তৌহিদি জনতার প্রতিরোধ- চলতে ফিরতে দেখা by ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী
সরকার বাংলাদেশ থেকে ইসলাম বিতাড়নের জন্য
বলতে গেলে একেবারে উন্মাদ হয়ে গেছে। ইসলামি রাজনীতি বন্ধ করো। ইসলামের
চর্চা বন্ধ করো। যারা ইসলাম চর্চা করে তাদের উৎখাত করো।
ইসলামের
মৌলিক মূল্যবোধগুলো ধ্বংস করে দাও। আল্লাহ-রাসূল নিয়ে বিদ্রƒপকারীদের মদদ
দাও। বিদ্রƒপ করার সুযোগ করে দাও। যারা বিদ্রƒপ করে তাদের গানম্যান দিয়ে,
চার স্তরের পুলিশ-র্যাবের নিরাপত্তা দিয়ে পাহারা দাও; তাদের রক্ষায়
মাত্র সপ্তাহখানেকের মধ্যে ১৭০ জন লোককে হত্যা করো। যাতে তারা অবাধে
ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যেতে পারে, তার জন্য ভ্রাম্যমাণ টয়লেট
দাও; পানি, খাবার ও অর্থ দাও। বৃহৎ আকারের দু’টি হাসপাতাল বন্ধ করে
মাসাধিক কাল ধরে রাস্তাঘাট বন্ধ করে রাখো। মুসলমানের দেশে মুসলমানের মসজিদে
তালা লাগিয়ে দাও, যাতে সেখানে কেউ প্রবেশ করতে না পারে। পাঠ্যবইয়ে
আল্লাহকে দেব-দেবীর সমতুল্য করো। বলির মাংস খাওয়া মুসলমানের জন্য হালাল
করোÑ এই হলো সরকারের নীতি। এই নীতির যদি কেউ প্রতিবাদ করে তবে তার বুক
বরাবর গুলি করে তাকে হত্যা করো।
ধর্মদ্রোহী ব্লগারদের রক্ষায় সরকার যেন একেবারে মরিয়া। তাদের পক্ষে সরকার এক যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু শুরু থেকেই তাদের দাবি ছিল অযৌক্তিক। তারা কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতাদের বিচার চায়নি। চেয়েছে তাদের মৃত্যুদণ্ড। অর্থাৎ কথিত অপরাধের মাত্রা যাই হোক না কেন, তাদের সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিতেই হবে। কেন? আদালত বিচার-বিবেচনা করে দেখবেন কার অপরাধ গুরু, কার অপরাধ লঘু; সে অনুযায়ী তার দণ্ড দেবেন। কিন্তু না, শাহবাগীদের দাবি হলো, গুরু পাপ লঘু পাপ বুঝি না, মৃত্যুদণ্ড দিতেই হবে। এ কেমন আজিব তামাশা! আর প্রধানমন্ত্রীও বলে বসলেনÑ হ্যাঁ, আদালতকে জন-আকাক্সা বিবেচনায় নিয়ে রায় দিতে হবে। আর আমরা বিস্ময়করভাবে দেখলাম, এরপর জামায়াতের নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ দিলেন ট্রাইব্যুনাল। শাহবাগীরা মিষ্টি বিতরণ করল। সঙ্গত কারণেই এ রায় যত নিরপেক্ষই হোক না কেন, সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, শাহবাগীদের দ্বারা এ রায় প্রভাবিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও ওই রায় ঘোষণার পর তো শাহবাগীদের আন্দোলন গুটিয়ে নেয়াই সঙ্গত হতো। মানুষের ভোগান্তির অবসান ঘটত। তা হতে না দিয়ে সরকার এই জজবা জিইয়ে রাখছে কেন, সেটাই এখন জনমনে প্রশ্ন।
এ নিয়ে তরুণদের মধ্যে এক প্রকার হুজুগ তুলে দিতে পেরেছিল সরকার। বিগত চার বছরে সরকারের ব্যর্থতা পর্বতপ্রমাণ। পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, ভাড়া বিদ্যুতের নামে বিপুল দুর্নীতি, খুন-গুম-লুণ্ঠন-ডাকাতি এসব ঘটনায় যখন অতিষ্ঠ সারা দেশের মানুষ; যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধী দল মাঠে সোচ্চার, তখন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে শাহবাগে গড়ে তোলা হয় তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চ। লক্ষ্য সবার দৃষ্টি অন্য সব কিছু থেকে সরিয়ে শাহবাগের দিকে নিবদ্ধ করা। এ ক্ষেত্রে সরকার অনেকখানি সফল হয়েছে বৈকি। কিন্তু এ সাফল্য যে খুবই সাময়িক, সেটা সরকার এখন পর্যন্ত উপলব্ধি করতে পারছে না।
শাহবাগীদের আন্দোলন এখন মৃতপ্রায় হলেও সরকার যেন কোরামিন দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে একেবারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। গত ১১, ১২, ১৩ তারিখে দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস পর শাহবাগের রাস্তা খুলে দেয়া হয়েছিল। তাতে নগরবাসী খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। সেখানকার হাসপাতাল দু’টিতে আবার রোগীদের ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছিল। জনচলাচলের পথও বেশ খানিকটা সুগম হয়েছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার আবার ওই পথে যেতে গিয়ে দেখলাম, পরিস্থিতি আবার যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই হয়ে গেছে। শাহবাগে এখন এমনিতেই লোকসমাগম নেই। শ’খানেক অকর্মণ্য তরুণ-তরুণী সেখানে ঘুরে বেড়ায়। সারা দিন বিরান পড়ে থাকে। কিন্তু সেখানকার মঞ্চ পাহারা দেয়ার জন্য শত শত পুলিশ সরকার মোতায়েন রাখে। তারা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সে মঞ্চ পালা করে পাহারা দেয়। লোকজন না থাকায় বোধকরি শাহবাগের চৌরাস্তা যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মাত্র তিন দিনের মাথায় তা আবার বন্ধ করে দিয়ে জনগণের চরম ভোগান্তি আবারো ডেকে আনল সরকার। জনশূন্য শাহবাগের নিরাপত্তায় এবারের আয়োজন আরো ব্যাপক।
যারা ধানমন্ডি থেকে শান্তিনগর যেতে চাইতেন, পুলিশের ব্যারিকেডের কারণে তারা আজিজ সুপার মার্কেটের পাশ দিয়ে ঢুকে রূপসী বাংলার মোড়ে বেরিয়ে আসতে পারতেন। এবার সে ব্যবস্থাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পুলিশ ব্যারিকেড দিয়েছে ঢাকা কাবের সামনে, ব্যারিকেড দিয়েছে রূপসী বাংলার সামনে; ওদিকে পিজির মোড়ের ব্যারিকেড এগিয়ে নিয়ে দিয়েছে কাঁটাবন মসজিদ বরাবর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহবাগ থেকে ঢোকার রাস্তা তো সেই প্রথম থেকেই বন্ধ রয়েছে। অথচ অন্য কেউ সভাসমাবেশ করতে চাইলে অনুমতি তো দিচ্ছেই না, বরং পিটিয়ে, গুলি করে লাশ বানিয়ে দিচ্ছে। এক যাত্রায় এ রকম দুই বিচার হবে কেন? জনদুর্ভোগ চরমে তুলে এক দলকে পাহারা দিয়ে সভা করাচ্ছে সরকার, আবার অন্য কেউ সভা করতে চাইলে একেবারে খড়গহস্ত হয়ে উঠছে।
কিন্তু বিষয়টা যে সব সময় সরকারের টিউনে থাকবে, এমন গ্যারান্টি বোধকরি নেই। তার প্রমাণ আমরা দেখলাম চট্টগ্রামে। সেখানে সমাবেশ করার কথা ছিল নাস্তিক ধর্মদ্রোহীদের। কিন্তু তাতে বাধা দেয় বাংলাদেশের ওলামা-মাশায়েখদের সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তাদের বক্তব্য ছিল, শাহবাগীরা সভা করতে চাইলে করুক, তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু যারা নাস্তিক, যারা আল্লাহ-রাসূলের নামে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ব্লগে প্রচার করেছে, চট্টগ্রামের পুণ্যভূমিতে তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। যেকোনো মূল্যে তাদের প্রতিহত করা হবে। সরকার এই ওলামা-মাশায়েখদের জামায়াত বলতে পারেনি। কারণ জামায়াতের সাথে তাদের মতাদর্শগত বিরোধ সবারই জানা। আর তাই সরকার তাদের ওপর বন্দে মাতরম বলে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেনি। ব্লগার ডা: ইমরানকে ফেনী থেকে ঢাকায় ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু চট্টগ্রামে ধর্মদ্রোহী, ইসলামদ্রোহী ব্লগারদের মদদ দিতে ব্যর্থ হয়ে সরকার একেবারে পাগলপারা হয়ে গেছে। এরপর গত শুক্রবার আশুলিয়ায় সমাবেশ ডেকেছিল তারা। সে সমাবেশ সফল করে দেয়ার জন্য সরকার একেবারে যুদ্ধাবস্থার আয়োজন করেছিল। পুলিশ-র্যাব দিয়ে ঘিরে ফেলেছিল গোটা এলাকা। র্যাবের হেলিকপ্টার আকাশে চক্কর দিচ্ছিল অবিরাম। পুলিশ-র্যাবের গাড়ি হুইসেল বাজিয়ে ছোটাছুটি করছিল। গোটা এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। অর্ধশত সিসিক্যামেরা বসিয়ে গোটা এলাকা অবিরাম পর্যবেক্ষণ করেছে। সেখানে হেফাজতে ইসলামের অস্তিত্বই অস্বীকার করেছেন পুলিশের অতিরিক্ত সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জি।
কিন্তু পরের চিত্র দেখলাম ভিন্ন। মনে হচ্ছিল মঞ্চে যোগ দেয়ার জন্য আশুলিয়া অঞ্চলের লাখো মানুষের সমাবেশ ঘটবে। সব কিছু বাদ দিয়ে এলাকার লোকজন ছুটতে শুরু করবে ধর্মদ্রোহী ব্লগারদের ‘ধোলাই করো’ স্লোগান শোনার জন্য। অথচ সে রকম কিছুই দেখা গেল না। যেসব টিভি চ্যানেল দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে এই ব্লগারদের কাছাখোলা সমর্থন দিয়ে আসছিল, তারাও যেন বিপাকে পড়ে যায়। মাত্র কয়েক শ’ পোলাপান মঞ্চের আশপাশে বসে ছিল। কেউ কেউ এদিক-ওদিক ঘুরেফিরে দেখছিল। একজন তরুণী চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলছিল, ‘শিবির ধরো, ধোলাই করো’। অথচ শিবির ধরে ধোলাই করার স্লোগান শাহবাগীদের মূল স্লোগানও ছিল না। তাদের দাবি ছিল, কথিত সব যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসি দিতে হবে। সেও এক ফ্যাসিবাদী দাবি। এ দাবি বাস্তবায়ন করতে হলে তো আর বিচারের কোনো প্রয়োজন নেই। সরকার একজন লোককে ধরে এনে বলবে, লোকটা যুদ্ধাপরাধী। ব্যস হয়ে গেল। বিচার করে তো লাভ নেই। কারণ ফাঁসি তাকে দিতেই হবে। অতএব, আর কালবিলম্ব না করে তাকে ফাঁসি দিয়ে দিলেই হলো। আর এই উন্মাদনাকে আমরা মিডিয়া মদদ দিয়েই যাচ্ছি। যারা মদদ দিয়ে যাচ্ছি তাদের শিক্ষাদীক্ষা, যোগ্যতা ও মনোভঙ্গি নিয়ে তো প্রশ্ন উঠবেই।
এত রঙঢঙ করে শাহবাগীরা চট্টগ্রামে সমাবেশ করল, কিন্তু সাড়া মিলল না কেন? মাত্র দু-তিন শ’ লোক কেন সে সমাবেশে ঘোরাফেরা করল? আশুলিয়ার পরিস্থিতিও তাই দাঁড়িয়েছিল। দলবাজ টিভির ক্যামেরাগুলো আর দিগন্ত পর্যন্ত টেনে দেখাতে পারছিল না। ক্যামেরা মাটির দিকে খাড়া করে ধরে একটু ঘুরিয়ে অ-নে-ক লোক বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। আর যে রিপোর্টার ফিল্ড থেকে রিপোর্ট করছিল, সে খানিকটা যেন বিব্রতই বোধ করছিল। বলছিল, হেফাজতে ইসলাম এখানে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকায় বেশ অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। সভা হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা গিয়েছিল। তাই যেন লোকসমাগম আশানুরূপ হয়নি। এই আন্দোলনকে যারা ফ্যাসিবাদী আন্দোলন বলে মনে করছেন, তারা এর ভিন্ন ব্যাখ্যাও দিতে পারেন। তারা বলতে পারেন, সাধারণ মানুষ এই আন্দোলন, এই দাবি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই কতক দলান্ধ যুবক কী বলছে, না বলছে; সেটা দেখার বা শোনার কোনো প্রয়োজন নেই। সে সময়ও তাদের নেই।
জামায়াত বা শিবির সরকারের কাছে এক আতঙ্কের নাম। জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। তাদের সুনির্দিষ্ট আদর্শ আছে। সে আদর্শের নিরিখে তারা তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে এ দেশে রাজনীতি করে আসছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। নির্বাচিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ যদি জামায়াতকে মোকাবেলা করতে চায়, তাহলে রাজনীতি দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে; শক্তি দিয়ে নয়। এ ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ করলে অন্য পক্ষও স্বাভাবিকভাবে পাল্টা আঘাত করবে। তাতে সামাজিক সঙ্ঘাতের সৃষ্টি হতে বাধ্য। সেটি কারো জন্য কল্যাণকর হবে না। শাহবাগীদের লেলিয়ে দিয়ে কিংবা গণহত্যার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। সরকার মুসলমানের জন্য মসজিদে নামাজ পড়ার পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে। মসজিদের গেটে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। সেখানে কেউ নামাজ পড়তে গেলে তার সর্বাঙ্গ তল্লাশি করা হচ্ছে। লোকজনকে মসজিদের গেট থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে এটা কল্পনা করা যায়? মনে হচ্ছে, কোনো ভিন্ন ধর্মের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এ দেশ দখল করে নিয়ে এখান থেকে ইসলাম নির্মূলের অভিযানে নেমেছে।
এ এক ভয়াবহ খেলায় মেতেছে সরকার। এ যুগে কোনো দেশ দখল করলেও সে দেশের মানুষের ধর্মের কোনো পরিবর্তন আনা যায় না। কোনো সাম্রাজ্যবাদী দেশ সে চেষ্টাও করে না। কিন্তু নিজ দেশে মুসলমানেরা এতটাই বিপন্ন হয়ে পড়েছে যে, তাদের ঈমান-আকিদা আজ হুমকির মুখে পড়েছে। সরকার বর্বরতার চূড়ান্ত করে বসেছে। টেলিভিশনে দেখলাম, সরকার হন্যে হয়ে সারা দেশে জামায়াত-শিবির খুঁজছে। কেন জামায়াত কি কোনো নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল? শিবির যারা করে, তার কি যুদ্ধাপরাধী? যারা শিবির করে, তারা এক ধরনের বিশ্বাস থেকেই তা করে। সেটি হলো ইসলামের প্রতি তাদের অবিচল আস্থা। শিবিরের কেউ স্বাধীনতাযুদ্ধ দেখেনি, রাজাকার দেখেনি, পাক বাহিনীর বর্বরতা দেখেনি। শুধু বিশ্বাসের কারণে সরকার তাদের হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াবে? সংবাদে দেখলাম, শিবির খোঁজার জন্য পুলিশ স্কুলে স্কুলে হানা দিয়েছে এবং ডজনখানেক ছাত্রকে আটক করেছে। যে ছাত্র স্কুলে পড়ে, তার বয়স ষোলোর ওপরে নয়। সে বালক মাত্র। একজন স্কুলপড়–য়া বালককে শিবির আখ্যা দিয়ে আটক করতে সরকার নির্দেশ দিয়েছে, নাকি সংশ্লিষ্ট পুলিশ বেশি বাহাদুরি দেখানোর জন্য স্কুলের শিশুদের আটক করে পুরস্কারের আশা করছে। সরকার তাকেও রাষ্ট্রপতির পুরস্কার দেয় কি না সেটিই এখন দেখার বিষয়।
কিন্তু এখানে আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, যে পুলিশ স্কুলের শিশুদের শিবির বলে আটক করল, তার কি স্কুলগামী কোনো সন্তান নেই? তাকে যদি কোনো দিন ছাত্রলীগ কর্মী বলে আটক করা হয়, তবে তার কেমন লাগবে? তিনি কি তা হাসিমুখে মেনে নেবেন? নাকি মানুষ হলে বেদনায় নীল হয়ে যাবেন? আমরা চাই না, তার সন্তানও এমন বিপদে পড়–ক। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে কায়মনে প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন তাকে হেদায়েত করেন।
তবে দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে আলেম-ওলামাদের সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তারা ইসলামদ্রোহী, ধর্মদ্রোহী ব্লগারদের প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন। তারপর শাহবাগীরাও কৌশলে পরিবর্তন এনেছে। তারা এখন সভা শুরুর আগে সব ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করছে। কিন্তু তাদের অপতৎপরতা এখনো অব্যাহত আছে। এই অপতৎপরতা রোধে সব ধর্মবিশ্বাসী মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে এখনই সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে এ দেশের কারো ঈমান ও জীবন এই সরকার নিরাপদ রাখবে না।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
ধর্মদ্রোহী ব্লগারদের রক্ষায় সরকার যেন একেবারে মরিয়া। তাদের পক্ষে সরকার এক যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু শুরু থেকেই তাদের দাবি ছিল অযৌক্তিক। তারা কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতাদের বিচার চায়নি। চেয়েছে তাদের মৃত্যুদণ্ড। অর্থাৎ কথিত অপরাধের মাত্রা যাই হোক না কেন, তাদের সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিতেই হবে। কেন? আদালত বিচার-বিবেচনা করে দেখবেন কার অপরাধ গুরু, কার অপরাধ লঘু; সে অনুযায়ী তার দণ্ড দেবেন। কিন্তু না, শাহবাগীদের দাবি হলো, গুরু পাপ লঘু পাপ বুঝি না, মৃত্যুদণ্ড দিতেই হবে। এ কেমন আজিব তামাশা! আর প্রধানমন্ত্রীও বলে বসলেনÑ হ্যাঁ, আদালতকে জন-আকাক্সা বিবেচনায় নিয়ে রায় দিতে হবে। আর আমরা বিস্ময়করভাবে দেখলাম, এরপর জামায়াতের নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ দিলেন ট্রাইব্যুনাল। শাহবাগীরা মিষ্টি বিতরণ করল। সঙ্গত কারণেই এ রায় যত নিরপেক্ষই হোক না কেন, সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, শাহবাগীদের দ্বারা এ রায় প্রভাবিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও ওই রায় ঘোষণার পর তো শাহবাগীদের আন্দোলন গুটিয়ে নেয়াই সঙ্গত হতো। মানুষের ভোগান্তির অবসান ঘটত। তা হতে না দিয়ে সরকার এই জজবা জিইয়ে রাখছে কেন, সেটাই এখন জনমনে প্রশ্ন।
এ নিয়ে তরুণদের মধ্যে এক প্রকার হুজুগ তুলে দিতে পেরেছিল সরকার। বিগত চার বছরে সরকারের ব্যর্থতা পর্বতপ্রমাণ। পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, ভাড়া বিদ্যুতের নামে বিপুল দুর্নীতি, খুন-গুম-লুণ্ঠন-ডাকাতি এসব ঘটনায় যখন অতিষ্ঠ সারা দেশের মানুষ; যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধী দল মাঠে সোচ্চার, তখন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে শাহবাগে গড়ে তোলা হয় তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চ। লক্ষ্য সবার দৃষ্টি অন্য সব কিছু থেকে সরিয়ে শাহবাগের দিকে নিবদ্ধ করা। এ ক্ষেত্রে সরকার অনেকখানি সফল হয়েছে বৈকি। কিন্তু এ সাফল্য যে খুবই সাময়িক, সেটা সরকার এখন পর্যন্ত উপলব্ধি করতে পারছে না।
শাহবাগীদের আন্দোলন এখন মৃতপ্রায় হলেও সরকার যেন কোরামিন দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে একেবারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। গত ১১, ১২, ১৩ তারিখে দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস পর শাহবাগের রাস্তা খুলে দেয়া হয়েছিল। তাতে নগরবাসী খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। সেখানকার হাসপাতাল দু’টিতে আবার রোগীদের ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছিল। জনচলাচলের পথও বেশ খানিকটা সুগম হয়েছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার আবার ওই পথে যেতে গিয়ে দেখলাম, পরিস্থিতি আবার যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই হয়ে গেছে। শাহবাগে এখন এমনিতেই লোকসমাগম নেই। শ’খানেক অকর্মণ্য তরুণ-তরুণী সেখানে ঘুরে বেড়ায়। সারা দিন বিরান পড়ে থাকে। কিন্তু সেখানকার মঞ্চ পাহারা দেয়ার জন্য শত শত পুলিশ সরকার মোতায়েন রাখে। তারা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সে মঞ্চ পালা করে পাহারা দেয়। লোকজন না থাকায় বোধকরি শাহবাগের চৌরাস্তা যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মাত্র তিন দিনের মাথায় তা আবার বন্ধ করে দিয়ে জনগণের চরম ভোগান্তি আবারো ডেকে আনল সরকার। জনশূন্য শাহবাগের নিরাপত্তায় এবারের আয়োজন আরো ব্যাপক।
যারা ধানমন্ডি থেকে শান্তিনগর যেতে চাইতেন, পুলিশের ব্যারিকেডের কারণে তারা আজিজ সুপার মার্কেটের পাশ দিয়ে ঢুকে রূপসী বাংলার মোড়ে বেরিয়ে আসতে পারতেন। এবার সে ব্যবস্থাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পুলিশ ব্যারিকেড দিয়েছে ঢাকা কাবের সামনে, ব্যারিকেড দিয়েছে রূপসী বাংলার সামনে; ওদিকে পিজির মোড়ের ব্যারিকেড এগিয়ে নিয়ে দিয়েছে কাঁটাবন মসজিদ বরাবর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহবাগ থেকে ঢোকার রাস্তা তো সেই প্রথম থেকেই বন্ধ রয়েছে। অথচ অন্য কেউ সভাসমাবেশ করতে চাইলে অনুমতি তো দিচ্ছেই না, বরং পিটিয়ে, গুলি করে লাশ বানিয়ে দিচ্ছে। এক যাত্রায় এ রকম দুই বিচার হবে কেন? জনদুর্ভোগ চরমে তুলে এক দলকে পাহারা দিয়ে সভা করাচ্ছে সরকার, আবার অন্য কেউ সভা করতে চাইলে একেবারে খড়গহস্ত হয়ে উঠছে।
কিন্তু বিষয়টা যে সব সময় সরকারের টিউনে থাকবে, এমন গ্যারান্টি বোধকরি নেই। তার প্রমাণ আমরা দেখলাম চট্টগ্রামে। সেখানে সমাবেশ করার কথা ছিল নাস্তিক ধর্মদ্রোহীদের। কিন্তু তাতে বাধা দেয় বাংলাদেশের ওলামা-মাশায়েখদের সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তাদের বক্তব্য ছিল, শাহবাগীরা সভা করতে চাইলে করুক, তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু যারা নাস্তিক, যারা আল্লাহ-রাসূলের নামে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ব্লগে প্রচার করেছে, চট্টগ্রামের পুণ্যভূমিতে তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। যেকোনো মূল্যে তাদের প্রতিহত করা হবে। সরকার এই ওলামা-মাশায়েখদের জামায়াত বলতে পারেনি। কারণ জামায়াতের সাথে তাদের মতাদর্শগত বিরোধ সবারই জানা। আর তাই সরকার তাদের ওপর বন্দে মাতরম বলে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেনি। ব্লগার ডা: ইমরানকে ফেনী থেকে ঢাকায় ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু চট্টগ্রামে ধর্মদ্রোহী, ইসলামদ্রোহী ব্লগারদের মদদ দিতে ব্যর্থ হয়ে সরকার একেবারে পাগলপারা হয়ে গেছে। এরপর গত শুক্রবার আশুলিয়ায় সমাবেশ ডেকেছিল তারা। সে সমাবেশ সফল করে দেয়ার জন্য সরকার একেবারে যুদ্ধাবস্থার আয়োজন করেছিল। পুলিশ-র্যাব দিয়ে ঘিরে ফেলেছিল গোটা এলাকা। র্যাবের হেলিকপ্টার আকাশে চক্কর দিচ্ছিল অবিরাম। পুলিশ-র্যাবের গাড়ি হুইসেল বাজিয়ে ছোটাছুটি করছিল। গোটা এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। অর্ধশত সিসিক্যামেরা বসিয়ে গোটা এলাকা অবিরাম পর্যবেক্ষণ করেছে। সেখানে হেফাজতে ইসলামের অস্তিত্বই অস্বীকার করেছেন পুলিশের অতিরিক্ত সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জি।
কিন্তু পরের চিত্র দেখলাম ভিন্ন। মনে হচ্ছিল মঞ্চে যোগ দেয়ার জন্য আশুলিয়া অঞ্চলের লাখো মানুষের সমাবেশ ঘটবে। সব কিছু বাদ দিয়ে এলাকার লোকজন ছুটতে শুরু করবে ধর্মদ্রোহী ব্লগারদের ‘ধোলাই করো’ স্লোগান শোনার জন্য। অথচ সে রকম কিছুই দেখা গেল না। যেসব টিভি চ্যানেল দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে এই ব্লগারদের কাছাখোলা সমর্থন দিয়ে আসছিল, তারাও যেন বিপাকে পড়ে যায়। মাত্র কয়েক শ’ পোলাপান মঞ্চের আশপাশে বসে ছিল। কেউ কেউ এদিক-ওদিক ঘুরেফিরে দেখছিল। একজন তরুণী চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলছিল, ‘শিবির ধরো, ধোলাই করো’। অথচ শিবির ধরে ধোলাই করার স্লোগান শাহবাগীদের মূল স্লোগানও ছিল না। তাদের দাবি ছিল, কথিত সব যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসি দিতে হবে। সেও এক ফ্যাসিবাদী দাবি। এ দাবি বাস্তবায়ন করতে হলে তো আর বিচারের কোনো প্রয়োজন নেই। সরকার একজন লোককে ধরে এনে বলবে, লোকটা যুদ্ধাপরাধী। ব্যস হয়ে গেল। বিচার করে তো লাভ নেই। কারণ ফাঁসি তাকে দিতেই হবে। অতএব, আর কালবিলম্ব না করে তাকে ফাঁসি দিয়ে দিলেই হলো। আর এই উন্মাদনাকে আমরা মিডিয়া মদদ দিয়েই যাচ্ছি। যারা মদদ দিয়ে যাচ্ছি তাদের শিক্ষাদীক্ষা, যোগ্যতা ও মনোভঙ্গি নিয়ে তো প্রশ্ন উঠবেই।
এত রঙঢঙ করে শাহবাগীরা চট্টগ্রামে সমাবেশ করল, কিন্তু সাড়া মিলল না কেন? মাত্র দু-তিন শ’ লোক কেন সে সমাবেশে ঘোরাফেরা করল? আশুলিয়ার পরিস্থিতিও তাই দাঁড়িয়েছিল। দলবাজ টিভির ক্যামেরাগুলো আর দিগন্ত পর্যন্ত টেনে দেখাতে পারছিল না। ক্যামেরা মাটির দিকে খাড়া করে ধরে একটু ঘুরিয়ে অ-নে-ক লোক বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। আর যে রিপোর্টার ফিল্ড থেকে রিপোর্ট করছিল, সে খানিকটা যেন বিব্রতই বোধ করছিল। বলছিল, হেফাজতে ইসলাম এখানে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকায় বেশ অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। সভা হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা গিয়েছিল। তাই যেন লোকসমাগম আশানুরূপ হয়নি। এই আন্দোলনকে যারা ফ্যাসিবাদী আন্দোলন বলে মনে করছেন, তারা এর ভিন্ন ব্যাখ্যাও দিতে পারেন। তারা বলতে পারেন, সাধারণ মানুষ এই আন্দোলন, এই দাবি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই কতক দলান্ধ যুবক কী বলছে, না বলছে; সেটা দেখার বা শোনার কোনো প্রয়োজন নেই। সে সময়ও তাদের নেই।
জামায়াত বা শিবির সরকারের কাছে এক আতঙ্কের নাম। জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। তাদের সুনির্দিষ্ট আদর্শ আছে। সে আদর্শের নিরিখে তারা তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে এ দেশে রাজনীতি করে আসছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। নির্বাচিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ যদি জামায়াতকে মোকাবেলা করতে চায়, তাহলে রাজনীতি দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে; শক্তি দিয়ে নয়। এ ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ করলে অন্য পক্ষও স্বাভাবিকভাবে পাল্টা আঘাত করবে। তাতে সামাজিক সঙ্ঘাতের সৃষ্টি হতে বাধ্য। সেটি কারো জন্য কল্যাণকর হবে না। শাহবাগীদের লেলিয়ে দিয়ে কিংবা গণহত্যার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। সরকার মুসলমানের জন্য মসজিদে নামাজ পড়ার পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে। মসজিদের গেটে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। সেখানে কেউ নামাজ পড়তে গেলে তার সর্বাঙ্গ তল্লাশি করা হচ্ছে। লোকজনকে মসজিদের গেট থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে এটা কল্পনা করা যায়? মনে হচ্ছে, কোনো ভিন্ন ধর্মের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এ দেশ দখল করে নিয়ে এখান থেকে ইসলাম নির্মূলের অভিযানে নেমেছে।
এ এক ভয়াবহ খেলায় মেতেছে সরকার। এ যুগে কোনো দেশ দখল করলেও সে দেশের মানুষের ধর্মের কোনো পরিবর্তন আনা যায় না। কোনো সাম্রাজ্যবাদী দেশ সে চেষ্টাও করে না। কিন্তু নিজ দেশে মুসলমানেরা এতটাই বিপন্ন হয়ে পড়েছে যে, তাদের ঈমান-আকিদা আজ হুমকির মুখে পড়েছে। সরকার বর্বরতার চূড়ান্ত করে বসেছে। টেলিভিশনে দেখলাম, সরকার হন্যে হয়ে সারা দেশে জামায়াত-শিবির খুঁজছে। কেন জামায়াত কি কোনো নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল? শিবির যারা করে, তার কি যুদ্ধাপরাধী? যারা শিবির করে, তারা এক ধরনের বিশ্বাস থেকেই তা করে। সেটি হলো ইসলামের প্রতি তাদের অবিচল আস্থা। শিবিরের কেউ স্বাধীনতাযুদ্ধ দেখেনি, রাজাকার দেখেনি, পাক বাহিনীর বর্বরতা দেখেনি। শুধু বিশ্বাসের কারণে সরকার তাদের হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াবে? সংবাদে দেখলাম, শিবির খোঁজার জন্য পুলিশ স্কুলে স্কুলে হানা দিয়েছে এবং ডজনখানেক ছাত্রকে আটক করেছে। যে ছাত্র স্কুলে পড়ে, তার বয়স ষোলোর ওপরে নয়। সে বালক মাত্র। একজন স্কুলপড়–য়া বালককে শিবির আখ্যা দিয়ে আটক করতে সরকার নির্দেশ দিয়েছে, নাকি সংশ্লিষ্ট পুলিশ বেশি বাহাদুরি দেখানোর জন্য স্কুলের শিশুদের আটক করে পুরস্কারের আশা করছে। সরকার তাকেও রাষ্ট্রপতির পুরস্কার দেয় কি না সেটিই এখন দেখার বিষয়।
কিন্তু এখানে আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, যে পুলিশ স্কুলের শিশুদের শিবির বলে আটক করল, তার কি স্কুলগামী কোনো সন্তান নেই? তাকে যদি কোনো দিন ছাত্রলীগ কর্মী বলে আটক করা হয়, তবে তার কেমন লাগবে? তিনি কি তা হাসিমুখে মেনে নেবেন? নাকি মানুষ হলে বেদনায় নীল হয়ে যাবেন? আমরা চাই না, তার সন্তানও এমন বিপদে পড়–ক। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে কায়মনে প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন তাকে হেদায়েত করেন।
তবে দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে আলেম-ওলামাদের সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তারা ইসলামদ্রোহী, ধর্মদ্রোহী ব্লগারদের প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন। তারপর শাহবাগীরাও কৌশলে পরিবর্তন এনেছে। তারা এখন সভা শুরুর আগে সব ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করছে। কিন্তু তাদের অপতৎপরতা এখনো অব্যাহত আছে। এই অপতৎপরতা রোধে সব ধর্মবিশ্বাসী মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে এখনই সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে এ দেশের কারো ঈমান ও জীবন এই সরকার নিরাপদ রাখবে না।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
No comments