মিয়ানমারে পরমাণুকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলেন পুতিন!
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং রাশিয়া সফরে গিয়ে মঙ্গলবার রাতে ক্রেমলিনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। পুতিনের জন্য উপহার হিসেবে ছ’টি হাতি নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি! জান্তা সরকারের এই উদ্যোগকে ‘হাতি কূটনীতি’ বলে চিহ্নিত করেছে পশ্চিম দুনিয়া। ওই বৈঠকেই মিয়ানমারে ছোট মাপের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য দুই দেশের প্রাথমিক চুক্তি হয়েছে। তাদের আলোচনার পরে, উভয় নেতাই গণমাধ্যমে যৌথ বিবৃতি দেন। সেই সময় রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট এই তথ্য সামনে আনেন। রাশিয়া মিয়ানমারকে সমর্থন করে আসছে, বিশেষ করে শিল্প ও অর্থনৈতিক খাতে এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির উন্নতিতেও সমর্থন জানিয়েছে।
যৌথ বিবৃতিতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী সহযোগিতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। গত বছর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। উভয় দেশই পারস্পরিক বাণিজ্যকে আরও জোরদার করতে প্রস্তুত এবং ঋণ ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। এমনটাই গণমাধ্যকে জানিয়েছেন পুতিন। গত দেড় বছরের গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহী জোটের হাতে দেশের অর্ধেকের বেশি অংশ হারিয়েছে জান্তা। কিন্তু জানুয়ারিতে বিদ্রোহী জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’-এর দ্বিতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ) চীনের মধ্যস্থতার শান্তিচুক্তি করায় হ্লাইং সরকার কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে।
মিয়ানমার প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, ‘আমাদের আন্তঃসরকারি সহযোগিতা কমিশন সক্রিয়ভাবে একসঙ্গে কাজ করছে। সম্প্রতি, নেপিটাওতে একটি বাণিজ্য কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আমরা জ্বালানি খাতে সহযোগিতা করছি এবং কৌশলগত সহযোগিতার পরিকল্পনা করছি। আমরা অন্যান্য ক্ষেত্রেও আমাদের সহযোগিতা প্রসারিত করতে প্রস্তুত বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পদের অগ্রগতিতে এবং মিয়ানমারে একটি ছোট আকারের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সম্মত হয়েছি। এটি মিয়ানমারের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। মিয়ানমারে নির্মাণ সংক্রান্ত বেশ কিছু চুক্তি হয়েছে, যা দেশে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াবে। আমরা শিল্প ও উচ্চ প্রযুক্তি খাতে যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।’
উপরন্তু, রাশিয়ার সহায়তায় মিয়ানমারে স্যাটেলাইট তথ্যের জন্য একটি ডেটা বিশ্লেষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। উভয় দেশ সাংস্কৃতিক ও মানবিক ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করার অঙ্গীকার করেছে। মিয়ানমারে একটি রাশিয়ান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং ইয়াঙ্গুনে প্রথম রাশিয়ান অর্থোডক্স খ্রিস্টান গির্জা নির্মিত হবে। একইভাবে, রাশিয়ায় মিয়ানমারের সংস্কৃতি ও বৌদ্ধ ধর্মের দু’টি কেন্দ্র রয়েছে, যেমনটি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেছেন যে, বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক ইস্যুতে রাশিয়া ও মিয়ানমার একই অবস্থানে রয়েছে। তারা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে একসঙ্গে কাজ করছে এবং নিরাপত্তা খাতে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছে। এসএসি চেয়ারম্যানের এই বছরের সফরে দুই সরকারের মধ্যে দশটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক বিনিময় হয়েছে।
নথিগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিপ্লোমা এবং একাডেমিক ডিগ্রির স্বীকৃতি সংক্রান্ত একটি আন্তঃসরকারি চুক্তি, সেইসঙ্গে মিয়ানমারে একটি ছোট-ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মৌলিক নীতিগুলোর ওপর একটি স্মারকলিপি। পারমাণবিক এবং বিকিরণ সুরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতার একটি স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছিল। দুই দেশ শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ক্রীড়া ও মহাকাশের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমঝোতা স্মারক সম্পর্কেও একটি চুক্তি করেছে। সূত্র: এশিয়া নিউজ
No comments