ব্যবহারে অনীহা: ফুটওভার ব্রিজে আতঙ্ক by আফজাল হোসেন
শুধু পরিবাগ নয়। রাজধানীর অনেক ফুটওভার ব্রিজই নগরবাসীর কাছে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। দিনে দুপুরে ছিনতাই, মাদকসেবনকারীদের আড্ডা। আর রাত হলেই হিজড়া ও পতিতাদের দখলে চলে যায়।
সরজমিন দেখা গেছে, অনেক পথচারী নিরাপত্তাহীনতার কারণে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়িগুলোর অতিরিক্ত উচ্চতা এবং চলন্ত সিঁড়ি না থাকায় ব্যবহারে উৎসাহ নেই মানুষের। পথচারীরা বলছেন, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের চেয়ে হেঁটে সড়ক পারাপারে সময় কম লাগে। প্রতিটি ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়ি অতিরিক্ত খাড়া এতে উঠতে গিয়ে বয়স্ক ও অসুস্থরা অল্পতে হাঁপিয়ে ওঠেন। অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। চলন্ত সিঁড়ির ব্যবস্থা এবং সিঁড়ি ঢালু হলে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের আগ্রহ বাড়বে বলেও মনে করেন সাধারণ পথচারীরা।
সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে নির্মাণ করা হয়েছে ওভারব্রিজ ও আন্ডার পাস। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই মানুষ রাস্তা পার হচ্ছেন। এতে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় অনেক দুর্ঘটনা।
৫ই ফেব্রুয়ারি, বুধবার বিকাল ৪টা। ফার্মগেটের এসআরএইচ টাওয়ারের সামনে ফুটওভার ব্রিজে প্রকাশ্যে ড্যান্ডি সেবন করছেন এক ভবঘুরে। ব্রিজের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আফসানা। মাদকসেবনকারী ওই ভবঘুরে ব্যক্তি তার গায়ে হাত দেন। ভয়ে মুহূর্তেই চিৎকার দিয়ে ওঠেন আফসানা। সঙ্গে সহপাঠী থাকায় খানিকটা ভরসা পান এই নারী। পাশাপাশি চটজলদি নিরাপদে ফুটওভার ব্রিজ থেকে নিচে আসতে পারেন আফসানা।
নিউমার্কেটের ফুটওভার ব্রিজ একবারেই ফাঁকা নেই পথচারীদের চলাচলে। ব্রিজটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ভিজিটিং কার্ড। ফুটওভার ব্রিজটির নিচ দিয়ে পথচারীরা ডিভাইডারগুলোর ভাঙা অংশ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের টিম লিডার মনির হোসেন বলেন, সিঁড়ি গুলো খুব উঁচু হওয়ায় নাগরিকরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করেন না, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের চেয়ে হেঁটে সড়ক পারাপারে সময় কম লাগে। এ ছাড়া রাতের বেলায় এখানে মাদকসেবনকারী, ছিনতাইকারী এবং পতিতাদের উপস্থিতি বেশি থাকে। অনেক সময় ছিনতাইকারীরা সুযোগ বুঝে পথচারীদের মূল্যবান জিনিসপত্র কেড়ে নেয়। নিরাপত্তার কারণে নাগরিকরা সন্ধ্যার পর এই ফুটওভার ব্রিজটি ব্যবহার করতে চায় না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শাঁখারী বাজার মোড়ের ফুটওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে ছেলেকে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন নাসিমা আক্তার। তিনি বলেন, ফুটওভার ব্রিজটি অনেক উঁচু। উঠতে উঠতে দম বন্ধ হয়ে যায়। এ রাস্তাটি কম চওড়া গাড়িগুলো বেশি গতিতে চলে না সব সময় সদরঘাটের এই রাস্তাটিতে জ্যাম লেগে থাকে তাই রাস্তা পারাপারে কোনো সমস্যা হয় না। এ ছাড়া এই ফুটওভার ব্রিজে দিনের বেলায় ভবঘুরেরা থাকে। সন্ধ্যা হলে এখানে উঠতে ভয় লাগে। সন্ধ্যার পর এখানে নেশা করে অনেক সময় ছিনতাইকারীরা সুযোগ বুঝে ছিনতাই করে, তাই অনেকে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে চায় না।
ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী সাকিল বলেন, ব্রিজটি অনেক উঁচু আর এ রাস্তাটি কম চওড়া হওয়ায় পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে চায় না। এ ছাড়া সন্ধ্যার পর এখানে নেশাখোররা এসে আস্তানা গাড়ে, পতিতারা আসে এখানে।
তাঁতীবাজার মোড় সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে রাস্তা পার হন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তারেক হোসেন। কেন ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়িগুলো অনেক উঁচু। উঠতে উঠতে পা ব্যথা হয়ে যায়। এ ছাড়া রাস্তাটিও বেশি চওড়া নয় কয়েক সেকেন্ডে রাস্তা পার হওয়া যায়। এখানে সবসময় জ্যাম লেগে থাকে। গাড়িগুলো বেশি গতিতে চলাচল করে না তাই কেউ ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করে না।
যানবাহন চলাচলে সবসময় সরগরম থাকে মৎস্য ভবন মোড়। এই মোড়ে রয়েছে একটি ফুটওভার ব্রিজ, ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও পথচারীরা ব্রিজটি দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে না। এই ব্রিজ ব্যবহার করা শারমিন আক্তার বলেন, এই ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে হাঁটতেই খুব ভয় লাগে। সবসময় ভবঘুরেরা এখানে থাকে বিশেষ করে মহিলারা সন্ধ্যার পরে এই ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে চলাচল করে না।
No comments