‘ককটেল’ রাজনীতি by লুৎফর রহমান
সরকারের শেষ বছরে অস্থির রাজনীতি।
স্বস্তিতে নেই সরকার এবং বিরোধী দলও। যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে মরণকামড়
দিতে মরিয়া জামায়াত-শিবির। এমন অস্থির সময়ে শুরু হয়েছে ককটেল-বোমার
রাজনীতি।
এই ককটেলে এখন পণ্ড হচ্ছে প্রধান বিরোধী দলের
শান্তিপূর্ণ সমাবেশ। জাগরণ মঞ্চের শান্তিপূর্ণ সমাবেশেও নিক্ষেপ করা হচ্ছে
ককটেল। গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় অতিথির বিশ্রামস্থলের সামনে, সুরক্ষিত
এলাকায় সচিবালয়ে ককটেল ফুটাচ্ছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। সভা-সমাবেশের আগে বা
পরেও রহস্যজনকভাবে ঘটছে বিস্ফোরণের ঘটনা।
রাস্তায়, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ককটেল বা বোমার বিস্ফোরণ ঘটনার দায়-দায়িত্ব চাপানো হচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিরোধী দল বা সরকারবিরোধী গ্রুপের ওপর দায় চাপিয়ে নিজেদের দায় এড়াচ্ছে। একের পর এক ঘটনা ঘটছে, কিন্তু কোন ঘটনারই রহস্য বের করতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও এর সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। সন্দেহ করে কাউকে গ্রেপ্তার করলেও কোন তথ্য আদায় করতে পারছে না তারা। নেপথ্য কারণ ও দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করতে না পারলেও এসব ঘটনায় দায়ের করা হচ্ছে রাজনৈতিক মামলা। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্ন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ এনে এসব মামলায় জড়ানো হচ্ছে বিরোধী দলের নেতা, সংসদ সদস্য ও সরকারের বিরোধী মতের লোকজনকে। ভারতের প্রেসিডেন্ট যখন ঢাকায় ঠিক তখনই তার হোটেলের সামনে রহস্যজনক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। নজরদারি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক স্তরের সতর্ক দৃষ্টি। এর ফাঁকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা অনেকের মনে প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়েও। কেউ কেউ আবার বলছেন, বিষয়গুলো রহস্যঘেরা। এসব ঘটনার পেছনে থাকতে পারে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। পক্ষ বা প্রতিপক্ষ উভয়ই এর সঙ্গে জড়িত। তারা এসব ঘটনা থেকে যার যার মতো ফায়দা নিচ্ছেন। সচিবালয়ের মতো সুরক্ষিত এলাকায় ককটেল নিক্ষেপের ঘটনার দায় দিয়ে মামলা করা হয়েছে প্রধান বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বিরুদ্ধে। এ মামলায় এক মাসেরও বেশি সময় জেল খেটেছেন তিনি। সর্বশেষ বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পরপর দু’টি সমাবেশে ককটেল বিস্ফোরণ এবং পরে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে। সমাবেশের পিছন দিকে ককটেল বিস্ফোরণের পর দুই দিনই পুলিশ নজিরবিহীন অ্যাকশনে যায়। নির্বিচারে গুলি করা হয়। টিয়ারশেল, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে সভা পণ্ড করে দেয়া হয়। দ্বিতীয় দিন একেবারে লঙ্কাকাণ্ড করে পুলিশ। একই স্থানে একই কায়দায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে দ্বিতীয় সমাবেশেও। তবে এ ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ নজিরবিহীন অ্যাকশনে যায়। তছনছ করা হয় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়। হাতুড়ি দিয়ে দরজা ভেঙে লুকিয়ে থাকা নেতাদের বের করে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অভিযানের এক পর্যায়ে ওই কার্যালয়ের ভেতর থেকে কয়েকটি ককটেল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর এসব ককটেল গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে মহাউৎসাহে নিয়ে প্রদর্শন করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ দাবি করে বিএনপি কর্মীরাই হরতাল ডাকার জন্য সমাবেশে ককটেল বিস্ফোরণ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। কার্যালয় থেকে উদ্ধার করা ককটেলও রাখা হয়েছিল নাশকতা সৃষ্টির জন্য। তবে বিএনপি’র দাবি উল্টো। তারা বলছে, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা সাজানো। বিরোধী দল ও জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচি বানচাল করতে সরকারি বাহিনীই এ কাজ করছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ককটেল পাওয়ার বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া স্পষ্টভাবে পুলিশকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, পুলিশই পকেটে করে ওই ককটেল নিয়ে গিয়েছিল। অবশ্য দলটির নেতারাও নানা যুক্তি দেখাচ্ছেন এ বিষয়ে। তারা প্রশ্ন রেখে বলছেন, দেশের প্রধান বিরোধী দলের প্রধান কার্যালয়ে এভাবেই কি কেউ ককটেল সাজিয়ে রাখতে পারে? এছাড়া, যখন ককটেল উদ্ধার করা হয় তখন পুলিশ গণমাধ্যম কর্মীদের ওই কক্ষ থেকে বের করে দিয়েছিল। পরে তাদের সেখানে নিয়ে ককটেল প্রদর্শন করা হয়। সরকারি দলের পক্ষ থেকে তীর্যক বক্তব্য দেয়া হচ্ছে এই ঘটনা সম্পর্কে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, যে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বোমা থাকে তাদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ঘটনার পরপরই জানিয়ে দেন যেসব দুষ্কৃতকারী নিজেদের কার্যালয়ে বোমা রাখে তাদের ধরতেই সেখানে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক টানাহেঁচড়া শুরু গত বছরের ২৯শে এপ্রিল। এদিন ১৮ দলীয় জোটের হরতাল চলাকালে বিকালে সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে দু’টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশে বাইরে থেকে কে বা কারা এই ককটেল ছুড়ে মারে। এ ঘটনার পর বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের নামে মামলা দেয়া হয়। এ ঘটনায় নেতাদের দায়ী করে ২৯ জনের নামে চার্জশিটও দেয় পুলিশ। মামলায় বিএনপি ছাড়া শরিক দলের শীর্ষ নেতাদেরও আসামি করা হয়। এ মামলায় ২৯ দিন কারাভোগ করে জামিনে মুক্ত হন মির্জা ফখরুল।
গত ৬ই মার্চ বিএনপি’র বিক্ষোভ সমাবেশ পণ্ড হয় এই ককটেল বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে। বিকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় সমাবেশ চলছিল। সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এসময় সমাবেশের পিছন দিকে নাইটিঙ্গেল মোড়ে পরপর কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এরপরই শুরু হয় পুলিশের অ্যাকশন। মঞ্চ লক্ষ্য করে তারা গুলি বর্ষণ শুরু করে নির্বিচারে। ছররা গুলিতে আহত হন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালামসহ আরও অনেকে। ঘটনার পর পুলিশ দাবি করে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তবে বিএনপি’র দাবি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেই পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়।
গত ৮ই মার্চ শাহবাগের জাগরণ মঞ্চের কাছে পরপর কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যেই এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করা হয়। তবে এ পর্যন্ত ঘটনার কোন কিছুই বের করতে পারেনি পুলিশ। জাগরণ মঞ্চ ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এ ঘটনার পেছনে জামায়াত-শিবিরের জড়িত থাকার বিষয়ে বক্তব্য আসে। অভিযোগ তোলা হয়। তবে অভিযোগ প্রমাণে দৃশ্যত কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি।
সর্বশেষ গত ১২ই মার্চ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে রাতে কে বা কারা তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। তখন প্রেস ক্লাবে জাগরণ মঞ্চের সংবাদ সম্মেলন চলছিল। এর পরের দিন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশ এবং হেফাজতে ইসলামের পাল্টা হরতাল কর্মসূচি ছিল। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পরই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। সমাবেশ স্থগিত করে জাগরণ মঞ্চ। পরে হরতালও তুলে নেয় হেফাজতে ইসলাম। দুই পক্ষের উত্তেজনা প্রশমন হলেও ককটেল নিক্ষেপের ঘটনাটি থেকে যায় আড়ালে। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে দুই পক্ষই এ নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করে।
শুক্রবার সাভারের আশুলিয়ায় জাগরণ মঞ্চের সমাবেশের আগেও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মঞ্চের কাছাকাছি এলাকায় এ বিস্ফোরণ হলেও পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে আটক করতে পারেনি। সমাবেশ থেকে দাবি করা হয় সমাবেশে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্যই এই ঘটনা ঘটানো হয়। পুলিশও দাবি করে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য পটকা ফুটানো হয়েছে। কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা জানাতে পারেনি পুলিশ। ঢাকার বাইরেও কয়েকটি স্থানে জাগরণ মঞ্চ বা গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। তবে এসব ঘটনার নেপথ্য কাহিনী থেকে যাচ্ছে অজানাই। লক্ষ্যযোগ্য হচ্ছে, ককটেল হামলার এসব ঘটনা প্রায় ক্ষেত্রেই ঘটছে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে। তবে কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত জনসমাগমের পাশে বিস্ফোরণ ঘটলেও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটছে না আশঙ্কা অনুযায়ী। এ কারণে হামলাকারীদের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছে না কেউ। রহস্যই থেকে যাচ্ছে পুরো বিষয়টি।
রাস্তায়, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ককটেল বা বোমার বিস্ফোরণ ঘটনার দায়-দায়িত্ব চাপানো হচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিরোধী দল বা সরকারবিরোধী গ্রুপের ওপর দায় চাপিয়ে নিজেদের দায় এড়াচ্ছে। একের পর এক ঘটনা ঘটছে, কিন্তু কোন ঘটনারই রহস্য বের করতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও এর সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। সন্দেহ করে কাউকে গ্রেপ্তার করলেও কোন তথ্য আদায় করতে পারছে না তারা। নেপথ্য কারণ ও দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করতে না পারলেও এসব ঘটনায় দায়ের করা হচ্ছে রাজনৈতিক মামলা। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্ন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ এনে এসব মামলায় জড়ানো হচ্ছে বিরোধী দলের নেতা, সংসদ সদস্য ও সরকারের বিরোধী মতের লোকজনকে। ভারতের প্রেসিডেন্ট যখন ঢাকায় ঠিক তখনই তার হোটেলের সামনে রহস্যজনক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। নজরদারি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক স্তরের সতর্ক দৃষ্টি। এর ফাঁকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা অনেকের মনে প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়েও। কেউ কেউ আবার বলছেন, বিষয়গুলো রহস্যঘেরা। এসব ঘটনার পেছনে থাকতে পারে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। পক্ষ বা প্রতিপক্ষ উভয়ই এর সঙ্গে জড়িত। তারা এসব ঘটনা থেকে যার যার মতো ফায়দা নিচ্ছেন। সচিবালয়ের মতো সুরক্ষিত এলাকায় ককটেল নিক্ষেপের ঘটনার দায় দিয়ে মামলা করা হয়েছে প্রধান বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বিরুদ্ধে। এ মামলায় এক মাসেরও বেশি সময় জেল খেটেছেন তিনি। সর্বশেষ বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পরপর দু’টি সমাবেশে ককটেল বিস্ফোরণ এবং পরে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে। সমাবেশের পিছন দিকে ককটেল বিস্ফোরণের পর দুই দিনই পুলিশ নজিরবিহীন অ্যাকশনে যায়। নির্বিচারে গুলি করা হয়। টিয়ারশেল, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে সভা পণ্ড করে দেয়া হয়। দ্বিতীয় দিন একেবারে লঙ্কাকাণ্ড করে পুলিশ। একই স্থানে একই কায়দায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে দ্বিতীয় সমাবেশেও। তবে এ ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ নজিরবিহীন অ্যাকশনে যায়। তছনছ করা হয় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়। হাতুড়ি দিয়ে দরজা ভেঙে লুকিয়ে থাকা নেতাদের বের করে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অভিযানের এক পর্যায়ে ওই কার্যালয়ের ভেতর থেকে কয়েকটি ককটেল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর এসব ককটেল গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে মহাউৎসাহে নিয়ে প্রদর্শন করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ দাবি করে বিএনপি কর্মীরাই হরতাল ডাকার জন্য সমাবেশে ককটেল বিস্ফোরণ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। কার্যালয় থেকে উদ্ধার করা ককটেলও রাখা হয়েছিল নাশকতা সৃষ্টির জন্য। তবে বিএনপি’র দাবি উল্টো। তারা বলছে, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা সাজানো। বিরোধী দল ও জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচি বানচাল করতে সরকারি বাহিনীই এ কাজ করছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ককটেল পাওয়ার বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া স্পষ্টভাবে পুলিশকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, পুলিশই পকেটে করে ওই ককটেল নিয়ে গিয়েছিল। অবশ্য দলটির নেতারাও নানা যুক্তি দেখাচ্ছেন এ বিষয়ে। তারা প্রশ্ন রেখে বলছেন, দেশের প্রধান বিরোধী দলের প্রধান কার্যালয়ে এভাবেই কি কেউ ককটেল সাজিয়ে রাখতে পারে? এছাড়া, যখন ককটেল উদ্ধার করা হয় তখন পুলিশ গণমাধ্যম কর্মীদের ওই কক্ষ থেকে বের করে দিয়েছিল। পরে তাদের সেখানে নিয়ে ককটেল প্রদর্শন করা হয়। সরকারি দলের পক্ষ থেকে তীর্যক বক্তব্য দেয়া হচ্ছে এই ঘটনা সম্পর্কে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, যে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বোমা থাকে তাদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ঘটনার পরপরই জানিয়ে দেন যেসব দুষ্কৃতকারী নিজেদের কার্যালয়ে বোমা রাখে তাদের ধরতেই সেখানে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক টানাহেঁচড়া শুরু গত বছরের ২৯শে এপ্রিল। এদিন ১৮ দলীয় জোটের হরতাল চলাকালে বিকালে সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে দু’টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশে বাইরে থেকে কে বা কারা এই ককটেল ছুড়ে মারে। এ ঘটনার পর বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের নামে মামলা দেয়া হয়। এ ঘটনায় নেতাদের দায়ী করে ২৯ জনের নামে চার্জশিটও দেয় পুলিশ। মামলায় বিএনপি ছাড়া শরিক দলের শীর্ষ নেতাদেরও আসামি করা হয়। এ মামলায় ২৯ দিন কারাভোগ করে জামিনে মুক্ত হন মির্জা ফখরুল।
গত ৬ই মার্চ বিএনপি’র বিক্ষোভ সমাবেশ পণ্ড হয় এই ককটেল বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে। বিকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় সমাবেশ চলছিল। সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এসময় সমাবেশের পিছন দিকে নাইটিঙ্গেল মোড়ে পরপর কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এরপরই শুরু হয় পুলিশের অ্যাকশন। মঞ্চ লক্ষ্য করে তারা গুলি বর্ষণ শুরু করে নির্বিচারে। ছররা গুলিতে আহত হন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালামসহ আরও অনেকে। ঘটনার পর পুলিশ দাবি করে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তবে বিএনপি’র দাবি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেই পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়।
গত ৮ই মার্চ শাহবাগের জাগরণ মঞ্চের কাছে পরপর কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যেই এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করা হয়। তবে এ পর্যন্ত ঘটনার কোন কিছুই বের করতে পারেনি পুলিশ। জাগরণ মঞ্চ ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এ ঘটনার পেছনে জামায়াত-শিবিরের জড়িত থাকার বিষয়ে বক্তব্য আসে। অভিযোগ তোলা হয়। তবে অভিযোগ প্রমাণে দৃশ্যত কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি।
সর্বশেষ গত ১২ই মার্চ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে রাতে কে বা কারা তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। তখন প্রেস ক্লাবে জাগরণ মঞ্চের সংবাদ সম্মেলন চলছিল। এর পরের দিন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশ এবং হেফাজতে ইসলামের পাল্টা হরতাল কর্মসূচি ছিল। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পরই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। সমাবেশ স্থগিত করে জাগরণ মঞ্চ। পরে হরতালও তুলে নেয় হেফাজতে ইসলাম। দুই পক্ষের উত্তেজনা প্রশমন হলেও ককটেল নিক্ষেপের ঘটনাটি থেকে যায় আড়ালে। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে দুই পক্ষই এ নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করে।
শুক্রবার সাভারের আশুলিয়ায় জাগরণ মঞ্চের সমাবেশের আগেও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মঞ্চের কাছাকাছি এলাকায় এ বিস্ফোরণ হলেও পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে আটক করতে পারেনি। সমাবেশ থেকে দাবি করা হয় সমাবেশে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্যই এই ঘটনা ঘটানো হয়। পুলিশও দাবি করে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য পটকা ফুটানো হয়েছে। কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা জানাতে পারেনি পুলিশ। ঢাকার বাইরেও কয়েকটি স্থানে জাগরণ মঞ্চ বা গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। তবে এসব ঘটনার নেপথ্য কাহিনী থেকে যাচ্ছে অজানাই। লক্ষ্যযোগ্য হচ্ছে, ককটেল হামলার এসব ঘটনা প্রায় ক্ষেত্রেই ঘটছে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে। তবে কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত জনসমাগমের পাশে বিস্ফোরণ ঘটলেও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটছে না আশঙ্কা অনুযায়ী। এ কারণে হামলাকারীদের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছে না কেউ। রহস্যই থেকে যাচ্ছে পুরো বিষয়টি।
No comments