মোদির ওপর আস্থা হারাচ্ছে ভারতের ডানপন্থীরা by আমরুতা খন্দেকার
সেই
২০১৪ সালে প্রথম মোদি ঢেউ যদি ভারতের বিরোধীদের মধ্যে ভয়াবহ ধরনের আঘাত
হেনে থাকে, তবে দ্বিতীয়টি তাদের সম্মিলিত মনোবল পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
সব প্রতিকূলতার বিপরীতে মোদি-শাহ জুটি এবার যখন আগেরবারের চেয়ে আরো বেশি
সাফল্য অর্জন করেছিল, তখন বামপন্থী জোট ভেঙে পড়ে, আর গেরুয়াদের ডানপন্থী
সমর্থকদের আত্মবিশ্বাস হয়ে যায় আকাশচুম্বি। কিন্তু ২৩ মে’র বিপুল উচ্ছ্বাস
শেষ হতেই সদ্য গঠিত সরকর কিছু কিছু সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে। আর তখই ভারতীয়
ডানপন্থীরা নিজেদেরকে অস্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতে দেখতে পায়।
নরেন্দ্র মোদি ৫ বছর আগে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের মুখপাত্র হিসেবে শীর্ষস্থানে তার জায়গা করে নিয়ে ৬০ বছর ধরে ভারতীয় রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তারকারী একটি শাসক পরিবারের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তিনি যখন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (আইএনইস) কাছ থেকে দেশের নেতৃত্ব গহ্রণ করেন, তখন হিন্দু ডানদের উল্লাসের কোনো সীমা ছিল না। কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো এতে স্বপ্ন ছিল। তারা অনেক দিনের স্বপ্ন হাতের নাগালে দেখতে পায়। তারা আশা করেছিল মোদি যুগের শুরুতেই অত্যন্ত বিতর্কিত অযোধ্যায় রামমন্দিরটি নির্মিত হবে, জম্মু ও কাশ্মিরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া সংবিধানের ৩৫ক ও ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করা হবে, হিন্দু মূল্যবোধ সুরক্ষাকারী সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটে যাবে।
মোদি সরকারের প্রথম মেয়াদে ডানদের জনপ্রিয়তায় ছিল উঠা-নামা। প্রথম দিকে তিনি যখন অনুন্নয়ন ও দারিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বললেন, তারা কঠোরভাবে তার পক্ষে দাঁড়াল। তার মেক ইন ইন্ডিয়া ও ক্লিন ইন্ডিয়া মিশনের প্রশংসায় উচ্চকণ্ঠ হয়।
অবশ্য ধীরে ধীরে তাদের ধৈর্য হ্রাস পেতে শুরু করে। মোদি সরকার তাদের স্বপ্নের মন্দিরটি নির্মাণে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। হজের ভর্তুকি বাতিল করে মুসলিম মেয়েদের শিক্ষা খাতে ওই অর্থ ব্যয়ের সিদ্ধান্তটিও তাদের মধ্যে খুব একটা উদ্দীপ্ত করেনি। ডানদের কাছে এটি মুসলিম তোষণ মনে হয়েছে। এখনো তারা রজোঃশীল বয়সের নারীদের সবরিমালা মন্দিরে প্রবেশের (যদিও এটি ছিল কেরালায় ঢোকার জন্য দলের নির্বাচনী কৌশল) বিরুদ্ধে বিজেপি-সমর্থিত প্রতিবাদে সান্ত্বনা খোঁজে। গুজরাটে জাতীয়তাবাদী আইকন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের স্মরণে বিশ্বের বৃহত্তম মূর্তি নির্মাণ, কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ৪০ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার প্রতিশোধ নিয়ে পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলাও তাদের স্বস্তির কারণ ছিল।
আর ২০১৯ সালের নির্বাচনের পরিক্রমায় ডান শিবির দুটি মাপে ভেঙে যায়। একটি অংশ মোদিতে মোহভঙ্গ ঘটেছিল, অপরটি তাকে মনেপ্রাণে আইডল মনে করেছিল। প্রথম অংশটি মনে করছিল যে বিজেপি ধীরে ধীরে তার হিন্দু পরিচিতি থেকে সরে আসছে। তবে অপর অংশটি বিভিন্ন নগরীর নাম পরিবর্তনের মধ্যে তার প্রতি আস্থা ধরে রাখার যুক্তি খুঁজে পাচ্ছিল। তাদের পার্থক্য ও নানা সামাজিক-মিডিয়ার যুদ্ধ সত্ত্বেও দুই শিবিরই একসাথে হয়ে নির্বাচনে বিপুল জয় করায়ত্ত করে, কংগ্রেসকে অত্যন্ত বেদনাদায়ক পরাজয় বরণ করতে বাধ্য করে। তারা সবাই আশাবাদী হয়ে ওঠেছিল যে মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ দ্বিতীয় মেয়াদে তাদের মতো করে সবকিছু করার সুযোগটি কাজে লাগাবে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত সবকিছু তাদের আশাবাদের মতো করে হয়নি। এমনকি মনে হচ্ছে, মোদি সরকার সংখ্যালঘুদের পক্ষে কথা বলতে শুরু করে দিয়েছে। বিপুল বিজয়ের মাত্র এক মাসের মধ্যে সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি ঘোষণা করেন যে আগামী ৫ বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৫ কোটি ছাত্রকে স্কলারশিপ দেয়া হবে। আর এর অর্ধেক সংরক্ষিত থাকবে মেয়েদের জন্য। সরকার খ্রিস্টান সম্প্রদায়কেও খুশি রাখার চেষ্টা করছে, চলতি মাসেই মিজোরামে একটি খ্রিস্টান মিশনারি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
সম্প্রতি ঝাড়খন্ডে রিচা ভারতি নামের ১৯ বছর বয়স্কা এক নারীকে গ্রেফতার করা হয় সামাজিক মাধ্যমে কথিত সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর অভিযোগে। তাকে আদালত এই শর্তে জামিন দেয় যে সে ৫ কপি পবিত্র কোরআন বিলি করবে। এই ঘটনা ডানপন্থীদের মধ্যে ক্রোধের সৃষ্টি করে। উভয় শিবিরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মেয়েটিকে রক্ষার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। এতে ডানেরা ভয় পেয়ে গেছে।
আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিজেপির জয়ের পর থেকে হিন্দুকেন্দ্রিক প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণের ব্যাপারে মোদি সরকার নীরব রয়েছে। তারা আশা করেছিল যে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা মন্দিরগুলো মুক্তি পাবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে হিন্দু মূল্যবোধ শেখানো হবে, প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার মান বাড়বে, হিন্দু ও তাদের প্রতীকের বিরুদ্ধে সহিংসতা হ্রাস পাবে। কিন্তু রাম মন্দির এখন পর্যন্ত বাস্তব রূপ পায়নি, খুব শিগগিরই মন্দিরটি মাথা উঁচু করবে, এমন আশাও দেখা যাচ্ছে না। অথচ নির্বাচনে জয়ের পরপরই এর কাজ শুরু হবে বলে তারা আশাবাদী ছিল।
যে দলটি নির্বাচনের প্রথম দিনেই দেশের প্রতিটি স্থান থেকে প্রতিটি অনুপ্রবেশকারীকে খুঁজে বের করে বহিষ্কার করার ঘোষণা দিয়েছিল, সেই দলই এখন বিরামহীনভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মন পাওয়ার চেষ্টা করছে। যে লোকটি নির্বাচনের আগে হিন্দু সন্ত্রাসী পরিভাষাটি ব্যবহার করার জন্য কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা করেছিল, সেই দলটিই রিচা ভারতির জন্য একটি শব্দও খরচ করছে না। ডানদের একটি বড় অংশ কংগ্রেসের বিরপীতে বিজেপিকে একটি ক্ষমতালোলুপ দল হিসেবে দেখতে পাচ্ছে।
সারা দুনিয়ার বামপন্থীরা অব্যাহতভাবে মোদিকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে চিহ্নিত করছে, তবে বাস্তবে হিন্দু ডানই এখন এ নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করছে।
নরেন্দ্র মোদি ৫ বছর আগে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের মুখপাত্র হিসেবে শীর্ষস্থানে তার জায়গা করে নিয়ে ৬০ বছর ধরে ভারতীয় রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তারকারী একটি শাসক পরিবারের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তিনি যখন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (আইএনইস) কাছ থেকে দেশের নেতৃত্ব গহ্রণ করেন, তখন হিন্দু ডানদের উল্লাসের কোনো সীমা ছিল না। কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো এতে স্বপ্ন ছিল। তারা অনেক দিনের স্বপ্ন হাতের নাগালে দেখতে পায়। তারা আশা করেছিল মোদি যুগের শুরুতেই অত্যন্ত বিতর্কিত অযোধ্যায় রামমন্দিরটি নির্মিত হবে, জম্মু ও কাশ্মিরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া সংবিধানের ৩৫ক ও ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করা হবে, হিন্দু মূল্যবোধ সুরক্ষাকারী সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটে যাবে।
মোদি সরকারের প্রথম মেয়াদে ডানদের জনপ্রিয়তায় ছিল উঠা-নামা। প্রথম দিকে তিনি যখন অনুন্নয়ন ও দারিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বললেন, তারা কঠোরভাবে তার পক্ষে দাঁড়াল। তার মেক ইন ইন্ডিয়া ও ক্লিন ইন্ডিয়া মিশনের প্রশংসায় উচ্চকণ্ঠ হয়।
অবশ্য ধীরে ধীরে তাদের ধৈর্য হ্রাস পেতে শুরু করে। মোদি সরকার তাদের স্বপ্নের মন্দিরটি নির্মাণে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। হজের ভর্তুকি বাতিল করে মুসলিম মেয়েদের শিক্ষা খাতে ওই অর্থ ব্যয়ের সিদ্ধান্তটিও তাদের মধ্যে খুব একটা উদ্দীপ্ত করেনি। ডানদের কাছে এটি মুসলিম তোষণ মনে হয়েছে। এখনো তারা রজোঃশীল বয়সের নারীদের সবরিমালা মন্দিরে প্রবেশের (যদিও এটি ছিল কেরালায় ঢোকার জন্য দলের নির্বাচনী কৌশল) বিরুদ্ধে বিজেপি-সমর্থিত প্রতিবাদে সান্ত্বনা খোঁজে। গুজরাটে জাতীয়তাবাদী আইকন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের স্মরণে বিশ্বের বৃহত্তম মূর্তি নির্মাণ, কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ৪০ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার প্রতিশোধ নিয়ে পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলাও তাদের স্বস্তির কারণ ছিল।
আর ২০১৯ সালের নির্বাচনের পরিক্রমায় ডান শিবির দুটি মাপে ভেঙে যায়। একটি অংশ মোদিতে মোহভঙ্গ ঘটেছিল, অপরটি তাকে মনেপ্রাণে আইডল মনে করেছিল। প্রথম অংশটি মনে করছিল যে বিজেপি ধীরে ধীরে তার হিন্দু পরিচিতি থেকে সরে আসছে। তবে অপর অংশটি বিভিন্ন নগরীর নাম পরিবর্তনের মধ্যে তার প্রতি আস্থা ধরে রাখার যুক্তি খুঁজে পাচ্ছিল। তাদের পার্থক্য ও নানা সামাজিক-মিডিয়ার যুদ্ধ সত্ত্বেও দুই শিবিরই একসাথে হয়ে নির্বাচনে বিপুল জয় করায়ত্ত করে, কংগ্রেসকে অত্যন্ত বেদনাদায়ক পরাজয় বরণ করতে বাধ্য করে। তারা সবাই আশাবাদী হয়ে ওঠেছিল যে মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ দ্বিতীয় মেয়াদে তাদের মতো করে সবকিছু করার সুযোগটি কাজে লাগাবে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত সবকিছু তাদের আশাবাদের মতো করে হয়নি। এমনকি মনে হচ্ছে, মোদি সরকার সংখ্যালঘুদের পক্ষে কথা বলতে শুরু করে দিয়েছে। বিপুল বিজয়ের মাত্র এক মাসের মধ্যে সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি ঘোষণা করেন যে আগামী ৫ বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৫ কোটি ছাত্রকে স্কলারশিপ দেয়া হবে। আর এর অর্ধেক সংরক্ষিত থাকবে মেয়েদের জন্য। সরকার খ্রিস্টান সম্প্রদায়কেও খুশি রাখার চেষ্টা করছে, চলতি মাসেই মিজোরামে একটি খ্রিস্টান মিশনারি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
সম্প্রতি ঝাড়খন্ডে রিচা ভারতি নামের ১৯ বছর বয়স্কা এক নারীকে গ্রেফতার করা হয় সামাজিক মাধ্যমে কথিত সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর অভিযোগে। তাকে আদালত এই শর্তে জামিন দেয় যে সে ৫ কপি পবিত্র কোরআন বিলি করবে। এই ঘটনা ডানপন্থীদের মধ্যে ক্রোধের সৃষ্টি করে। উভয় শিবিরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মেয়েটিকে রক্ষার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। এতে ডানেরা ভয় পেয়ে গেছে।
আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিজেপির জয়ের পর থেকে হিন্দুকেন্দ্রিক প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণের ব্যাপারে মোদি সরকার নীরব রয়েছে। তারা আশা করেছিল যে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা মন্দিরগুলো মুক্তি পাবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে হিন্দু মূল্যবোধ শেখানো হবে, প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার মান বাড়বে, হিন্দু ও তাদের প্রতীকের বিরুদ্ধে সহিংসতা হ্রাস পাবে। কিন্তু রাম মন্দির এখন পর্যন্ত বাস্তব রূপ পায়নি, খুব শিগগিরই মন্দিরটি মাথা উঁচু করবে, এমন আশাও দেখা যাচ্ছে না। অথচ নির্বাচনে জয়ের পরপরই এর কাজ শুরু হবে বলে তারা আশাবাদী ছিল।
যে দলটি নির্বাচনের প্রথম দিনেই দেশের প্রতিটি স্থান থেকে প্রতিটি অনুপ্রবেশকারীকে খুঁজে বের করে বহিষ্কার করার ঘোষণা দিয়েছিল, সেই দলই এখন বিরামহীনভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মন পাওয়ার চেষ্টা করছে। যে লোকটি নির্বাচনের আগে হিন্দু সন্ত্রাসী পরিভাষাটি ব্যবহার করার জন্য কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা করেছিল, সেই দলটিই রিচা ভারতির জন্য একটি শব্দও খরচ করছে না। ডানদের একটি বড় অংশ কংগ্রেসের বিরপীতে বিজেপিকে একটি ক্ষমতালোলুপ দল হিসেবে দেখতে পাচ্ছে।
সারা দুনিয়ার বামপন্থীরা অব্যাহতভাবে মোদিকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে চিহ্নিত করছে, তবে বাস্তবে হিন্দু ডানই এখন এ নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করছে।
No comments