মাঠের বাইরেই তো বড় গলদ by তারেক মাহমুদ
সিরিজ শেষে বোর্ড সভাপতির রুমে কোচ-অধিনায়কের ডাক পড়াটা এখন নিয়মিত। কাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ টেস্টের পরও জেমি সিডন্স-সাকিব আল হাসান জুটি বেঁধে গেলেন আ হ ম মোস্তফা কামালের রুমে। এই সিরিজে ভালো খেলার জন্য দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সভাপতি। আশ্বাস দিয়েছেন, ভবিষ্যতে যেকোনো প্রয়োজনে দলের জন্য তাঁর সাহায্যের হাত থাকবে প্রসারিত।
এই প্রয়োজন এবং সভাপতির সাহায্য অনেক রকমই হতে পারে। তবে একটু যদি ডানে-বাঁয়ে তাকান, প্রশ্নটা জাগবেই—মাঠের পারফরম্যান্স ভালো করতে বোর্ডের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সব সমর্থনই কি পাচ্ছে বাংলাদেশ দল?
ক্রিকেটে ভালো খেলাটা শুধু মাঠের পারফরম্যান্সের ওপরই নির্ভরশীল নয়। ক্রিকেটে আসলে মাঠের বাইরেও একটা বড় ‘খেলা’ আছে এবং সেই ‘খেলাটা’ খেলতে হয় ক্রিকেট বোর্ডকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সে খেলায় এখনো অনেকটাই পিছিয়ে। বলতে পারেন মাঠে বাংলাদেশ দল যতটাই খেলছে, মাঠের বাইরে বিসিবি তার ধারেকাছেও নেই।
ক্রিকেটারদের নিয়ে কোচ জেমি সিডন্স সকাল-বিকেল মাঠে ঘাম ঝরানো অনুশীলন করলেও ইংল্যান্ড সিরিজের আগে মাঠের বাইরের প্রস্তুতিটা কি ঠিকমতো হয়েছিল? পরিষ্কার ঘাটতি ছিল চিন্তাভাবনা আর পরিকল্পনার জায়গাতে। হোম কন্ডিশনের সুবিধাটাই তো পেল না বাংলাদেশ! ঢাকা-চট্টগ্রাম কোনো টেস্টের উইকেট দেখেই মনে হয়নি সেগুলো বাংলাদেশ দলের শক্তিমত্তা বা দুর্বলতার কথা ভেবে তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের মূল শক্তি স্পিন, স্পিনারদের কথা ভেবেই তাই উইকেট বানানো উচিত। অথচ এই সিরিজের উইকেটে চতুর্থ-পঞ্চম দিনেও বল ঘুরল না! স্বাগতিক দলের নিজস্ব কন্ডিশনের সুবিধা নেওয়ার রীতিটা যেন ভুলেই গেল বাংলাদেশ!
ব্রিটিশ মিডিয়ার কারণে ইংল্যান্ডের পতনে সব সময়ই সবচেয়ে বেশি শব্দ হয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজটা ছিল তাই পুরো বিশ্বকে সচকিত করে তোলার একটা সুবর্ণ সুযোগ। প্রস্তুতির সব ছক সেভাবেই কষতে হতো। কিন্তু চিন্তাভাবনাতেই ঝামেলা থেকে গেলে কি আর সেটা হয়? ইংল্যান্ড সিরিজটা দেশে, অথচ তার আগে বাংলাদেশ সিরিজ খেলল কি না সম্পূর্ণ উল্টো কন্ডিশনের নিউজিল্যান্ডে! ইংল্যান্ড সিরিজের আগে এ রকম একটা সিরিজ খেলার আদৌ কি কোনো দরকার ছিল? নিউজিল্যান্ড সফর আর ইংল্যান্ড সিরিজের সূচিতেও আছে সমন্বয়হীনতা। নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ টেস্ট খেলল সবার শেষে, অথচ ইংল্যান্ড সিরিজে ওয়ানডেটাই আগে। তা ছাড়া নিউজিল্যান্ড সফরের আগে দেশে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। দুই সিরিজের সূচি এমনই ঠাসাঠাসি ছিল যে ভারত সিরিজ যেদিন শেষ, সে রাতেই ক্রিকেটারদের নিউজিল্যান্ডের বিমানে ওঠার কথা (টেস্টটা চার দিনে শেষ হয়েছিল বলে অবশ্য একটা দিন হাতে পেয়েছিলেন খেলোয়াড়েরা)।
সাকিব আল হাসান কাল সংবাদ সম্মেলনে দলে লেগ স্পিনারের অভাবের কথা বললেন। কিন্তু লেগ স্পিনার তো আর এমনি এমনি চলে আসবে না দলে। ক্রিকেটীয় সামর্থ্যের ঘাটতি পূরণে কী করছে বোর্ড? উইকেটকিপার খালেদ মাসুদের পর যে নির্ভরযোগ্য আর কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না, সে দায়ও তাদেরই নিতে হবে। মুশফিকুর রহিমের ঘাড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার গরম নিঃশ্বাস ফেলতে পারে, সে রকম কাউকেই তো উঠিয়ে আনা যাচ্ছে না! এসব প্রশ্নে বোর্ড বা নির্বাচকদের পছন্দের উত্তর, ‘আমাদের তো অপশন নেই।’ ‘অপশন’ কীভাবে তৈরি হবে সেটা কিন্তু কেউই বলেন না।
‘অপশন’ তৈরি হতো যদি জাতীয় দলে আসার পথটা আধুনিক ক্রিকেটের সঙ্গে মানানসই হতো। নির্বাচকেরা ‘প্রসেসের’ কথাও বলেন, যে ‘প্রসেসের’ মূল যন্ত্র জাতীয় ক্রিকেট একাডেমি এখনো চলছে নবিশি চালে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের পাশে একাডেমির জন্য সুরম্য ভবন হয়েছে, এখন পর্যন্ত যে ভবনের ডাইনিংটাই চালু হয়েছে কেবল। চাইলে হয়তো একাডেমির সুসজ্জিত কক্ষে আরামে রাতও কাটানো যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই ভবন এখনো বিসিবির সংবাদ সম্মেলন কক্ষের মাঝেমধ্যেই বিকল হয়ে পড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মতো। অলঙ্কার হয়ে থাকাটাই যার সবচেয়ে বড় ভূমিকা।
শোনা যাচ্ছে, বিসিবির ২৫ সদস্যের পরিচালনা পরিষদের সদস্যসংখ্যা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে নাড়াচাড়া চলছে। বড় অদ্ভুত! বোর্ড পরিচালকের সংখ্যা বাড়লে দেশের ক্রিকেটের কী উন্নতি হবে কে জানে, অথচ সেটার ভাবনাতেও ব্যস্ত ক্রিকেট নীতিনির্ধারকদের মস্তিষ্ক!
সান্ত্বনা এই, যে দেশের মাঠের বাইরের ‘ক্রিকেট’ এখনো এতটা পিছিয়ে, সে দেশের জাতীয় দল ইংল্যান্ডকে টেস্টের পঞ্চম দিন পর্যন্তও চোখ রাঙাতে পারছে। সাকিব আল হাসান আর তাঁর দলকে ধন্যবাদ। ছেঁড়া কাঁথায় শুয়েও তো তাঁরা লাখ টাকার স্বপ্ন দেখাতে পারছেন
এই প্রয়োজন এবং সভাপতির সাহায্য অনেক রকমই হতে পারে। তবে একটু যদি ডানে-বাঁয়ে তাকান, প্রশ্নটা জাগবেই—মাঠের পারফরম্যান্স ভালো করতে বোর্ডের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সব সমর্থনই কি পাচ্ছে বাংলাদেশ দল?
ক্রিকেটে ভালো খেলাটা শুধু মাঠের পারফরম্যান্সের ওপরই নির্ভরশীল নয়। ক্রিকেটে আসলে মাঠের বাইরেও একটা বড় ‘খেলা’ আছে এবং সেই ‘খেলাটা’ খেলতে হয় ক্রিকেট বোর্ডকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সে খেলায় এখনো অনেকটাই পিছিয়ে। বলতে পারেন মাঠে বাংলাদেশ দল যতটাই খেলছে, মাঠের বাইরে বিসিবি তার ধারেকাছেও নেই।
ক্রিকেটারদের নিয়ে কোচ জেমি সিডন্স সকাল-বিকেল মাঠে ঘাম ঝরানো অনুশীলন করলেও ইংল্যান্ড সিরিজের আগে মাঠের বাইরের প্রস্তুতিটা কি ঠিকমতো হয়েছিল? পরিষ্কার ঘাটতি ছিল চিন্তাভাবনা আর পরিকল্পনার জায়গাতে। হোম কন্ডিশনের সুবিধাটাই তো পেল না বাংলাদেশ! ঢাকা-চট্টগ্রাম কোনো টেস্টের উইকেট দেখেই মনে হয়নি সেগুলো বাংলাদেশ দলের শক্তিমত্তা বা দুর্বলতার কথা ভেবে তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের মূল শক্তি স্পিন, স্পিনারদের কথা ভেবেই তাই উইকেট বানানো উচিত। অথচ এই সিরিজের উইকেটে চতুর্থ-পঞ্চম দিনেও বল ঘুরল না! স্বাগতিক দলের নিজস্ব কন্ডিশনের সুবিধা নেওয়ার রীতিটা যেন ভুলেই গেল বাংলাদেশ!
ব্রিটিশ মিডিয়ার কারণে ইংল্যান্ডের পতনে সব সময়ই সবচেয়ে বেশি শব্দ হয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজটা ছিল তাই পুরো বিশ্বকে সচকিত করে তোলার একটা সুবর্ণ সুযোগ। প্রস্তুতির সব ছক সেভাবেই কষতে হতো। কিন্তু চিন্তাভাবনাতেই ঝামেলা থেকে গেলে কি আর সেটা হয়? ইংল্যান্ড সিরিজটা দেশে, অথচ তার আগে বাংলাদেশ সিরিজ খেলল কি না সম্পূর্ণ উল্টো কন্ডিশনের নিউজিল্যান্ডে! ইংল্যান্ড সিরিজের আগে এ রকম একটা সিরিজ খেলার আদৌ কি কোনো দরকার ছিল? নিউজিল্যান্ড সফর আর ইংল্যান্ড সিরিজের সূচিতেও আছে সমন্বয়হীনতা। নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ টেস্ট খেলল সবার শেষে, অথচ ইংল্যান্ড সিরিজে ওয়ানডেটাই আগে। তা ছাড়া নিউজিল্যান্ড সফরের আগে দেশে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। দুই সিরিজের সূচি এমনই ঠাসাঠাসি ছিল যে ভারত সিরিজ যেদিন শেষ, সে রাতেই ক্রিকেটারদের নিউজিল্যান্ডের বিমানে ওঠার কথা (টেস্টটা চার দিনে শেষ হয়েছিল বলে অবশ্য একটা দিন হাতে পেয়েছিলেন খেলোয়াড়েরা)।
সাকিব আল হাসান কাল সংবাদ সম্মেলনে দলে লেগ স্পিনারের অভাবের কথা বললেন। কিন্তু লেগ স্পিনার তো আর এমনি এমনি চলে আসবে না দলে। ক্রিকেটীয় সামর্থ্যের ঘাটতি পূরণে কী করছে বোর্ড? উইকেটকিপার খালেদ মাসুদের পর যে নির্ভরযোগ্য আর কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না, সে দায়ও তাদেরই নিতে হবে। মুশফিকুর রহিমের ঘাড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার গরম নিঃশ্বাস ফেলতে পারে, সে রকম কাউকেই তো উঠিয়ে আনা যাচ্ছে না! এসব প্রশ্নে বোর্ড বা নির্বাচকদের পছন্দের উত্তর, ‘আমাদের তো অপশন নেই।’ ‘অপশন’ কীভাবে তৈরি হবে সেটা কিন্তু কেউই বলেন না।
‘অপশন’ তৈরি হতো যদি জাতীয় দলে আসার পথটা আধুনিক ক্রিকেটের সঙ্গে মানানসই হতো। নির্বাচকেরা ‘প্রসেসের’ কথাও বলেন, যে ‘প্রসেসের’ মূল যন্ত্র জাতীয় ক্রিকেট একাডেমি এখনো চলছে নবিশি চালে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের পাশে একাডেমির জন্য সুরম্য ভবন হয়েছে, এখন পর্যন্ত যে ভবনের ডাইনিংটাই চালু হয়েছে কেবল। চাইলে হয়তো একাডেমির সুসজ্জিত কক্ষে আরামে রাতও কাটানো যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই ভবন এখনো বিসিবির সংবাদ সম্মেলন কক্ষের মাঝেমধ্যেই বিকল হয়ে পড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মতো। অলঙ্কার হয়ে থাকাটাই যার সবচেয়ে বড় ভূমিকা।
শোনা যাচ্ছে, বিসিবির ২৫ সদস্যের পরিচালনা পরিষদের সদস্যসংখ্যা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে নাড়াচাড়া চলছে। বড় অদ্ভুত! বোর্ড পরিচালকের সংখ্যা বাড়লে দেশের ক্রিকেটের কী উন্নতি হবে কে জানে, অথচ সেটার ভাবনাতেও ব্যস্ত ক্রিকেট নীতিনির্ধারকদের মস্তিষ্ক!
সান্ত্বনা এই, যে দেশের মাঠের বাইরের ‘ক্রিকেট’ এখনো এতটা পিছিয়ে, সে দেশের জাতীয় দল ইংল্যান্ডকে টেস্টের পঞ্চম দিন পর্যন্তও চোখ রাঙাতে পারছে। সাকিব আল হাসান আর তাঁর দলকে ধন্যবাদ। ছেঁড়া কাঁথায় শুয়েও তো তাঁরা লাখ টাকার স্বপ্ন দেখাতে পারছেন
No comments