সোহেল রানার পিতার চিকিৎসা চলবে কীভাবে? by আশরাফুল ইসলাম
কতই
বা বয়স হয়েছিল সোহেল রানার। মাত্র ২৪ বছরের ছোট্ট জীবনটাই পরের জন্য
বিলিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি হারিয়ে যাননি হাওরের বিশালতায়। বরং হাওরের জলে
লিখে গেছেন গৌরব আর ত্যাগের ইতিবৃত্ত। অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে দেখিয়ে
দিয়েছেন অসীম সাহসিকতায় আত্মত্যাগের অসামান্য নজির। বনানীর এফ আর টাওয়ারে
অগ্নিকাণ্ডে আটকে পড়াদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে উৎসর্গ করেছেন নিজের জীবন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে সমাহিত করা হয়েছে বাড়ির আঙিনার প্রিয় শিমুল ছায়ায়।
চোখের জলে সোহেল রানাকে শেষ বিদায় জানালেও কান্না থামেনি পরিবারের।
পাগলের মতো ছেলের কবরের দিকে ছুটে যান মা হালিমা খাতুন। সোহেল রানার কবরের দিকে তাকিয়ে চোখের জলে ভাসেন বাবা, ভাই-বোন, স্বজনেরা।
ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মিশুক আর পরোপকারী ছিলেন সোহেল রানা। চরম দারিদ্রতাও কেড়ে নিতে পারেনি তার মুখের হাসি। হাওরের বিশালত্বের মতোই উদার ছিল তার হৃদয়জমিন। অন্যের দুঃখে হতেন সমব্যথী। নিজের সামান্যটুকুও বিলিয়ে দিতেন নিরন্নের মধ্যে। ছেলেকে কবরে শোয়ানোর পরও মা হালিমা খাতুনকে বিলাপ করে বলেন, ‘ফহিন্নীর ঘরে ক্যারে আল্লাহ এমন সোনা দিছিল’।
কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার চৌগাংগা ইউনিয়নের কেরুয়ালা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক নূরুল ইসলামের পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে সোহেল রানা ছিলেন দ্বিতীয়। সবার বড় বোন সেলিনা আক্তার। তারপর সোহেল রানা, রুবেল মিয়া (২৩), উজ্জ্বল মিয়া (২১) ও দেলোয়ার হোসেন (১৫)। বাবা নূরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইসিসের রোগী। তিনি পার্শ্ববর্তী বর্শিকূড়া হাওরে পত্তনি জমিতে জিরাত চাষ করেন। বাবাকে সহায়তা করতে সোহেল রানা ছুটে যেতেন হাওরের জিরাত ঘরে। সেখানে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে ফলাতেন সোনালী ধান। ভাইয়েরা মিলে নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করেছেন বাজারে। কৈশোরেই বসেছেন অটোরিকশার চালকের আসনে। ২০১০ সালে এসএসসি পাশের পর অর্থাভাবে নিজের পড়ালেখা বন্ধ করে দিলেও বন্ধ হতে দেননি ভাই-বোনদের লেখাপড়া।
ফলে সোহেল রানার এইচএসসি পাশের আগেই ছোট ভাই রুবেল ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। অটোরিকশা-টমটম চালিয়ে আর প্রাইভেট টিউশনি করে সোহেলের এইচএসসি পাশের বছরে আরেক ছোট ভাই উজ্জ্বল এসএসসি পাস করেন। ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করা উজ্জ্বল করিমগঞ্জ সরকারি কলেজে বিবিএ তৃতীয় বর্ষে এখন পড়ছেন। ২০১৫ সালে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সে ফায়ারম্যান হিসেবে যোগ দেয়ার পর থেকেই সোহেলই ছিলেন পরিবারের আশার আলো। সোহেলের চাকরির সামান্য বেতনেই চলতো অসুস্থ বাবার চিকিৎসা। টেনে-টুনে চলতো ছোট তিন ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ।
চৌগাংগা শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সোহেল রানার সহপাঠী ছিলেন পার্শ্ববর্তী মাওরা গ্রামের সোহেল। নামের সাথে মিল থাকায় দু’জনের মধ্যেই ছিল গভীর ঘনিষ্ঠতা। গাজীপুরের একটি সোয়েটার কোম্পানিতে কর্মরত সোহেল জানান, সোহেল রানা স্কুলজীবন থেকেই মানুষের সাথে সম্পর্ককে খুব মূল্য দিতেন। কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন না। কারো মনে আঘাত দিয়েও কিছু বলতেন না। স্কুলে টিফিনের সময়ে বন্ধুদের সাথে নিজের টাকায় টিফিন কিনে ভাগাভাগি করে খেতেন। সহপাঠী কারো বিপদে পড়ার খবরে সাথে সাথে ছুটে যেতেন।
কেরুয়ালা গ্রামের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসে সোহেল রানাই ছিলেন প্রথম চাকুরে। ২০১৫ সালে সোহেল রানার ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেয়ার পর সেবাধর্মী এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয় অনেক তরুণের। ছুটিতে সোহেল রানা বাড়িতে এলে তাদের অনেকেই ছুটে যেতেন সোহেল রানার কাছে। গ্রামের মধ্যে আদর্শ হয়ে ওঠা সোহেল রানাকে দেখে অনুপ্রাণিত হতেন তারা। তাদেরই একজন মো. শরিফ মিয়া। ২০১৮ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর তিনি ফায়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে।
বর্তমানে তিনি তাড়াইল ফায়ার স্টেশনে কর্মরত রয়েছেন। মো. শরিফ মিয়া বলেন, ভাইকে (সোহেল রানা) দেখেই ফায়ার সার্ভিসের চাকরিতে আমি অনুপ্রাণিত হই। ফায়ার সার্ভিসের চাকরির জন্য দরখাস্ত থেকে শুরু করে নিয়োগ এবং যোগদান পর্যন্ত সব কাজেই ভাই আমাকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেছেন। তার অকৃত্রিম সহযোগিতার জন্যই আমি ফায়ার সার্ভিসের চাকরিতে যোগ দিতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের জীবনটাকে সাজিয়ে দিয়ে ভাই এমনভাবে চলে যাবেন, স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। কেরুয়ালা গ্রামের বাড়িতে টিনের জরাজীর্ণ একটি চৌচালা ঘর সোহেল রানাদের। সেই ঘরটিকে দু’ভাগ করে এক অংশে চাচা রতন মিয়া ও তার পরিবার এবং অন্য অংশে সোহেল রানার বাবা নূরুল ইসলাম পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। রতন মিয়ার পাঁচ ছেলে সন্তানের মধ্যে সবার বড় মোশারফ হোসেন দশম শ্রেণির ছাত্র। মোশারফ বলেন, ভাই (সোহেল রানা) আমাদের কখনো চাচাতো ভাই মনে করতেন না। আপন ভাইয়ের মতোই তিনি আমাদের আদর-স্নেহ দিতেন। আপন ভাইদের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনলে আমাদের জন্যও কিনতেন। সাত জন্মেও মানুষ এমন চাচাতো ভাই পায় কিনা জানি না!
সোহেল রানা স্থানীয় কেরুয়ালা জামে মসজিদে কোরআন শিক্ষা, চৌগাংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে চৌগাংগা শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায় তার লেখাপড়া। এই সময়ে অটোরিকশা ও টমটম চালিয়ে পরিবারকে সহায়তা করেছেন। এভাবে দুই বছর পাঠবিরতির পর করিমগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। এইচএসসি পাশের পর ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে ফায়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে। ট্রেনিং শেষে মুন্সীগঞ্জ নদীঘাট ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে প্রথম যোগদান করেন সোহেল রানা। সেখানে মাস চারেক দায়িত্ব পালন করার পর থেকে তিনি কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সর্বশেষ গত ১৫ই মার্চ ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন সোহেল রানা। ছুটি শেষে ২৩শে মার্চ তিনি কর্মস্থলে যোগ দেন। কর্মস্থলে যোগ দেয়ার মাত্র ৫দিন পরেই ২৮শে মার্চ ঘটে বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।
সোহেল রানার ছোট ভাই রুবেল মিয়া জানান, পরিবার থেকে বারবার তাগিদ দিয়েও তাকে বিয়ে করানো যায়নি।
রুবেল বলেন, ভাই-ই ছিলেন আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যু আমাদের স্তব্ধ করে দিয়েছে।
সোহেল রানার বাবা নূরুল ইসলাম বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে জানান, গত ২৩শে মার্চ ছুটি শেষে চাকরিতে যাওয়ার সময়ে সোহেল বলেছিলো, ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে এসে তোমাকে ধান কাটায় সাহায্য করবো। ধান তোলা শেষে বাবাকে চিকিৎসা করাবেন বলেও জানিয়েছেন। কিন্ত বনানীর আগুন সোহেলের সব স্বপ্ন-আশা কেড়ে নিয়েছে।
নূরুল ইসলাম বলেন, সোহেলই ছিল আমার আশার আলো। সেই আলো অহন নিইভ্যা গিয়ে আমরার জীবনটা অহন আন্ধাইর অইয়া গেছে।
পাগলের মতো ছেলের কবরের দিকে ছুটে যান মা হালিমা খাতুন। সোহেল রানার কবরের দিকে তাকিয়ে চোখের জলে ভাসেন বাবা, ভাই-বোন, স্বজনেরা।
ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মিশুক আর পরোপকারী ছিলেন সোহেল রানা। চরম দারিদ্রতাও কেড়ে নিতে পারেনি তার মুখের হাসি। হাওরের বিশালত্বের মতোই উদার ছিল তার হৃদয়জমিন। অন্যের দুঃখে হতেন সমব্যথী। নিজের সামান্যটুকুও বিলিয়ে দিতেন নিরন্নের মধ্যে। ছেলেকে কবরে শোয়ানোর পরও মা হালিমা খাতুনকে বিলাপ করে বলেন, ‘ফহিন্নীর ঘরে ক্যারে আল্লাহ এমন সোনা দিছিল’।
কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার চৌগাংগা ইউনিয়নের কেরুয়ালা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক নূরুল ইসলামের পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে সোহেল রানা ছিলেন দ্বিতীয়। সবার বড় বোন সেলিনা আক্তার। তারপর সোহেল রানা, রুবেল মিয়া (২৩), উজ্জ্বল মিয়া (২১) ও দেলোয়ার হোসেন (১৫)। বাবা নূরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইসিসের রোগী। তিনি পার্শ্ববর্তী বর্শিকূড়া হাওরে পত্তনি জমিতে জিরাত চাষ করেন। বাবাকে সহায়তা করতে সোহেল রানা ছুটে যেতেন হাওরের জিরাত ঘরে। সেখানে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে ফলাতেন সোনালী ধান। ভাইয়েরা মিলে নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করেছেন বাজারে। কৈশোরেই বসেছেন অটোরিকশার চালকের আসনে। ২০১০ সালে এসএসসি পাশের পর অর্থাভাবে নিজের পড়ালেখা বন্ধ করে দিলেও বন্ধ হতে দেননি ভাই-বোনদের লেখাপড়া।
ফলে সোহেল রানার এইচএসসি পাশের আগেই ছোট ভাই রুবেল ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। অটোরিকশা-টমটম চালিয়ে আর প্রাইভেট টিউশনি করে সোহেলের এইচএসসি পাশের বছরে আরেক ছোট ভাই উজ্জ্বল এসএসসি পাস করেন। ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করা উজ্জ্বল করিমগঞ্জ সরকারি কলেজে বিবিএ তৃতীয় বর্ষে এখন পড়ছেন। ২০১৫ সালে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সে ফায়ারম্যান হিসেবে যোগ দেয়ার পর থেকেই সোহেলই ছিলেন পরিবারের আশার আলো। সোহেলের চাকরির সামান্য বেতনেই চলতো অসুস্থ বাবার চিকিৎসা। টেনে-টুনে চলতো ছোট তিন ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ।
চৌগাংগা শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সোহেল রানার সহপাঠী ছিলেন পার্শ্ববর্তী মাওরা গ্রামের সোহেল। নামের সাথে মিল থাকায় দু’জনের মধ্যেই ছিল গভীর ঘনিষ্ঠতা। গাজীপুরের একটি সোয়েটার কোম্পানিতে কর্মরত সোহেল জানান, সোহেল রানা স্কুলজীবন থেকেই মানুষের সাথে সম্পর্ককে খুব মূল্য দিতেন। কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন না। কারো মনে আঘাত দিয়েও কিছু বলতেন না। স্কুলে টিফিনের সময়ে বন্ধুদের সাথে নিজের টাকায় টিফিন কিনে ভাগাভাগি করে খেতেন। সহপাঠী কারো বিপদে পড়ার খবরে সাথে সাথে ছুটে যেতেন।
কেরুয়ালা গ্রামের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসে সোহেল রানাই ছিলেন প্রথম চাকুরে। ২০১৫ সালে সোহেল রানার ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেয়ার পর সেবাধর্মী এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয় অনেক তরুণের। ছুটিতে সোহেল রানা বাড়িতে এলে তাদের অনেকেই ছুটে যেতেন সোহেল রানার কাছে। গ্রামের মধ্যে আদর্শ হয়ে ওঠা সোহেল রানাকে দেখে অনুপ্রাণিত হতেন তারা। তাদেরই একজন মো. শরিফ মিয়া। ২০১৮ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর তিনি ফায়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে।
বর্তমানে তিনি তাড়াইল ফায়ার স্টেশনে কর্মরত রয়েছেন। মো. শরিফ মিয়া বলেন, ভাইকে (সোহেল রানা) দেখেই ফায়ার সার্ভিসের চাকরিতে আমি অনুপ্রাণিত হই। ফায়ার সার্ভিসের চাকরির জন্য দরখাস্ত থেকে শুরু করে নিয়োগ এবং যোগদান পর্যন্ত সব কাজেই ভাই আমাকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেছেন। তার অকৃত্রিম সহযোগিতার জন্যই আমি ফায়ার সার্ভিসের চাকরিতে যোগ দিতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের জীবনটাকে সাজিয়ে দিয়ে ভাই এমনভাবে চলে যাবেন, স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। কেরুয়ালা গ্রামের বাড়িতে টিনের জরাজীর্ণ একটি চৌচালা ঘর সোহেল রানাদের। সেই ঘরটিকে দু’ভাগ করে এক অংশে চাচা রতন মিয়া ও তার পরিবার এবং অন্য অংশে সোহেল রানার বাবা নূরুল ইসলাম পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। রতন মিয়ার পাঁচ ছেলে সন্তানের মধ্যে সবার বড় মোশারফ হোসেন দশম শ্রেণির ছাত্র। মোশারফ বলেন, ভাই (সোহেল রানা) আমাদের কখনো চাচাতো ভাই মনে করতেন না। আপন ভাইয়ের মতোই তিনি আমাদের আদর-স্নেহ দিতেন। আপন ভাইদের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনলে আমাদের জন্যও কিনতেন। সাত জন্মেও মানুষ এমন চাচাতো ভাই পায় কিনা জানি না!
সোহেল রানা স্থানীয় কেরুয়ালা জামে মসজিদে কোরআন শিক্ষা, চৌগাংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে চৌগাংগা শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায় তার লেখাপড়া। এই সময়ে অটোরিকশা ও টমটম চালিয়ে পরিবারকে সহায়তা করেছেন। এভাবে দুই বছর পাঠবিরতির পর করিমগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। এইচএসসি পাশের পর ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে ফায়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে। ট্রেনিং শেষে মুন্সীগঞ্জ নদীঘাট ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে প্রথম যোগদান করেন সোহেল রানা। সেখানে মাস চারেক দায়িত্ব পালন করার পর থেকে তিনি কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সর্বশেষ গত ১৫ই মার্চ ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন সোহেল রানা। ছুটি শেষে ২৩শে মার্চ তিনি কর্মস্থলে যোগ দেন। কর্মস্থলে যোগ দেয়ার মাত্র ৫দিন পরেই ২৮শে মার্চ ঘটে বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।
সোহেল রানার ছোট ভাই রুবেল মিয়া জানান, পরিবার থেকে বারবার তাগিদ দিয়েও তাকে বিয়ে করানো যায়নি।
রুবেল বলেন, ভাই-ই ছিলেন আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যু আমাদের স্তব্ধ করে দিয়েছে।
সোহেল রানার বাবা নূরুল ইসলাম বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে জানান, গত ২৩শে মার্চ ছুটি শেষে চাকরিতে যাওয়ার সময়ে সোহেল বলেছিলো, ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে এসে তোমাকে ধান কাটায় সাহায্য করবো। ধান তোলা শেষে বাবাকে চিকিৎসা করাবেন বলেও জানিয়েছেন। কিন্ত বনানীর আগুন সোহেলের সব স্বপ্ন-আশা কেড়ে নিয়েছে।
নূরুল ইসলাম বলেন, সোহেলই ছিল আমার আশার আলো। সেই আলো অহন নিইভ্যা গিয়ে আমরার জীবনটা অহন আন্ধাইর অইয়া গেছে।
No comments