হাসপাতাল নেই সুন্দরবন এলাকায় by সুমেল সারাফাত
সুন্দরবন
ঘিরে জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ লক্ষাধিক বনজীবীর জীবিকা। তাঁদের
চিকিৎসাসেবায় সুন্দরবন এলাকায় নেই কোনো হাসপাতাল। ২০১০ সালে বন বিভাগ
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব পাঠালেও আজ
পর্যন্ত তার কোনো অগ্রগতি নেই।
মৎস্যজীবী সমিতির নেতা ও জেলে এবং মহাজনেরা ফেব্রুয়ারি মাসে সুন্দরবনের দুবলার চরে জেলেদের এক সমাবেশে দুবলার চর–সংলগ্ন এলাকায় দুটি ভাসমান হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানান। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারও ওই হাসপাতাল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত হাসপাতাল নির্মাণের কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের আওতাধীন চারটি রেঞ্জে ও সাগর উপকূলে সাধারণত মৌসুমভিত্তিক বনজীবীদের আগমন ঘটে। এর মধ্যে ইলিশ, শুঁটকি, গোলপাতা, মধু ও মোম আহরণ মৌসুম উল্লেখযোগ্য। সুন্দরবন ও সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছরের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুম, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ইলিশ, মধু ও মোমের মৌসুম এবং বছরের অন্য সময় গোলপাতা আহরণ মৌসুম। তাই প্রায় বছরজুড়েই জীবিকার টানে ছুটে আসেন জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ নানা পেশার লোকজন। সুন্দরবনে এসে বিশুদ্ধ পানি, প্রাণীর আক্রমণ ও অন্যান্য কারণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। মোংলা থেকে নদীপথে দুবলা জেলেপল্লির দূরত্ব প্রায় ৯০ নটিক্যাল মাইল। প্রত্যন্ত এসব স্থান থেকে আহত বা অসুস্থ বনজীবীদের ট্রলারে করে হাসপাতালে নিতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময় লাগে। এ কারণে অনেকে পথেই মারা যান।
বন বিভাগ সূত্র আরও জানায়, এসব অবহেলিত মানুষের কথা চিন্তা করে ১৯৯৩ সালে আন্তমন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত এক বৈঠকে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় তিনটি মিনি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণের কথা বলা হয়। তবে তা আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। এরপর দীর্ঘ ১৭ বছরেও এ নিয়ে বন বিভাগ বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বন বিভাগ সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠায়। ৯ বছর পার হলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতির খবর জানাতে পারেনি বন বিভাগ।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ প্রতিবেদক সুন্দরবনের দুবলার চরে গিয়ে প্রায় ৩০ জন জেলের সঙ্গে কথা বলেন। জেলেরা জানান, মেহের আলীর চর, আলোর কোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, ছাপড়াখালীর চর, কোকিলমণি ও হলদেখালী চরে কোনো চিকিৎসক নেই। শুধু পাঁচ-ছয়টি ফার্মেসি আছে। সেখানে জ্বর বা ডায়রিয়ার ওষুধ ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। ফলে কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকা ছাড়া তাঁদের আর কোনো উপায় থাকে না।
শরণখোলা মৎস্যজীবী ও মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘সারা বছর বিভিন্ন মৌসুমে লক্ষাধিক বনজীবী সুন্দরবনে আসেন। কিন্তুÍতাঁদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। বহু আগে শুনেছিলাম হাসপাতাল হবে। কিন্তু তা যে কবে হবে, কেউ তা বলতে পারে না।’
দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সুন্দরবন থেকে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে এই অবহেলিত বনজীবীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। তাঁদের স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দেওয়া সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে এলেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
শুধু বনজীবীরা নন, চিকিৎসাসেবা পেতে দুর্ভোগে পড়তে হয় বনরক্ষীদেরও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বন কর্মকর্তা বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য বনরক্ষীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়। নৌকা বা ট্রলার
ছাড়া যাতায়াতের অন্য কোনো পথ না থাকায় তাঁদের নিদারুণ দুর্ভোগে পড়তে হয়। সুন্দরবনে ভাসমান হাসপাতাল হলে আমরাও খুব উপকৃত হতাম।’
এ ব্যাপারে সুন্দরবনের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু বনজীবী নয়, সুন্দরবনের দুর্গম এলাকায় যেসব বনরক্ষী কাজ করেন, তাঁদের চিকিৎসাসেবায়ও হাসপাতালের খুব প্রয়োজন। মাননীয় উপমন্ত্রী মহোদয়কে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। এ ছাড়া বেসরকারি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা চলছে। আশা করছি, সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের জন্য মৌসুমভিত্তিক দুটি ভাসমান হাসপাতালের ব্যবস্থা তাঁরা করবেন। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বন বিভাগ দেবে।
মৎস্যজীবী সমিতির নেতা ও জেলে এবং মহাজনেরা ফেব্রুয়ারি মাসে সুন্দরবনের দুবলার চরে জেলেদের এক সমাবেশে দুবলার চর–সংলগ্ন এলাকায় দুটি ভাসমান হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানান। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারও ওই হাসপাতাল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত হাসপাতাল নির্মাণের কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের আওতাধীন চারটি রেঞ্জে ও সাগর উপকূলে সাধারণত মৌসুমভিত্তিক বনজীবীদের আগমন ঘটে। এর মধ্যে ইলিশ, শুঁটকি, গোলপাতা, মধু ও মোম আহরণ মৌসুম উল্লেখযোগ্য। সুন্দরবন ও সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছরের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুম, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ইলিশ, মধু ও মোমের মৌসুম এবং বছরের অন্য সময় গোলপাতা আহরণ মৌসুম। তাই প্রায় বছরজুড়েই জীবিকার টানে ছুটে আসেন জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ নানা পেশার লোকজন। সুন্দরবনে এসে বিশুদ্ধ পানি, প্রাণীর আক্রমণ ও অন্যান্য কারণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। মোংলা থেকে নদীপথে দুবলা জেলেপল্লির দূরত্ব প্রায় ৯০ নটিক্যাল মাইল। প্রত্যন্ত এসব স্থান থেকে আহত বা অসুস্থ বনজীবীদের ট্রলারে করে হাসপাতালে নিতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময় লাগে। এ কারণে অনেকে পথেই মারা যান।
বন বিভাগ সূত্র আরও জানায়, এসব অবহেলিত মানুষের কথা চিন্তা করে ১৯৯৩ সালে আন্তমন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত এক বৈঠকে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় তিনটি মিনি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণের কথা বলা হয়। তবে তা আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। এরপর দীর্ঘ ১৭ বছরেও এ নিয়ে বন বিভাগ বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বন বিভাগ সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠায়। ৯ বছর পার হলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতির খবর জানাতে পারেনি বন বিভাগ।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ প্রতিবেদক সুন্দরবনের দুবলার চরে গিয়ে প্রায় ৩০ জন জেলের সঙ্গে কথা বলেন। জেলেরা জানান, মেহের আলীর চর, আলোর কোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, ছাপড়াখালীর চর, কোকিলমণি ও হলদেখালী চরে কোনো চিকিৎসক নেই। শুধু পাঁচ-ছয়টি ফার্মেসি আছে। সেখানে জ্বর বা ডায়রিয়ার ওষুধ ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। ফলে কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকা ছাড়া তাঁদের আর কোনো উপায় থাকে না।
শরণখোলা মৎস্যজীবী ও মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘সারা বছর বিভিন্ন মৌসুমে লক্ষাধিক বনজীবী সুন্দরবনে আসেন। কিন্তুÍতাঁদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। বহু আগে শুনেছিলাম হাসপাতাল হবে। কিন্তু তা যে কবে হবে, কেউ তা বলতে পারে না।’
দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সুন্দরবন থেকে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে এই অবহেলিত বনজীবীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। তাঁদের স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দেওয়া সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে এলেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
শুধু বনজীবীরা নন, চিকিৎসাসেবা পেতে দুর্ভোগে পড়তে হয় বনরক্ষীদেরও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বন কর্মকর্তা বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য বনরক্ষীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়। নৌকা বা ট্রলার
ছাড়া যাতায়াতের অন্য কোনো পথ না থাকায় তাঁদের নিদারুণ দুর্ভোগে পড়তে হয়। সুন্দরবনে ভাসমান হাসপাতাল হলে আমরাও খুব উপকৃত হতাম।’
এ ব্যাপারে সুন্দরবনের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু বনজীবী নয়, সুন্দরবনের দুর্গম এলাকায় যেসব বনরক্ষী কাজ করেন, তাঁদের চিকিৎসাসেবায়ও হাসপাতালের খুব প্রয়োজন। মাননীয় উপমন্ত্রী মহোদয়কে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। এ ছাড়া বেসরকারি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা চলছে। আশা করছি, সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের জন্য মৌসুমভিত্তিক দুটি ভাসমান হাসপাতালের ব্যবস্থা তাঁরা করবেন। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বন বিভাগ দেবে।
No comments