অফিসার্স ক্লাবে প্রশাসন-পুলিশের গোপন বৈঠকের খবর দিলেন রিজভী
প্রশাসন
ও পুলিশের ‘দলবাজ’ কর্মকর্তাদের আবারো নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে
প্রত্যাহারের দাবি করে সমপ্রতি তাদের এক গোপন বৈঠকের খবর দিয়েছে বিএনপি।
গতকাল সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
এই দাবি জানান। তিনি বলেন, প্রশাসন ও পুলিশের বিতর্কিত ও দলবাজ
কর্মকর্তারা জনসমর্থনহীন আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় বসানোর জন্য নানা
চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। প্রতিনিয়ত তারা গোপন বৈঠক করছে। গত ২০শে
নভেম্বর রাতে ঢাকার বেইলী রোডে অফিসার্স ক্লাবের চারতলায় পেছনের কনফারেন্স
রুমে এক গোপন মিটিং হয়। এ মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর সচিব সাজ্জাদুল হাসান,
জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমদ, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ,
পানিসম্পদ সচিব (প্রধানমন্ত্রীর অফিসের প্রাক্তন ডিজি) কবির বিন আনোয়ার,
বেসামরিক বিমান চলাচল সচিব মহিবুল হক, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার ও মহানগরী
রিটার্নিং অফিসার আলী আজম, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-১ কাজী নিশাত রসুল (বিচারক
কাজী গোলাম রসুলের মেয়ে) ছাড়াও র্যাব, পুলিশ, ডিএমপি, কাউন্টার
টেরোরিজমের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
২০শে নভেম্বরের ‘দলবাজ’ কর্মকর্তাদের বৈঠকের খবর দিয়ে রিজভী আহমেদ আরো বলেন, আমাদের কাছে বিভিন্ন সূত্রে এই খবর এসেছে। রাত সাড়ে ৭টা থেকে আড়াই ঘণ্টার ওই বৈঠকে সারা দেশে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং সেটআপ ও প্ল্যান রিভিউ করা হয়।
সেখানে ডিআইজি হাবিব জানান, পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী ৩৩টি সিট নৌকার কনফার্ম আছে এবং ৬০-৬৫টিতে কনটেস্ট হবে, বাকি আর কোনো সম্ভাবনা নেই। কাজেই সাংঘাতিক কিছু করা ছাড়া এটি উতরানো যাবে না। সারা দেশে ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং করার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) প্রথম তালিকায় যে ৬ জন সচিবকে নিয়ে একটি গুপ্ত কমিটি গঠন করেছেন সেই কমিটির বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে।
রিজভী আহমেদ জানান, বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা শেষে মূল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়- নির্বাচন কমিশন থেকে বিএনপি-ফ্রন্টকে চরম অসহযোগিতা করা হবে। যতই চাপ দেয়া হোক প্রশাসনে হাত দেয়া যাবে না। ধরপাকড় বাড়ানো হবে, প্রার্থী গুম-খুন করে এমন অবস্থা তৈরি করা হবে যাতে তারা নির্বাচন থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়। রিজভী বলেন, সেটির আলামত ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে যশোর জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু বকর আবুকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়ার মধ্যদিয়ে। বৈঠকে আরো বলা হয়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যদি শেষ পর্যন্ত ভোটে থেকে যায় তাহলে ভোটের দিন পর্যন্ত ধরপাকড়ের তাণ্ডব চালানো হবে নির্দয়ভাবে। যেনো ভোট কেন্দ্রে কেউ হাজির হতে সাহস না করে।
আর যদি ধানের শীষের অনুকূলে ভোটের হাওয়া ঠেকানো না যায়, তবে মিডিয়া ক্যু করে নৌকাকে জিতানো হবে। বিটিভির মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণা করে সব মিডিয়াতে তা রিলে করার ব্যবস্থা করা হবে। একবার ফল ঘোষণা করতে পারলে তারপরে নির্মমভাবে সব ঠাণ্ডা করা হবে। বৈঠকে বলা হয়, এরপর থেকে এ ধরনের সভা খুব বেশি করা যাবে না, তবে কনসালটেশন করে কাজ করা হবে। এ ছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির নামে আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ৮ জন আওয়ামী দলীয় কর্মকর্তা দিয়ে মনিটরিং সেল গঠন করে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান ৪৫ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ৬৪ জেলার উপদেষ্টা (মেনটর) নিয়োগ করে একটি নজিরবিহীন সরকারি আদেশ জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ নিয়ে বিএনপির লিখিত আপত্তির প্রেক্ষিতে তা বাতিল করতে বাধ্য হয়।
কিন্তু গোপনে ঐসব কর্মকর্তারা জেলায় জেলায় মনিটরিংয়ের কাজ এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। এর বাইরে সারা দেশের ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং করার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা প্রথম তালিকার ৬ জন সচিবকে নিয়ে একটি গুপ্ত কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে। রিজভী বলেন, এখানে সব ধরনের অফিসারদের গমনাগমন ঘটে থাকে, তাই বিরোধী পক্ষের চোখ এড়ানো সহজ হবে মনে করে অফিসার্স ক্লাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সভাটি বসে। রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীনরা আসন্ন ভোট নিয়ে কি ভয়ঙ্কর পরিকল্পনায় মেতে উঠেছে। উপরোক্ত দলবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও কর্মকাণ্ড সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচন কমিশনকে লিখিত আকারে জানানো হয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে সরকারের এজেন্ডা নির্বাচন কমিশন কখনো প্রকাশ্যে কখনো নীরবে-নিভৃতে বাস্তবায়ন করছে-এই অভিযোগ এখন সর্বত্র ভূরিভূরি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিরসন করতে সক্ষম হয়নি। রিজভী বলেন, তফসিল ঘোষণার পরও আওয়ামী প্রশাসনিক দাপটের ছবিটা মোটেও বদলায়নি- এটাও তার একটি প্রমাণ। কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বে কতিপয় কমিশনার তাদেরকে স্বপদে বহাল রাখতে তৎপর। বিএনপি যাদের তালিকা দিয়েছে ওই দলবাজ কর্মকর্তাদের সরাতে নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে কাজ করছে বলেই এই অভিযোগগুলো থেকে ছিটকে আসা কাদা তারা ঠেকাতে পারেনি। রিজভী আহমেদ বলেন, আমরা আবারো বলতে চাই- বিতর্কিত নির্বাচনীকর্মকর্তাদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তাদেরকে প্রত্যাহার করতে হবে।
সমপ্রতি গ্রেপ্তার হওয়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রথম শ্রেণির ডিভিশন বাতিল করে দেয়ার ঘটনার নিন্দা জানান রিজভী আহমেদ। বলেন, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী একজন সাবেক এমপি। তাকে আটক করার পর প্রথমে ডিভিশন দেয়া হলেও গতকাল (শুক্রবার) তা বাতিল করে সাধারণ কয়েদিদের ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। মানসিক ও শারীরিকভাবে যন্ত্রণা দিতেই কারাগারে তার ডিভিশন বাতিল করা হয়েছে বলে আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই।
রিজভী বলেন, গত ২১শে নভেম্বর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গোয়েন্দা পুলিশ রমনা ছাত্রদলের নেতা মাসুদ রানাকে তুলে নেয়ার পর এখন তা অস্বীকার করছে। তার পরিবারের সদস্যদের মতো আমরাও উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে তাকে জনসমক্ষে হাজির করার দাবি জানাচ্ছি। রিজভী বলেন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্যই আইনি প্রক্রিয়ার নামে বারবার হয়রানি করা হচ্ছে। হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করার পরও সেই আদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে সরকার পক্ষ। উদ্দেশ্য টুকুকে আটকে রাখা, যাতে সে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে।
কিশোরগঞ্জে মনোনয়নপ্রত্যাশী শরীফুল আলমসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরসহ বিভিন্ন জেলায় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার চিত্র তুলে ধরেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। রিজভী বলেন, কয়েকদিন আগে ভৈরবে বিএনপির শান্তিপূর্ণ একটি উঠোন বৈঠক চলাকালে পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী ছাত্রলীগ-যুুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় উল্টো পুলিশ বাদী হয়ে গত ১৯শে নভেম্বর ৪৮ জনকে জ্ঞাত ও ৩৫০ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেছে। একই ঘটনায় শুক্রবার রাতে ভৈরবে যুবলীগের পৌর সভাপতি বাদী হয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৯৮ জনকে জ্ঞাত ও ১০০ জন নেতাকর্মীকে অজ্ঞাত আসামি করে আরেকটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। বিএনপি নেতা জামাল ডাক্তার ও আলমগীর মেম্বারসহ ইতিমধ্যেই পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
কয়েকদিন থেকেই পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে তাণ্ডব চালাচ্ছে। রিজভী বলেন, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী শরিফুল আলমসহ নেতাকর্মীরা এখন এলাকাছাড়া। আমরা এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন, শরীফুল আলম, আবদুল আউয়াল খান, হারুনুর রশীদ ও আশরাফউদ্দিন বকুল উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গোপন বৈঠকের অভিযোগের ব্যাপারে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব মো. মহিবুল হক বিবিসিকে বলেন, তাদের ব্যাচমেটদের মেলামেশাকে রাজনৈতিক রং দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ব্যাচমেটরা মাঝেমধ্যে একসঙ্গে বসি, ভবিষ্যতেও বসবো। এটাকে পলিটিসাইজ করার কিছু নেই। গোপন বৈঠকের খবর সঠিক নয় দাবি করে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বলেছেন, তাকে হেয় করতে প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। আমি কোন ধরনের বৈঠকে অংশ নেইনি। পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান বৈঠকে অংশ নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, অফিসার্স ক্লাবে মিটিং করার তথ্য মিথ্যা ও বানোয়াট।
২০শে নভেম্বরের ‘দলবাজ’ কর্মকর্তাদের বৈঠকের খবর দিয়ে রিজভী আহমেদ আরো বলেন, আমাদের কাছে বিভিন্ন সূত্রে এই খবর এসেছে। রাত সাড়ে ৭টা থেকে আড়াই ঘণ্টার ওই বৈঠকে সারা দেশে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং সেটআপ ও প্ল্যান রিভিউ করা হয়।
সেখানে ডিআইজি হাবিব জানান, পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী ৩৩টি সিট নৌকার কনফার্ম আছে এবং ৬০-৬৫টিতে কনটেস্ট হবে, বাকি আর কোনো সম্ভাবনা নেই। কাজেই সাংঘাতিক কিছু করা ছাড়া এটি উতরানো যাবে না। সারা দেশে ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং করার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) প্রথম তালিকায় যে ৬ জন সচিবকে নিয়ে একটি গুপ্ত কমিটি গঠন করেছেন সেই কমিটির বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে।
রিজভী আহমেদ জানান, বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা শেষে মূল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়- নির্বাচন কমিশন থেকে বিএনপি-ফ্রন্টকে চরম অসহযোগিতা করা হবে। যতই চাপ দেয়া হোক প্রশাসনে হাত দেয়া যাবে না। ধরপাকড় বাড়ানো হবে, প্রার্থী গুম-খুন করে এমন অবস্থা তৈরি করা হবে যাতে তারা নির্বাচন থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়। রিজভী বলেন, সেটির আলামত ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে যশোর জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু বকর আবুকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়ার মধ্যদিয়ে। বৈঠকে আরো বলা হয়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যদি শেষ পর্যন্ত ভোটে থেকে যায় তাহলে ভোটের দিন পর্যন্ত ধরপাকড়ের তাণ্ডব চালানো হবে নির্দয়ভাবে। যেনো ভোট কেন্দ্রে কেউ হাজির হতে সাহস না করে।
আর যদি ধানের শীষের অনুকূলে ভোটের হাওয়া ঠেকানো না যায়, তবে মিডিয়া ক্যু করে নৌকাকে জিতানো হবে। বিটিভির মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণা করে সব মিডিয়াতে তা রিলে করার ব্যবস্থা করা হবে। একবার ফল ঘোষণা করতে পারলে তারপরে নির্মমভাবে সব ঠাণ্ডা করা হবে। বৈঠকে বলা হয়, এরপর থেকে এ ধরনের সভা খুব বেশি করা যাবে না, তবে কনসালটেশন করে কাজ করা হবে। এ ছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির নামে আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ৮ জন আওয়ামী দলীয় কর্মকর্তা দিয়ে মনিটরিং সেল গঠন করে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান ৪৫ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ৬৪ জেলার উপদেষ্টা (মেনটর) নিয়োগ করে একটি নজিরবিহীন সরকারি আদেশ জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ নিয়ে বিএনপির লিখিত আপত্তির প্রেক্ষিতে তা বাতিল করতে বাধ্য হয়।
কিন্তু গোপনে ঐসব কর্মকর্তারা জেলায় জেলায় মনিটরিংয়ের কাজ এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। এর বাইরে সারা দেশের ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং করার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা প্রথম তালিকার ৬ জন সচিবকে নিয়ে একটি গুপ্ত কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে। রিজভী বলেন, এখানে সব ধরনের অফিসারদের গমনাগমন ঘটে থাকে, তাই বিরোধী পক্ষের চোখ এড়ানো সহজ হবে মনে করে অফিসার্স ক্লাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সভাটি বসে। রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীনরা আসন্ন ভোট নিয়ে কি ভয়ঙ্কর পরিকল্পনায় মেতে উঠেছে। উপরোক্ত দলবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও কর্মকাণ্ড সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচন কমিশনকে লিখিত আকারে জানানো হয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে সরকারের এজেন্ডা নির্বাচন কমিশন কখনো প্রকাশ্যে কখনো নীরবে-নিভৃতে বাস্তবায়ন করছে-এই অভিযোগ এখন সর্বত্র ভূরিভূরি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিরসন করতে সক্ষম হয়নি। রিজভী বলেন, তফসিল ঘোষণার পরও আওয়ামী প্রশাসনিক দাপটের ছবিটা মোটেও বদলায়নি- এটাও তার একটি প্রমাণ। কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বে কতিপয় কমিশনার তাদেরকে স্বপদে বহাল রাখতে তৎপর। বিএনপি যাদের তালিকা দিয়েছে ওই দলবাজ কর্মকর্তাদের সরাতে নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে কাজ করছে বলেই এই অভিযোগগুলো থেকে ছিটকে আসা কাদা তারা ঠেকাতে পারেনি। রিজভী আহমেদ বলেন, আমরা আবারো বলতে চাই- বিতর্কিত নির্বাচনীকর্মকর্তাদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তাদেরকে প্রত্যাহার করতে হবে।
সমপ্রতি গ্রেপ্তার হওয়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রথম শ্রেণির ডিভিশন বাতিল করে দেয়ার ঘটনার নিন্দা জানান রিজভী আহমেদ। বলেন, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী একজন সাবেক এমপি। তাকে আটক করার পর প্রথমে ডিভিশন দেয়া হলেও গতকাল (শুক্রবার) তা বাতিল করে সাধারণ কয়েদিদের ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। মানসিক ও শারীরিকভাবে যন্ত্রণা দিতেই কারাগারে তার ডিভিশন বাতিল করা হয়েছে বলে আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই।
রিজভী বলেন, গত ২১শে নভেম্বর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গোয়েন্দা পুলিশ রমনা ছাত্রদলের নেতা মাসুদ রানাকে তুলে নেয়ার পর এখন তা অস্বীকার করছে। তার পরিবারের সদস্যদের মতো আমরাও উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে তাকে জনসমক্ষে হাজির করার দাবি জানাচ্ছি। রিজভী বলেন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্যই আইনি প্রক্রিয়ার নামে বারবার হয়রানি করা হচ্ছে। হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করার পরও সেই আদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে সরকার পক্ষ। উদ্দেশ্য টুকুকে আটকে রাখা, যাতে সে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে।
কিশোরগঞ্জে মনোনয়নপ্রত্যাশী শরীফুল আলমসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরসহ বিভিন্ন জেলায় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার চিত্র তুলে ধরেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। রিজভী বলেন, কয়েকদিন আগে ভৈরবে বিএনপির শান্তিপূর্ণ একটি উঠোন বৈঠক চলাকালে পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী ছাত্রলীগ-যুুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় উল্টো পুলিশ বাদী হয়ে গত ১৯শে নভেম্বর ৪৮ জনকে জ্ঞাত ও ৩৫০ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেছে। একই ঘটনায় শুক্রবার রাতে ভৈরবে যুবলীগের পৌর সভাপতি বাদী হয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৯৮ জনকে জ্ঞাত ও ১০০ জন নেতাকর্মীকে অজ্ঞাত আসামি করে আরেকটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। বিএনপি নেতা জামাল ডাক্তার ও আলমগীর মেম্বারসহ ইতিমধ্যেই পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
কয়েকদিন থেকেই পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে তাণ্ডব চালাচ্ছে। রিজভী বলেন, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী শরিফুল আলমসহ নেতাকর্মীরা এখন এলাকাছাড়া। আমরা এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন, শরীফুল আলম, আবদুল আউয়াল খান, হারুনুর রশীদ ও আশরাফউদ্দিন বকুল উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গোপন বৈঠকের অভিযোগের ব্যাপারে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব মো. মহিবুল হক বিবিসিকে বলেন, তাদের ব্যাচমেটদের মেলামেশাকে রাজনৈতিক রং দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ব্যাচমেটরা মাঝেমধ্যে একসঙ্গে বসি, ভবিষ্যতেও বসবো। এটাকে পলিটিসাইজ করার কিছু নেই। গোপন বৈঠকের খবর সঠিক নয় দাবি করে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বলেছেন, তাকে হেয় করতে প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। আমি কোন ধরনের বৈঠকে অংশ নেইনি। পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান বৈঠকে অংশ নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, অফিসার্স ক্লাবে মিটিং করার তথ্য মিথ্যা ও বানোয়াট।
No comments