বেপরোয়া রেসিং গ্যাং by শুভ্র দেব
অত্যাধুনিক
মডেলের মোটরবাইক-রেসিং কার। হিন্দি-ইংরেজী গানের বিটের তালে তালে বাড়ে
গতি। তোয়াক্কা নাই ট্রাফিক পুলিশ-সিগন্যালের। আশে পাশে কি আছে দেখার সময়ও
নেই। গাড়ির সাইলেন্সার দিয়ে বের হওয়া ধোয়ার সঙ্গে তৈরি হয় ভয়স্কর শব্দ।
বেপরোয়া গতিতে কেঁপে উঠে রাতের ঢাকার নিস্তব্ধ সড়ক। এ গতির লড়াই কখনও কখন
দিনেও দেখা যায় উড়াল সড়ক বা যানবাহন কম চলে এমন সড়কে।
নানা উদ্যেগ নিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যখন প্রশাসন হিমশিম খাচ্ছে তখন রেসিং গ্যাংরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সম্প্রতি উঠতি বয়সী ছেলেদের জন্য অনেকটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে বাইক বা কার রেসিং।
এই রেসিং গ্যাং সদস্যরা কেউ কেউ মাধ্যমিকের গন্ডিও পেরুয়নি। আবার কেউ সদ্য পা দিয়েছে কলেজের বারান্দায়। কিন্তু এ বয়সেই তারা বেছে নিয়েছে উশৃঙ্খল-বেপরোয়া জীবন। স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে তারা মেতে উঠে গতির নেশায়।
সরজমিন দেখা গেছে, ঢাকার, মানিক মিয়া এভিনিউ, বিজয় সরনী সড়ক, ৩০০ফিট সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক, ধানমন্ডি-মিরপুর সড়ক, গাবতলী সাভার সড়ক, মহাখালী-বিশ্বরোড, বছিলা, গুলশান-বারিধারা, হাতিরঝিল চক্রাকার সড়ক, রামপুরা-যমুনা ফিউচার পার্ক, ঢাকার বাইরের বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়ক, ঢাকা-চিটাগাং সড়কে গতির মহড়ায় নামে রেসিং গ্যাং এর সদস্যরা। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে এসব রেসিংয়ের সঙ্গে সক্রিয় আছে অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রুপ। তাদের মধ্যে রয়েছে, ক্লাব ৬৯, ক্লাব বাংলাদেশ, কেবি রাইডার্স, এমএসবি রাইডার্স, বাংলাদেশ রেসিং ক্লাব, বিডি ঘোস্ট রাইডার্স, ফেরোশাস ফ্লাশ, হান্ট রাইডার্স, অল অ্যাবাউট রোড রাইডার্স, এক্সাইল রাইডার্স, বিডি রাইডার্স ক্লাব, ব্লাইন্ডেড হুইলম্যানস অব রংপুর, বগুড়া স্ট্রিট রাইডার্স, সৈয়দপুর ক্রেজি রাইডার্স, পটুয়াখালী রাইডার্স।
শুক্রবার ঢাকার খিলগাঁও ফ্লাইওভারে বাইক রেসিং করতে গিয়ে প্রাণ যায় পূর্ব বাসাবো কদমতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী তাজ হোসেন তুহিন (১৬) ও বনশ্রী ইস্টার্ন স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আব্দুল আল নোমান শেখের (১৭)। তারা দুজন সুবজবাগ থানা এলাকার ওহাব কলোনীতে থাকতো। তুহিন ও নোমান বাল্য বন্ধু। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ফ্লাইওভার থেকে নামার সময় চালকের আসনে ছিল নোমান।
বাইকের গতি ছিল একশর উপরে। তাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফ্লাইওভারের রেলিংয়ের সঙ্গে আঘাত লেগে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যায়। ফ্লাইওভারের উপরে পড়ে থাকে তাদের ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত নিথর দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, বেপরোয়া গতিতে রেসিং করতে গিয়ে তাদের এই অবস্থা হয়েছে। ২রা এপ্রিল গাজীপুরে বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল প্রাণ কেড়ে নেয় কালীগঞ্জ থানার পুলিশ সদস্য ৪৮ বয়সী আব্দুল মোতালেবের। ওই দিন কালীগঞ্জের একতা এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর চরসিন্দুর সেতুতে দায়িত্ব পালন করছিলেন এই পুলিশ সদস্য। তখন বেপরোয়া গতির ওই মোটরসাইকেলটি তার ওপর দিয়ে উঠে যায়। এর আগে গত বছরের ২৩ অক্টোবর হাতিরঝিল মহানগর সেতুর ওপর বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ছিটকে নিহত হন রেদোয়ানুল কবির শুভ (৩২)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলছেন: কার ও বাইক রেসাররা সাধারনত গভীর রাতে বের হন। ওই সময় সড়কে যানবাহন ও মানুষ চলাচল কম থাকে। আর এই সুযোগটাকেই তারা বেছে নেয়। কিন্তু তারপরও জরুরি কাজে বা দায়িত্ব পালনে কিছু মানুষ গভীর রাতে সড়কে থাকেন। তাদের বয়ানে উঠে এসেছে রাতের ফাঁকা ঢাকায় বেপরোয়া গতির মহড়ার বর্ণনা। বনানী সড়কের ডাচ বাংলা বুথের নিরাপত্তাকর্মী শাহজাহান মিয়া বলেন, এমনিতে নিস্তব্ধ রাস্তাতে মালবাহী ও অল্প কিছু যানবাহনের চলাচল থাকে। এর মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ বিকট শব্দে ৭/৮টি কার এত গতিতে যায় যে আশে পাশের ঘুমন্ত মানুষগুলো তখন জেগে উঠে। কোন সিগন্যাল মানে না উচ্চ শব্দে বিরতিহীন হর্ণ বাজিয়ে বেপরোয়া গতিতে তারা আসা যাওয়া করে। খিলক্ষেত এলাকার চা দোকানি সিয়াব হোসেন বলেন, বিমানবন্দর ও ৩০০ফিট এলাকায় প্রতিদিনই মহড়া হয়।
এই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য এক আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। আমার দোকানে এসে অনেক চালক চা খায়। তারা অনেক সময় বলে যারা এসব বেপরোয়া রেসিং করে তাদের জন্য সড়কের অন্য যানবাহনকে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য বলেন, আমরা কি করব। ধনী ঘরের ছেলেরা। যে ভয়ঙ্করভাবে ছুটে চলে পুরো সড়ক কেঁপে উঠে। এদের আটকানোর কোন উপায় নাই। যারা এসব করে তাদের অনেকে নেশার সঙ্গেও জড়িত। রাতে তাদের আটকাতে গেলে উল্টো মেরে চলে যাবে। গভীর রাতে আটকানোর মত কেউ থাকবে না। তাই তাদের অভিভাবককে সচেতন হতে হবে। তা না হলে বিপদগামী এসব ছেলেদের থামানো যাবে না। রেসিংয়ের সঙ্গে জড়িতরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সড়কগুলো রেসিংয়ের জন্য উপযোগী নয়। পাশপাশি এ দেশে রেসিং কার ও বাইক নেই বললেই চলে। দামে বেশী হওয়াতে ব্যবসায়ীরা সেটা আমদানি করেন না। তাই আমাদের দেশে সাধারণ কারকে রেসিং কারে পরিণত করা হয়। এক্ষেত্রে ইঞ্জিনের ও বডির কিছু যন্ত্রাংশ সংযোজন, বিয়োজন করা হয়। গাড়ির বডি নিচে নামানো হয় ও শব্দ বাড়ানো হয়।
ভয়ঙ্কর বাইক স্ট্যান্ট: শুধু বাইক-কার রেসিং নয় এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাইক স্ট্যান্ট। যারা বাইক স্ট্যান্ট করেন তাদের মতে এটা বিশেষ ধরনের খেলা। বাইক রেসিং যারা করেন তারা বাইক স্ট্যান্টও করেন। এর মাধ্যমে বাইক দিয়ে বিভিন্ন কসরত দেখানো হয়। যারা স্ট্যান্ট করেন তারা অনেক সাহসী। তাদের স্ট্যান্ট বয় বলা হয়। দ্রত গতিতে বাইক চালিয়ে এসে সামনের চাকা ওপরে উঠিয়ে, অথবা পেছনের চাকা ওপরে উঠানো হয়। আবার চলন্ত বাইকের ওপরে দুই পা উঠিয়ে নানা অঙ্গভঙ্গি করে দর্শকদের আনন্দ দেন স্ট্যান্ট বয়রা। তিন বছর ধরে বাইক স্ট্যান্ট করেন উত্তরার আবিদ হাসান। তিনি বলেন, এটা সাধারণ মানুষের কাছে বিপদজ্জনক মনে হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। কারণ এটা অনেক ভয়ঙ্কর এক খেলা। সবার পক্ষে এটা খেলা সম্ভব না। যাদের সাহস আছে তারাই এটা করে। কারন এই খেলা মৃত্যু হাতে নিয়েই করতে হয়।
তিনি বলেন, বাইক স্ট্যান্ট করার জন্য স্ট্যান্ট বয়রা তাদের বাইককে আগে থেকে তৈরি করে নেয়। এর সঙ্গে সঙ্গে তারা নিজেদেরকেও তৈরি করে নেয়। স্ট্যান্ট করার সময় নিজেদের নিরাপত্তার জন্য কিছু প্রস্তুতি নিতে হয়। আর স্ট্যান্ট করা হয় ঢাকার প্রশস্ত সড়কগুলোতে। একাধিক স্ট্যান্ট বয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের উঠতি বয়সী ছেলেরা মুলত ইউটিউবে বিভিন্ন দেশের যুবকদের স্ট্যান্ট করার ভিডিও দেখে উৎসাহী হয়েছে। এসব ভিডিওতে নানা ভঙ্গিতে বাইক নিয়ে কসরত দেখানো হয়। আর এসব দেখে দেখে অন্যরা সেটা আয়ত্ব করে নেয়। বিশেষ করে ঢাকার কিশোর, যুবক ও তরুণদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। ঢাকার অলিগলিতে এখন স্ট্যান্ট বয়দের গ্রুপ তৈরি হয়েছে।
যারা শহরের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে খেলা দেখায়। একজন খেলা দেখায় আর তার সহপাঠিরা এসব দৃশ্য ভিডিও করে তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজে আপলোড করে। ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা যতক্ষণ মাঠে থাকেন ততক্ষণ এসব বাইক বা কারের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া হয়। তবে তারা গভীর রাতটাকেই বেছে নেয়। যে সময় ট্রাফিকের সদস্যরা সড়কে থাকে না বা যানবাহন চলাচল কম থাকে। তিনি বলেন, হাইড্রলিক হর্ন ইদানিং বেশ সমস্যার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। আমরা সবগুলো বিষয় নিয়ে ভাবছি।
নানা উদ্যেগ নিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যখন প্রশাসন হিমশিম খাচ্ছে তখন রেসিং গ্যাংরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সম্প্রতি উঠতি বয়সী ছেলেদের জন্য অনেকটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে বাইক বা কার রেসিং।
এই রেসিং গ্যাং সদস্যরা কেউ কেউ মাধ্যমিকের গন্ডিও পেরুয়নি। আবার কেউ সদ্য পা দিয়েছে কলেজের বারান্দায়। কিন্তু এ বয়সেই তারা বেছে নিয়েছে উশৃঙ্খল-বেপরোয়া জীবন। স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে তারা মেতে উঠে গতির নেশায়।
সরজমিন দেখা গেছে, ঢাকার, মানিক মিয়া এভিনিউ, বিজয় সরনী সড়ক, ৩০০ফিট সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক, ধানমন্ডি-মিরপুর সড়ক, গাবতলী সাভার সড়ক, মহাখালী-বিশ্বরোড, বছিলা, গুলশান-বারিধারা, হাতিরঝিল চক্রাকার সড়ক, রামপুরা-যমুনা ফিউচার পার্ক, ঢাকার বাইরের বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়ক, ঢাকা-চিটাগাং সড়কে গতির মহড়ায় নামে রেসিং গ্যাং এর সদস্যরা। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে এসব রেসিংয়ের সঙ্গে সক্রিয় আছে অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রুপ। তাদের মধ্যে রয়েছে, ক্লাব ৬৯, ক্লাব বাংলাদেশ, কেবি রাইডার্স, এমএসবি রাইডার্স, বাংলাদেশ রেসিং ক্লাব, বিডি ঘোস্ট রাইডার্স, ফেরোশাস ফ্লাশ, হান্ট রাইডার্স, অল অ্যাবাউট রোড রাইডার্স, এক্সাইল রাইডার্স, বিডি রাইডার্স ক্লাব, ব্লাইন্ডেড হুইলম্যানস অব রংপুর, বগুড়া স্ট্রিট রাইডার্স, সৈয়দপুর ক্রেজি রাইডার্স, পটুয়াখালী রাইডার্স।
শুক্রবার ঢাকার খিলগাঁও ফ্লাইওভারে বাইক রেসিং করতে গিয়ে প্রাণ যায় পূর্ব বাসাবো কদমতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী তাজ হোসেন তুহিন (১৬) ও বনশ্রী ইস্টার্ন স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আব্দুল আল নোমান শেখের (১৭)। তারা দুজন সুবজবাগ থানা এলাকার ওহাব কলোনীতে থাকতো। তুহিন ও নোমান বাল্য বন্ধু। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ফ্লাইওভার থেকে নামার সময় চালকের আসনে ছিল নোমান।
বাইকের গতি ছিল একশর উপরে। তাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফ্লাইওভারের রেলিংয়ের সঙ্গে আঘাত লেগে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যায়। ফ্লাইওভারের উপরে পড়ে থাকে তাদের ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত নিথর দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, বেপরোয়া গতিতে রেসিং করতে গিয়ে তাদের এই অবস্থা হয়েছে। ২রা এপ্রিল গাজীপুরে বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল প্রাণ কেড়ে নেয় কালীগঞ্জ থানার পুলিশ সদস্য ৪৮ বয়সী আব্দুল মোতালেবের। ওই দিন কালীগঞ্জের একতা এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর চরসিন্দুর সেতুতে দায়িত্ব পালন করছিলেন এই পুলিশ সদস্য। তখন বেপরোয়া গতির ওই মোটরসাইকেলটি তার ওপর দিয়ে উঠে যায়। এর আগে গত বছরের ২৩ অক্টোবর হাতিরঝিল মহানগর সেতুর ওপর বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ছিটকে নিহত হন রেদোয়ানুল কবির শুভ (৩২)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলছেন: কার ও বাইক রেসাররা সাধারনত গভীর রাতে বের হন। ওই সময় সড়কে যানবাহন ও মানুষ চলাচল কম থাকে। আর এই সুযোগটাকেই তারা বেছে নেয়। কিন্তু তারপরও জরুরি কাজে বা দায়িত্ব পালনে কিছু মানুষ গভীর রাতে সড়কে থাকেন। তাদের বয়ানে উঠে এসেছে রাতের ফাঁকা ঢাকায় বেপরোয়া গতির মহড়ার বর্ণনা। বনানী সড়কের ডাচ বাংলা বুথের নিরাপত্তাকর্মী শাহজাহান মিয়া বলেন, এমনিতে নিস্তব্ধ রাস্তাতে মালবাহী ও অল্প কিছু যানবাহনের চলাচল থাকে। এর মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ বিকট শব্দে ৭/৮টি কার এত গতিতে যায় যে আশে পাশের ঘুমন্ত মানুষগুলো তখন জেগে উঠে। কোন সিগন্যাল মানে না উচ্চ শব্দে বিরতিহীন হর্ণ বাজিয়ে বেপরোয়া গতিতে তারা আসা যাওয়া করে। খিলক্ষেত এলাকার চা দোকানি সিয়াব হোসেন বলেন, বিমানবন্দর ও ৩০০ফিট এলাকায় প্রতিদিনই মহড়া হয়।
এই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য এক আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। আমার দোকানে এসে অনেক চালক চা খায়। তারা অনেক সময় বলে যারা এসব বেপরোয়া রেসিং করে তাদের জন্য সড়কের অন্য যানবাহনকে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য বলেন, আমরা কি করব। ধনী ঘরের ছেলেরা। যে ভয়ঙ্করভাবে ছুটে চলে পুরো সড়ক কেঁপে উঠে। এদের আটকানোর কোন উপায় নাই। যারা এসব করে তাদের অনেকে নেশার সঙ্গেও জড়িত। রাতে তাদের আটকাতে গেলে উল্টো মেরে চলে যাবে। গভীর রাতে আটকানোর মত কেউ থাকবে না। তাই তাদের অভিভাবককে সচেতন হতে হবে। তা না হলে বিপদগামী এসব ছেলেদের থামানো যাবে না। রেসিংয়ের সঙ্গে জড়িতরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সড়কগুলো রেসিংয়ের জন্য উপযোগী নয়। পাশপাশি এ দেশে রেসিং কার ও বাইক নেই বললেই চলে। দামে বেশী হওয়াতে ব্যবসায়ীরা সেটা আমদানি করেন না। তাই আমাদের দেশে সাধারণ কারকে রেসিং কারে পরিণত করা হয়। এক্ষেত্রে ইঞ্জিনের ও বডির কিছু যন্ত্রাংশ সংযোজন, বিয়োজন করা হয়। গাড়ির বডি নিচে নামানো হয় ও শব্দ বাড়ানো হয়।
ভয়ঙ্কর বাইক স্ট্যান্ট: শুধু বাইক-কার রেসিং নয় এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাইক স্ট্যান্ট। যারা বাইক স্ট্যান্ট করেন তাদের মতে এটা বিশেষ ধরনের খেলা। বাইক রেসিং যারা করেন তারা বাইক স্ট্যান্টও করেন। এর মাধ্যমে বাইক দিয়ে বিভিন্ন কসরত দেখানো হয়। যারা স্ট্যান্ট করেন তারা অনেক সাহসী। তাদের স্ট্যান্ট বয় বলা হয়। দ্রত গতিতে বাইক চালিয়ে এসে সামনের চাকা ওপরে উঠিয়ে, অথবা পেছনের চাকা ওপরে উঠানো হয়। আবার চলন্ত বাইকের ওপরে দুই পা উঠিয়ে নানা অঙ্গভঙ্গি করে দর্শকদের আনন্দ দেন স্ট্যান্ট বয়রা। তিন বছর ধরে বাইক স্ট্যান্ট করেন উত্তরার আবিদ হাসান। তিনি বলেন, এটা সাধারণ মানুষের কাছে বিপদজ্জনক মনে হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। কারণ এটা অনেক ভয়ঙ্কর এক খেলা। সবার পক্ষে এটা খেলা সম্ভব না। যাদের সাহস আছে তারাই এটা করে। কারন এই খেলা মৃত্যু হাতে নিয়েই করতে হয়।
তিনি বলেন, বাইক স্ট্যান্ট করার জন্য স্ট্যান্ট বয়রা তাদের বাইককে আগে থেকে তৈরি করে নেয়। এর সঙ্গে সঙ্গে তারা নিজেদেরকেও তৈরি করে নেয়। স্ট্যান্ট করার সময় নিজেদের নিরাপত্তার জন্য কিছু প্রস্তুতি নিতে হয়। আর স্ট্যান্ট করা হয় ঢাকার প্রশস্ত সড়কগুলোতে। একাধিক স্ট্যান্ট বয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের উঠতি বয়সী ছেলেরা মুলত ইউটিউবে বিভিন্ন দেশের যুবকদের স্ট্যান্ট করার ভিডিও দেখে উৎসাহী হয়েছে। এসব ভিডিওতে নানা ভঙ্গিতে বাইক নিয়ে কসরত দেখানো হয়। আর এসব দেখে দেখে অন্যরা সেটা আয়ত্ব করে নেয়। বিশেষ করে ঢাকার কিশোর, যুবক ও তরুণদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। ঢাকার অলিগলিতে এখন স্ট্যান্ট বয়দের গ্রুপ তৈরি হয়েছে।
যারা শহরের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে খেলা দেখায়। একজন খেলা দেখায় আর তার সহপাঠিরা এসব দৃশ্য ভিডিও করে তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজে আপলোড করে। ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা যতক্ষণ মাঠে থাকেন ততক্ষণ এসব বাইক বা কারের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া হয়। তবে তারা গভীর রাতটাকেই বেছে নেয়। যে সময় ট্রাফিকের সদস্যরা সড়কে থাকে না বা যানবাহন চলাচল কম থাকে। তিনি বলেন, হাইড্রলিক হর্ন ইদানিং বেশ সমস্যার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। আমরা সবগুলো বিষয় নিয়ে ভাবছি।
No comments