সিকিমের অকথিত কাহিনী by কে পি ফ্যাবিয়ান
লেখক
জি বি এস সিধু সত্য কথা ও তা প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বর্তমান
সময়ে এটি একটি বিরল কৃতিত্ব। কারণ বর্তমান এস্টাবলিশমেন্টের স্বার্থ থাকায়
এখন ইতিহাসের পুনঃলিখন ভারতে বেশ বিকশিত শিল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বলা
হয়ে থাকে, সর্বশক্তিমানের চেয়েও শক্তিধর ইতিহাসবিদ। সর্বশক্তিমান অতীতকে
বদলাতে পারেন না, কিন্তু ইতিহাসবিদ পারেন, যদি তিনি সততার সাথে কাজ করতে
পারেন। সিধু খুবই সৎ থেকেছেন, যা ঘটেছে, সে সম্পর্কে প্রায় পুরো সত্য
আমাদেরকে বলেছেন।
রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস (র) নামের গোয়েন্দা সংস্থাটির সিকিম অফিসের প্রধান ছিলেন তিনি। অন্যান্য দেশ সাদাকে সাদাই বলে। জার্মানির সংস্থাটির নাম ফেডারেল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, রাশিয়ারটিকে বলা হয় ফরেন ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি। ১৯৬৮ সালে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) থেকে সংস্থাটি আলাদা হয়েছিল। সিধু ১৯৭৩ সালে গ্যাংটকে গিয়েছিলেন, ১৯৭৫ সালে একীভূত হওয়ার পর ফেরেন। র-এর কিংবদন্তিপ্রতীম প্রধান আর এন কাওয়ের নিখুঁত ছকের তিনি ছিলেন প্রধান কুশীলব। আর কাজটি করেছেন পররাষ্ট্রসচিব কেওয়াল সিংয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায়। কাজটি শুরু করা ছিল প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সিদ্ধান্ত।
বইটির সূচনা মনোমুগ্ধকর। ১৯৭৭ সালে কাও ত্যাগ করেন র। তিনি ১৯৮৮ সালে সিকিমের একীভূত হওয়া নিয়ে একটি বই লিখতে সিধুকে অনুরোধ করেন। সিধু তখন ছিলেন র-এর সদরদফতরের যুগ্ম সচিব। কাও তাকে বলেন যে সংস্থাটি ৫ বছরে দুটি বড় ধরনের অভিযান (একটি বাংলাদেশে অপরটি সিকিমে) চালিয়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক কিছু লেখা হলেও সিকিম যবনিকার অন্তরালেই রয়ে গেছে। সিধু ও তার বস পি এন ব্যানার্জিসহ (কলকাতাভিত্তিক) মাত্র তিন থেকে চারজন এ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। ব্যানার্জি ১৯৭৪ সালে পরলোকগমন করেন। কাও এমনকি তার ডেপুটি ও পরে তার উত্তরসূরী হওয়া কে সনকরন নাইয়ারকে পর্যন্ত অন্ধ রেখেছিলেন। কাওকে সিধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি অবসরগ্রহণের পর বইটি লিখবেন। ১৯৯৮ সালে তিনি অবসরগ্রহণ করেন। তবে পারিবারিক কিছু বিষয়ে তাকে মনোযোগ দিতে হয়েছিল। তার স্ত্রী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্মরণ সিংয়ের মেয়ে ইকবাল অসুস্থ হয়ে পড়েন। লিওমিসারকোমায় আক্রান্ত ইকবাল ২০১৭ সালে পরলোকগমন করেন। সিধু ২০১৭ সালে তার বইটি লেখা শুরু করেন। এর মাধ্যমে ২০ বছর আগে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের কাজ শুরু করেন।
সৌভাগ্যবশত, সিধু বেশ ভালো একটি ডায়েরি রাখতেন। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নেহরু মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরির সাথে প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি ওই সময়ে থাকা প্রখ্যাত কর্মকর্তাদের সাথেও যোগাযোগ করেন। তিনি ইগোকেন্দ্রিক প্রলোভন দমন করতে সক্ষম হন। তিনি অন্যদের ভূমিকা লিপিবদ্ধ করার দিকে বেশ যত্নবান হন।
এতে মোট অধ্যায় আছে ১৪টি। পাঠকেরা এখানে ওই সময় সিকিম শাসনকারী নামগিয়াল রাজবংশ ও ভারতে ব্রিটিশ সরকারের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে চুম্বক অংশ তুলে ধরেছেন। ১৯৪৭ সালে সর্দার প্যাটেল ও বি এন রাওসহ (সাংবিধানিক পরিষদে সাংবিধানিক উপদেষ্টা) অনেকেই সিকিমসহ রাজাশাসিত রাজ্যগুলোকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আদর্শবাদ, সর্বএশিয়া ভিশন, এই অঞ্চলের প্রতি চীনা উদ্বেগের মতো বিষয়গুলোর কারণে সিকিমকে বিশেষ ইস্যু হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। নেহরুর মনোভাবই জয়ী হয়েছিল। গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রতিরোধ করার সময় চোগিয়ালকে সমর্থন করে ভারত।
ইন্দিরা গান্ধী তার বাবার কাছে কখনো কারণ জানতে চাননি। তবে তিনি তার ঘনিষ্ঠ সহকারী পি এন ধরকে বলেন, নেহরু সম্ভবত এমন কিছু করতে চাননি যাতে করে চীন ক্ষুব্ধ হয়। তিনি আশা করেছিলেন যে ভারত যদি সিকিমকে একীভূত না করে, তবে তিব্বতের স্বায়ত্তশাসনের প্রতি চীন শ্রদ্ধা পোষণ করবে। ইন্দিরা নিজে পুরোপুরি প্যাটেলের মনোভাবের সাথে একমত ছিলেন। ঘটনাক্রমে ১৯৪৭ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের ১৫ দিন পর সিকিম ১৮৩৫ সালে ছেড়ে দেয়া দার্জিলিং ফিরে পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল।
স্থিতিবস্থার চুক্তি
স্বাভাবিকভাবেই সিকিমের শাসক নেহরুর প্রতি খুশি ছিলেন এই কারণে যে তিনি সফলভাবে ভারতের সাথে সিকিমের একীভূত করার সব পদক্ষেপ ভণ্ডুল করে দিয়েছেন। তবে তাশি শেরিংয়ের নেতৃত্বাধীন সিকিম স্টেট কংগ্রেস ও অপর দুটি রাজনৈতিক দল চেয়েছিল সিকিমে গণতন্ত্র ও ভারতের সাথে একীভূত হওয়া। ভারত সরকার লোকরঞ্জক দাবি অগ্রাহ্য করার সিদ্ধান্ত নিয়ে চোগিয়ালকে তার ক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ দেয়। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে নয়া দিল্লি সিকিমের সাথে স্থিতিবস্থা চুক্তিতে সই করে। পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষাসহ ১১টি বিষয় এতে স্থান পায়। পরে ১৯৫০ নতুন চুক্তি হয়।
শেরিং মারা যান ১৯৫৪ সালে। তার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যায়। দলের প্রধান হিসেবে তার উত্তরসূরী হন লেন্দুপ দর্জি কাজি। তিনি চোগিয়াল শাসনের বদলে সিকিমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও ভারতের সাথে একীভূত হওয়ার জন্য জনমত সংগঠিত করেন। তিনি না থাকলে একীভূত প্রক্রিয়াটি এত সাবলীলভাবে হতো না।
১৯৬৭ সাল থেকে চোগিয়াল ১৯৫০ সালের চুক্তিটি নতুন করে লিখতে আহ্বান জানাতে থাকেন। চুক্তির অধীনে সিকিম ছিল প্রটেক্টরেট বা করদ রাজ্য। চোগিয়ালের প্রধান দাবি ছিল, সিকিমের মর্যাদা ভুটানের সমান হওয়া উচিত। মনে হচ্ছে, তিনি নেহরুর কাছে প্রশ্নটি উত্থাপন করতে চাইছিলেন না। তিনি চেয়েছিলেন, বিষয়টি ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। তিনি পাশ্চাত্যে সিকিমের মর্যাদা বাড়ানোর পথ তৈরি করছিলেন। তিনি ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বরে দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেন। ওই সময় বিদেশ থেকে ফিরে এসেছিলেন টি এন কাউল। তিনি সিকিমবিষয়ক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কাউল পরে পররাষ্ট্র সচিব হয়েছিলেন।
চোগিয়ালের উচ্চাভিলাষের প্রতি কাউল সহানুভূতিসম্পন্ন ছিলেন। ১৯৭০ সাল নাগাদ পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে কাউল ‘স্থায়ী একত্রীকরণের’ জন্য সিকিমকে প্রস্তাব দেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেনাপ্রধান জেনারেল স্যাম মানেকশ ছাড়া আর কেউ কোনো কথা বলেননি। তিনি বলেছিলেন, আপনারা যা ইচ্ছা বলুন। আমি দাবি করব সিকিমে যেকোনো স্থানে সৈন্য মোতায়েন ও অভিযান চালানোর পূর্ণ স্বাধীনতা। ভারত ও চীনের মধ্যকার চলমান দোকলাম সঙ্কটের সময় তার ওই কথাগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করা গেছে।
সিকিমে র-এর একটি দায়িত্ব ছিল তিব্বতে চীনা কার্যক্রমের ওপর নজরদারি করা ও চোগিয়ালকে অবহিত করা। চোগিয়ালকে নিয়মিত তা ব্রিফ করতেন সিধু। কিন্তু চোগিয়াল বুঝতেই পারেননি যে সিধু আসলে তার শাসন ধ্বংস করতে, সিকিমের ভারতের সাথে একীভূত করার কাজই ত্বরান্বিত করছেন। তিনি বিচক্ষণতার সাথে কাজটি সম্পন্ন করেন। ভারত এ ধরনের দক্ষতা ও সাবলীলভাবে অন্য কোনো দেশে অভিযান চালাতে পারেনি। সিধু ১৯৭৬ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে ইন্ডিয়ান পুলিশ মেডেল লাভ করেন। সিধু দেখিয়েছেন, সিকিমকে ভারত দখল করেনি, বরং সিকিমের জনগণের আন্তরিক ইচ্ছার প্রতি সাড়া দিয়েছে মাত্র।
স্পেশাল ডিউটি অফিসের অফিসার (ওএসডি) ছিলেন পলিটিক্যাল অফিসারের থেকে আলাদা। এটি ছিল দারুণ ব্যবস্থা। ওএসডি সহকারীরা গ্যাংটক যখন মোটামুটিভাবে ঘুমিয়ে থাকত, তখন তাদের রাজনৈতিক যোগাযোগ করতেন।
পিও ছাড়াও ভারত থেকে যাওয়া প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন প্রশাসনের দায়িত্বে। সিধুকে কাও বলে দিয়েছিলেন, তিনি যেন চীন ও তিব্বত সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য সিইওকে না জানান। কারণ তাতে করে চোগিয়াল কিছু আভাস পেয়ে যেতে পারতেন। ওই সময় সিইও বি এস দাস তার বই দি সিকিম সাগায় অভিযোগ করেছিলেন যে ভারতীয় গোয়েন্দারা তাকে কিছুই জানায়নি।
র-এর অফিসের উত্তরে থাকা আইবি অফিস সিকিমের ব্যাপারে সক্রিয় থাকে। সংস্থাটি চোগিয়াল ও তার এজেন্টদের ওপর নজর রাখতে থাকে। চোগিয়াল বা তার রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বোন কো কো লা কখনোই সিধুর কার্যক্রমের ফলে গণতন্ত্রীপন্থীরা উৎসাহিত হচ্ছে বলে ভারতের কাছে অভিযোগ করেনি। তবে তারা আইবির তৎপরতা নিয়ে ভারত সরকারের কাছে অভিযোগ করেছেন।
সিধু কিভাবে এই জটিল মিশনটি সম্পন্ন করেছিলেন, সে ব্যাপারে নজর দেয়া যাক। সাধারণভাবে ক্লায়েন্টদেরকে টাকা দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার যে প্রথা প্রচলিত ছিল, সিধুরা কিন্তু তা করেননি। কাজটি হয়েছিল গণতন্ত্রপন্থী শক্তিগুলোর সাথে র-এর যোগসাজশের মাধ্যমে। গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো যাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পায়, তা নিশ্চিত করেছে র।
জটিল মিশন
সিধু নিজেকে ভারত থেকে পাঠানো কাজির রাজনৈতিক সহকারী বিবেচনা করতেন। এটি সত্য যে সিধুর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে কিছু অর্থ দিয়েছিল ভারত। তবে নিজের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন তথা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ধ্বংস করাসহ অন্যান্য কাজে চোগিয়াল যে পরিমাণ অর্থ ভারতের কাছ থেকে পেতেন, সে তুলনায় তা ছিল খুবই কম। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রাসাদ মেরামতের জন্য চোগিয়াল ২০ লাখ রুপি গ্রহণ করেন। এরপর তিনি আরো ৩৫ লাখ রুপি দাবি করেন। তবে সিইও প্রাসাদে গিয়ে দেখেন যে মেরামতের কোনো কাজই করা হয়নি। সিধু বুঝতে পারেন যে চোগিয়াল পুরো অর্থ অন্য কাজে ব্যয় করেছেন।
সিধুর মিশন শুরু করার আগে চোগিয়াল ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পড়েন। ফলে তাকে রাজনৈতিক কর্মকর্তা কে এস বাজপাইয়ের প্রণীত একটি চিঠিতে সই করতে বাধ্য হতে হয়। এতে পিওকে প্রশাসন গ্রহণ করতে বলা হয়। বি এস দাসকে প্রধান প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়। ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে দিল্লি ত্যাগ করার সময় তাকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে উৎসাহিত করতে বলা হয়, তবে ভারতের সাথে একীভূত করার মিশন সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ১৯৭৩ সালের মে মাসে কেওয়াল সিং সিকিমে গিয়ে আইন পরিষদের নির্বাচন দিতে চোগিয়ালকে রাজি করান।
তারপর ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে কলকাতায় গিয়ে সিধু সাত দফার কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করেন পি এন ব্যানার্জির সাথে পরামর্শ করে। লক্ষ্য ছিল চোগিয়ালকে নিঃসঙ্গ করা, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে জোরদার করা, গণদাবির মুখে একীভূত করার পরিবেশ সৃষ্টি করা। নির্বাচন হয় ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে। সিধু খুবই খুশি হন এটা জেনে যে কাজির দল ৩২টি আসনের মধ্যে ৩১টি পেয়েছে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, কাজির রাজনৈতিক সহকারী পর্দার অন্তরালে কাজ করেছিলেন। ১৯৭৪ সালের মে মাসে পরিষদ ইন্দো-সিকিম সম্পর্ককে আরো জোরদার করা এবং ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সিকিমের অংশগ্রহণ করার পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানায়। অর্থাৎ পরিষদ একীভূত হওয়ার আহ্বান জানায়। চোগিয়াল এটি প্রতিরোধ করেন। সিকিম ‘সহযোগী রাষ্ট্রে’ পরিণত হয়। ১৯৭৫ সালের এপ্রিলে গণভোট হয়। এতে ৯৭ ভাগ ভোটার একীভূত হওয়ার পক্ষে ভোট দেয়। একীভূত হওয়ার কাজটি হয় ১৯৭৫ সালের মে মাসে।
শেষ অধ্যায়ে সিধু জানান কিভাবে একটি সফল অভিযানের পরবর্তী কাজগুলো করার সময় তালগোল পাকিয়ে সেগুলো করতে ব্যর্থ হয়েছিল ভারত। সিধু ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাংটক ত্যাগ করেন। কে এস বাজপাই ও বি এস দাস ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে ফিরে যান। ইন্দিরা গান্ধী তার দলে যোগ দিতে কাজিকে চাপ দেন, তিনি রাজি হন। ১৯৭৬ সালে ইন্দিরা গান্ধী আইবির পরামর্শের বিপরীতে কাজির বিরোধী হিসেবে পরিচিত সঞ্চয় গান্ধীকে যুব কংগ্রেসের প্রধান করেন। ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে হেরে যান। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী মরারজি দেসাই চেয়েছিলেন কাজি তার দলে যোগ দিক। ১৯৭৮ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রী দেসাই ঘোষণা করেন যে একীভূত করাটা ছিল একটি ভুল, তবে তা সংশোধন করা যাবে না। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে কাজির দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ১৯৯৫ সালের মে মাসে একীভূত হওয়ার ২০তম বার্ষিকীতে কাজি এক বিবৃতিতে একীভূত বাতিল করার আহ্বান জানান। ২০০২ সালে কাজি ৯৮ বছর বয়সে পদ্মভূষণ লাভ করেন। ৫ বছর পর তিনি মারা যান। ভারত তার সাথে আরো ভালো আচরণ করতে পারত।
সিধুর উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণকারী কে পি বাজপাই, বি এস দাস ছিলেন ক্ষীণদৃষ্টির অধিকারী। তাদের ভুলে নানা অব্যবস্থাপনা ঘটে।
বইটি খুবই মূল্যবান, সাধারণ পাঠকের পাশাপাশি কূটনীতি ও গুপ্তচর বৃত্তির ছাত্রদের জন্যও খুবই উপযোগী।
লেখক: গ্রন্থকার, ডিপ্লোমেসি: ইন্ডিয়ান স্টাইল
রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস (র) নামের গোয়েন্দা সংস্থাটির সিকিম অফিসের প্রধান ছিলেন তিনি। অন্যান্য দেশ সাদাকে সাদাই বলে। জার্মানির সংস্থাটির নাম ফেডারেল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, রাশিয়ারটিকে বলা হয় ফরেন ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি। ১৯৬৮ সালে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) থেকে সংস্থাটি আলাদা হয়েছিল। সিধু ১৯৭৩ সালে গ্যাংটকে গিয়েছিলেন, ১৯৭৫ সালে একীভূত হওয়ার পর ফেরেন। র-এর কিংবদন্তিপ্রতীম প্রধান আর এন কাওয়ের নিখুঁত ছকের তিনি ছিলেন প্রধান কুশীলব। আর কাজটি করেছেন পররাষ্ট্রসচিব কেওয়াল সিংয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায়। কাজটি শুরু করা ছিল প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সিদ্ধান্ত।
বইটির সূচনা মনোমুগ্ধকর। ১৯৭৭ সালে কাও ত্যাগ করেন র। তিনি ১৯৮৮ সালে সিকিমের একীভূত হওয়া নিয়ে একটি বই লিখতে সিধুকে অনুরোধ করেন। সিধু তখন ছিলেন র-এর সদরদফতরের যুগ্ম সচিব। কাও তাকে বলেন যে সংস্থাটি ৫ বছরে দুটি বড় ধরনের অভিযান (একটি বাংলাদেশে অপরটি সিকিমে) চালিয়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক কিছু লেখা হলেও সিকিম যবনিকার অন্তরালেই রয়ে গেছে। সিধু ও তার বস পি এন ব্যানার্জিসহ (কলকাতাভিত্তিক) মাত্র তিন থেকে চারজন এ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। ব্যানার্জি ১৯৭৪ সালে পরলোকগমন করেন। কাও এমনকি তার ডেপুটি ও পরে তার উত্তরসূরী হওয়া কে সনকরন নাইয়ারকে পর্যন্ত অন্ধ রেখেছিলেন। কাওকে সিধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি অবসরগ্রহণের পর বইটি লিখবেন। ১৯৯৮ সালে তিনি অবসরগ্রহণ করেন। তবে পারিবারিক কিছু বিষয়ে তাকে মনোযোগ দিতে হয়েছিল। তার স্ত্রী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্মরণ সিংয়ের মেয়ে ইকবাল অসুস্থ হয়ে পড়েন। লিওমিসারকোমায় আক্রান্ত ইকবাল ২০১৭ সালে পরলোকগমন করেন। সিধু ২০১৭ সালে তার বইটি লেখা শুরু করেন। এর মাধ্যমে ২০ বছর আগে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের কাজ শুরু করেন।
সৌভাগ্যবশত, সিধু বেশ ভালো একটি ডায়েরি রাখতেন। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নেহরু মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরির সাথে প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি ওই সময়ে থাকা প্রখ্যাত কর্মকর্তাদের সাথেও যোগাযোগ করেন। তিনি ইগোকেন্দ্রিক প্রলোভন দমন করতে সক্ষম হন। তিনি অন্যদের ভূমিকা লিপিবদ্ধ করার দিকে বেশ যত্নবান হন।
এতে মোট অধ্যায় আছে ১৪টি। পাঠকেরা এখানে ওই সময় সিকিম শাসনকারী নামগিয়াল রাজবংশ ও ভারতে ব্রিটিশ সরকারের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে চুম্বক অংশ তুলে ধরেছেন। ১৯৪৭ সালে সর্দার প্যাটেল ও বি এন রাওসহ (সাংবিধানিক পরিষদে সাংবিধানিক উপদেষ্টা) অনেকেই সিকিমসহ রাজাশাসিত রাজ্যগুলোকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আদর্শবাদ, সর্বএশিয়া ভিশন, এই অঞ্চলের প্রতি চীনা উদ্বেগের মতো বিষয়গুলোর কারণে সিকিমকে বিশেষ ইস্যু হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। নেহরুর মনোভাবই জয়ী হয়েছিল। গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রতিরোধ করার সময় চোগিয়ালকে সমর্থন করে ভারত।
ইন্দিরা গান্ধী তার বাবার কাছে কখনো কারণ জানতে চাননি। তবে তিনি তার ঘনিষ্ঠ সহকারী পি এন ধরকে বলেন, নেহরু সম্ভবত এমন কিছু করতে চাননি যাতে করে চীন ক্ষুব্ধ হয়। তিনি আশা করেছিলেন যে ভারত যদি সিকিমকে একীভূত না করে, তবে তিব্বতের স্বায়ত্তশাসনের প্রতি চীন শ্রদ্ধা পোষণ করবে। ইন্দিরা নিজে পুরোপুরি প্যাটেলের মনোভাবের সাথে একমত ছিলেন। ঘটনাক্রমে ১৯৪৭ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের ১৫ দিন পর সিকিম ১৮৩৫ সালে ছেড়ে দেয়া দার্জিলিং ফিরে পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল।
স্থিতিবস্থার চুক্তি
স্বাভাবিকভাবেই সিকিমের শাসক নেহরুর প্রতি খুশি ছিলেন এই কারণে যে তিনি সফলভাবে ভারতের সাথে সিকিমের একীভূত করার সব পদক্ষেপ ভণ্ডুল করে দিয়েছেন। তবে তাশি শেরিংয়ের নেতৃত্বাধীন সিকিম স্টেট কংগ্রেস ও অপর দুটি রাজনৈতিক দল চেয়েছিল সিকিমে গণতন্ত্র ও ভারতের সাথে একীভূত হওয়া। ভারত সরকার লোকরঞ্জক দাবি অগ্রাহ্য করার সিদ্ধান্ত নিয়ে চোগিয়ালকে তার ক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ দেয়। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে নয়া দিল্লি সিকিমের সাথে স্থিতিবস্থা চুক্তিতে সই করে। পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষাসহ ১১টি বিষয় এতে স্থান পায়। পরে ১৯৫০ নতুন চুক্তি হয়।
শেরিং মারা যান ১৯৫৪ সালে। তার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যায়। দলের প্রধান হিসেবে তার উত্তরসূরী হন লেন্দুপ দর্জি কাজি। তিনি চোগিয়াল শাসনের বদলে সিকিমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও ভারতের সাথে একীভূত হওয়ার জন্য জনমত সংগঠিত করেন। তিনি না থাকলে একীভূত প্রক্রিয়াটি এত সাবলীলভাবে হতো না।
১৯৬৭ সাল থেকে চোগিয়াল ১৯৫০ সালের চুক্তিটি নতুন করে লিখতে আহ্বান জানাতে থাকেন। চুক্তির অধীনে সিকিম ছিল প্রটেক্টরেট বা করদ রাজ্য। চোগিয়ালের প্রধান দাবি ছিল, সিকিমের মর্যাদা ভুটানের সমান হওয়া উচিত। মনে হচ্ছে, তিনি নেহরুর কাছে প্রশ্নটি উত্থাপন করতে চাইছিলেন না। তিনি চেয়েছিলেন, বিষয়টি ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। তিনি পাশ্চাত্যে সিকিমের মর্যাদা বাড়ানোর পথ তৈরি করছিলেন। তিনি ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বরে দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেন। ওই সময় বিদেশ থেকে ফিরে এসেছিলেন টি এন কাউল। তিনি সিকিমবিষয়ক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কাউল পরে পররাষ্ট্র সচিব হয়েছিলেন।
চোগিয়ালের উচ্চাভিলাষের প্রতি কাউল সহানুভূতিসম্পন্ন ছিলেন। ১৯৭০ সাল নাগাদ পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে কাউল ‘স্থায়ী একত্রীকরণের’ জন্য সিকিমকে প্রস্তাব দেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেনাপ্রধান জেনারেল স্যাম মানেকশ ছাড়া আর কেউ কোনো কথা বলেননি। তিনি বলেছিলেন, আপনারা যা ইচ্ছা বলুন। আমি দাবি করব সিকিমে যেকোনো স্থানে সৈন্য মোতায়েন ও অভিযান চালানোর পূর্ণ স্বাধীনতা। ভারত ও চীনের মধ্যকার চলমান দোকলাম সঙ্কটের সময় তার ওই কথাগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করা গেছে।
সিকিমে র-এর একটি দায়িত্ব ছিল তিব্বতে চীনা কার্যক্রমের ওপর নজরদারি করা ও চোগিয়ালকে অবহিত করা। চোগিয়ালকে নিয়মিত তা ব্রিফ করতেন সিধু। কিন্তু চোগিয়াল বুঝতেই পারেননি যে সিধু আসলে তার শাসন ধ্বংস করতে, সিকিমের ভারতের সাথে একীভূত করার কাজই ত্বরান্বিত করছেন। তিনি বিচক্ষণতার সাথে কাজটি সম্পন্ন করেন। ভারত এ ধরনের দক্ষতা ও সাবলীলভাবে অন্য কোনো দেশে অভিযান চালাতে পারেনি। সিধু ১৯৭৬ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে ইন্ডিয়ান পুলিশ মেডেল লাভ করেন। সিধু দেখিয়েছেন, সিকিমকে ভারত দখল করেনি, বরং সিকিমের জনগণের আন্তরিক ইচ্ছার প্রতি সাড়া দিয়েছে মাত্র।
স্পেশাল ডিউটি অফিসের অফিসার (ওএসডি) ছিলেন পলিটিক্যাল অফিসারের থেকে আলাদা। এটি ছিল দারুণ ব্যবস্থা। ওএসডি সহকারীরা গ্যাংটক যখন মোটামুটিভাবে ঘুমিয়ে থাকত, তখন তাদের রাজনৈতিক যোগাযোগ করতেন।
পিও ছাড়াও ভারত থেকে যাওয়া প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন প্রশাসনের দায়িত্বে। সিধুকে কাও বলে দিয়েছিলেন, তিনি যেন চীন ও তিব্বত সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য সিইওকে না জানান। কারণ তাতে করে চোগিয়াল কিছু আভাস পেয়ে যেতে পারতেন। ওই সময় সিইও বি এস দাস তার বই দি সিকিম সাগায় অভিযোগ করেছিলেন যে ভারতীয় গোয়েন্দারা তাকে কিছুই জানায়নি।
র-এর অফিসের উত্তরে থাকা আইবি অফিস সিকিমের ব্যাপারে সক্রিয় থাকে। সংস্থাটি চোগিয়াল ও তার এজেন্টদের ওপর নজর রাখতে থাকে। চোগিয়াল বা তার রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বোন কো কো লা কখনোই সিধুর কার্যক্রমের ফলে গণতন্ত্রীপন্থীরা উৎসাহিত হচ্ছে বলে ভারতের কাছে অভিযোগ করেনি। তবে তারা আইবির তৎপরতা নিয়ে ভারত সরকারের কাছে অভিযোগ করেছেন।
সিধু কিভাবে এই জটিল মিশনটি সম্পন্ন করেছিলেন, সে ব্যাপারে নজর দেয়া যাক। সাধারণভাবে ক্লায়েন্টদেরকে টাকা দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার যে প্রথা প্রচলিত ছিল, সিধুরা কিন্তু তা করেননি। কাজটি হয়েছিল গণতন্ত্রপন্থী শক্তিগুলোর সাথে র-এর যোগসাজশের মাধ্যমে। গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো যাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পায়, তা নিশ্চিত করেছে র।
জটিল মিশন
সিধু নিজেকে ভারত থেকে পাঠানো কাজির রাজনৈতিক সহকারী বিবেচনা করতেন। এটি সত্য যে সিধুর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে কিছু অর্থ দিয়েছিল ভারত। তবে নিজের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন তথা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ধ্বংস করাসহ অন্যান্য কাজে চোগিয়াল যে পরিমাণ অর্থ ভারতের কাছ থেকে পেতেন, সে তুলনায় তা ছিল খুবই কম। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রাসাদ মেরামতের জন্য চোগিয়াল ২০ লাখ রুপি গ্রহণ করেন। এরপর তিনি আরো ৩৫ লাখ রুপি দাবি করেন। তবে সিইও প্রাসাদে গিয়ে দেখেন যে মেরামতের কোনো কাজই করা হয়নি। সিধু বুঝতে পারেন যে চোগিয়াল পুরো অর্থ অন্য কাজে ব্যয় করেছেন।
সিধুর মিশন শুরু করার আগে চোগিয়াল ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পড়েন। ফলে তাকে রাজনৈতিক কর্মকর্তা কে এস বাজপাইয়ের প্রণীত একটি চিঠিতে সই করতে বাধ্য হতে হয়। এতে পিওকে প্রশাসন গ্রহণ করতে বলা হয়। বি এস দাসকে প্রধান প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়। ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে দিল্লি ত্যাগ করার সময় তাকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে উৎসাহিত করতে বলা হয়, তবে ভারতের সাথে একীভূত করার মিশন সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ১৯৭৩ সালের মে মাসে কেওয়াল সিং সিকিমে গিয়ে আইন পরিষদের নির্বাচন দিতে চোগিয়ালকে রাজি করান।
তারপর ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে কলকাতায় গিয়ে সিধু সাত দফার কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করেন পি এন ব্যানার্জির সাথে পরামর্শ করে। লক্ষ্য ছিল চোগিয়ালকে নিঃসঙ্গ করা, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে জোরদার করা, গণদাবির মুখে একীভূত করার পরিবেশ সৃষ্টি করা। নির্বাচন হয় ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে। সিধু খুবই খুশি হন এটা জেনে যে কাজির দল ৩২টি আসনের মধ্যে ৩১টি পেয়েছে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, কাজির রাজনৈতিক সহকারী পর্দার অন্তরালে কাজ করেছিলেন। ১৯৭৪ সালের মে মাসে পরিষদ ইন্দো-সিকিম সম্পর্ককে আরো জোরদার করা এবং ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সিকিমের অংশগ্রহণ করার পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানায়। অর্থাৎ পরিষদ একীভূত হওয়ার আহ্বান জানায়। চোগিয়াল এটি প্রতিরোধ করেন। সিকিম ‘সহযোগী রাষ্ট্রে’ পরিণত হয়। ১৯৭৫ সালের এপ্রিলে গণভোট হয়। এতে ৯৭ ভাগ ভোটার একীভূত হওয়ার পক্ষে ভোট দেয়। একীভূত হওয়ার কাজটি হয় ১৯৭৫ সালের মে মাসে।
শেষ অধ্যায়ে সিধু জানান কিভাবে একটি সফল অভিযানের পরবর্তী কাজগুলো করার সময় তালগোল পাকিয়ে সেগুলো করতে ব্যর্থ হয়েছিল ভারত। সিধু ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাংটক ত্যাগ করেন। কে এস বাজপাই ও বি এস দাস ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে ফিরে যান। ইন্দিরা গান্ধী তার দলে যোগ দিতে কাজিকে চাপ দেন, তিনি রাজি হন। ১৯৭৬ সালে ইন্দিরা গান্ধী আইবির পরামর্শের বিপরীতে কাজির বিরোধী হিসেবে পরিচিত সঞ্চয় গান্ধীকে যুব কংগ্রেসের প্রধান করেন। ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে হেরে যান। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী মরারজি দেসাই চেয়েছিলেন কাজি তার দলে যোগ দিক। ১৯৭৮ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রী দেসাই ঘোষণা করেন যে একীভূত করাটা ছিল একটি ভুল, তবে তা সংশোধন করা যাবে না। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে কাজির দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ১৯৯৫ সালের মে মাসে একীভূত হওয়ার ২০তম বার্ষিকীতে কাজি এক বিবৃতিতে একীভূত বাতিল করার আহ্বান জানান। ২০০২ সালে কাজি ৯৮ বছর বয়সে পদ্মভূষণ লাভ করেন। ৫ বছর পর তিনি মারা যান। ভারত তার সাথে আরো ভালো আচরণ করতে পারত।
সিধুর উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণকারী কে পি বাজপাই, বি এস দাস ছিলেন ক্ষীণদৃষ্টির অধিকারী। তাদের ভুলে নানা অব্যবস্থাপনা ঘটে।
বইটি খুবই মূল্যবান, সাধারণ পাঠকের পাশাপাশি কূটনীতি ও গুপ্তচর বৃত্তির ছাত্রদের জন্যও খুবই উপযোগী।
লেখক: গ্রন্থকার, ডিপ্লোমেসি: ইন্ডিয়ান স্টাইল
No comments