বিলবোর্ড দুর্ঘটনা-কার্যকর বিকল্পের সন্ধানে by এ জেড এম সাইফউদ্দিন
বিলবোর্ড দুর্ঘটনায় ঢাকায় আবারও মানুষের মৃত্যু! এই নগরের জনসংখ্যা বাড়তে বাড়তে কোটি ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। মানুষ বাড়ছে, সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ভবন নির্মাণ। এ ধরনের ক্রমবর্ধমান নগরের একটি সুস্পষ্ট নগর-পরিকল্পনা থাকে, কিন্তু ঢাকা এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। অনেক কিছুই হচ্ছে, কিন্তু পরিকল্পনা বা ভবিষ্যত্ চিন্তা বলে কিছু নেই। নাগরিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা যেমন নেই, তেমনি সৌন্দর্যের বিষয়টিও বিবেচনায় নেই। ঢাকার প্রধান রাস্তার দুপাশের ভবনগুলোর দিকে তাকালে হয়তো মনে হবে, এসব ভবন যেন তৈরি হয়েছে বিলবোর্ড দিয়ে বা বিলবোর্ড লাগানোর জন্য। এগুলোর বেশির ভাগই অপরিকল্পিতভাবে স্থাপন করা হয়েছে। ফলে একদিকে ঢাকার সৌন্দর্যহানি, অন্যদিকে ঝড়-ঝঞ্ঝার মতো যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ১৫ মার্চ কালবৈশাখীর ধাক্কায় বিলবোর্ড ভেঙে এক পথচারীর মৃত্যু আবার নতুন করে জানান দিল যে আমারা যে-কেউ এর শিকারে পরিণত হতে পারি।
অপরিকল্পিত এসব বিলবোর্ডের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বা নগরের সৌন্দর্যহানির বিষয়টি সমস্যার একটি দিক। অন্যদিকে বিজ্ঞাপনশিল্পের অন্যতম এ মাধ্যমটিও হারাচ্ছে কার্যকারিতা। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেখতে পাব যে সেসব দেশে বিলবোর্ড বা এ রকম বিজ্ঞাপনী মাধ্যমগুলো স্থাপনের একটি নিয়মনীতি ও পরিকল্পনা রয়েছে। খেয়ালখুশিমতো কিছু করার কোনো সুযোগ সেসব দেশে নেই। প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরের আনুমানিক আড়াই হাজার বিলবোর্ডের মধ্যে মাত্র ৩০০টির অনুমোদন রয়েছে। বিলবোর্ডের ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়মনীতি না মানার ফলে এ খাতে যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করেও পণ্যগুলো প্রচারণার যথাযথ ফল পাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে এর দায় চলে আসছে বিজ্ঞাপনশিল্পের ওপর।
সারা বিশ্বের বাজার এখন বহুমুখী। আর বাজারের এই বহুমুখিতার সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমগুলো ধীরে ধীরে পৌঁছে যাচ্ছে কার্যকারিতার চূড়ায়। এমনকি বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। একটি পণ্যের সফল বাজারজাতকরণ ও প্রচারণার জন্য আমাদের কত টাকা খরচ করতে হবে? প্রশ্নটা এখন বিশ্বব্যাপী বহুল আলোচিত। সময়টাই এখন পরিবর্তন ও নতুন উদ্ভাবনের। গতানুগতিক বিজ্ঞাপনী মাধ্যমগুলোরও তাই পরিবর্তন, নতুনভাবে উপস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সফল প্রচারণা, বিক্রি বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি ব্র্যান্ড-ভাবনার ক্রমাগত পরিবর্তনে ডিজিটাল প্যানেলস বা ডিজিটাল ইনডোর মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। বিভিন্ন বিপণন কোম্পানির গবেষণা ও দৃষ্টান্ত-জরিপেও এটা প্রমাণিত। এ রকম কিছু গবেষণালব্ধ ফলাফল নিয়ে আলোচনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে। ভৌগোলিক সীমানা অথবা লোকসংখ্যা, যেকোনো বিচারেই ভারতের বাজার পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্। এই বৃহত্ এবং চ্যালেঞ্জিং-ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি স্থানে একটি গবেষণা চালিয়েছে দ্য নেলসন কোম্পানি। মুম্বাই, দিল্লি, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, পুনে ও হায়দরাবাদের ১৭৫টি স্থানে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা ডিজিটাল ডাইনামিক বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দেখেছেন, তাঁদের মধ্যে ৯০ শতাংশ মানুষই সেটা মনে করতে পারেন।
দ্য নেলসন কোম্পানির গণমাধ্যম ও বিনোদন বিভাগের সহযোগী পরিচালক পলল ভট্টাচার্যের মন্তব্য হচ্ছে, ‘এই মাধ্যম সবার থেকেই আলাদা, নতুন ও ক্রমাগত উন্নতি করছে। এ মাধ্যমে যাঁদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন চালানো হয়, তাঁদের হাতে একটি বিজ্ঞাপন দেখার মতো সময় আছে। এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, তাঁরা এ ধরনের ডিজিটাল বিজ্ঞাপন পছন্দ করেন। ফলে এটি এই মাধ্যমের জন্য একটি বাড়তি সুবিধা হিসেবে কাজ করে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, গতানুগতিক কোনো মাধ্যমের পক্ষে এই ডিজিটাল মাধ্যমকে অনুকরণ করা সম্ভব নয়।’
সামাজিক অবকাঠামো, ভোক্তার জীবনপ্রবাহ ও গণমাধ্যমের বহুমুখিতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডিজিটাল ইনডোর বিলবোর্ড আজ ও আগামীকালের জন্য সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করেছে। একজন ভোক্তার সারা দিনের জীবনপ্রবাহের কোনো না কোনো সময়ে ঠিক ঠিকভাবে সঠিক বার্তাটি পৌঁছে দিতে পারে এ মাধ্যম। শুধু তা-ই নয়, এ মাধ্যমের কার্যকারিতা নিয়ে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। এসব গবেষণায় দেখা গেছে, এ মাধ্যম শুধু যে কার্যকরভাবে সঠিক ভোক্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তা-ই নয়, যে-সংখ্যক ভোক্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, সে সংখ্যাটিও অবাক হওয়ার মতো।
আনলিশিং দ্য পাওয়ার অব ডিজিটাল সাইনেজ: কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজিস ফর দ্য ফিফ্থ স্ক্রিন বইয়ের লেখক কিথ কেনসেনের মত হচ্ছে, ‘একটা পর্দা হাই ডেফিনিশন হলে প্রত্যাশিত রঙের ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত দেখা যায়। আর এটি যদি আরও উচ্চ ডেফিনিশন হয়, তাহলে ছবি হয় জীবন্ত ও বাস্তবের মতো। ফলে এটি হয়ে ওঠে আরও মনে রাখার মতো।’ এ ধরনের ছবির ফলে ভোক্তাসাধারণের মধ্যে বাণিজ্যিক সচেতনতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে গতানুগতিক বিলবোর্ডের তুলনায় এটি অনেক বেশি কার্যকর ও সাশ্রয়ী। আমরা যদি প্রতিবার বিজ্ঞাপন দেখাতে খরচের বিষয়টি নিয়েও ভাবি, তাহলেও দেখা যাবে, একমাত্র এই মাধ্যমেই ভোক্তাপ্রতি খরচের হিসাবটা সরাসরি বের করা সম্ভব। এ পর্যন্ত এই মাধ্যমটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর হিসেবেই প্রমাণিত। সর্বোপরি বিজ্ঞাপনে বিনিয়োগ করা অর্থের তুলনায় এর প্রতিদান অনেক বেশি। একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ৯০ শতাংশ ক্রেতার মধ্যে ৭৪ শতাংশ ডিজিটাল বিলবোর্ডে দেখা বিজ্ঞাপনগুলো মনে করতে পারেন।
‘২০০৮ ডিওওএস/প্লেস বেইজড মিডিয়া ক্যাম্পেইন উইথ ব্ল্যাকবেরি’ নিয়ে দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল নেটওয়ার্ক প্রকাশিত এক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, স্থির মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া পণ্যের তুলনায় ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারকারী পণ্যের বিক্রয় ১৮ শতাংশ বেশি। দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল নেটওয়ার্ক-এর ৮০০ অফিস ভবনে এলসিডি স্ক্রিন নিয়ে একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারা ডব্লিইএসজে এবং ডও জোন্সের খবর প্রচার করে। এর বিজ্ঞাপন-ব্যবস্থাপনার কাজ করে ব্লু চিপ মার্কেটিং পার্টনারস। ডব্লিউএসজের এসব স্ক্রিন প্রতিদিন ১.১ মিলিয়ন মানুষ দেখে থাকে।
বাংলাদেশেও বর্তমানে এ ধরনের ইনডোর ডিজিটাল বিলবোর্ডের প্রচলন শুরু হয়েছে। স্থানীয় বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য একটি কার্যকর ও সাশ্রয়ী নতুন মাধ্যমের বিকাশ হতে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও অর্থনৈতিক অধোগতি ব্যবসা, জীবনপ্রবাহ, বিক্রয় ও বিপণন সব ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয়ে মানুষকে অনেক বেশি সচেতন করে তুলেছে। অর্থনীতির এ বিষয়টি বিবেচনা করলে এ নতুন মাধ্যমটি নিঃসন্দেহে দেশের বিজ্ঞাপনশিল্পের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
ঢাকা শহরে যেখানে-সেখানে বিলবোর্ড স্থাপন, শহরের সৌন্দর্য নষ্ট ও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার যে আশঙ্কার মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো ডিজটাল ইনডোর বিলবোর্ডকে একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করার সময় এসেছে।
এ জেড এম সাইফউদ্দিন: একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার প্রধান নির্বাহী।
saif@paperhymebd.com
অপরিকল্পিত এসব বিলবোর্ডের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বা নগরের সৌন্দর্যহানির বিষয়টি সমস্যার একটি দিক। অন্যদিকে বিজ্ঞাপনশিল্পের অন্যতম এ মাধ্যমটিও হারাচ্ছে কার্যকারিতা। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেখতে পাব যে সেসব দেশে বিলবোর্ড বা এ রকম বিজ্ঞাপনী মাধ্যমগুলো স্থাপনের একটি নিয়মনীতি ও পরিকল্পনা রয়েছে। খেয়ালখুশিমতো কিছু করার কোনো সুযোগ সেসব দেশে নেই। প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরের আনুমানিক আড়াই হাজার বিলবোর্ডের মধ্যে মাত্র ৩০০টির অনুমোদন রয়েছে। বিলবোর্ডের ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়মনীতি না মানার ফলে এ খাতে যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করেও পণ্যগুলো প্রচারণার যথাযথ ফল পাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে এর দায় চলে আসছে বিজ্ঞাপনশিল্পের ওপর।
সারা বিশ্বের বাজার এখন বহুমুখী। আর বাজারের এই বহুমুখিতার সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমগুলো ধীরে ধীরে পৌঁছে যাচ্ছে কার্যকারিতার চূড়ায়। এমনকি বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। একটি পণ্যের সফল বাজারজাতকরণ ও প্রচারণার জন্য আমাদের কত টাকা খরচ করতে হবে? প্রশ্নটা এখন বিশ্বব্যাপী বহুল আলোচিত। সময়টাই এখন পরিবর্তন ও নতুন উদ্ভাবনের। গতানুগতিক বিজ্ঞাপনী মাধ্যমগুলোরও তাই পরিবর্তন, নতুনভাবে উপস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সফল প্রচারণা, বিক্রি বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি ব্র্যান্ড-ভাবনার ক্রমাগত পরিবর্তনে ডিজিটাল প্যানেলস বা ডিজিটাল ইনডোর মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। বিভিন্ন বিপণন কোম্পানির গবেষণা ও দৃষ্টান্ত-জরিপেও এটা প্রমাণিত। এ রকম কিছু গবেষণালব্ধ ফলাফল নিয়ে আলোচনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে। ভৌগোলিক সীমানা অথবা লোকসংখ্যা, যেকোনো বিচারেই ভারতের বাজার পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্। এই বৃহত্ এবং চ্যালেঞ্জিং-ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি স্থানে একটি গবেষণা চালিয়েছে দ্য নেলসন কোম্পানি। মুম্বাই, দিল্লি, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, পুনে ও হায়দরাবাদের ১৭৫টি স্থানে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা ডিজিটাল ডাইনামিক বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দেখেছেন, তাঁদের মধ্যে ৯০ শতাংশ মানুষই সেটা মনে করতে পারেন।
দ্য নেলসন কোম্পানির গণমাধ্যম ও বিনোদন বিভাগের সহযোগী পরিচালক পলল ভট্টাচার্যের মন্তব্য হচ্ছে, ‘এই মাধ্যম সবার থেকেই আলাদা, নতুন ও ক্রমাগত উন্নতি করছে। এ মাধ্যমে যাঁদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন চালানো হয়, তাঁদের হাতে একটি বিজ্ঞাপন দেখার মতো সময় আছে। এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, তাঁরা এ ধরনের ডিজিটাল বিজ্ঞাপন পছন্দ করেন। ফলে এটি এই মাধ্যমের জন্য একটি বাড়তি সুবিধা হিসেবে কাজ করে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, গতানুগতিক কোনো মাধ্যমের পক্ষে এই ডিজিটাল মাধ্যমকে অনুকরণ করা সম্ভব নয়।’
সামাজিক অবকাঠামো, ভোক্তার জীবনপ্রবাহ ও গণমাধ্যমের বহুমুখিতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডিজিটাল ইনডোর বিলবোর্ড আজ ও আগামীকালের জন্য সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করেছে। একজন ভোক্তার সারা দিনের জীবনপ্রবাহের কোনো না কোনো সময়ে ঠিক ঠিকভাবে সঠিক বার্তাটি পৌঁছে দিতে পারে এ মাধ্যম। শুধু তা-ই নয়, এ মাধ্যমের কার্যকারিতা নিয়ে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। এসব গবেষণায় দেখা গেছে, এ মাধ্যম শুধু যে কার্যকরভাবে সঠিক ভোক্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তা-ই নয়, যে-সংখ্যক ভোক্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, সে সংখ্যাটিও অবাক হওয়ার মতো।
আনলিশিং দ্য পাওয়ার অব ডিজিটাল সাইনেজ: কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজিস ফর দ্য ফিফ্থ স্ক্রিন বইয়ের লেখক কিথ কেনসেনের মত হচ্ছে, ‘একটা পর্দা হাই ডেফিনিশন হলে প্রত্যাশিত রঙের ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত দেখা যায়। আর এটি যদি আরও উচ্চ ডেফিনিশন হয়, তাহলে ছবি হয় জীবন্ত ও বাস্তবের মতো। ফলে এটি হয়ে ওঠে আরও মনে রাখার মতো।’ এ ধরনের ছবির ফলে ভোক্তাসাধারণের মধ্যে বাণিজ্যিক সচেতনতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে গতানুগতিক বিলবোর্ডের তুলনায় এটি অনেক বেশি কার্যকর ও সাশ্রয়ী। আমরা যদি প্রতিবার বিজ্ঞাপন দেখাতে খরচের বিষয়টি নিয়েও ভাবি, তাহলেও দেখা যাবে, একমাত্র এই মাধ্যমেই ভোক্তাপ্রতি খরচের হিসাবটা সরাসরি বের করা সম্ভব। এ পর্যন্ত এই মাধ্যমটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর হিসেবেই প্রমাণিত। সর্বোপরি বিজ্ঞাপনে বিনিয়োগ করা অর্থের তুলনায় এর প্রতিদান অনেক বেশি। একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ৯০ শতাংশ ক্রেতার মধ্যে ৭৪ শতাংশ ডিজিটাল বিলবোর্ডে দেখা বিজ্ঞাপনগুলো মনে করতে পারেন।
‘২০০৮ ডিওওএস/প্লেস বেইজড মিডিয়া ক্যাম্পেইন উইথ ব্ল্যাকবেরি’ নিয়ে দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল নেটওয়ার্ক প্রকাশিত এক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, স্থির মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া পণ্যের তুলনায় ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারকারী পণ্যের বিক্রয় ১৮ শতাংশ বেশি। দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল নেটওয়ার্ক-এর ৮০০ অফিস ভবনে এলসিডি স্ক্রিন নিয়ে একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারা ডব্লিইএসজে এবং ডও জোন্সের খবর প্রচার করে। এর বিজ্ঞাপন-ব্যবস্থাপনার কাজ করে ব্লু চিপ মার্কেটিং পার্টনারস। ডব্লিউএসজের এসব স্ক্রিন প্রতিদিন ১.১ মিলিয়ন মানুষ দেখে থাকে।
বাংলাদেশেও বর্তমানে এ ধরনের ইনডোর ডিজিটাল বিলবোর্ডের প্রচলন শুরু হয়েছে। স্থানীয় বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য একটি কার্যকর ও সাশ্রয়ী নতুন মাধ্যমের বিকাশ হতে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও অর্থনৈতিক অধোগতি ব্যবসা, জীবনপ্রবাহ, বিক্রয় ও বিপণন সব ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয়ে মানুষকে অনেক বেশি সচেতন করে তুলেছে। অর্থনীতির এ বিষয়টি বিবেচনা করলে এ নতুন মাধ্যমটি নিঃসন্দেহে দেশের বিজ্ঞাপনশিল্পের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
ঢাকা শহরে যেখানে-সেখানে বিলবোর্ড স্থাপন, শহরের সৌন্দর্য নষ্ট ও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার যে আশঙ্কার মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো ডিজটাল ইনডোর বিলবোর্ডকে একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করার সময় এসেছে।
এ জেড এম সাইফউদ্দিন: একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার প্রধান নির্বাহী।
saif@paperhymebd.com
No comments