সন্তানের কাছে হুমায়ূন আহমেদই ছিলেন মিসির আলি-হিমু by ওয়ালিউল বিশ্বাস
মিসির
আলি ও হিমু; বাংলা সাহিত্যের অনবদ্য চরিত্র। একজন চলেন যুক্তি দিয়ে,
অন্যজনের কাছে আবেগটাই বড়। সম্পূর্ণ বিপরীত কিন্তু প্রায় সমান জনপ্রিয় এ
চরিত্রগুলোর স্রষ্টা নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর কারণেই শত শত যুবক
খালি পায়ে রাস্তায় নামে। পাঞ্জাবি গায়ে হতে চায় হিমু! কিংবা যুক্তি বা
বাস্তবতার আলোকে মিসির আলির মতো চারদিকে তাকায়।
কিন্তু এই দুই চরিত্র আসলে কারা? কাদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ হুমায়ূন? তার সঙ্গে কাজ করা অসংখ্য শিল্পী কিংবা তার সন্তান নুহাশের মতে, এ চরিত্র দুটির বাস হুমায়ূনর ভেতরেই! তিনিই আসলে মনে ধারণ করেন হিমু, আবার ভাবেন মিসির আলির মতো করে!
সম্প্রতি হুমায়ূনর ‘দেবী’ উপন্যাস নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রে মিসির আলি চরিত্রে অভিনয় করা চঞ্চল চৌধুরীর মতে, হুমায়ূন আহমেদই মিসির আলি।
ছবিটি দেখতে এসে ঠিক এমনটাই জানিয়েছিলেন হুমায়ূনপুত্র নুহাশ। তার ভাষ্য, ‘মিসির আলি চরিত্রটা আমি আসলে কারও সঙ্গে কম্পেয়ার করতে পারব না। কারণ, আমি যখন উপন্যাসটি পড়ি তখন চোখে শুধু বাবাকেই দেখি। বাবাই আমার কাছে মিসির আলি।’
ঠিক একইভাবে নুহাশ হিমু চরিত্রটির ছায়াও পেতেন বাবার মধ্যে।
তবে হুমায়ূন আহমেদের লেখনী মতে, তিনি মিসির আলি চরিত্রটির ধারণা প্রথম পেয়ে যান যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটার ফার্গো শহরে, স্ত্রী গুলতেকিন খানের সাথে গাড়িতে ভ্রমণের সময়। এটি মাথায় চলে এলেও তিনি মিসির আলি চরিত্রের প্রথম উপন্যাস ‘দেবী’ লেখেন এই ঘটনার অনেকদিন পর।
মিসির আলি কোনও বাস্তব চরিত্রকে দেখে লেখা কিনা- এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও তিনি একবার উত্তর করেছিলেন এভাবে, ‘না, মিসির আলিকে আমি দেখিনি। অনেকে মনে করেন লেখক নিজেই হয়তো মিসির আলি। তাদের বিনীতভাবে জানাচ্ছি, আমি মিসির আলি নই। আমি যুক্তির প্রাসাদ তৈরি করতে পারি না এবং আমি কখনও মিসির আলির মতো মনে করি না প্রকৃতিতে কোনও রহস্য নেই। আমার কাছে সব সময় প্রকৃতিকে অসীম রহস্যময় মনে হয়।’
কিন্তু এই অভয়বাণী সত্ত্বেও ‘নলিনী বাবু B.Sc’ উপন্যাসে লেখককেই মিসির আলির ভূমিকায় দেখা যায়! তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি (লেখক) এই ভেবে আনন্দ পেলাম যে, সালেহ চৌধুরী (লেখকের সফরসঙ্গী) মিসির আলিকে উপন্যাসের চরিত্র হিসেবে দেখছেন না।’
কিন্তু তাহলে হিমু?
এ চরিত্রটিতে অভিনয় করা মোশাররফ করিম একবার বলেছিলেন, এ চরিত্রটি আসলে হুমায়ূন নিজেই।
হিমু চরিত্রের আসল নাম হিমালয়। এ নামটি রেখেছিলেন তার বাবা। লেখক হিমুর বাবাকে বর্ণনা করেছেন একজন বিকারগ্রস্ত মানুষ হিসেবে; যার বিশ্বাস ছিল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা যায় তবে একইভাবে মহাপুরুষও তৈরি করা সম্ভব। তিনি মহাপুরুষ তৈরির জন্য একটি বিদ্যালয় তৈরি করেছিলেন, যার একমাত্র ছাত্র ছিল তার সন্তান হিমু। হিমুর পোশাক হলো পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবি। হলুদ বৈরাগের রঙ বলেই পোশাকের রঙ হলুদ নির্বাচিত করা হয়েছিল। ঢাকা শহরের পথে পথে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানো তার নিয়মিত কাজ। রুমের দরজার খোলা রেখে ঘুমানো, বৃষ্টিতে ভেজা বা শব্দ শুনতেও এ চরিত্রটি পছন্দ করত। কবির মতো ব্যাগ বা কবিতা আওড়াতেও দেখা যেত তাকে।
মজার বিষয় হলো, এই চরিত্রটির সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ নিজের অনেক কিছুই মিলে যেত। উদাসী এ লেখকের বাসায় কোনও লকার ছিল না। কোনও তালা-চাবি ছিল না। তিনি বাসা লক করে ঘুমাননি।
হুমায়ূন আহমেদ জোরে জোরে কবিতা আবৃত্তি করতে ভালোবাসতেন। আবৃত্তির ক্ষেত্রে তার প্রিয় কবিতা ছিল জীবনানন্দ দাশের ‘ক্যাম্পে’ এবং রবার্ট ফ্রস্টের ‘স্টপিং বাই উডস অন আ স্নোয়ি ইভনিং’।
হিমুর মতোই তিনি বৃষ্টি প্রচণ্ড পছন্দ করতেন। নিজের বাগানবাড়ি নুহাশপল্লীতে আছে ‘বৃষ্টি বিলাস’ নামের কটেজ।
লেখকের বাগানবাড়িতে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তার মতে, বৃষ্টির আগ দিয়ে তারা হুমায়ূন আহমেদের জন্য প্রস্তুত হতেন। কারণ, বৃষ্টি মানেই হুমায়ূন আহমেদের গা ভেজানোর নিজস্ব নিয়ম। ঠিক হিমুর মতোই পূর্ণিমাতে তিনি অস্থির হয়ে উঠতেন।
বাংলা সাহিত্যের অসম্ভব প্রতিভাবান এ লেখকের লেখায় মুগ্ধ হয়ে তার মতোই ছেলেমেয়েরা আজও বৃষ্টি মেখে চলেছেন, ভিজছেন জোছনায়।
আজ সেই জোছনার গল্পকথকের জন্মদিন!
কিন্তু এই দুই চরিত্র আসলে কারা? কাদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ হুমায়ূন? তার সঙ্গে কাজ করা অসংখ্য শিল্পী কিংবা তার সন্তান নুহাশের মতে, এ চরিত্র দুটির বাস হুমায়ূনর ভেতরেই! তিনিই আসলে মনে ধারণ করেন হিমু, আবার ভাবেন মিসির আলির মতো করে!
সম্প্রতি হুমায়ূনর ‘দেবী’ উপন্যাস নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রে মিসির আলি চরিত্রে অভিনয় করা চঞ্চল চৌধুরীর মতে, হুমায়ূন আহমেদই মিসির আলি।
ছবিটি দেখতে এসে ঠিক এমনটাই জানিয়েছিলেন হুমায়ূনপুত্র নুহাশ। তার ভাষ্য, ‘মিসির আলি চরিত্রটা আমি আসলে কারও সঙ্গে কম্পেয়ার করতে পারব না। কারণ, আমি যখন উপন্যাসটি পড়ি তখন চোখে শুধু বাবাকেই দেখি। বাবাই আমার কাছে মিসির আলি।’
ঠিক একইভাবে নুহাশ হিমু চরিত্রটির ছায়াও পেতেন বাবার মধ্যে।
তবে হুমায়ূন আহমেদের লেখনী মতে, তিনি মিসির আলি চরিত্রটির ধারণা প্রথম পেয়ে যান যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটার ফার্গো শহরে, স্ত্রী গুলতেকিন খানের সাথে গাড়িতে ভ্রমণের সময়। এটি মাথায় চলে এলেও তিনি মিসির আলি চরিত্রের প্রথম উপন্যাস ‘দেবী’ লেখেন এই ঘটনার অনেকদিন পর।
মিসির আলি কোনও বাস্তব চরিত্রকে দেখে লেখা কিনা- এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও তিনি একবার উত্তর করেছিলেন এভাবে, ‘না, মিসির আলিকে আমি দেখিনি। অনেকে মনে করেন লেখক নিজেই হয়তো মিসির আলি। তাদের বিনীতভাবে জানাচ্ছি, আমি মিসির আলি নই। আমি যুক্তির প্রাসাদ তৈরি করতে পারি না এবং আমি কখনও মিসির আলির মতো মনে করি না প্রকৃতিতে কোনও রহস্য নেই। আমার কাছে সব সময় প্রকৃতিকে অসীম রহস্যময় মনে হয়।’
কিন্তু এই অভয়বাণী সত্ত্বেও ‘নলিনী বাবু B.Sc’ উপন্যাসে লেখককেই মিসির আলির ভূমিকায় দেখা যায়! তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি (লেখক) এই ভেবে আনন্দ পেলাম যে, সালেহ চৌধুরী (লেখকের সফরসঙ্গী) মিসির আলিকে উপন্যাসের চরিত্র হিসেবে দেখছেন না।’
কিন্তু তাহলে হিমু?
এ চরিত্রটিতে অভিনয় করা মোশাররফ করিম একবার বলেছিলেন, এ চরিত্রটি আসলে হুমায়ূন নিজেই।
হিমু চরিত্রের আসল নাম হিমালয়। এ নামটি রেখেছিলেন তার বাবা। লেখক হিমুর বাবাকে বর্ণনা করেছেন একজন বিকারগ্রস্ত মানুষ হিসেবে; যার বিশ্বাস ছিল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা যায় তবে একইভাবে মহাপুরুষও তৈরি করা সম্ভব। তিনি মহাপুরুষ তৈরির জন্য একটি বিদ্যালয় তৈরি করেছিলেন, যার একমাত্র ছাত্র ছিল তার সন্তান হিমু। হিমুর পোশাক হলো পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবি। হলুদ বৈরাগের রঙ বলেই পোশাকের রঙ হলুদ নির্বাচিত করা হয়েছিল। ঢাকা শহরের পথে পথে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানো তার নিয়মিত কাজ। রুমের দরজার খোলা রেখে ঘুমানো, বৃষ্টিতে ভেজা বা শব্দ শুনতেও এ চরিত্রটি পছন্দ করত। কবির মতো ব্যাগ বা কবিতা আওড়াতেও দেখা যেত তাকে।
মজার বিষয় হলো, এই চরিত্রটির সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ নিজের অনেক কিছুই মিলে যেত। উদাসী এ লেখকের বাসায় কোনও লকার ছিল না। কোনও তালা-চাবি ছিল না। তিনি বাসা লক করে ঘুমাননি।
হুমায়ূন আহমেদ জোরে জোরে কবিতা আবৃত্তি করতে ভালোবাসতেন। আবৃত্তির ক্ষেত্রে তার প্রিয় কবিতা ছিল জীবনানন্দ দাশের ‘ক্যাম্পে’ এবং রবার্ট ফ্রস্টের ‘স্টপিং বাই উডস অন আ স্নোয়ি ইভনিং’।
হিমুর মতোই তিনি বৃষ্টি প্রচণ্ড পছন্দ করতেন। নিজের বাগানবাড়ি নুহাশপল্লীতে আছে ‘বৃষ্টি বিলাস’ নামের কটেজ।
লেখকের বাগানবাড়িতে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তার মতে, বৃষ্টির আগ দিয়ে তারা হুমায়ূন আহমেদের জন্য প্রস্তুত হতেন। কারণ, বৃষ্টি মানেই হুমায়ূন আহমেদের গা ভেজানোর নিজস্ব নিয়ম। ঠিক হিমুর মতোই পূর্ণিমাতে তিনি অস্থির হয়ে উঠতেন।
বাংলা সাহিত্যের অসম্ভব প্রতিভাবান এ লেখকের লেখায় মুগ্ধ হয়ে তার মতোই ছেলেমেয়েরা আজও বৃষ্টি মেখে চলেছেন, ভিজছেন জোছনায়।
আজ সেই জোছনার গল্পকথকের জন্মদিন!
No comments