বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে কেন ইহুদিবাদী ইসরাইলের ধ্বংস অনিবার্য?
গবেষক
ও বিশ্লেষকদের অনেককেই বলছেন, ইহুদি-বর্ণবাদভিত্তিক দখলদার জারজ রাষ্ট্র
ইহুদিবাদী ইসরাইলের পতন বা ধ্বংস অনিবার্য। বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞদের এই মতের
পক্ষে কিছু প্রামাণ্য ও অকাট্য যুক্তি তুলে ধরেছেন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির
বিশ্লেষক ও বিশিষ্ট গবেষক জনাব মুনীর হুসাইন খান। বিশ্ব-কুদস দিবসের
প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি তিনি এইসব অভিমত তুলে ধরেছেন রেডিও তেহরানের কাছে।
ফিলিস্তিন এবং আল-কুদস হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর প্রধান বা সর্ববৃহৎ সমস্যা এবং উম্মুল মাসায়েল অর্থাৎ সকল সমস্যার মূল। কারণ, এই সমস্যার সঠিক ও সুষ্ঠু সমাধান হলে মুসলিম উম্মাহ এবং ইসলামী বিশ্বের বাকি সব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হওয়া সম্ভব। আজ ৭০ বছর গত হয়ে যাওয়ার পরেও ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান হয়নি। আর তাই কাশ্মির, মরো, পাত্তানি, চেচনিয়া, কারাবাগ, উইঘুর (পূর্ব তুর্কিস্তান)সহ মুসলিম উম্মাহর কোনো একটি সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হচ্ছে না এবং হবেও না।
ফিলিস্তিন ও আল-কুদস সমস্যার ঠিক তখনই সঠিক, সুষ্ঠু ও ন্যায্য সমাধান হবে যখন মুসলিম বিশ্ব ভেতর থেকে শক্তিশালী হবে এবং মুসলিম উম্মাহর এ সর্ববৃহৎ সমস্যা সমাধানের জন্য পর্যাপ্ত শক্তি ও জোর প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে। আর তা সম্ভব হলে মুসলিম উম্মাহ কাশ্মীর, মিন্দানাও, পাত্তানি ও রোহিঙ্গা সমস্যার মতো দীর্ঘ বহু যুগের পুরনো সমস্যাগুলো একের পর এক সমাধান করতে পারবে শক্তিশালী ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে থাকার কারণে। তাই ফিলিস্তিন সমস্যার ন্যায্য ও সুষ্ঠু সমাধান মুসলিম উম্মাহকে নিঃসন্দেহে শক্তিশালী করবে এবং ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর দুশমনদেরকে করবে ভীত-সন্ত্রস্ত, দুর্বল ও হতভম্ব।
ফিলিস্তিন এবং আল-কুদস হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর প্রধান বা সর্ববৃহৎ সমস্যা এবং উম্মুল মাসায়েল অর্থাৎ সকল সমস্যার মূল। কারণ, এই সমস্যার সঠিক ও সুষ্ঠু সমাধান হলে মুসলিম উম্মাহ এবং ইসলামী বিশ্বের বাকি সব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হওয়া সম্ভব। আজ ৭০ বছর গত হয়ে যাওয়ার পরেও ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান হয়নি। আর তাই কাশ্মির, মরো, পাত্তানি, চেচনিয়া, কারাবাগ, উইঘুর (পূর্ব তুর্কিস্তান)সহ মুসলিম উম্মাহর কোনো একটি সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হচ্ছে না এবং হবেও না।
ফিলিস্তিন ও আল-কুদস সমস্যার ঠিক তখনই সঠিক, সুষ্ঠু ও ন্যায্য সমাধান হবে যখন মুসলিম বিশ্ব ভেতর থেকে শক্তিশালী হবে এবং মুসলিম উম্মাহর এ সর্ববৃহৎ সমস্যা সমাধানের জন্য পর্যাপ্ত শক্তি ও জোর প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে। আর তা সম্ভব হলে মুসলিম উম্মাহ কাশ্মীর, মিন্দানাও, পাত্তানি ও রোহিঙ্গা সমস্যার মতো দীর্ঘ বহু যুগের পুরনো সমস্যাগুলো একের পর এক সমাধান করতে পারবে শক্তিশালী ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে থাকার কারণে। তাই ফিলিস্তিন সমস্যার ন্যায্য ও সুষ্ঠু সমাধান মুসলিম উম্মাহকে নিঃসন্দেহে শক্তিশালী করবে এবং ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর দুশমনদেরকে করবে ভীত-সন্ত্রস্ত, দুর্বল ও হতভম্ব।
২০০৬ সালে ৩৩ দিনের যুদ্ধে হিজবুল্লাহর হাতে ধ্বংস হওয়া ইসরাইলি ট্যাংক |
ফিলিস্তিন
ভূখণ্ড জবর দখল করা হয়েছে অন্যায়ভাবে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে ,
সন্ত্রাসের মাধ্যমে এবং ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা ও তাদের মাঝে ভয় ও ত্রাস
সৃষ্টি করে তাদেরকে তাদের পৈতৃক ভিটামাটি ও বাসা–বাড়ী থেকে উচ্ছেদ ও
বহিষ্কার করার মাধ্যমে। যে অবৈধ তথা জারজ রাষ্ট্র (হারামজাদা) ইসরাইলের
গোড়া-পত্তন হয়েছে গণহত্যা,লুণ্ঠন, উচ্ছেদ, ভূমি জবর-দখলের মধ্য দিয়ে সেই
ইসরাইল কেবল শক্তির ভাষাই বোঝে। তার সাথে শান্তি আলোচনা বৃথা সময় নষ্ট করা
ছাড়া আর কিছুই নয়। চোরা না শোনে ধর্মের বাণী।
এই দস্যু, লুটেরা ও সন্ত্রাসী ইসরাইল ন্যায়-নীতির ধার ধারে না। আসলে ইসরাইল এবং এব় অবৈধ জন্মদাত্রী ব্রিটেন, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা পাশ্চাত্যের কাছে অধিকার, ন্যায়, মানবতা ও নৈতিক মূল্যবোধের কার্যত: কোনো মূল্য নেই। এগুলোর প্রতি এদের কোনো বিশ্বাসও নেই। এদের কাছে যে জিনিসটির মূল্য রয়েছে তা হচ্ছে অর্থ, বিত্ত, স্বার্থ ও ভোগবিলাস এবং বৈধা-বৈধ যে কোনো পন্থায় তা অর্জন করতে এরা বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না। বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তিও এদের কাছে অসার ও মূল্যহীন। তাই শক্তির ভাষায় এব়া ডায়ালগ করে এবং এদের সাথে আলোচনাও শক্তির ভাষাতেই করতে হয়।
ইসরাইল ও পাশ্চাত্যের সাথে আরবদের তথাকথিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনাকে অনেকটা হিংস্র মাংস-খেকো নেকড়ের সাথে নিরীহ গোবেচারা ভেড়া ও মেষের সংলাপ বলা যায়। ফিলিস্তিন সমস্যার নিষ্পত্তি ও সমাধানের নামে এ আলোচনার প্রহসন চললেও নেকড়ের তীক্ষ্ণ চোখা বড় বড় দাঁত দেখেই ভয়ে মেষের প্রাণখানা যেমন নিমিষে পানি হয়ে যায় ঠিক তেমন দশাই হচ্ছে আরব রাজা ও শাসকদের। ইসরাইল ও পাশ্চাত্যের হুংকার ও চোখ রাঙ্গানিতেই এদের প্রাণবায়ু ভয়ে বের হয়ে যেতে চায়। তাই আরব রাজা-বাদশাহ এবং ডিক্টেটর তথা একনায়ক শাসকরা ফিলিস্তিনের বিনিময় ইসরাইল ও পাশ্চাত্যের সাথে সন্ধি করে গুটিকয়েক দিন নির্ঝঞ্ঝাটে মসনদে টিকে থাকার স্বপ্ন দেখছে। দেশের তেল সম্পদ ও সবকিছু তুলে দিয়ে পাশ্চাত্য ও ইসরাইলের দয়া-দাক্ষিণ্যে ও প্রোটেকশনে থেকে রাজত্ব করাটাই হচ্ছে এ সব আরব শাসক ও রাজা-বাদশাহ’র একমাত্র ব্রত। এদের কাছে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করা এবং মজলুম ফিলিস্তিনি জনগণের হৃত অধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম একদম অর্থহীন।
সৌদি আরব, আরব আমিরাত, জর্দান ও মিসরের মত দেশগুলোর প্রতিক্রিয়াশীল আরব সরকারগুলোও তাদের প্রভু ইসরাইল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মতোই ইসরাইল ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন ও সংগ্রামকে ধ্বংস করতে চায়। তাই ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তিন ইসরাইল-গাজা যুদ্ধে আরব প্রতিক্রিয়াশীল শাসক ও রাজা-বাদশাহরাও পাশ্চাত্যের পাশাপাশি ইসরাইলকে সর্বাত্মক সমর্থন ও সহায়তা দিয়েছে। ২০০৭ থেকে অদ্যাবধি প্রায় ১১ বছর ধরে ইসরাইল একতরফাভাবে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে গাজার উপর সর্বাত্মক প্রাণান্তকর অমানবিক অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। অথচ আরব রাজা-বাদশাহ ও শাসক-চক্র এই অন্যায় অন্যায্য অররোধের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না এবং অতীতেও এর কোন প্রতিবাদ ও আপত্তি করে নি বরং তারা এ অবরোধেও ইসরাইলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গাজার মজলুম ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সক্রিয়।
গাজায় ইসরাইল আরোপিত অবরোধ ভাঙ্গা নিয়ে তুরস্ক কিছু নাটক ও লোক দেখানো উদ্যোগ গ্রহণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে নিজেকে। অথচ দরকার ও উচিৎ ছিল ইসরাইলের সাথে তুরস্কের সব কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা। ফ্লোটিলার ঘটনার পর তুরস্ক ইসরাইল থেকে কেবল নিজ রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছিল। ২০০৯-এ প্রথম ইসরাই-গাজা যুদ্ধে আগ্রাসী ইসরাইল শত শত নিরীহ ফিলিস্তিনি নারী পুরুষ ও শিশুকে নির্বিচার বোমা বর্ষণের মাধ্যমে হত্যা করে। এর প্রতিবাদে ঐ বছর সুইজারল্যান্ডের ড্যাভোসে ইসরাইলী প্রেসিডেন্ট শিমোন পেরেজকে গাজায় গণহত্যাকারী ও ফিলিস্তিনি শিশুদের ঘাতক বলে আখ্যায়িত করে কনফারেন্স হল ত্যাগ করেছিলেন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী এরদোগান।
কিন্তু তুরস্ক কখনোই ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেনি বরং তুরস্ক হচ্ছে ইসরাইলের সিমেন্ট ও নির্মাণ সামগ্রীর প্রধান যোগান দাতা এবং বিগত ১৭ বছর ধরে ইসরাইলে সিমেন্ট ও নির্মাণ সামগ্রী রপ্তানি করছে। অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনে ( ইসরাইল ) ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে তাদের ভূমি জবর দখল করে ইসরাইল যেসব অবৈধ ইসরাইলি-বসতি বানাচ্ছে ও নিত্য-নতুন আবাসন নির্মাণ করছে সেসব নির্মাণ কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে তুর্কি সিমেন্ট ও নানা ধরনের নির্মাণ সামগ্রী।
মিসরতো বহু বছর আগেই এবং জর্দান ও মরক্কোও বেশ কয়েক বছর ধব়ে ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। তিউনিসিয়াও (তিউনিসীয় সরকারে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সাথে সংশ্লিষ্ট ইসলামী আল-নাহদা পার্টির অংশীদারিত্ব থাকা সত্ত্বেও!) ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে। এদিকে আরব আমিরাত, কাতার ও বাহরাইন ইতোমধ্যে ইসরাইলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক চালু করেছে এবং সৌদি আরব ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক, সামরিক, নিরাপত্তা-প্রতিরক্ষা, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক চালু করার লক্ষ্যে প্রায় প্রকাশ্যে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে যোগাযোগ করে যাচ্ছে তেলআবিবের সাথে।
ওদিকে সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার সাথেও ইসরাইলের সীমিত কূটনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। আজারবাইজানসহ সদ্য স্বাধীনতা-প্রাপ্ত মধ্য এশিয় মুসলিম দেশগুলোরও ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। কেবল ইরানসহ বেশ কিছু মুসলিম দেশের সাথে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে সৌদি আরবের সাথে ইসরাইলের আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু হলে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মালয়েশিয়ার মতো কিছু মুসলিম দেশও হয়তো ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিতে পারে।
আমরা একদিকে দেখতে পাচ্ছি, বর্তমান পরিস্থিতিতে মুসলিম বিশ্বে ইসরাইলকে বৈরী শত্রু হিসেবে নয় বরং বন্ধু দেশ হিসেবে মানিয়ে নেওয়ার জন্য জোরে সোরে চেষ্টা চালানো হচ্ছে এবং এ প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব ও পারস্যোপসাগরীয় রাজশাসিত আরব দেশগুলো। আবার অন্যদিকে ইরানের নেতৃত্বে হামাস, ফিলিস্তিনের ইসলামী জিহাদ, পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের মতো ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো, লেবাননি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ, সিরিয়া ও ইরাককে নিয়ে গড়ে ওঠা প্রতিরোধ অক্ষ ( মিহওয়ারুল মুকাওয়ামাহ) প্রতিরোধ ও সংগ্রামের মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে ইসরাইলের দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আর এভাবে ফিলিস্তিনিদের হৃত অধিকার পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা আজ বাস্তব পরিণতি ও পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
আজ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ইসরাইল বেশি ভঙ্গুর, ক্লান্ত, দুর্বল, আভ্যন্তরীণ বিক্ষিপ্ততা, বিশৃঙ্খলা ও এলোমেলো অবস্থার শিকার। ৪০ - ৫০ বছর আগেকার অপরাজেয় ইসরাইলের মিথ্ আজ আর নেই । ইসরাইল এখন আর ফিলিস্তিনি জনগণ ও প্রতিরোধ সংগ্রামীদের কাছে মোটেও অপরাজেয় শক্তি বলে গণ্য হয় না। বিশেষ করে গত বিংশ শতকের ‘৮০-‘৯০’র দশকে অধিকৃত ফিলিস্তিনে (ইসরাইল) প্রথম ইন্তিফাদা এবং একবিংশ শতকের শুরুতে ২য় ইন্তিফাদা ও দীর্ঘ ১৮ বছরের হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব পরিচালিত দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলী দখলদারিত্ব বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধে তথাকথিত মহাশক্তিধর ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনীর (IDF) পরাজয়ের পরিণতিতে দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরাইলের নিঃশর্ত সৈন্য প্রত্যাহার এবং সে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপর দীর্ঘ ১৮ বছরের (১৯৮২- ২০০০) ইসরাইলী দখলদারিত্বের অবসান, ২০০৬ সালে হিজবুল্লা-ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইলের ব্যর্থতা ও পরাজয়, ২০০৯-২০১৪ সালেও তিন তিনটা ইসরাই- গাজা যুদ্ধে ইসরাইলের ব্যর্থতা ও পরাজয়ের পর ইসরাইলের অপরাজেয় থাকার রূপকথাতুল্য খ্যাতি ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। তাই ইসরাইলের এইসব মহা-ব্যর্থতা ও পরাজয়ের পর অপরাজেয় শব্দটি আর ইসরাইলের পাশে লাগানো হয় না।
৩০ –৪০ বছর আগেও বা এর আগের যুদ্ধগুলোতে কোন আরব দেশই ইসরাইলের ভেতরে যুদ্ধ স্থানান্তরিত করতে সক্ষম হয়নি। সে সময় ইসরাইলের ইচ্ছায় যুদ্ধ সমাপ্ত হতো। কিন্তু ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর সে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ২০০৬ সালে ইসরাইল–হিজবুল্লাহ যুদ্ধে হিজবুল্লাহ সফল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে ইসরাইল-আরব যুদ্ধের ইতিহাসে এই প্রথমবার ইসরাইলের ভেতরে যুদ্ধ স্থানান্তরিত হয়। ইসরাইলি দখলদার নাগরিকরা সেবারই প্রথম যুদ্ধের স্বাদ আস্বাদন করে। সে সময় হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে বাঁচার জন্য সমগ্র উত্তর ইসরাইলের অধিবাসীদের এক বিরাট অংশ বাংকার ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় এবং বিরাট সংখ্যক অধিবাসী তেল আবিব ও নেগেভ মরু অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিল। এ ছাড়াও কয়েক লক্ষ ইসরাইলী প্রাণভয়ে বিদেশে চলে গিয়েছিল।
শুধু তাই নয়, ইসরাইল-গাজা যুদ্ধগুলোতেও মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা আয়রন ডোম থাকা সত্ত্বেও গাজা থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ধ্বংসযজ্ঞ থেকে অক্ষত থাকতে পারেনি ইসরাইলী জনগণ। ফলে ইসরাইলী জনগণের মাঝে ইসরাইলের ভবিষ্যৎ নিয়ে মারাত্মক আতঙ্ক এবং অনিশ্চয়তাবোধ তৈরি হয়েছে যা অতীতে আর কখনও দেখা যায়নি। কারণ, ইসলামী বিপ্লবের পর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগ্রাম ও আন্দোলনগুলো ইরানের মতো সত্যিকার পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারী পেয়েছে এবং সেই সাথে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহকে যা হচ্ছে আসলে ইসলামী বিপ্লবের প্রত্যক্ষ ফল এবং এ বিপ্লবেরই মানস সন্তান।
সিরিয় প্রশাসন ইসলামী বিপ্লবের আগ থেকেই ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন ও সংগ্রামী দলগুলোর পৃষ্ঠপোষক ছিল। কিন্তু ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর সিরিয়ার সাথে বিপ্লবী ইরানের প্রত্যক্ষ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও সহযোগিতার সুবাদে সিরিয়া ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগ্রাম ও আন্দোলনকে আরও ব্যাপক পরিসরে সহায়তা ও সহযোগিতার সুযোগ পায়। ফলে এ অঞ্চলে ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রাম ও আন্দোলন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়েছে।
ইসলামী ও ফিলিস্তিনি স্বার্থ বিকিয়ে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক-করণ এবং শান্তি ও মৈত্রী চুক্তি সম্পাদন এবং ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদান তথা কথিত 'টু-নেশন' বা দুই জাতি-তত্ত্বের ভিত্তিতে দুই-দেশ সৃষ্টির নামে ইসরাইলকে মেনে নিয়ে ফিলিস্তিনের খুবই অল্প কিছু ভূখণ্ডে তথাকথিত স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে যেসব ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী এবং আরব রাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলের সাথে আপোষ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে তারাও দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে তারা ধিক্কৃত হয়েছে ও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।
আসলে ইসরাইল এখন অনেক দুর্বল ও অনিরাপদ এবং এ কারণে স্বাভাবিকভাবে ইসরাইলের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন বহু ইসরাইলি নাগরিক উদ্বিগ্ন ও সন্দিহান। শুধু তাই নয়, ভেতর থেকেই ইসরাইলের ধ্বসে-পড়া এবং ধ্বংস ও বিলীন হওয়ার কথা ইসরাইলের পৃষ্ঠপোষকদের কণ্ঠেও ধ্বনিত হচ্ছে। ২০১৩ সালের ১২ মার্চ Holiday পত্রিকায় মার্কিন লেখক Kevin Barrett প্রণীত 'Kissinger, US intelligence endorse a world without Israel' – এ প্রবন্ধে বলা হয়েছে: কতিপয় সংবাদ প্রতিবেদনে প্রকাশ, প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ হেনরি কিসিঞ্জার এবং আরও ষোলটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা একমত প্রকাশ করেছেন যে অতি নিকট ভবিষ্যতে ইসরাইল আর টিকে থাকবে না।
‘নিউইয়র্ক পোস্ট’ কিসিঞ্জারের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছে: দশ বছরের মধ্যে ইসরাইল আর থাকবে না। অর্থাৎ কিসিঞ্জারের মতে ২০২২ সালে ইসরাইল আর বিদ্যমান থাকবে না। কিসিঞ্জারের মতো মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যদিও নির্দিষ্ট করে সময়-সীমার কথা উল্লেখ করেনি কিন্তু তারা ( ১৬ টি গোয়েন্দা সংস্থা ) ৮২ পৃষ্ঠার একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে এ শিরোনামে: একটি ইসরাইলোত্তর মধ্যপ্রাচ্যের জন্য প্রস্তুতি ( Preparing for a Post-Israel Middle East ) ( http: www.foreignpolicyjournal.com/ 2012/08/28/ us-preparing- for- a – post – Israel – middle – east/ )
১৬ টি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা একমত যে, ইসরাইল আরব বসন্ত, ইসলামী জাগরণ এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের উত্থানের সমম্বয়ে গঠিত ফিলিস্তিনপন্থী ভবিষ্যৎ ভয়ংকর প্রলয়ঙ্করী শক্তিকে মোকাবেলা ও প্রতিহত করতে পারবে না। ( The sixteen US intelligence agencies agree that Israel cannot withstand the coming pro-Palestinian juggernaut consisting of the Arab Spring , the Islamic Awakening and the rise of the Islamic Republic of Iran.)
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা আয়াতুল্লাহ আল-উযমা ইমাম খামেনেয়ী ২০১৬ সালে বলেছিলেন: আগামী ২৫ বছরের মধ্যে ইসরাইলের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এ ছাড়া তিনি আরও বলেছেন: ইসরাইল যদি (ইরানকে আক্রমণ করার মতো ) কোনো ভুল বা অন্যায় করে বসে তাহলে আমরা তেল আবিব এবং হাইফা নগরীকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেব।
২০০৭ সালের ১২ ডিসেম্বরে ইসরাইলী সংবাদপত্র ইয়েদিঔত আহারোনৌত ynet news.com/ opinion : Gabi Sheffer-প্রণীত 'We won’t win in Gaza' তথা 'আমরা গাজায় কখনো জিততে পারব না' শীর্ষক প্রবন্ধও এ প্রসঙ্গে লক্ষণীয়। এতে বলা হয়েছে:
IDF hasn’t won a war in 30 years ; noting that Gaza reoccupation will lead to a victory false. -অর্থাৎ আইডিএফ তথা ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী গত ৩০ বছরে একটি যুদ্ধেও জেতেনি। বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে গাজা পুনর্দখল করা হলে তা যুদ্ধ জেতার মতো এক অলীক ( মিথ্যা) ধারণার দিকে পরিচালিত করবে।
এ থেকে প্রমাণিত হয় যে ইসরাইল ২০০০ সালে হিজবুল্লাহর হাতে চরম মার খেয়ে দক্ষিণ লেবানন ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল এবং ২০০৬ সালের ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধে জিততে পারেনি। লক্ষণীয় যে , ইসরাইল ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তিন বার গাজা আক্রমণ করে পরাজিত ও ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যাপারে ইসরাইলী প্রবন্ধকার গাবি শেফার ২০০৭ সালের ১২ ডিসেম্বরেই (উপরোক্ত প্রবন্ধে) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে 'আমরা কখনো গাজায় জিততে পারব না' এবং বাস্তবে তা সত্যও হয়েছে।
তাই এটা স্পষ্ট ইসরাইল এখন ইরান আক্রমণ ও সেদেশের বিরুদ্ধ যুদ্ধ করা তো দূরের কথা গাজা, লেবানন বা সিরিয়া আক্রমণ করে যুদ্ধ বাঁধিয়ে কোনো সুবিধা অর্জন করতে এবং যুদ্ধে জিততে পারবে না। ইসরাইলের যুদ্ধে জেতার দিন পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে। ইসরাইল যুদ্ধ বাধালে সে যুদ্ধ তার ইচ্ছায় শেষ হবে না। আর যুদ্ধ যদি প্রলম্বিত ও দীর্ঘায়ত হয় তাহলে ইসরাইল ভয়াবহ ও অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবে এবং তা ইসরাইলের অস্তিত্বকেই করবে হুমকিগ্রস্ত।
ভুয়া আরব বসন্তের ধুয়ো তুলে ইঙ্গ-মার্কিন- ইউরোপীয় – ইসরাইলী– সৌদি–আমিরাতি তথা অশুভ খবিস-ইবলিসি-শয়তানী অক্ষের মদদপুষ্ট ওয়াহহাবী –তাকফীরী – সালাফী-সন্ত্রাসী জঙ্গি-গোষ্ঠী ও দলগুলো দিয়ে ৭ বছর ধরে সিরিয়ায় ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ-সংগ্রামী-অক্ষের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যে রক্তক্ষয়ী ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধ চালানো হচ্ছে আসলে তা হচ্ছে এ গুরুত্বপূর্ণ দেশ সিরিয়া এবং ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ-সংগ্রামী-অক্ষের পতন ঘটিয়ে পতন্মুখ ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ধ্বংস ও পতনের হাত থেকে দেশটিকে রক্ষা করা। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য সফল হয় নি। ওয়াহহাবী – তাকফীরী – সালাফী সন্ত্রাসী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রামী অক্ষের হিজবুল্লাহ এবং ইরান সক্রিয়ভাবে সিরিয় সরকারকে সহায়তা দিচ্ছে এবং রাশিয়াও গত দুবছর ধরে এ অক্ষের সাথে সক্রিয় সহযোগিতা করছে। এখন ইঙ্গ - মার্কিন – ইউরোপীয় –ইসরাইলী – সৌদি -আমিরাতি অশুভ-খবিস –ইবলিসি অক্ষের মদদপুষ্ট ওয়াহহাবী– তাকফীরী – সালাফী সন্ত্রাসী জঙ্গি মালঊন নরপশুগুলো একের পর এক রণাঙ্গনে সিরিয় সেনাবাহিনী,মিত্র হিজবুল্লাহ এবং প্রতিরোধকারী গণবাহিনীর হাতে পরাজয় বরণ করে চলেছে যার ফলে ইসরাইল ও উক্ত খবিস-ইবলিসি অক্ষটি ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন ও শংকাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এবং এর অর্থ হচ্ছে যে একদিকে যেমন ইসরাইলের মৃত্যু-ঘণ্টা বেজে উঠেছে ঠিক তেমনি অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বে প্রতিরোধ সংগ্রাম শক্তিশালী হয়েছে এবং হচ্ছে। অর্থাৎ ইসলামের দুশমনদের মোকাবেলায় মুসলিম উম্মাহর ক্ষমতায়ন ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে যদিও এ ক্ষমতা ও শক্তি অর্জনের পথে মুসলিম বিশ্বকে বিশেষ করে সিরিয়া, ইরাক,লেবানন, ইরান, ইয়েমেন, আফগানিস্তান,পাকিস্তান,নাইজেরিয়া ও ফিলিস্তিনের জনগণকে বহু প্রাণ উৎসর্গ করতে এবং অনেক রক্ত দিতে হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হিসেবে গত কয়েকমাস আগে জেরুজালেমকে (আল-কুদস বা বাইতুল মুকাদ্দাস) ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন দূতাবাসও তেল-আবিব থেকে সেখানে ( আল- কুদস-এ) স্থানান্তরিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রও আসলে মৃত্যু-পথযাত্রী ও পতন্মুখ ইসরাইলকে অন্তিম লগ্নে কিছুটা চাঙ্গা দেখানোর জন্য এ কাজটা করে থাকতে পারে। তা না হলে সমগ্র বিশ্বব্যাপী এ কাজের জন্য নিন্দা কুড়িয়েও কেন যুক্তরাষ্ট্র তা করতে গেলো?!! আর এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গাজা ও জেরুজালেমসহ সমগ্র ফিলিস্তিনি অঞ্চল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে ফেটে পড়ে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফিলিস্তিনি ইসরাইলী সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে শহীদ এবং বেশ কিছু সংখ্যক ফিলিস্তিনি আহত হন যার জের আজ পর্যন্ত চলছে। আর এ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের পরবর্তী উর্ধ্বতর পর্যায় হচ্ছে নাকবাহ দিবসকে সামনে রেখে বিদেশে এবং ইসরাইলের ভেতরে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিজ ভিটামাটি ও জন্মভূমিতে প্রত্যাবর্তনের অধিকার পালনের জন্য বিক্ষোভ-মিছিলের কর্মসূচি। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের সবুজ সংকেত পেয়ে ইসরাইলী যায়নবাদী সন্ত্রাসী দল ও গোষ্ঠীগুলো গণহত্যা ও ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে বাড়ী-ঘর ও মাতৃভূমি থেকে নিরীহ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি জনগণকে উচ্ছেদ ও বহিষ্কার করেছিল। ওই দিবস যা ‘নাকবাহ বা বিপর্যয় দিবস’ হিসেবে খ্যাত, তারই স্মরণে গাজাবাসীরা গাজা-ইসরাইল সীমান্তে ১১ সপ্তাহ ধরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ পালন করে। ১১ সপ্তাহ’র শান্তিপূর্ণ ওই বিক্ষোভ মিছিলে ইসরাইলী স্নাইপারদের গুলিতে ১৩০ জনেরও বেশি গাজাবাসী শহীদ এবং ৩০০০-জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এ থেকে বোঝা যায় যে ইসরাইল পাগলা কুকুরের মত ক্ষিপ্ত। আর এ ধরণের ক্ষ্যাপা পাগলা কুকুরকে বধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। রমজান মাসেও প্রতিদিন গাজাবাসীদের এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অব্যাহত ছিল।
গত রমজানের শেষ শুক্রবার বা জুমআতুল বিদায় পালন করা হয়েছে ৪০তম বিশ্ব-আল-কুদস দিবস। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের স্থপতি এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (র) বিপ্লব বিজয়ের পর ১৯৭৯ সালে ফিলিস্তিন ও মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-কুদসকে মুক্ত করার লক্ষ্যে পবিত্র রমযান মাসের শেষ শুক্রবারকে বিশ্ব আল-কুদস দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। ইমাম খোমেনীর এ ঘোষণা তখন নিদ্রাচ্ছন্ন মুসলিম বিশ্বে জাগরণ এবং হতোদ্যম ফিলিস্তিনি মুক্তি ও প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোকে প্রতিরোধ সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে যার ফলশ্রুতিতে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনে ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে ফিলিস্তিনি জনতার প্রথম সফল গণ-উত্থান অর্থাৎ ইন্তিফাদার উদ্ভব হয়। এ জাগরণ বেশ কয়েক বছর জারজ ইসরাইল সরকারকে বিপাকে ফেলে দিয়েছিল এবং আপোসকামী কতিপয় ফিলিস্তিনি দলের সাথে কিছু ধামাধরা আরব রাষ্ট্রের সহযোগিতায় ইসরাইল অসলো চুক্তি করে ফিলিস্তিনিদের দিয়ে ফিলিস্তিনিদের শায়েস্তা করার ও দমনের উদ্যোগ নেয়।
অসলো চুক্তির পর জর্দান নদীর পশ্চিম তীর ও গাজা নিয়ে আপোসকামী ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী পি.এল.ও কর্তৃক নবগঠিত প্যালেস্টাইন অথরিটির মাধ্যমে প্রথম ইন্তিফাদাকে দমন করা হয়। কিন্তু ২০০০ সালে হিজবুল্লাহর হাতে মার খেয়ে এবং পরাজিত ও অপদস্থ হয়ে ইসরাইলী সেনাবাহিনী দক্ষিণ লেবানন থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে পলায়ন করলে পশ্চিম তীর ও গাজায় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ইসরাইলী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আবার নতুন করে জাগরণ ও উত্থান শুরু হয়ে যায় যা দ্বিতীয় ইন্তিফাদা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে এবং ইসরাইল হামাসের শেখ ইয়াসিন, রাআনতীসীসহ ইন্তিফাদার বেশ কিছু নেতাকে হত্যা করে এই ইন্তিফাদা দমনের চেষ্টা করে।
নৃশংস দমন-পীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে বাহ্যত: ফিলিস্তিনি গণ-উত্থান দমন করা হলেও ২০০৫ সালে প্যালেস্টাইন অথোরিটির পার্লামেন্ট নির্বাচনে গাজা ও পশ্চিম তীরে হামাস ও ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ফলে ইসমাইল হানিয়ার নেতৃত্বে প্রথম ইসলামপন্থী প্রতিরোধ-সংগ্রামী সরকার গঠিত হয় যা ইসরাইলের জন্য হয় চক্ষুশূল। ইসরাইল তখন থেকেই ইসরাইল হামাস ও পিএলওর মাঝে বিভক্তি ও গণ্ডগোল লাগানোর চেষ্টা করতে থাকে। ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর কাছে যুদ্ধে ইসরাইল পরাজিত হলে ইসরাইলের জন্য প্যালেস্টাইন অথরিটির আসনে হামাসকে আর সহ্য করা সম্ভব হয় নি এবং জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে (রামাল্লা) পি.এল.ওর সহায়তায় হামাস সরকারের বহু কর্মকর্তাকে ইসরাইল বন্দী করে। কিন্তু প্রধান মন্ত্রী ইসমাইল হানিয়া এবং বেশ কিছু ঊর্ধ্বতন হামাস কর্মকর্তা গাজায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
জর্দান নদীর পশ্চিম তীর যেমন আগে থেকেই আপোসকামী পি.এল.ওর স্ট্রংহোল্ড বা ঘাঁটি ছিল ঠিক তেমনি গাজা আগে থেকেই হামাস, ইসলামী জিহাদ ও অন্যান্য সশস্ত্র ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন ও গ্রুপগুলোর ঘাঁটি বা স্ট্রংহোল্ড ছিল। হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের সশস্ত্র যোদ্ধারা তাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে একযোগে ইসরাইলের দখলদারিত্ব থেকে গাজাকে মুক্ত করতে সক্ষম হয় ২০০৭ সালে এবং ইসরাইল এ পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে ঐ বছরই গাজার বিরুদ্ধে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে কঠোর প্রাণান্তকর সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে যা ১১ বছর গত হওয়ার পর আজও অব্যাহত আছে।
আর সিরিয়া, লেবানন,আলজেরিয়া ছাড়া সব আরবদেশ এমনকি মিসর পর্যন্ত গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলের এই চরম নির্মম ও অমানবিক পদক্ষেপ মেনে নিয়েছে এবং কার্যত এ অন্যায় অবরোধ ভাঙ্গার উদ্যোগ নেয়নি। জর্দান নদীর পশ্চিম তীর ( রামাল্লা ) যেখানে প্যালেস্টাইন কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তর রয়েছে তা ইসরাইলের সাথে বহু দফা শান্তি আলোচনা করেও ইসরাইলের দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করতে পারেনি আপোসকামী পি.এল.ও এবং ধামাধরা বা সেবাদাস আরব সরকারগুলো।
ইসরাইল এখনও জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিন ভূখণ্ড অধিগ্রহণ ও জবর দখল করে এবং ফিলিস্তিনি অধিবাসীদের উচ্ছেদ করে সেখানে একের পর এক ইহুদী বসতি গড়েই যাচ্ছে। অথচ এমনটা গাজায় করতে পারছে না ইসরাইল। কারণ গাজা ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন ও সংগ্রামের কারণে আজ মুক্ত ও স্বাধীন। কিন্তু সেই মুক্তি ও স্বাধীনতার মূল্য কড়ায় গণ্ডায় পরিশোধ করতে হচ্ছে গাজাবাসীদেরকে ইসরাইলের আরোপ-করা চরম অমানবিক অবরোধের নাগ-পাশ তথা বর্বর-পাশবিক-চাপের শিকার হয়ে!!! অথচ আরব ও মুসলিম বিশ্বের সেবাদাস সরকারগুলো তা হা করে তাকিয়ে দেখছে!! এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সৎ সাহসটুকু তাদের হচ্ছে না।
১৯৬৭ সালের আরব- ইসরাইল যুদ্ধের আগ পর্যন্ত গাজা ছিল মিসরের শাসনাধীনে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরাইল মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সমগ্র গাজা অঞ্চলটি দখল করে নেয়। অথচ ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে তিন-তিনটি ইসরাইল – গাজা যুদ্ধে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক শক্তিতে সজ্জিত এবং মার্কিন ও পাশ্চাত্যের সর্বাত্মক সমর্থনপুষ্ট ইসরাইলী সেনা বাহিনী অবরুদ্ধ ও সব ধরনের সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত এ ক্ষুদ্র অঞ্চলটি দখল করা তো দূরে থাক সামান্য এক-দুই কিলোমিটারেরও বেশি আগাতে পারেনি গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের কারণে। কেবল বোমারু বিমান দিয়ে বোমাবর্ষণ করে নির্বিচারে হাজার হাজার নিরীহ নিরস্ত্র বেসামরিক নারী পুরুষ ও শিশু হত্যা করা ছাড়া আর কোন শৌর্য–বীর্য্য দেখাতে পারেনি বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ সেনাবাহিনী বলে খ্যাত ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী (Israeli Defense Force বা IDF )।
যুদ্ধের লক্ষ্যমাত্রা ও উদ্দেশ্য অর্জিত হওয়া ছাড়াই অবশেষে প্রতিটি যুদ্ধে যুদ্ধবিরতি মেনে নিয়ে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে ইসরাইল। এত সব নজীর ও উদাহরণ থেকে বোধগম্য হয়ে যায় যে ইসলামী বিপ্লবের পর বিপ্লবী ইরানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গড়ে-ওঠা ইসলামী প্রতিরোধ সংগ্রামী অক্ষ আজ ইসরাইলকে পতনের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে এবং ইঙ্গ- মার্কিন –ইউরোপীয় –ইসরাইলী - সৌদি –আমিরাতি তথা অশুভ-খবিস-ইবলিসি বা শয়তানী অক্ষের ইসরাইলী হেজিমোনি ও প্রাধান্যের ‘নয়া মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা’ ভণ্ডুল করে দিয়েছে। তাই তো এই খবিস ইবলিসি-অক্ষ প্রতিনিয়ত চেঁচাচ্ছে আর বলছেঃ ইরান মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অযাচিত ও অবৈধ হস্তক্ষেপ করছে এবং ওদের দৃষ্টিতে তথাকথিত ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠীগুলোকে ( উদ্দেশ্য হামাস ,ফিলিস্তিনি ইসলামী জিহাদ এবং হিজবুল্লাহর মতো মুক্তিকামী প্রতিরোধ আন্দোলন ও দলগুলো) মদদ দিচ্ছে।
ফিলিস্তিনের জাগ্রত জনতা তাদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে একটানা ১১ সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করেছে। তারা বিক্ষোভ মিছিল করছে ও খালি হাতে রক্ত দিচ্ছে। তাদের ১৩০-এরও বেশি শহীদ এবং ৩০০০-এর বেশি আহত হয়েছে আপাদ-মস্তক অত্যাধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত ইসরাইলী সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর স্নাইপারদের গুলিতে। ইসরাইলী সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড সামরিক ডিক্টেটরদেরকেও হার মানিয়েছে। তাই বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলিম এবং সত্য ও ন্যায়পন্থী বিবেকবান অধিবাসীর প্রতি আহবান আপনারা সবাই মজলুম ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার অর্জন এবং আল-কুদস ও ফিলিস্তিন মুক্তির লক্ষ্যে প্রতি বছর রমযানের শেষ শুক্রবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও বিপ্লবী উদ্দীপনা নিয়ে বিশ্ব আল- কুদস দিবস পালন করবেন এবং জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের ফরিয়াদে সাড়া দিবেন।
(লেখক : মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান, গবেষক ও বিশ্লেষক)
এই দস্যু, লুটেরা ও সন্ত্রাসী ইসরাইল ন্যায়-নীতির ধার ধারে না। আসলে ইসরাইল এবং এব় অবৈধ জন্মদাত্রী ব্রিটেন, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা পাশ্চাত্যের কাছে অধিকার, ন্যায়, মানবতা ও নৈতিক মূল্যবোধের কার্যত: কোনো মূল্য নেই। এগুলোর প্রতি এদের কোনো বিশ্বাসও নেই। এদের কাছে যে জিনিসটির মূল্য রয়েছে তা হচ্ছে অর্থ, বিত্ত, স্বার্থ ও ভোগবিলাস এবং বৈধা-বৈধ যে কোনো পন্থায় তা অর্জন করতে এরা বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না। বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তিও এদের কাছে অসার ও মূল্যহীন। তাই শক্তির ভাষায় এব়া ডায়ালগ করে এবং এদের সাথে আলোচনাও শক্তির ভাষাতেই করতে হয়।
ইসরাইল ও পাশ্চাত্যের সাথে আরবদের তথাকথিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনাকে অনেকটা হিংস্র মাংস-খেকো নেকড়ের সাথে নিরীহ গোবেচারা ভেড়া ও মেষের সংলাপ বলা যায়। ফিলিস্তিন সমস্যার নিষ্পত্তি ও সমাধানের নামে এ আলোচনার প্রহসন চললেও নেকড়ের তীক্ষ্ণ চোখা বড় বড় দাঁত দেখেই ভয়ে মেষের প্রাণখানা যেমন নিমিষে পানি হয়ে যায় ঠিক তেমন দশাই হচ্ছে আরব রাজা ও শাসকদের। ইসরাইল ও পাশ্চাত্যের হুংকার ও চোখ রাঙ্গানিতেই এদের প্রাণবায়ু ভয়ে বের হয়ে যেতে চায়। তাই আরব রাজা-বাদশাহ এবং ডিক্টেটর তথা একনায়ক শাসকরা ফিলিস্তিনের বিনিময় ইসরাইল ও পাশ্চাত্যের সাথে সন্ধি করে গুটিকয়েক দিন নির্ঝঞ্ঝাটে মসনদে টিকে থাকার স্বপ্ন দেখছে। দেশের তেল সম্পদ ও সবকিছু তুলে দিয়ে পাশ্চাত্য ও ইসরাইলের দয়া-দাক্ষিণ্যে ও প্রোটেকশনে থেকে রাজত্ব করাটাই হচ্ছে এ সব আরব শাসক ও রাজা-বাদশাহ’র একমাত্র ব্রত। এদের কাছে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করা এবং মজলুম ফিলিস্তিনি জনগণের হৃত অধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম একদম অর্থহীন।
সৌদি আরব, আরব আমিরাত, জর্দান ও মিসরের মত দেশগুলোর প্রতিক্রিয়াশীল আরব সরকারগুলোও তাদের প্রভু ইসরাইল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মতোই ইসরাইল ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন ও সংগ্রামকে ধ্বংস করতে চায়। তাই ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তিন ইসরাইল-গাজা যুদ্ধে আরব প্রতিক্রিয়াশীল শাসক ও রাজা-বাদশাহরাও পাশ্চাত্যের পাশাপাশি ইসরাইলকে সর্বাত্মক সমর্থন ও সহায়তা দিয়েছে। ২০০৭ থেকে অদ্যাবধি প্রায় ১১ বছর ধরে ইসরাইল একতরফাভাবে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে গাজার উপর সর্বাত্মক প্রাণান্তকর অমানবিক অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। অথচ আরব রাজা-বাদশাহ ও শাসক-চক্র এই অন্যায় অন্যায্য অররোধের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না এবং অতীতেও এর কোন প্রতিবাদ ও আপত্তি করে নি বরং তারা এ অবরোধেও ইসরাইলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গাজার মজলুম ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সক্রিয়।
গাজায় ইসরাইল আরোপিত অবরোধ ভাঙ্গা নিয়ে তুরস্ক কিছু নাটক ও লোক দেখানো উদ্যোগ গ্রহণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে নিজেকে। অথচ দরকার ও উচিৎ ছিল ইসরাইলের সাথে তুরস্কের সব কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা। ফ্লোটিলার ঘটনার পর তুরস্ক ইসরাইল থেকে কেবল নিজ রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছিল। ২০০৯-এ প্রথম ইসরাই-গাজা যুদ্ধে আগ্রাসী ইসরাইল শত শত নিরীহ ফিলিস্তিনি নারী পুরুষ ও শিশুকে নির্বিচার বোমা বর্ষণের মাধ্যমে হত্যা করে। এর প্রতিবাদে ঐ বছর সুইজারল্যান্ডের ড্যাভোসে ইসরাইলী প্রেসিডেন্ট শিমোন পেরেজকে গাজায় গণহত্যাকারী ও ফিলিস্তিনি শিশুদের ঘাতক বলে আখ্যায়িত করে কনফারেন্স হল ত্যাগ করেছিলেন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী এরদোগান।
কিন্তু তুরস্ক কখনোই ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেনি বরং তুরস্ক হচ্ছে ইসরাইলের সিমেন্ট ও নির্মাণ সামগ্রীর প্রধান যোগান দাতা এবং বিগত ১৭ বছর ধরে ইসরাইলে সিমেন্ট ও নির্মাণ সামগ্রী রপ্তানি করছে। অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনে ( ইসরাইল ) ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে তাদের ভূমি জবর দখল করে ইসরাইল যেসব অবৈধ ইসরাইলি-বসতি বানাচ্ছে ও নিত্য-নতুন আবাসন নির্মাণ করছে সেসব নির্মাণ কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে তুর্কি সিমেন্ট ও নানা ধরনের নির্মাণ সামগ্রী।
মিসরতো বহু বছর আগেই এবং জর্দান ও মরক্কোও বেশ কয়েক বছর ধব়ে ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। তিউনিসিয়াও (তিউনিসীয় সরকারে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সাথে সংশ্লিষ্ট ইসলামী আল-নাহদা পার্টির অংশীদারিত্ব থাকা সত্ত্বেও!) ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে। এদিকে আরব আমিরাত, কাতার ও বাহরাইন ইতোমধ্যে ইসরাইলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক চালু করেছে এবং সৌদি আরব ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক, সামরিক, নিরাপত্তা-প্রতিরক্ষা, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক চালু করার লক্ষ্যে প্রায় প্রকাশ্যে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে যোগাযোগ করে যাচ্ছে তেলআবিবের সাথে।
ওদিকে সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার সাথেও ইসরাইলের সীমিত কূটনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। আজারবাইজানসহ সদ্য স্বাধীনতা-প্রাপ্ত মধ্য এশিয় মুসলিম দেশগুলোরও ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। কেবল ইরানসহ বেশ কিছু মুসলিম দেশের সাথে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে সৌদি আরবের সাথে ইসরাইলের আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু হলে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মালয়েশিয়ার মতো কিছু মুসলিম দেশও হয়তো ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিতে পারে।
আমরা একদিকে দেখতে পাচ্ছি, বর্তমান পরিস্থিতিতে মুসলিম বিশ্বে ইসরাইলকে বৈরী শত্রু হিসেবে নয় বরং বন্ধু দেশ হিসেবে মানিয়ে নেওয়ার জন্য জোরে সোরে চেষ্টা চালানো হচ্ছে এবং এ প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব ও পারস্যোপসাগরীয় রাজশাসিত আরব দেশগুলো। আবার অন্যদিকে ইরানের নেতৃত্বে হামাস, ফিলিস্তিনের ইসলামী জিহাদ, পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের মতো ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো, লেবাননি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ, সিরিয়া ও ইরাককে নিয়ে গড়ে ওঠা প্রতিরোধ অক্ষ ( মিহওয়ারুল মুকাওয়ামাহ) প্রতিরোধ ও সংগ্রামের মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে ইসরাইলের দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আর এভাবে ফিলিস্তিনিদের হৃত অধিকার পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা আজ বাস্তব পরিণতি ও পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
আজ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ইসরাইল বেশি ভঙ্গুর, ক্লান্ত, দুর্বল, আভ্যন্তরীণ বিক্ষিপ্ততা, বিশৃঙ্খলা ও এলোমেলো অবস্থার শিকার। ৪০ - ৫০ বছর আগেকার অপরাজেয় ইসরাইলের মিথ্ আজ আর নেই । ইসরাইল এখন আর ফিলিস্তিনি জনগণ ও প্রতিরোধ সংগ্রামীদের কাছে মোটেও অপরাজেয় শক্তি বলে গণ্য হয় না। বিশেষ করে গত বিংশ শতকের ‘৮০-‘৯০’র দশকে অধিকৃত ফিলিস্তিনে (ইসরাইল) প্রথম ইন্তিফাদা এবং একবিংশ শতকের শুরুতে ২য় ইন্তিফাদা ও দীর্ঘ ১৮ বছরের হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব পরিচালিত দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলী দখলদারিত্ব বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধে তথাকথিত মহাশক্তিধর ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনীর (IDF) পরাজয়ের পরিণতিতে দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরাইলের নিঃশর্ত সৈন্য প্রত্যাহার এবং সে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপর দীর্ঘ ১৮ বছরের (১৯৮২- ২০০০) ইসরাইলী দখলদারিত্বের অবসান, ২০০৬ সালে হিজবুল্লা-ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইলের ব্যর্থতা ও পরাজয়, ২০০৯-২০১৪ সালেও তিন তিনটা ইসরাই- গাজা যুদ্ধে ইসরাইলের ব্যর্থতা ও পরাজয়ের পর ইসরাইলের অপরাজেয় থাকার রূপকথাতুল্য খ্যাতি ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। তাই ইসরাইলের এইসব মহা-ব্যর্থতা ও পরাজয়ের পর অপরাজেয় শব্দটি আর ইসরাইলের পাশে লাগানো হয় না।
৩০ –৪০ বছর আগেও বা এর আগের যুদ্ধগুলোতে কোন আরব দেশই ইসরাইলের ভেতরে যুদ্ধ স্থানান্তরিত করতে সক্ষম হয়নি। সে সময় ইসরাইলের ইচ্ছায় যুদ্ধ সমাপ্ত হতো। কিন্তু ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর সে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ২০০৬ সালে ইসরাইল–হিজবুল্লাহ যুদ্ধে হিজবুল্লাহ সফল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে ইসরাইল-আরব যুদ্ধের ইতিহাসে এই প্রথমবার ইসরাইলের ভেতরে যুদ্ধ স্থানান্তরিত হয়। ইসরাইলি দখলদার নাগরিকরা সেবারই প্রথম যুদ্ধের স্বাদ আস্বাদন করে। সে সময় হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে বাঁচার জন্য সমগ্র উত্তর ইসরাইলের অধিবাসীদের এক বিরাট অংশ বাংকার ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় এবং বিরাট সংখ্যক অধিবাসী তেল আবিব ও নেগেভ মরু অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিল। এ ছাড়াও কয়েক লক্ষ ইসরাইলী প্রাণভয়ে বিদেশে চলে গিয়েছিল।
শুধু তাই নয়, ইসরাইল-গাজা যুদ্ধগুলোতেও মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা আয়রন ডোম থাকা সত্ত্বেও গাজা থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ধ্বংসযজ্ঞ থেকে অক্ষত থাকতে পারেনি ইসরাইলী জনগণ। ফলে ইসরাইলী জনগণের মাঝে ইসরাইলের ভবিষ্যৎ নিয়ে মারাত্মক আতঙ্ক এবং অনিশ্চয়তাবোধ তৈরি হয়েছে যা অতীতে আর কখনও দেখা যায়নি। কারণ, ইসলামী বিপ্লবের পর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগ্রাম ও আন্দোলনগুলো ইরানের মতো সত্যিকার পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারী পেয়েছে এবং সেই সাথে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহকে যা হচ্ছে আসলে ইসলামী বিপ্লবের প্রত্যক্ষ ফল এবং এ বিপ্লবেরই মানস সন্তান।
সিরিয় প্রশাসন ইসলামী বিপ্লবের আগ থেকেই ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন ও সংগ্রামী দলগুলোর পৃষ্ঠপোষক ছিল। কিন্তু ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর সিরিয়ার সাথে বিপ্লবী ইরানের প্রত্যক্ষ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও সহযোগিতার সুবাদে সিরিয়া ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগ্রাম ও আন্দোলনকে আরও ব্যাপক পরিসরে সহায়তা ও সহযোগিতার সুযোগ পায়। ফলে এ অঞ্চলে ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রাম ও আন্দোলন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়েছে।
ইসলামী ও ফিলিস্তিনি স্বার্থ বিকিয়ে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক-করণ এবং শান্তি ও মৈত্রী চুক্তি সম্পাদন এবং ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদান তথা কথিত 'টু-নেশন' বা দুই জাতি-তত্ত্বের ভিত্তিতে দুই-দেশ সৃষ্টির নামে ইসরাইলকে মেনে নিয়ে ফিলিস্তিনের খুবই অল্প কিছু ভূখণ্ডে তথাকথিত স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে যেসব ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী এবং আরব রাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলের সাথে আপোষ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে তারাও দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে তারা ধিক্কৃত হয়েছে ও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।
আসলে ইসরাইল এখন অনেক দুর্বল ও অনিরাপদ এবং এ কারণে স্বাভাবিকভাবে ইসরাইলের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন বহু ইসরাইলি নাগরিক উদ্বিগ্ন ও সন্দিহান। শুধু তাই নয়, ভেতর থেকেই ইসরাইলের ধ্বসে-পড়া এবং ধ্বংস ও বিলীন হওয়ার কথা ইসরাইলের পৃষ্ঠপোষকদের কণ্ঠেও ধ্বনিত হচ্ছে। ২০১৩ সালের ১২ মার্চ Holiday পত্রিকায় মার্কিন লেখক Kevin Barrett প্রণীত 'Kissinger, US intelligence endorse a world without Israel' – এ প্রবন্ধে বলা হয়েছে: কতিপয় সংবাদ প্রতিবেদনে প্রকাশ, প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ হেনরি কিসিঞ্জার এবং আরও ষোলটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা একমত প্রকাশ করেছেন যে অতি নিকট ভবিষ্যতে ইসরাইল আর টিকে থাকবে না।
‘নিউইয়র্ক পোস্ট’ কিসিঞ্জারের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছে: দশ বছরের মধ্যে ইসরাইল আর থাকবে না। অর্থাৎ কিসিঞ্জারের মতে ২০২২ সালে ইসরাইল আর বিদ্যমান থাকবে না। কিসিঞ্জারের মতো মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যদিও নির্দিষ্ট করে সময়-সীমার কথা উল্লেখ করেনি কিন্তু তারা ( ১৬ টি গোয়েন্দা সংস্থা ) ৮২ পৃষ্ঠার একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে এ শিরোনামে: একটি ইসরাইলোত্তর মধ্যপ্রাচ্যের জন্য প্রস্তুতি ( Preparing for a Post-Israel Middle East ) ( http: www.foreignpolicyjournal.com/ 2012/08/28/ us-preparing- for- a – post – Israel – middle – east/ )
১৬ টি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা একমত যে, ইসরাইল আরব বসন্ত, ইসলামী জাগরণ এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের উত্থানের সমম্বয়ে গঠিত ফিলিস্তিনপন্থী ভবিষ্যৎ ভয়ংকর প্রলয়ঙ্করী শক্তিকে মোকাবেলা ও প্রতিহত করতে পারবে না। ( The sixteen US intelligence agencies agree that Israel cannot withstand the coming pro-Palestinian juggernaut consisting of the Arab Spring , the Islamic Awakening and the rise of the Islamic Republic of Iran.)
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা আয়াতুল্লাহ আল-উযমা ইমাম খামেনেয়ী ২০১৬ সালে বলেছিলেন: আগামী ২৫ বছরের মধ্যে ইসরাইলের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এ ছাড়া তিনি আরও বলেছেন: ইসরাইল যদি (ইরানকে আক্রমণ করার মতো ) কোনো ভুল বা অন্যায় করে বসে তাহলে আমরা তেল আবিব এবং হাইফা নগরীকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেব।
২০০৭ সালের ১২ ডিসেম্বরে ইসরাইলী সংবাদপত্র ইয়েদিঔত আহারোনৌত ynet news.com/ opinion : Gabi Sheffer-প্রণীত 'We won’t win in Gaza' তথা 'আমরা গাজায় কখনো জিততে পারব না' শীর্ষক প্রবন্ধও এ প্রসঙ্গে লক্ষণীয়। এতে বলা হয়েছে:
IDF hasn’t won a war in 30 years ; noting that Gaza reoccupation will lead to a victory false. -অর্থাৎ আইডিএফ তথা ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী গত ৩০ বছরে একটি যুদ্ধেও জেতেনি। বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে গাজা পুনর্দখল করা হলে তা যুদ্ধ জেতার মতো এক অলীক ( মিথ্যা) ধারণার দিকে পরিচালিত করবে।
এ থেকে প্রমাণিত হয় যে ইসরাইল ২০০০ সালে হিজবুল্লাহর হাতে চরম মার খেয়ে দক্ষিণ লেবানন ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল এবং ২০০৬ সালের ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধে জিততে পারেনি। লক্ষণীয় যে , ইসরাইল ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তিন বার গাজা আক্রমণ করে পরাজিত ও ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যাপারে ইসরাইলী প্রবন্ধকার গাবি শেফার ২০০৭ সালের ১২ ডিসেম্বরেই (উপরোক্ত প্রবন্ধে) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে 'আমরা কখনো গাজায় জিততে পারব না' এবং বাস্তবে তা সত্যও হয়েছে।
তাই এটা স্পষ্ট ইসরাইল এখন ইরান আক্রমণ ও সেদেশের বিরুদ্ধ যুদ্ধ করা তো দূরের কথা গাজা, লেবানন বা সিরিয়া আক্রমণ করে যুদ্ধ বাঁধিয়ে কোনো সুবিধা অর্জন করতে এবং যুদ্ধে জিততে পারবে না। ইসরাইলের যুদ্ধে জেতার দিন পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে। ইসরাইল যুদ্ধ বাধালে সে যুদ্ধ তার ইচ্ছায় শেষ হবে না। আর যুদ্ধ যদি প্রলম্বিত ও দীর্ঘায়ত হয় তাহলে ইসরাইল ভয়াবহ ও অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবে এবং তা ইসরাইলের অস্তিত্বকেই করবে হুমকিগ্রস্ত।
ভুয়া আরব বসন্তের ধুয়ো তুলে ইঙ্গ-মার্কিন- ইউরোপীয় – ইসরাইলী– সৌদি–আমিরাতি তথা অশুভ খবিস-ইবলিসি-শয়তানী অক্ষের মদদপুষ্ট ওয়াহহাবী –তাকফীরী – সালাফী-সন্ত্রাসী জঙ্গি-গোষ্ঠী ও দলগুলো দিয়ে ৭ বছর ধরে সিরিয়ায় ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ-সংগ্রামী-অক্ষের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যে রক্তক্ষয়ী ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধ চালানো হচ্ছে আসলে তা হচ্ছে এ গুরুত্বপূর্ণ দেশ সিরিয়া এবং ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ-সংগ্রামী-অক্ষের পতন ঘটিয়ে পতন্মুখ ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ধ্বংস ও পতনের হাত থেকে দেশটিকে রক্ষা করা। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য সফল হয় নি। ওয়াহহাবী – তাকফীরী – সালাফী সন্ত্রাসী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রামী অক্ষের হিজবুল্লাহ এবং ইরান সক্রিয়ভাবে সিরিয় সরকারকে সহায়তা দিচ্ছে এবং রাশিয়াও গত দুবছর ধরে এ অক্ষের সাথে সক্রিয় সহযোগিতা করছে। এখন ইঙ্গ - মার্কিন – ইউরোপীয় –ইসরাইলী – সৌদি -আমিরাতি অশুভ-খবিস –ইবলিসি অক্ষের মদদপুষ্ট ওয়াহহাবী– তাকফীরী – সালাফী সন্ত্রাসী জঙ্গি মালঊন নরপশুগুলো একের পর এক রণাঙ্গনে সিরিয় সেনাবাহিনী,মিত্র হিজবুল্লাহ এবং প্রতিরোধকারী গণবাহিনীর হাতে পরাজয় বরণ করে চলেছে যার ফলে ইসরাইল ও উক্ত খবিস-ইবলিসি অক্ষটি ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন ও শংকাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এবং এর অর্থ হচ্ছে যে একদিকে যেমন ইসরাইলের মৃত্যু-ঘণ্টা বেজে উঠেছে ঠিক তেমনি অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বে প্রতিরোধ সংগ্রাম শক্তিশালী হয়েছে এবং হচ্ছে। অর্থাৎ ইসলামের দুশমনদের মোকাবেলায় মুসলিম উম্মাহর ক্ষমতায়ন ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে যদিও এ ক্ষমতা ও শক্তি অর্জনের পথে মুসলিম বিশ্বকে বিশেষ করে সিরিয়া, ইরাক,লেবানন, ইরান, ইয়েমেন, আফগানিস্তান,পাকিস্তান,নাইজেরিয়া ও ফিলিস্তিনের জনগণকে বহু প্রাণ উৎসর্গ করতে এবং অনেক রক্ত দিতে হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হিসেবে গত কয়েকমাস আগে জেরুজালেমকে (আল-কুদস বা বাইতুল মুকাদ্দাস) ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন দূতাবাসও তেল-আবিব থেকে সেখানে ( আল- কুদস-এ) স্থানান্তরিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রও আসলে মৃত্যু-পথযাত্রী ও পতন্মুখ ইসরাইলকে অন্তিম লগ্নে কিছুটা চাঙ্গা দেখানোর জন্য এ কাজটা করে থাকতে পারে। তা না হলে সমগ্র বিশ্বব্যাপী এ কাজের জন্য নিন্দা কুড়িয়েও কেন যুক্তরাষ্ট্র তা করতে গেলো?!! আর এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গাজা ও জেরুজালেমসহ সমগ্র ফিলিস্তিনি অঞ্চল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে ফেটে পড়ে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফিলিস্তিনি ইসরাইলী সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে শহীদ এবং বেশ কিছু সংখ্যক ফিলিস্তিনি আহত হন যার জের আজ পর্যন্ত চলছে। আর এ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের পরবর্তী উর্ধ্বতর পর্যায় হচ্ছে নাকবাহ দিবসকে সামনে রেখে বিদেশে এবং ইসরাইলের ভেতরে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিজ ভিটামাটি ও জন্মভূমিতে প্রত্যাবর্তনের অধিকার পালনের জন্য বিক্ষোভ-মিছিলের কর্মসূচি। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের সবুজ সংকেত পেয়ে ইসরাইলী যায়নবাদী সন্ত্রাসী দল ও গোষ্ঠীগুলো গণহত্যা ও ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে বাড়ী-ঘর ও মাতৃভূমি থেকে নিরীহ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি জনগণকে উচ্ছেদ ও বহিষ্কার করেছিল। ওই দিবস যা ‘নাকবাহ বা বিপর্যয় দিবস’ হিসেবে খ্যাত, তারই স্মরণে গাজাবাসীরা গাজা-ইসরাইল সীমান্তে ১১ সপ্তাহ ধরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ পালন করে। ১১ সপ্তাহ’র শান্তিপূর্ণ ওই বিক্ষোভ মিছিলে ইসরাইলী স্নাইপারদের গুলিতে ১৩০ জনেরও বেশি গাজাবাসী শহীদ এবং ৩০০০-জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এ থেকে বোঝা যায় যে ইসরাইল পাগলা কুকুরের মত ক্ষিপ্ত। আর এ ধরণের ক্ষ্যাপা পাগলা কুকুরকে বধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। রমজান মাসেও প্রতিদিন গাজাবাসীদের এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অব্যাহত ছিল।
গত রমজানের শেষ শুক্রবার বা জুমআতুল বিদায় পালন করা হয়েছে ৪০তম বিশ্ব-আল-কুদস দিবস। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের স্থপতি এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (র) বিপ্লব বিজয়ের পর ১৯৭৯ সালে ফিলিস্তিন ও মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-কুদসকে মুক্ত করার লক্ষ্যে পবিত্র রমযান মাসের শেষ শুক্রবারকে বিশ্ব আল-কুদস দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। ইমাম খোমেনীর এ ঘোষণা তখন নিদ্রাচ্ছন্ন মুসলিম বিশ্বে জাগরণ এবং হতোদ্যম ফিলিস্তিনি মুক্তি ও প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোকে প্রতিরোধ সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে যার ফলশ্রুতিতে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনে ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে ফিলিস্তিনি জনতার প্রথম সফল গণ-উত্থান অর্থাৎ ইন্তিফাদার উদ্ভব হয়। এ জাগরণ বেশ কয়েক বছর জারজ ইসরাইল সরকারকে বিপাকে ফেলে দিয়েছিল এবং আপোসকামী কতিপয় ফিলিস্তিনি দলের সাথে কিছু ধামাধরা আরব রাষ্ট্রের সহযোগিতায় ইসরাইল অসলো চুক্তি করে ফিলিস্তিনিদের দিয়ে ফিলিস্তিনিদের শায়েস্তা করার ও দমনের উদ্যোগ নেয়।
অসলো চুক্তির পর জর্দান নদীর পশ্চিম তীর ও গাজা নিয়ে আপোসকামী ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী পি.এল.ও কর্তৃক নবগঠিত প্যালেস্টাইন অথরিটির মাধ্যমে প্রথম ইন্তিফাদাকে দমন করা হয়। কিন্তু ২০০০ সালে হিজবুল্লাহর হাতে মার খেয়ে এবং পরাজিত ও অপদস্থ হয়ে ইসরাইলী সেনাবাহিনী দক্ষিণ লেবানন থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে পলায়ন করলে পশ্চিম তীর ও গাজায় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ইসরাইলী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আবার নতুন করে জাগরণ ও উত্থান শুরু হয়ে যায় যা দ্বিতীয় ইন্তিফাদা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে এবং ইসরাইল হামাসের শেখ ইয়াসিন, রাআনতীসীসহ ইন্তিফাদার বেশ কিছু নেতাকে হত্যা করে এই ইন্তিফাদা দমনের চেষ্টা করে।
নৃশংস দমন-পীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে বাহ্যত: ফিলিস্তিনি গণ-উত্থান দমন করা হলেও ২০০৫ সালে প্যালেস্টাইন অথোরিটির পার্লামেন্ট নির্বাচনে গাজা ও পশ্চিম তীরে হামাস ও ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ফলে ইসমাইল হানিয়ার নেতৃত্বে প্রথম ইসলামপন্থী প্রতিরোধ-সংগ্রামী সরকার গঠিত হয় যা ইসরাইলের জন্য হয় চক্ষুশূল। ইসরাইল তখন থেকেই ইসরাইল হামাস ও পিএলওর মাঝে বিভক্তি ও গণ্ডগোল লাগানোর চেষ্টা করতে থাকে। ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর কাছে যুদ্ধে ইসরাইল পরাজিত হলে ইসরাইলের জন্য প্যালেস্টাইন অথরিটির আসনে হামাসকে আর সহ্য করা সম্ভব হয় নি এবং জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে (রামাল্লা) পি.এল.ওর সহায়তায় হামাস সরকারের বহু কর্মকর্তাকে ইসরাইল বন্দী করে। কিন্তু প্রধান মন্ত্রী ইসমাইল হানিয়া এবং বেশ কিছু ঊর্ধ্বতন হামাস কর্মকর্তা গাজায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
জর্দান নদীর পশ্চিম তীর যেমন আগে থেকেই আপোসকামী পি.এল.ওর স্ট্রংহোল্ড বা ঘাঁটি ছিল ঠিক তেমনি গাজা আগে থেকেই হামাস, ইসলামী জিহাদ ও অন্যান্য সশস্ত্র ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন ও গ্রুপগুলোর ঘাঁটি বা স্ট্রংহোল্ড ছিল। হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের সশস্ত্র যোদ্ধারা তাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে একযোগে ইসরাইলের দখলদারিত্ব থেকে গাজাকে মুক্ত করতে সক্ষম হয় ২০০৭ সালে এবং ইসরাইল এ পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে ঐ বছরই গাজার বিরুদ্ধে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে কঠোর প্রাণান্তকর সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে যা ১১ বছর গত হওয়ার পর আজও অব্যাহত আছে।
আর সিরিয়া, লেবানন,আলজেরিয়া ছাড়া সব আরবদেশ এমনকি মিসর পর্যন্ত গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলের এই চরম নির্মম ও অমানবিক পদক্ষেপ মেনে নিয়েছে এবং কার্যত এ অন্যায় অবরোধ ভাঙ্গার উদ্যোগ নেয়নি। জর্দান নদীর পশ্চিম তীর ( রামাল্লা ) যেখানে প্যালেস্টাইন কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তর রয়েছে তা ইসরাইলের সাথে বহু দফা শান্তি আলোচনা করেও ইসরাইলের দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করতে পারেনি আপোসকামী পি.এল.ও এবং ধামাধরা বা সেবাদাস আরব সরকারগুলো।
ইসরাইল এখনও জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিন ভূখণ্ড অধিগ্রহণ ও জবর দখল করে এবং ফিলিস্তিনি অধিবাসীদের উচ্ছেদ করে সেখানে একের পর এক ইহুদী বসতি গড়েই যাচ্ছে। অথচ এমনটা গাজায় করতে পারছে না ইসরাইল। কারণ গাজা ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন ও সংগ্রামের কারণে আজ মুক্ত ও স্বাধীন। কিন্তু সেই মুক্তি ও স্বাধীনতার মূল্য কড়ায় গণ্ডায় পরিশোধ করতে হচ্ছে গাজাবাসীদেরকে ইসরাইলের আরোপ-করা চরম অমানবিক অবরোধের নাগ-পাশ তথা বর্বর-পাশবিক-চাপের শিকার হয়ে!!! অথচ আরব ও মুসলিম বিশ্বের সেবাদাস সরকারগুলো তা হা করে তাকিয়ে দেখছে!! এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সৎ সাহসটুকু তাদের হচ্ছে না।
১৯৬৭ সালের আরব- ইসরাইল যুদ্ধের আগ পর্যন্ত গাজা ছিল মিসরের শাসনাধীনে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরাইল মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সমগ্র গাজা অঞ্চলটি দখল করে নেয়। অথচ ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে তিন-তিনটি ইসরাইল – গাজা যুদ্ধে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক শক্তিতে সজ্জিত এবং মার্কিন ও পাশ্চাত্যের সর্বাত্মক সমর্থনপুষ্ট ইসরাইলী সেনা বাহিনী অবরুদ্ধ ও সব ধরনের সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত এ ক্ষুদ্র অঞ্চলটি দখল করা তো দূরে থাক সামান্য এক-দুই কিলোমিটারেরও বেশি আগাতে পারেনি গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের কারণে। কেবল বোমারু বিমান দিয়ে বোমাবর্ষণ করে নির্বিচারে হাজার হাজার নিরীহ নিরস্ত্র বেসামরিক নারী পুরুষ ও শিশু হত্যা করা ছাড়া আর কোন শৌর্য–বীর্য্য দেখাতে পারেনি বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ সেনাবাহিনী বলে খ্যাত ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী (Israeli Defense Force বা IDF )।
যুদ্ধের লক্ষ্যমাত্রা ও উদ্দেশ্য অর্জিত হওয়া ছাড়াই অবশেষে প্রতিটি যুদ্ধে যুদ্ধবিরতি মেনে নিয়ে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে ইসরাইল। এত সব নজীর ও উদাহরণ থেকে বোধগম্য হয়ে যায় যে ইসলামী বিপ্লবের পর বিপ্লবী ইরানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গড়ে-ওঠা ইসলামী প্রতিরোধ সংগ্রামী অক্ষ আজ ইসরাইলকে পতনের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে এবং ইঙ্গ- মার্কিন –ইউরোপীয় –ইসরাইলী - সৌদি –আমিরাতি তথা অশুভ-খবিস-ইবলিসি বা শয়তানী অক্ষের ইসরাইলী হেজিমোনি ও প্রাধান্যের ‘নয়া মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা’ ভণ্ডুল করে দিয়েছে। তাই তো এই খবিস ইবলিসি-অক্ষ প্রতিনিয়ত চেঁচাচ্ছে আর বলছেঃ ইরান মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অযাচিত ও অবৈধ হস্তক্ষেপ করছে এবং ওদের দৃষ্টিতে তথাকথিত ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠীগুলোকে ( উদ্দেশ্য হামাস ,ফিলিস্তিনি ইসলামী জিহাদ এবং হিজবুল্লাহর মতো মুক্তিকামী প্রতিরোধ আন্দোলন ও দলগুলো) মদদ দিচ্ছে।
ফিলিস্তিনের জাগ্রত জনতা তাদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে একটানা ১১ সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করেছে। তারা বিক্ষোভ মিছিল করছে ও খালি হাতে রক্ত দিচ্ছে। তাদের ১৩০-এরও বেশি শহীদ এবং ৩০০০-এর বেশি আহত হয়েছে আপাদ-মস্তক অত্যাধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত ইসরাইলী সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর স্নাইপারদের গুলিতে। ইসরাইলী সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড সামরিক ডিক্টেটরদেরকেও হার মানিয়েছে। তাই বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলিম এবং সত্য ও ন্যায়পন্থী বিবেকবান অধিবাসীর প্রতি আহবান আপনারা সবাই মজলুম ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার অর্জন এবং আল-কুদস ও ফিলিস্তিন মুক্তির লক্ষ্যে প্রতি বছর রমযানের শেষ শুক্রবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও বিপ্লবী উদ্দীপনা নিয়ে বিশ্ব আল- কুদস দিবস পালন করবেন এবং জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের ফরিয়াদে সাড়া দিবেন।
(লেখক : মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান, গবেষক ও বিশ্লেষক)
No comments