবাদিকেরা ছবি তুলতে গেলে চালকেরা দ্রুত গাড়িগুলো নিয়ে সটকে পড়েন।
সরকারি গাড়ি নিয়ে নির্বাচনী সভায় আসার বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা সদর পৌরসভার মেয়র কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নির্বাচনী প্রচারণায় আসিনি। রোগী দেখতে রাজশাহী এসেছিলাম।’ ওই সভায় কী করছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম।’
গাড়ির সামনে পৌর মেয়র লেখা থাকলেও সেটি নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি বলে দাবি করেছেন বাগাতীপাড়ার মেয়র মোশাররফ হোসেন।
শাহজাদপুরের মেয়র নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়রদের সংগঠন মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমএবি) উপদেষ্টা শামীম আল রাজি আমাদের ডেকেছিলেন। তাই গিয়েছিলাম। তবে আমি তো সেখানে বেশিক্ষণ থাকিনি।’
নাগরিক কমিটির মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি গাড়ি নিয়ে অনেক মেয়রই নির্বাচনী প্রচারণায় এসেছিলেন। তাঁরা অনেকেই আমার বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। অনেকে ধর্মীয় উসকানিমূলক কথা বলেছেন বলে আমি জেনেছি। আমি এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাব।’
জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, সরকারি গাড়ি নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়া কিংবা উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া আচরণবিধি লঙ্ঘন। খোঁজখবর নিয়ে এ ব্যাপারে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাধারণত কোনো পৌরসভায় সরকার থেকে গাড়ি কিনে দেওয়া হয় না। তবে পৌরসভা তাদের রাজস্ব আয় থেকে গাড়ি কিনতে পারে, যা সরকারি গাড়ি হিসেবে গণ্য হয়। যেসব পৌরসভার নিজস্ব আয় কম, তারা সরকারি প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করে।
পাবনা পৌরসভার গাড়িটি তাদের রাজস্ব আয় থেকে কেনা। আর নাটোরের সিংড়া ও পাবনার শাহজাদপুর পৌরসভার গাড়ি দুটি এডিবির সহায়তাপুষ্ট নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতীকরণ প্রকল্পের (ইউজিআইআইপি)। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছিল ম্যাবের মহাসচিব সিংড়া পৌরসভার মেয়র শামীম আল রাজি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, এমনি মতবিনিময়ের জন্য পৌর মেয়রদের ডাকা হয়েছিল। পৌরসভার গাড়ি নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি গাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেন। গাড়ির ছবি তোলা হয়েছে বলে জানালে তিনি বলেন, ‘নিউজটা না করলে হয় না!’
রাজশাহী শহরের কাদিরগঞ্জে একটি চায়নিজ রেস্তোরাঁয় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওই নির্বাচনী সভা হয়। রাজশাহী ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন পৌরসভার ৫০ জন মেয়র ও কাউন্সিলর সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভার আয়োজক হিসেবে ব্যানারে রাজশাহী অঞ্চলের বিএনপি-সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলররা লেখা ছিল।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ১০-এর (ক) ধারায় বলা আছে, ‘কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচনী প্রচারণাকালে ব্যক্তিগত চরিত্র হরণ করে বা কোনো ধরনের তিক্ত বা উসকানিমূলক কিংবা সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এরূপ কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না।’
গতকালের ওই সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল মতিন বলেন, ‘ইমানের শক্তিতে বলছি, রাজশাহীর মেয়র নির্বাচনে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। কারণ, পীর-আম্বিয়া-আলেম-ওলামা-হাফেজ-কারি-মুনিশ-মাওলানাদের ওপর সরকার নির্যাতন করেছে। এখন তাঁরা প্রস্তুত। যার যা আছে তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। জালিমের কবর দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। রাতের ঘুমকে হারাম করে দিতে হবে। লিডাররা যে হুকুম দেবেন আমরা তা পালনের জন্য প্রস্তুত আছি।’
সভার প্রধান অতিথি রাজশাহীর সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান বলেন, ‘আপনারা ৩৭ জন মেয়র আজকে উপস্থিত আছেন। ১৫ জুনের সিটি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাংলাদেশকে রক্ষার লড়াই।’ মিজানুর রহমান বলেন, ‘খায়রুজ্জামান লিটন আজ জনবিচ্ছিন্ন। তিনি সাতজন ঠিকাদার নিয়ে কাজ করেন। তাঁর নাম সেভেন বিলিয়ন ডলার ম্যান। তিনি দুর্নীতিবাজ মেয়র।’
বক্তব্যের একপর্যায়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের লিটনমুক্ত রাজশাহী গড়তে হবে। হাসিনামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে। খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে ক্ষমতায় আনতে হবে।’
বিএনপির রাজশাহী জেলার সভাপতি ও সাবেক সাংসদ নাদিম মোস্তফা মেয়রদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সৈনিক। রাজশাহীতে লিটনের গুন্ডাবাহিনীর নির্যাতন আপনারা দেখেছেন। আপনাদের এখন বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেককে জয়ী করতে হবে।’
নাদিম আরও মোস্তফা বলেন, ‘তাঁর (খায়রুজ্জামান) কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। তাঁর জ্বর এসে গেছে। যেকোনো সময় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।’ তিনি বলন, ‘এই নির্বাচনে জিতলে সামনের সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসবেন। রাজশাহীর মাটি খালেদা-তারেকের ঘাঁটি। আমরা জান দেব তবু লিটনকে ভোট দেব না। ব্যালট বাক্স ছিনতাই হতে দেব না।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ হারুন আল রশিদ বলেন, এই সরকার নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও যে গণহত্যা চালিয়েছে তার জবাব দিতে হবে। ১৫ জুন কঠিন পরীক্ষা। নির্বাচন নিয়ে কোনো তামাশা হলে আগুন জ্বলে যাবে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী আসাদুল হাবিব বলেন, ‘খায়রুজ্জামান শেখ হাসিনার প্রতিনিধি। শেখ হাসিনার খুনের দায়ভার তাঁর ওপর এসে বর্তাবে। ১৫ জুনের নির্বাচন সেমিফাইনাল। এরপর সংসদ নির্বাচনে সব ফাইনাল হয়ে যাবে।’
বগুড়া পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ নির্বাচনের সঙ্গে জাতীয় রাজনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন পৌরসভার মেয়রেরা আজকে উপস্থিত আছেন। আপনাদের খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আপনারা আমাদের পক্ষে ভোট চাইবেন।’
সভায় উপস্থিত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘আপনারা সবাই অনেকবার নির্বাচন করেছেন। আপনাদের সহযোগিতা দরকার। আপনাদের আত্মীয়স্বজন যাঁরা রাজশাহীতে আছেন, তাঁদের বলবেন তাঁরা যেন আমাকে ভোট দেন। এই নির্বাচনে জিতলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রতিষ্ঠিত হবে। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের অহমিকা গুঁড়িয়ে দিতে হবে।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাটোরের সিংড়া পৌরসভার মেয়র শামিম আল রাজি। গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম, চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ, পাবনার চাটমোহরের মেয়র হাছাদুল ইসলাম, বাগাতীপাড়ার পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন, শাহজাদপুরের মেয়র নজরুল ইসলাম, বগুড়ার শেরপুরের মেয়র স্বাধীন কুমার কুণ্ডু, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর পৌর মেয়র আবদুস সালাম, নাটোরের গোপালপুরের মেয়র মনজুরুল ইসলাম, নওগাঁর মেয়র নাজমুল হক, নাটোরের নলডাঙ্গার মেয়র আব্বাছ আলী, জামালপুরের মেয়র ওয়ারেছ আলী, পঞ্চগড়ের মেয়র তৌহিদুল ইসলাম ও পাবনা পৌরসভার মেয়র কামরুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন মেয়র ও কাউন্সিল সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে তাঁরা সেখানে দুপুরের খাবার খান।
সরকারি গাড়ি নির্বাচনী প্রচারণায়: নির্বাচনী আচরণবিধির ১৪(গ) ধারায় বলা আছে, ‘তফসিল ঘোষণার পর সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো প্রার্থী বা তাঁহার পক্ষের কেহ নির্বাচনী কাজে সরকারি যানবাহন ব্যবহার করিতে পারিবেন না।’
তবে গতকাল মোসাদ্দেক হোসেনের নির্বাচনী সবায় অনেক মেয়রই পৌরসভার সরকারি গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। এর মধ্যে পাবনা সদর পৌরসভার মেয়র কামরুল ইসলাম তাঁর (পাবনা ঘ-১১-০০১৯) সরকারি প্রাডো গাড়িটি নিয়ে আসেন। নাটোরের একজন মেয়র নাটোর ঠ-১১-০০২০ নম্বর জিপটি নিয়ে এসেছিলেন। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌরসভার সরকারি একটি প্রকল্পের গাড়ি (সিরাজগঞ্জ ঠ-১১-০০৩৩) নিয়ে আসেন শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম। আরেকটি গাড়ির (১৩-০৮০০) সামনে লেখা ছিল মেয়র বাগাতীপাড়া পৌরসভা।
এ ছাড়া আরও কয়েকটি সরকারি গাড়ি ছিল ওই রেস্টুরেন্টের সামনে। তবে সাংবাদিকেরা ছবি তুলতে গেলে চালকেরা দ্রুত গাড়িগুলো নিয়ে সটকে পড়েন।
সরকারি গাড়ি নিয়ে নির্বাচনী সভায় আসার বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা সদর পৌরসভার মেয়র কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নির্বাচনী প্রচারণায় আসিনি। রোগী দেখতে রাজশাহী এসেছিলাম।’ ওই সভায় কী করছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম।’
গাড়ির সামনে পৌর মেয়র লেখা থাকলেও সেটি নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি বলে দাবি করেছেন বাগাতীপাড়ার মেয়র মোশাররফ হোসেন।
শাহজাদপুরের মেয়র নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়রদের সংগঠন মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমএবি) উপদেষ্টা শামীম আল রাজি আমাদের ডেকেছিলেন। তাই গিয়েছিলাম। তবে আমি তো সেখানে বেশিক্ষণ থাকিনি।’
নাগরিক কমিটির মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি গাড়ি নিয়ে অনেক মেয়রই নির্বাচনী প্রচারণায় এসেছিলেন। তাঁরা অনেকেই আমার বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। অনেকে ধর্মীয় উসকানিমূলক কথা বলেছেন বলে আমি জেনেছি। আমি এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাব।’
জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, সরকারি গাড়ি নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়া কিংবা উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া আচরণবিধি লঙ্ঘন। খোঁজখবর নিয়ে এ ব্যাপারে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাধারণত কোনো পৌরসভায় সরকার থেকে গাড়ি কিনে দেওয়া হয় না। তবে পৌরসভা তাদের রাজস্ব আয় থেকে গাড়ি কিনতে পারে, যা সরকারি গাড়ি হিসেবে গণ্য হয়। যেসব পৌরসভার নিজস্ব আয় কম, তারা সরকারি প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করে।
পাবনা পৌরসভার গাড়িটি তাদের রাজস্ব আয় থেকে কেনা। আর নাটোরের সিংড়া ও পাবনার শাহজাদপুর পৌরসভার গাড়ি দুটি এডিবির সহায়তাপুষ্ট নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতীকরণ প্রকল্পের (ইউজিআইআইপি)। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছিল ম্যাবের মহাসচিব সিংড়া পৌরসভার মেয়র শামীম আল রাজি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, এমনি মতবিনিময়ের জন্য পৌর মেয়রদের ডাকা হয়েছিল। পৌরসভার গাড়ি নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি গাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেন। গাড়ির ছবি তোলা হয়েছে বলে জানালে তিনি বলেন, ‘নিউজটা না করলে হয় না!’
No comments