ভারতের স্টার ওয়ার্স শুরু, সমান জবাব দেয়া উচিত পাকিস্তানের by জমির আকরাম
২৭
শে মার্চ ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র মহাকাশে একটি স্যাটেলাইটকে ধ্বংস করেছে। এর
মধ্য দিয়ে ভারত তার স্যাটেলাইট বিরোধী অর্থাৎ এস্যাট সক্ষমতা প্রদর্শন
করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জোর দিয়ে বলেছেন, ভারত এ বিষয়ক সুপার
লিগে যোগ দিয়েছে। এস্যাট সক্ষমতা আছে এমন সুপারপাওয়ারের গ্রুপের কথা উল্লেখ
করেছেন তিনি। এ গ্রুপে আছে শুধু যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন। তবে যে সময়ে
ভারত ওই পরীক্ষা চালিয়েছে তাতে নরেন্দ্র মোদি তার রাজনৈতিক সুবিধাকে সমৃদ্ধ
করতে চেয়েছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, তিনি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে
সবচেয়ে জটিল নির্বাচনের মুখোমুখি।
এখন দেখার বিষয়ে, তার এই কৌশল জনগণের মত তার পক্ষে আনতে সহায়তা করে কিনা।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সত্ত্বেও ভারতে এখনও দারিদ্র্য রয়েছে উল্লেখযোগ হারে। শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষ বসবাস করছেন দারিদ্র্যসীমার নিচে। কয়েক কাজার হতদরিদ্র্য কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। ২০ কোটির বেশি মানুষ উন্নত টয়লেট সুবিধা পায় না। এখন কাকে বেছে নেবেন সেটা ভারতের জনগণের বিষয়। তবে প্রকৃত সত্য হলো, ‘ইন্ডিয়ার স্টার ওয়ার্স’ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হতে চাইছেন দার্থ ভাদের (স্টার ওয়ার্সের ফিকশনাল চরিত্র)। তার এ কর্মসূচিতে মহাকাশে সামরিকীকরণ বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত স্থিতিশীলতা আরো খর্ব হবে।
ভারতের ওই পরীক্ষাকে তাদের প্রযুুক্তিগত অগ্রগতি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এমন কর্মসূচির মাধ্যমে কাউকে হুমকি দেয়ার কোনো ইচ্ছে নেই ভারতের। এমনটা দাবি করেছেন মোদি। তিনি আরো বলেছেন, মহাকাশে অস্ত্রায়ন, মহাশূন্যে অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় সব সময়ই বিরোধিতা করা হচ্ছে। এই পরীক্ষা এই অবস্থানের কোনো পরিবর্তন করবে না।
এটা হলো ওরওয়েলিয়ানের উভমুখি বক্তব্যের মতো। ১৯৭৪ সালে ভারতের পারমাণবিক কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো একটু এগিয়ে গিয়ে বলেছে, এই পরীক্ষা আমাদের মহাকাশভিত্তিক ক্রমবর্ধমান সম্পদের বিরুদ্ধে যেসব হুমকি, তার বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য একটি উদ্যোগ।
যেহেতু ভারতের এমন পারমাণবিক পরীক্ষা পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর তাই এ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত পাকিস্তানের। এস্যাট পরীক্ষা হলো ভারতের কৌশলগত সামরিক ‘বিল্ডআপ’। মহাকাশে তারা এর শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের কথা বলেছে। এতে সহযোগিতা রয়েছে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের। ফলে এর মধ্য দিয়ে ভারত অর্জন করেছে দ্বৈত ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি, যা তাদের কৌশলগত সক্ষমতাকে সমৃদ্ধ করেছে। সুস্পষ্টভাবে বলা যায়, এস্যাট পরীক্ষা মহাকাশে বিরোধী পক্ষের স্যাটেলাইট ধ্বংস করে দেয়ার ভারতীয় সক্ষমতারই প্রদর্শন। সঙ্কটের সময়ে, দেশের যোগযোগ বিষয়ক স্যাটেলাইট, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, এমন কি ক্ষেপণাস্ত্রও ধ্বংস করে দিতে পারে তারা। এর ফলে ভারত সামরিক দিক থেকে বড় ধরনের সুবিধা পেতে পারে।
এ ছাড়া তাদের দিকে ধেয়ে আসা বিরোধীদের ক্ষেপণাস্ত্রকে টার্গেট করার মাধ্যমে ভারত তার ব্যালিস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে ব্যবহার করতে পারে মহাকাশের সক্ষমতা। একই সময়ে ভারতের এই সক্ষমতা শত্রুপক্ষের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে টার্গেট করতে সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। উপরন্তু মহাকাশ বিষয়ক প্রযুক্তির পর্যাপ্ততা ও ভারতের ভূমি থেকে সাগর ভিত্তিক ইন্টার-কন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করতে পারে। এক্ষেত্রে তারা মহাকাশে টার্গেট এবং নতুন করে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি ব্যবহার করতে পারে।
সার্বিক কৌশলগত সক্ষমতার সমন্বয়ে ভারতের স্টার ওয়ার্স কর্মসূচি শুধু পাকিস্তানের মহাকাশের স্যালেটাইট ধ্বংসেই ব্যবহার হতে পারে এমন নয়, একই সঙ্গে তারা পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় ‘প্রিএম্পটিভ ফার্স্ট স্ট্রাইক’ চালাতে পারে। ভারতের এ বিষয়ক কৌশল নির্ধারণকারী সম্প্রদায় হয়তো এমনই একটি অপশন নিয়ে কাজ করেছেন। এতে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার, স্ট্রাটেজিক ফোর্সেসের কমান্ডার বিএস নাগাল সহ সাবেক ও বর্তমান প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষকরা। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, পাকিস্তান সম্পর্কিত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ নীতির গুণগত মান উন্নত করা উচিত ভারতের। প্রথমত, হামলায় পাকিস্তানের সব পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করে দিয়ে তাদেরকে নিরস্ত্র করে দেয়ার সক্ষমতা লাভ করতে হবে ভারতকে। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের জবাব দেয়ার ক্ষমতাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে হবে, যদি পাকিস্তানের হাতে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র থাকেও। এমন কৌশল বাস্তবায়ন করতে গেলে, আক্রমণাত্মক এই সক্ষমতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে ভারতের মহাকাশ বিষয়ক সম্পদ একটি মূল দায়িত্ব পালন করবে। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের জবাব দেয়ার ক্ষমতাকে খর্ব করে দেয়া হবে। এমনটা হলে ভারতের মহাকাশ বিষয়ক কর্মসুচি দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা আছে তা খর্ব করে দেবে। আর তাতে দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহত্তর অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দেবে।
তবে এখন পর্যন্ত ভারতের এমন সব বিষয়ের বেশির ভাগই হলো ছলনা ও তর্জন গর্জন। কারণ, তাদের প্রথম হামলা চালানোর বিষয়ে যে সক্ষমতা আছে, তা নিয়ে রয়েছে গুরুত্বর সংশয়। তবে এক্ষেত্রে সরাসরি ভারতের চিন্তাভাবনার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।
উপরন্তু ভারতের এমন স্থুলবুদ্ধির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তান। প্রথমত, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ও ডেভিভারি সিস্টেম ভারতের প্রথম হামলায় অতোটা বিপন্ন হওয়ার অবস্থায় নেই। দ্বিতীয়ত, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে নির্ভরযোগ্য নয়। তা পাকিস্তানের ক্রুজ ও এমআইআরভি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ঘায়েল করা সম্ভব। তৃতীয়ত, উচ্চাকাঙ্খা ও সক্ষমতার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে ভারতের।
তা সত্ত্বেও ভারতের ক্রমবর্ধমনা মহাকাশ বিষয়ক সক্ষমতার বিষয়টিকে সতর্কতার সঙ্গে দৃষ্টিতে রাখা উচিত পাকিস্তানের। ভারতের মহাকাশ সক্ষমতা হলো তাদের ভবিষ্যত সামরিক সক্ষমতা ও ভবিষ্যত নিরাপত্তার জন্য নেয়া পদক্ষেপ। এটা স্পষ্ট যে, পাকিস্তানি স্যাটেলাইটে ভারতের যেকোনো হামলা এর যোগাযোগ ব্যবস্থা, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং আগেভাগে সতর্কতা বিষয়ক সক্ষমতাকে ধ্বংস করে দেবে। এর ফলে ভারতের সঙ্গে যেকোনো সঙ্কটে বড় বিপদে পড়বে পাকিস্তান। এ অবস্থায় ভারত যেহেতু ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে তার সক্ষমতা বাড়িয়েছে তাই পাকিস্তানেরও উচিত তার এস্যাট সক্ষমতা বাড়িয়ে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ভারতকে নিবৃত করা বা ভয় দেখানো। এ জন্য আমদের যেসব ক্ষেপণাস্ত্র আছে তার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে যাতে সারা ভারত এর পাল্লার মধ্যে আসে। ভারত যেমনটি করেছে তেমনিভাবে আমাদেরও সামরিক উদ্দেশে মহাকাশে আরো স্যাটেলাইট বসানো উচিত।
এস্যাট পরীক্ষার পরে আন্তর্জাতিক যে প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে তা পাকিস্তানের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য যথেষ্ট নয। ভারত মহাকাশে এসব অস্ত্রের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু মহাকাশে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা প্রতিরোধ করার যে প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছে তা একটি লজ্জার বিষয়, পুরোপুরিই বিশ্বাসযোগ্যতা নেই এর। এ ছাড়া মহাকাশকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং করানোর বিষয়ে আন্তর্জাতিক কোনো মেকানিজম নেই। উপরন্তু ভারতের কৌশলগত অংশীদার হলো যুক্তরাষ্ট্র। তাই তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলি মহাকাশ বিষয়ক সহযোগিতাই শুধু পাবে এমন নয়। একই সঙ্গে তারা মহাকাশ কর্মসূচিতে ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক ছায়া পাবে।
এই অবস্থায়, ভারত যেহেতু স্টার ওয়ার্স শুরু করেছে, একই সমান জবাব দেয়া উচিত পাকিস্তানেরও।
(যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের পাকিস্তানি সংস্করণ একপ্রেস ট্রিবিউনে প্রকাশিত মতামত কলামের অনুবাদ)
এখন দেখার বিষয়ে, তার এই কৌশল জনগণের মত তার পক্ষে আনতে সহায়তা করে কিনা।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সত্ত্বেও ভারতে এখনও দারিদ্র্য রয়েছে উল্লেখযোগ হারে। শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষ বসবাস করছেন দারিদ্র্যসীমার নিচে। কয়েক কাজার হতদরিদ্র্য কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। ২০ কোটির বেশি মানুষ উন্নত টয়লেট সুবিধা পায় না। এখন কাকে বেছে নেবেন সেটা ভারতের জনগণের বিষয়। তবে প্রকৃত সত্য হলো, ‘ইন্ডিয়ার স্টার ওয়ার্স’ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হতে চাইছেন দার্থ ভাদের (স্টার ওয়ার্সের ফিকশনাল চরিত্র)। তার এ কর্মসূচিতে মহাকাশে সামরিকীকরণ বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত স্থিতিশীলতা আরো খর্ব হবে।
ভারতের ওই পরীক্ষাকে তাদের প্রযুুক্তিগত অগ্রগতি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এমন কর্মসূচির মাধ্যমে কাউকে হুমকি দেয়ার কোনো ইচ্ছে নেই ভারতের। এমনটা দাবি করেছেন মোদি। তিনি আরো বলেছেন, মহাকাশে অস্ত্রায়ন, মহাশূন্যে অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় সব সময়ই বিরোধিতা করা হচ্ছে। এই পরীক্ষা এই অবস্থানের কোনো পরিবর্তন করবে না।
এটা হলো ওরওয়েলিয়ানের উভমুখি বক্তব্যের মতো। ১৯৭৪ সালে ভারতের পারমাণবিক কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো একটু এগিয়ে গিয়ে বলেছে, এই পরীক্ষা আমাদের মহাকাশভিত্তিক ক্রমবর্ধমান সম্পদের বিরুদ্ধে যেসব হুমকি, তার বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য একটি উদ্যোগ।
যেহেতু ভারতের এমন পারমাণবিক পরীক্ষা পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর তাই এ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত পাকিস্তানের। এস্যাট পরীক্ষা হলো ভারতের কৌশলগত সামরিক ‘বিল্ডআপ’। মহাকাশে তারা এর শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের কথা বলেছে। এতে সহযোগিতা রয়েছে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের। ফলে এর মধ্য দিয়ে ভারত অর্জন করেছে দ্বৈত ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি, যা তাদের কৌশলগত সক্ষমতাকে সমৃদ্ধ করেছে। সুস্পষ্টভাবে বলা যায়, এস্যাট পরীক্ষা মহাকাশে বিরোধী পক্ষের স্যাটেলাইট ধ্বংস করে দেয়ার ভারতীয় সক্ষমতারই প্রদর্শন। সঙ্কটের সময়ে, দেশের যোগযোগ বিষয়ক স্যাটেলাইট, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, এমন কি ক্ষেপণাস্ত্রও ধ্বংস করে দিতে পারে তারা। এর ফলে ভারত সামরিক দিক থেকে বড় ধরনের সুবিধা পেতে পারে।
এ ছাড়া তাদের দিকে ধেয়ে আসা বিরোধীদের ক্ষেপণাস্ত্রকে টার্গেট করার মাধ্যমে ভারত তার ব্যালিস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে ব্যবহার করতে পারে মহাকাশের সক্ষমতা। একই সময়ে ভারতের এই সক্ষমতা শত্রুপক্ষের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে টার্গেট করতে সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। উপরন্তু মহাকাশ বিষয়ক প্রযুক্তির পর্যাপ্ততা ও ভারতের ভূমি থেকে সাগর ভিত্তিক ইন্টার-কন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করতে পারে। এক্ষেত্রে তারা মহাকাশে টার্গেট এবং নতুন করে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি ব্যবহার করতে পারে।
সার্বিক কৌশলগত সক্ষমতার সমন্বয়ে ভারতের স্টার ওয়ার্স কর্মসূচি শুধু পাকিস্তানের মহাকাশের স্যালেটাইট ধ্বংসেই ব্যবহার হতে পারে এমন নয়, একই সঙ্গে তারা পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় ‘প্রিএম্পটিভ ফার্স্ট স্ট্রাইক’ চালাতে পারে। ভারতের এ বিষয়ক কৌশল নির্ধারণকারী সম্প্রদায় হয়তো এমনই একটি অপশন নিয়ে কাজ করেছেন। এতে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার, স্ট্রাটেজিক ফোর্সেসের কমান্ডার বিএস নাগাল সহ সাবেক ও বর্তমান প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষকরা। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, পাকিস্তান সম্পর্কিত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ নীতির গুণগত মান উন্নত করা উচিত ভারতের। প্রথমত, হামলায় পাকিস্তানের সব পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করে দিয়ে তাদেরকে নিরস্ত্র করে দেয়ার সক্ষমতা লাভ করতে হবে ভারতকে। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের জবাব দেয়ার ক্ষমতাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে হবে, যদি পাকিস্তানের হাতে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র থাকেও। এমন কৌশল বাস্তবায়ন করতে গেলে, আক্রমণাত্মক এই সক্ষমতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে ভারতের মহাকাশ বিষয়ক সম্পদ একটি মূল দায়িত্ব পালন করবে। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের জবাব দেয়ার ক্ষমতাকে খর্ব করে দেয়া হবে। এমনটা হলে ভারতের মহাকাশ বিষয়ক কর্মসুচি দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা আছে তা খর্ব করে দেবে। আর তাতে দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহত্তর অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দেবে।
তবে এখন পর্যন্ত ভারতের এমন সব বিষয়ের বেশির ভাগই হলো ছলনা ও তর্জন গর্জন। কারণ, তাদের প্রথম হামলা চালানোর বিষয়ে যে সক্ষমতা আছে, তা নিয়ে রয়েছে গুরুত্বর সংশয়। তবে এক্ষেত্রে সরাসরি ভারতের চিন্তাভাবনার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।
উপরন্তু ভারতের এমন স্থুলবুদ্ধির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তান। প্রথমত, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ও ডেভিভারি সিস্টেম ভারতের প্রথম হামলায় অতোটা বিপন্ন হওয়ার অবস্থায় নেই। দ্বিতীয়ত, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে নির্ভরযোগ্য নয়। তা পাকিস্তানের ক্রুজ ও এমআইআরভি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ঘায়েল করা সম্ভব। তৃতীয়ত, উচ্চাকাঙ্খা ও সক্ষমতার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে ভারতের।
তা সত্ত্বেও ভারতের ক্রমবর্ধমনা মহাকাশ বিষয়ক সক্ষমতার বিষয়টিকে সতর্কতার সঙ্গে দৃষ্টিতে রাখা উচিত পাকিস্তানের। ভারতের মহাকাশ সক্ষমতা হলো তাদের ভবিষ্যত সামরিক সক্ষমতা ও ভবিষ্যত নিরাপত্তার জন্য নেয়া পদক্ষেপ। এটা স্পষ্ট যে, পাকিস্তানি স্যাটেলাইটে ভারতের যেকোনো হামলা এর যোগাযোগ ব্যবস্থা, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং আগেভাগে সতর্কতা বিষয়ক সক্ষমতাকে ধ্বংস করে দেবে। এর ফলে ভারতের সঙ্গে যেকোনো সঙ্কটে বড় বিপদে পড়বে পাকিস্তান। এ অবস্থায় ভারত যেহেতু ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে তার সক্ষমতা বাড়িয়েছে তাই পাকিস্তানেরও উচিত তার এস্যাট সক্ষমতা বাড়িয়ে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ভারতকে নিবৃত করা বা ভয় দেখানো। এ জন্য আমদের যেসব ক্ষেপণাস্ত্র আছে তার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে যাতে সারা ভারত এর পাল্লার মধ্যে আসে। ভারত যেমনটি করেছে তেমনিভাবে আমাদেরও সামরিক উদ্দেশে মহাকাশে আরো স্যাটেলাইট বসানো উচিত।
এস্যাট পরীক্ষার পরে আন্তর্জাতিক যে প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে তা পাকিস্তানের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য যথেষ্ট নয। ভারত মহাকাশে এসব অস্ত্রের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু মহাকাশে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা প্রতিরোধ করার যে প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছে তা একটি লজ্জার বিষয়, পুরোপুরিই বিশ্বাসযোগ্যতা নেই এর। এ ছাড়া মহাকাশকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং করানোর বিষয়ে আন্তর্জাতিক কোনো মেকানিজম নেই। উপরন্তু ভারতের কৌশলগত অংশীদার হলো যুক্তরাষ্ট্র। তাই তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলি মহাকাশ বিষয়ক সহযোগিতাই শুধু পাবে এমন নয়। একই সঙ্গে তারা মহাকাশ কর্মসূচিতে ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক ছায়া পাবে।
এই অবস্থায়, ভারত যেহেতু স্টার ওয়ার্স শুরু করেছে, একই সমান জবাব দেয়া উচিত পাকিস্তানেরও।
(যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের পাকিস্তানি সংস্করণ একপ্রেস ট্রিবিউনে প্রকাশিত মতামত কলামের অনুবাদ)
No comments