সরকার বিদায়ে লাগাতার হরতাল-অবরোধ- কোনো আলোচনা নয়, গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবেঃ খালেদা জিয়া
‘আলোচনা’ নাকচ করে দিয়ে সরকার পতনের
একদফা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম
খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, ‘খুনি সরকারের সাথে কোনো আলোচনা নয়।
সরকারের
বিদায়ের একদফা দাবিতে আন্দোলন চলছে। প্রয়োজনে আরো রক্ত ঝরবে, রক্তপিপাসু
সরকারের পতন ঘটাতে লাগাতার হরতাল, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।’
মানিকগঞ্জের
সিঙ্গাইরের চারিগ্রাম এস এ খান উচ্চবিদ্যালয় মাঠ এবং গোবিন্দল ফুটবল
মাঠের পৃথক দু’টি বিশাল জনসভায় খালেদা জিয়া এই ঘোষণা দেন।
বেগম জিয়া সরকারকে ‘বিধর্মী’ আখ্যা দিয়ে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণে মালয়েশিয়ার অর্থায়নের বিষয়টি ‘ভাঁওতাবাজি’ বলে উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফের কোম্পানি বিনা পয়সার নিম্নমানের ক্যাপসুল খাইয়ে শিশুদের মারছে। সারা দেশে ‘গণহত্যার’ জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
গত ২৪ ফেব্র“য়ারি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেয়ার পর ডাকা হরতালে পুলিশের গুলিতে মানিকগঞ্জে চারজন নিহত হন। এর মধ্যে একজন নারীও ছিলেন। নিহত পরিবারের সদস্যদের সহানুভূতি জানাতেই মানিকগঞ্জ সফর করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সিঙ্গাইর পৌঁছে খালেদা জিয়া গোবিন্দল গ্রামে নিহত মাওলানা নাসিরের বাসায় যান। তার মা ফাতেমা বেগম এ সময় খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদেন। তিনি তাকে সান্ত্বনা দেন। এরপর স্থানীয় মাদরাসাছাত্র শাহআলমের মা শহরবানু ও চাচা আবুল কাশেমকে সান্ত্বনা দেন খালেদা জিয়া। সিঙ্গাইর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক নাজিম উদ্দিনের বাবা মজনু মিয়াকেও সান্ত্বনা দেন বেগম জিয়া। কৃষক আলমগীরের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রাফেজা বেগম, দেড় বছরের মেয়ে আঁখি ও বাবা রাজ্জাক মিয়ার সাথে কথা বলেন খালেদা জিয়া। তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে তিন লাখ করে টাকা অনুদান দেন তিনি। এ ছাড়া আহত ১৬ পরিবারের সদস্যদেরও ৩০ হাজার করে টাকা দেন।
এরপর বিরোধীদলীয় নেতা পশ্চিম গোবিন্দল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক পথসভায় যোগ দিয়ে নিহতদের রূহের মাগফিরাতে বিশেষ মুনাজাতে অংশ নেন। এর পর সেখান থেকে একই উপজেলার এস এ খান উচ্চবিদ্যালয়ে জনসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি।
বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মানিকগঞ্জের এই জনসভা এবং খালেদা জিয়ার আগমনকে ঘিরে পুরো এলাকায় এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
পথসভায় খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকারের সাথে কোনো আলোচনা নয়। খুনি সরকারের সাথে আলোচনা করে কোনো লাভ হবে না। এখন একদফা দাবিতে সরকার পতনের আন্দোলন হবে। হয় সরকারের বিদায়, না হয় লাগাতার হরতাল, ঘেরাও, অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার একটি বিধর্মী সরকার। এরা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না। এদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। এরা মন্দিরে, মসজিদে, গির্জা ও প্যাগোডায় হামলা করে। এরা ক্ষমতায় থাকলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।
পদ্মা সেতু করতে মালয়েশিয়ার সাথে যে চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার, তাকে ভাঁওতাবাজি বলে উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এ সরকার পদ্মা সেতু করতে পারবে না। আমরা পদ্মায় দু’টি সেতু করব।
খালেদা জিয়া বলেন, আজকে কোনো সভা করতে আসিনি। পুলিশের গুলিতে নিহতদের স্বজনদের সান্ত্বনা দিতে এসেছি। আমরা শুনেছি তাদের কী নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই সরকার খুনি ও রক্তপিপাসু, তাই এরা যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন মায়ের বুক খালি হবে। বোনেরা স্বামীহারা হবে। ছেলেমেয়েরা পিতৃহারা হবে। তাই আমাদের এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। আন্দোলন করতে হবে।
খালেদা জিয়া সরকারের সাথে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, খুনি সরকারের সাথে কথা বলে কোনো লাভ হবে না। এই সরকারের পতন ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। এ জন্য আন্দোলন করতে হবে। হয়তো এ জন্য আরো কিছু প্রাণহানি হবে, জানমালের ক্ষতি হবে। কিন্তু দেশের স্বার্থে মানুষের স্বার্থে এটুকু ক্ষতি মেনে নিতে হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই গণহত্যা হয়েছে, এর বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করে প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে হাজির করা হবে।
সরকারকে উদ্দেশ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুলি বন্ধ করুন, নয়তো এর প্রতিদান পেতে হবে। জনগণ বসে বসে মার খাবে, গুলি খাবে, আর মসনদে বসে আপনারা উপভোগ করবেন তা হবে না।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতা, সেখানকার গডফাদার ত্বকীকে হত্যা করেছে। ত্বকীর বাবা মেয়র নির্বাচনের সময় আইভীর জন্য কাজ করেছেন, এ জন্যই ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে। এখনো কেন শামীম ওসমান বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকার তাদের অপকর্ম দুর্নীতি ঢাকার জন্য পুলিশ পাহারায় ছাত্র-যুবকের নাম দিয়ে শাহবাগে মঞ্চ পেতেছে। এখানে যে ছাত্র-যুবকদের কথা বলা হচ্ছে, তারা যুবকদের অংশ নয়, সরকারের অংশ, এরা দেশের ক্ষতি করছে।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের কোম্পানি ভারত থেকে কম দামে, না হয় বিনামূল্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ভিটামিন ক্যাপসুল এনেছে, যা খেয়ে অনেক শিশু অসুস্থ হয়েছে, অনেকে মারা গেছে। এই হলো সরকারের কাজ। তারা গুলি করে মানুষ মারছে আবার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খাইয়ে মানুষ মারছে।
এখানকার সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিঙ্গাইর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মোহাম্মদ মুজাহারুল হক মোহর। বক্তব্য দেন, হারুন অর রশীদ খান মুন্নু, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, সিঙ্গাইর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মঈনুল ইসলাম শান্ত, নির্বাহী কমিটির সদস্য আফরোজা খান রিতা। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শিরিন সুলতানা, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, মানিকগঞ্জ জেলা নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক সাইফুল হুদা চৌধুরী শাতিল প্রমুখ।
চারিগ্রাম এস এ খান হাইস্কুল মাঠের জনসভায় খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার একটি খুনি সরকার, জালেম সরকার ও মিথ্যাবাদী। তারা প্রতিনিয়ত গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। এই সরকার দেশের টাকা লুট করে বিদেশে পাঠিয়েছে। ডেসটিনির টাকা লুট করেছে। পদ্মা সেতু হওয়ার আগেই টাকা ভাগাভাগি করেছে। তাই বিদেশীরা দুর্নীতিবাজ সরকারকে বিশ্বাস না করে টাকা বন্ধ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই সরকার পদ্মা সেতু করতে পারবে না। মালয়েশিয়া বা অন্যরা যা বলছে সব ভাঁওতা। আমরা দু’টি পদ্মা সেতু করব। একটা আরিচা- দৌলতদিয়া আর একটা মাওয়া দিয়ে।
স্থানীয় জনগণের কাছে তিনি প্রশ্ন করেন, শামসুল ইসলাম খান জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তারপর শান্ত এমপি হওয়ার পর অনেক কাজ করেছেন। এখন আর কোনো কাজ হয় না। কি, কাজ হয়? সবাই জবাব দেন, না হয় না।
শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, তারা বলে সব যুবক নাকি শাহবাগে হাজির হয়েছে। এই যে যুবক এরা কারা? আপনারা কি শাহবাগে গেছেন? এ সময় সবাই সমস্বরে জবাব দেয়, না। তখন খালেদা জিয়া বলেন, ওরা হচ্ছে আওয়ামী গোষ্ঠীর কতগুলো ছেলেপেলে।
তিনি বলেন, এই সরকারের ইমেজ কোথাও নেই। কেউ তাদের বিশ্বাস করে না। এখন দরকার এই সরকারের পদত্যাগ। তা না হলে কেউ নিরাপদে থাকতে পারবে না। আজকে এই দেশের কোনো ধর্মের মানুষই নিপরাদ নয়। আমাদের সময় সব ধর্মের মানুষকে নিরাপত্তা দিয়েছি। মসজিদে, মন্দিরে, গির্জা, প্যাগোডায় সাহায্য করেছি। কিন্তু এই সরকার শুধু ইস্যু খোঁজে।
খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের দুর্নীতি নিয়ে খবরের কাগজে ব্যাপকভাবে লেখালেখি হয়েছে। চার দিকে দুর্নীতি লুটপাটের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের মানুষ ক্ষিপ্ত। এসব ইস্যু চাপা দিতে সরকার শাহবাগের ঘটনা শুরু করল। সেখানে মঞ্চ পেতেছে। ফাঁসি ফাঁসি শুরু করেছে।
তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরাও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চাই। কিন্তু এই সরকার শুধু বিএনপি আর জামায়াতে ইসলামীকে ধরে। বিএনপি-জামায়াত ছাড়া যুদ্ধাপরাধী দেখে না। সরকারের নিজেদের দলে অনেক রাজাকার আছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর বাংলাদেশে যখন স্বাধীনতাযুদ্ধ চলে তখন সে পাকিস্তানিদের চাকরি করত। তাহলে সে কি রাজাকার নয়?
খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার বিধর্মী সরকার। তারা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না। না মুসলিম, না হিন্দু, না বৌদ্ধÑ কোনো কিছুই বিশ্বাস করে না। সে জন্য সবার ওপর হামলা করে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে শুক্রবারে মানুষ নামাজ পড়তে যায়। সেখানে পুলিশ তালা ঝুলিয়ে রেখেছে। এখন সেখানে মুসল্লিরা নামাজ পড়তে পারেন না। শাহবাগী নাস্তিকেরা রাস্তায় নাচানাচি করে। তাদের পাহারা দেয় সরকার। এরপর হিন্দুদের মন্দিরে হামলা করা শুরু করল। ভাঙচুর শুরু করল।
তিনি বলেন, বিশ্বজিৎকে আওয়ামী লীগের লোকেরা হত্যা করেছে। তাদের ধরা হয়নি। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বিশ্বজিৎকে চিকিৎসা দেয়া হয়নি। তার খুনিদের বিচার হয়নি। আওয়ামী লীগের লোক খুন করলে মাফ পেয়ে যায়। আর বিএনপির লোক কিছু না করলেও মামলা দেয়া হয়।
তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে এই সরকার। তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। চৌধুরী আলম, ইব্রাহিম মৃধাকে তারা হত্যা করেছে। এই সরকার মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মারছে। কাজেই আমরা এভাবে মানুষকে মরতে দিতে পারি না।
খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার নির্বাচনের আগে অনেক ওয়াদা দিয়েছিল। ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। কোনো কিছুই করেনি। চাল, ডাল তেল লবণ সব জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এই সরকারের অনেক গুণ আছে। ’৭৪ সালে তারা দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করেছিল। তখন লাখ লাখ লোক না খেয়ে মরেছে। তারা মানুষ মারতে ওস্তাদ। ’৭২-’৭৫ সালে রক্ষীবাহিনী দিয়ে ৪০ হাজার মানুষ হত্যা করেছিল। এবার গত কয়েক দিনে পুলিশ বাহিনী দিয়ে ১৭০ জন মানুষ মেরেছে। সে জন্য তাদের বিচার হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এই সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যায় না। তাই মা-বোন সবাইকে রাস্তায় নেমে আসতে হবে। এই মানিকগঞ্জ হলো বিএনপির ঘাঁটি। আগে কখনো বিএনপি এখানে হারেনি। গত নির্বাচনে হারানো হয়েছে। এই সরকার শুধু টাকাই চুরি করে না, ভোটও চুরি করে। চোরদের পদত্যাগ করতে হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, শহীদ জিয়া বহুবার মানিকগঞ্জে এসেছেন। খাল কেটেছেন। তিনি জনগণের সাথে স্কুলঘরে রাত্রি যাপন করেছেন। ভয় করেননি। শহীদ জিয়াকে কি ভুলে গেছেন? শামসুল ইসলামকে কি ভুলে গেছেন? খোন্দকার দেলোয়ারকে ভুলে গেছেন? মুন্নু সাহেবকে ভুলে গেছেন? তখন জনতা সমস্বরে জবাব দেয়, ‘না’।
তিনি আবারো বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বিধর্মী সরকার। যারা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না। অতীতে এরা কুকুরের মাথায় টুপি এবং দাড়ি লাগিয়ে ধর্মকে অপমান করেছে। এভাবে চলতে পারে না। এরা ক্ষমতায় থাকলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশ আজ মহাকঠিন সঙ্কটে। আমরা হরতাল করলে পুলিশ রাস্তায় নামিয়ে দেয়। আমরা মিছিল করলে পুলিশ বিজিবি হামলা করে। সীমান্তে তারা কিছুই করার সাহস রাখে না। এটা কি কোনো স্বাধীন দেশের সরকার। আপনারা দেখেছেন না, কাঁটাতারের বেড়ায় ফালানীর লাশ ঝুলে ছিল। তারা কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনি।
খালেদা জিয়া আরো বলেন, এ সরকার ৫৮ জন চৌকস অফিসারকে হত্যা করেছে। তার বিচার করেনি। গণহত্যা করেছে। এইসব হত্যার বিচার হবে। এই সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। বিদেশীরাও আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।
তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশের সহযোগিতায় এরা টিকে আছে। আমি তাদেরকে (ভারতকে) বলব, জনগণের সাথে বন্ধুত্ব থাকলে তারা এই খুনিদের সাথে সম্পর্ক না রাখতে। তিনি বলেন, এই সরকার দেশকে বিক্রি করে দিতে চায়। স্বাধীনতাকে অন্যের হাতে তুলে দিতে চায়। এ পর্যায়ে বেগম জিয়া জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, গোলামির শৃঙ্খল না স্বাধীনতার পতাকা? কী নেবেন আপনারা? স্বাধীনতার পতাকা।
খালেদা জিয়া বলেন, আগামী ১৮-১৯ মার্চ দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। ঠিক আছে? আরো হরতাল দেবো। হরতাল, ঘেরাও, অবরোধ যা প্রয়োজন হবে সব দেয়া হবে। এই সরকারকে বিদায় করা হবে।
স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য মইনুল ইসলাম খান শান্তর সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কেন্দ্রীয় নেতা সাদেক হোসেন খোকা, বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মীর সরফত আলী সপু, স্থানীয় নেত্রী আফরোজা খান রীতা প্রমুখ।
এর আগে বেলা আড়াইটায় গাড়িবহর নিয়ে গুলশানের বাসা থেকে সিঙ্গাইরের উদ্দেশে যাত্রা করেন খালেদা জিয়া। আমিনবাজার থেকে সিঙ্গাইর পর্যন্ত রাস্তায় দুই পাশে হাজার হাজার মানুষ ব্যানার ফেস্টুনসহ দাঁড়িয়ে থেকে বেগম জিয়াকে অভিবাদন জানান। গাড়ির ভেতর থেকে হাত নেড়ে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানান খালেদা জিয়া।
বেগম জিয়া সরকারকে ‘বিধর্মী’ আখ্যা দিয়ে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণে মালয়েশিয়ার অর্থায়নের বিষয়টি ‘ভাঁওতাবাজি’ বলে উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফের কোম্পানি বিনা পয়সার নিম্নমানের ক্যাপসুল খাইয়ে শিশুদের মারছে। সারা দেশে ‘গণহত্যার’ জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
গত ২৪ ফেব্র“য়ারি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেয়ার পর ডাকা হরতালে পুলিশের গুলিতে মানিকগঞ্জে চারজন নিহত হন। এর মধ্যে একজন নারীও ছিলেন। নিহত পরিবারের সদস্যদের সহানুভূতি জানাতেই মানিকগঞ্জ সফর করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সিঙ্গাইর পৌঁছে খালেদা জিয়া গোবিন্দল গ্রামে নিহত মাওলানা নাসিরের বাসায় যান। তার মা ফাতেমা বেগম এ সময় খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদেন। তিনি তাকে সান্ত্বনা দেন। এরপর স্থানীয় মাদরাসাছাত্র শাহআলমের মা শহরবানু ও চাচা আবুল কাশেমকে সান্ত্বনা দেন খালেদা জিয়া। সিঙ্গাইর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক নাজিম উদ্দিনের বাবা মজনু মিয়াকেও সান্ত্বনা দেন বেগম জিয়া। কৃষক আলমগীরের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রাফেজা বেগম, দেড় বছরের মেয়ে আঁখি ও বাবা রাজ্জাক মিয়ার সাথে কথা বলেন খালেদা জিয়া। তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে তিন লাখ করে টাকা অনুদান দেন তিনি। এ ছাড়া আহত ১৬ পরিবারের সদস্যদেরও ৩০ হাজার করে টাকা দেন।
এরপর বিরোধীদলীয় নেতা পশ্চিম গোবিন্দল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক পথসভায় যোগ দিয়ে নিহতদের রূহের মাগফিরাতে বিশেষ মুনাজাতে অংশ নেন। এর পর সেখান থেকে একই উপজেলার এস এ খান উচ্চবিদ্যালয়ে জনসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি।
বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মানিকগঞ্জের এই জনসভা এবং খালেদা জিয়ার আগমনকে ঘিরে পুরো এলাকায় এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
পথসভায় খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকারের সাথে কোনো আলোচনা নয়। খুনি সরকারের সাথে আলোচনা করে কোনো লাভ হবে না। এখন একদফা দাবিতে সরকার পতনের আন্দোলন হবে। হয় সরকারের বিদায়, না হয় লাগাতার হরতাল, ঘেরাও, অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার একটি বিধর্মী সরকার। এরা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না। এদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। এরা মন্দিরে, মসজিদে, গির্জা ও প্যাগোডায় হামলা করে। এরা ক্ষমতায় থাকলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।
পদ্মা সেতু করতে মালয়েশিয়ার সাথে যে চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার, তাকে ভাঁওতাবাজি বলে উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এ সরকার পদ্মা সেতু করতে পারবে না। আমরা পদ্মায় দু’টি সেতু করব।
খালেদা জিয়া বলেন, আজকে কোনো সভা করতে আসিনি। পুলিশের গুলিতে নিহতদের স্বজনদের সান্ত্বনা দিতে এসেছি। আমরা শুনেছি তাদের কী নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই সরকার খুনি ও রক্তপিপাসু, তাই এরা যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন মায়ের বুক খালি হবে। বোনেরা স্বামীহারা হবে। ছেলেমেয়েরা পিতৃহারা হবে। তাই আমাদের এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। আন্দোলন করতে হবে।
খালেদা জিয়া সরকারের সাথে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, খুনি সরকারের সাথে কথা বলে কোনো লাভ হবে না। এই সরকারের পতন ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। এ জন্য আন্দোলন করতে হবে। হয়তো এ জন্য আরো কিছু প্রাণহানি হবে, জানমালের ক্ষতি হবে। কিন্তু দেশের স্বার্থে মানুষের স্বার্থে এটুকু ক্ষতি মেনে নিতে হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই গণহত্যা হয়েছে, এর বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করে প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে হাজির করা হবে।
সরকারকে উদ্দেশ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুলি বন্ধ করুন, নয়তো এর প্রতিদান পেতে হবে। জনগণ বসে বসে মার খাবে, গুলি খাবে, আর মসনদে বসে আপনারা উপভোগ করবেন তা হবে না।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতা, সেখানকার গডফাদার ত্বকীকে হত্যা করেছে। ত্বকীর বাবা মেয়র নির্বাচনের সময় আইভীর জন্য কাজ করেছেন, এ জন্যই ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে। এখনো কেন শামীম ওসমান বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকার তাদের অপকর্ম দুর্নীতি ঢাকার জন্য পুলিশ পাহারায় ছাত্র-যুবকের নাম দিয়ে শাহবাগে মঞ্চ পেতেছে। এখানে যে ছাত্র-যুবকদের কথা বলা হচ্ছে, তারা যুবকদের অংশ নয়, সরকারের অংশ, এরা দেশের ক্ষতি করছে।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের কোম্পানি ভারত থেকে কম দামে, না হয় বিনামূল্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ভিটামিন ক্যাপসুল এনেছে, যা খেয়ে অনেক শিশু অসুস্থ হয়েছে, অনেকে মারা গেছে। এই হলো সরকারের কাজ। তারা গুলি করে মানুষ মারছে আবার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খাইয়ে মানুষ মারছে।
এখানকার সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিঙ্গাইর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মোহাম্মদ মুজাহারুল হক মোহর। বক্তব্য দেন, হারুন অর রশীদ খান মুন্নু, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, সিঙ্গাইর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মঈনুল ইসলাম শান্ত, নির্বাহী কমিটির সদস্য আফরোজা খান রিতা। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শিরিন সুলতানা, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, মানিকগঞ্জ জেলা নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক সাইফুল হুদা চৌধুরী শাতিল প্রমুখ।
চারিগ্রাম এস এ খান হাইস্কুল মাঠের জনসভায় খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার একটি খুনি সরকার, জালেম সরকার ও মিথ্যাবাদী। তারা প্রতিনিয়ত গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। এই সরকার দেশের টাকা লুট করে বিদেশে পাঠিয়েছে। ডেসটিনির টাকা লুট করেছে। পদ্মা সেতু হওয়ার আগেই টাকা ভাগাভাগি করেছে। তাই বিদেশীরা দুর্নীতিবাজ সরকারকে বিশ্বাস না করে টাকা বন্ধ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই সরকার পদ্মা সেতু করতে পারবে না। মালয়েশিয়া বা অন্যরা যা বলছে সব ভাঁওতা। আমরা দু’টি পদ্মা সেতু করব। একটা আরিচা- দৌলতদিয়া আর একটা মাওয়া দিয়ে।
স্থানীয় জনগণের কাছে তিনি প্রশ্ন করেন, শামসুল ইসলাম খান জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তারপর শান্ত এমপি হওয়ার পর অনেক কাজ করেছেন। এখন আর কোনো কাজ হয় না। কি, কাজ হয়? সবাই জবাব দেন, না হয় না।
শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, তারা বলে সব যুবক নাকি শাহবাগে হাজির হয়েছে। এই যে যুবক এরা কারা? আপনারা কি শাহবাগে গেছেন? এ সময় সবাই সমস্বরে জবাব দেয়, না। তখন খালেদা জিয়া বলেন, ওরা হচ্ছে আওয়ামী গোষ্ঠীর কতগুলো ছেলেপেলে।
তিনি বলেন, এই সরকারের ইমেজ কোথাও নেই। কেউ তাদের বিশ্বাস করে না। এখন দরকার এই সরকারের পদত্যাগ। তা না হলে কেউ নিরাপদে থাকতে পারবে না। আজকে এই দেশের কোনো ধর্মের মানুষই নিপরাদ নয়। আমাদের সময় সব ধর্মের মানুষকে নিরাপত্তা দিয়েছি। মসজিদে, মন্দিরে, গির্জা, প্যাগোডায় সাহায্য করেছি। কিন্তু এই সরকার শুধু ইস্যু খোঁজে।
খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের দুর্নীতি নিয়ে খবরের কাগজে ব্যাপকভাবে লেখালেখি হয়েছে। চার দিকে দুর্নীতি লুটপাটের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের মানুষ ক্ষিপ্ত। এসব ইস্যু চাপা দিতে সরকার শাহবাগের ঘটনা শুরু করল। সেখানে মঞ্চ পেতেছে। ফাঁসি ফাঁসি শুরু করেছে।
তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরাও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চাই। কিন্তু এই সরকার শুধু বিএনপি আর জামায়াতে ইসলামীকে ধরে। বিএনপি-জামায়াত ছাড়া যুদ্ধাপরাধী দেখে না। সরকারের নিজেদের দলে অনেক রাজাকার আছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর বাংলাদেশে যখন স্বাধীনতাযুদ্ধ চলে তখন সে পাকিস্তানিদের চাকরি করত। তাহলে সে কি রাজাকার নয়?
খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার বিধর্মী সরকার। তারা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না। না মুসলিম, না হিন্দু, না বৌদ্ধÑ কোনো কিছুই বিশ্বাস করে না। সে জন্য সবার ওপর হামলা করে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে শুক্রবারে মানুষ নামাজ পড়তে যায়। সেখানে পুলিশ তালা ঝুলিয়ে রেখেছে। এখন সেখানে মুসল্লিরা নামাজ পড়তে পারেন না। শাহবাগী নাস্তিকেরা রাস্তায় নাচানাচি করে। তাদের পাহারা দেয় সরকার। এরপর হিন্দুদের মন্দিরে হামলা করা শুরু করল। ভাঙচুর শুরু করল।
তিনি বলেন, বিশ্বজিৎকে আওয়ামী লীগের লোকেরা হত্যা করেছে। তাদের ধরা হয়নি। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বিশ্বজিৎকে চিকিৎসা দেয়া হয়নি। তার খুনিদের বিচার হয়নি। আওয়ামী লীগের লোক খুন করলে মাফ পেয়ে যায়। আর বিএনপির লোক কিছু না করলেও মামলা দেয়া হয়।
তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে এই সরকার। তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। চৌধুরী আলম, ইব্রাহিম মৃধাকে তারা হত্যা করেছে। এই সরকার মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মারছে। কাজেই আমরা এভাবে মানুষকে মরতে দিতে পারি না।
খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার নির্বাচনের আগে অনেক ওয়াদা দিয়েছিল। ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। কোনো কিছুই করেনি। চাল, ডাল তেল লবণ সব জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এই সরকারের অনেক গুণ আছে। ’৭৪ সালে তারা দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করেছিল। তখন লাখ লাখ লোক না খেয়ে মরেছে। তারা মানুষ মারতে ওস্তাদ। ’৭২-’৭৫ সালে রক্ষীবাহিনী দিয়ে ৪০ হাজার মানুষ হত্যা করেছিল। এবার গত কয়েক দিনে পুলিশ বাহিনী দিয়ে ১৭০ জন মানুষ মেরেছে। সে জন্য তাদের বিচার হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এই সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যায় না। তাই মা-বোন সবাইকে রাস্তায় নেমে আসতে হবে। এই মানিকগঞ্জ হলো বিএনপির ঘাঁটি। আগে কখনো বিএনপি এখানে হারেনি। গত নির্বাচনে হারানো হয়েছে। এই সরকার শুধু টাকাই চুরি করে না, ভোটও চুরি করে। চোরদের পদত্যাগ করতে হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, শহীদ জিয়া বহুবার মানিকগঞ্জে এসেছেন। খাল কেটেছেন। তিনি জনগণের সাথে স্কুলঘরে রাত্রি যাপন করেছেন। ভয় করেননি। শহীদ জিয়াকে কি ভুলে গেছেন? শামসুল ইসলামকে কি ভুলে গেছেন? খোন্দকার দেলোয়ারকে ভুলে গেছেন? মুন্নু সাহেবকে ভুলে গেছেন? তখন জনতা সমস্বরে জবাব দেয়, ‘না’।
তিনি আবারো বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বিধর্মী সরকার। যারা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না। অতীতে এরা কুকুরের মাথায় টুপি এবং দাড়ি লাগিয়ে ধর্মকে অপমান করেছে। এভাবে চলতে পারে না। এরা ক্ষমতায় থাকলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশ আজ মহাকঠিন সঙ্কটে। আমরা হরতাল করলে পুলিশ রাস্তায় নামিয়ে দেয়। আমরা মিছিল করলে পুলিশ বিজিবি হামলা করে। সীমান্তে তারা কিছুই করার সাহস রাখে না। এটা কি কোনো স্বাধীন দেশের সরকার। আপনারা দেখেছেন না, কাঁটাতারের বেড়ায় ফালানীর লাশ ঝুলে ছিল। তারা কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনি।
খালেদা জিয়া আরো বলেন, এ সরকার ৫৮ জন চৌকস অফিসারকে হত্যা করেছে। তার বিচার করেনি। গণহত্যা করেছে। এইসব হত্যার বিচার হবে। এই সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। বিদেশীরাও আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।
তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশের সহযোগিতায় এরা টিকে আছে। আমি তাদেরকে (ভারতকে) বলব, জনগণের সাথে বন্ধুত্ব থাকলে তারা এই খুনিদের সাথে সম্পর্ক না রাখতে। তিনি বলেন, এই সরকার দেশকে বিক্রি করে দিতে চায়। স্বাধীনতাকে অন্যের হাতে তুলে দিতে চায়। এ পর্যায়ে বেগম জিয়া জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, গোলামির শৃঙ্খল না স্বাধীনতার পতাকা? কী নেবেন আপনারা? স্বাধীনতার পতাকা।
খালেদা জিয়া বলেন, আগামী ১৮-১৯ মার্চ দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। ঠিক আছে? আরো হরতাল দেবো। হরতাল, ঘেরাও, অবরোধ যা প্রয়োজন হবে সব দেয়া হবে। এই সরকারকে বিদায় করা হবে।
স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য মইনুল ইসলাম খান শান্তর সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কেন্দ্রীয় নেতা সাদেক হোসেন খোকা, বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মীর সরফত আলী সপু, স্থানীয় নেত্রী আফরোজা খান রীতা প্রমুখ।
এর আগে বেলা আড়াইটায় গাড়িবহর নিয়ে গুলশানের বাসা থেকে সিঙ্গাইরের উদ্দেশে যাত্রা করেন খালেদা জিয়া। আমিনবাজার থেকে সিঙ্গাইর পর্যন্ত রাস্তায় দুই পাশে হাজার হাজার মানুষ ব্যানার ফেস্টুনসহ দাঁড়িয়ে থেকে বেগম জিয়াকে অভিবাদন জানান। গাড়ির ভেতর থেকে হাত নেড়ে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানান খালেদা জিয়া।
No comments