মরুতে বাঙালি নারীর কান্না by সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
সড়ক
দুর্ঘটনা, মাদকবিরোধী যুদ্ধ আর নানা ধরনের খবরের মাঝে বড় আলোড়ন তুলতে
পারেনি নির্যাতনের শিকার হয়ে সৌদি আরব থেকে ফেরা নারী গৃহশ্রমিকরা। এরা
দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে ফিরেছে, এরা ট্রমায় আছে, এদের স্বজনরা বিমানবন্দরে
কাঁদছেন।
কিন্তু আমরা কী দেখলাম? বিপন্ন এসব নারীর প্রতি কোনও সহানুভূতি তো নেই, নিজের দেশের মর্যাদা নিয়েও এরা ভাবে না বলেই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব নিজে নারী হয়েও বলতে পেরেছেন এসব নারী গল্প ফাঁদছে। কতটা অসংবেদনশীল হলে আমলা হওয়া যায়, সেটা হয়তো ভাবনার আরেকটি বিষয়।
এই নারীদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাদের অনেকেই তিন মাস পর্যন্ত সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের সেফ হোমে ছিলেন। ফেরার অপেক্ষায় আছে আরও অসংখ্য নারী।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে গৃহ খাতে কর্মী নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে সৌদি আরব। অবশ্য যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ কয়েকটি দেশ মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ রেখেছে। অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি বলেছে, সৌদি আরবে নারী শ্রমিকরা যে ধরনের পরিস্থিতিতে থাকে, তা আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগকেও হার মানায়।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) দেওয়া তথ্য বলছে, গত বছর ১৮টি দেশে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা ছিল এক লাখের বেশি। এরমধ্যে শুধু সৌদি আরবে যান ৮৩ হাজার ৩৫৪ জন।
নারী শ্রমিকদের প্রায় সবাই যৌন নির্যাতনের শিকার হয় সৌদি আরবে। এরা ঠিকমতো খাবার পায় না। শারীরিক নির্যাতনও খুব স্বাভাবিক সৌদিদের কাছে। ফেরত আসা একাধিক নারী বলেছে, বাসার মালিক সুযোগ পেলেই যৌন সহিংসতা করে। মালিকের স্ত্রীদের জানালে তারাও পেটাতে শুরু করে। এটাই সৌদিদের সংস্কৃতি।
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দেওয়াই উত্তম। জীবিকার তাগিদে বিদেশ-বিভুঁইয়ে গিয়ে শোষণের পাশাপাশি যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া, এমনকি জীবন হারানোর ঘটনাও যদি ক্রমেই বাড়তে থাকে, তাহলে বিষয়টি অবশ্যই পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।
সৌদি আরবে আমাদের নারী গৃহকর্মীদের ন্যায্য বেতন থেকে বঞ্চিত করা ও শারীরিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ অতি পুরনো। দালালদের প্রতারণায় সর্বস্বান্ত নারীদের বন্দিদশা, প্রাণ হাতে করে পালিয়ে স্বদেশে ফেরা ইত্যাদি অভিযোগেরও প্রতিকার হয়নি। শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণসহ নানা ধরনের যৌন নিপীড়নের ঘটনাও প্রতিকারহীনভাবে বেড়ে চলেছে। সৌদি আরবে কর্মরত আমাদের নারী গৃহকর্মীদের মধ্যে ধর্ষণের ঝুঁকি প্রকট, তাদের মধ্যে ধর্ষণ-আতঙ্ক একটা সাধারণ বিষয়। এভাবে অন্তত ২২ জন নারী গৃহকর্মী মারা গেছে। অনেকে অপমান-নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। সরকারি উদ্যোগে দেশে ফিরে আসতে পেরেছে অনেকে, অনেকে পারছেন না। পারিবারিক ও সামাজিক দিক থেকে তারা এক দুর্বিষহ জীবনের মুখোমুখি হয়েছেন।
নারী গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতনসহ নানা ধরনের অভিযোগে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবের সঙ্গে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়ে চুক্তি করেছে এবং তারপর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ নারী গৃহকর্মী সৌদি আরবে গেছেন।
সৌদি আরবের নারী শ্রমিক পাঠাতে যে চুক্তি করা হয়েছে, তাতে নারী গৃহকর্মীদের অধিকারের বিষয়গুলোর আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি। কেউ কেউ বলেন, চুক্তিটি তাড়াহুড়ো করে করা হয়েছে।
নির্যাতন বন্ধে সরকারের বড় ভূমিকা আছে। তবে জানা গেলো যে আমাদের নারী গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন বৃদ্ধির বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিকার চাওয়া হয়নি। দুই দেশের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ কারিগরি কমিটিতে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করার কথা।
কিন্তু এখনও তা করা হয়নি। দেড় লাখ নারীর জন্য অত্যন্ত বিরূপ ও সব বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণ একটা কর্মপরিবেশে তাঁদের স্বাভাবিক মানবিক ও শ্রমিক অধিকারগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০১০ সালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করছে, পৃথিবীতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে সৌদি আরবে থাকা বিদেশি নারী শ্রমিকরা। “As If I Am Not Human” শীর্ষক সেই প্রতিবেদনে বলা হয়– বেশিরভাগ গৃহকর্মীকে ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা বিরামহীন কাজ করতে হয়। অসুস্থ হলেও কাজ করতে হয়, এবং এদের জন্য কোনও চিকিৎসার দায়িত্ব আর নেয় না সৌদি পরিবারগুলো।
রিপোর্টের একটি অংশ এমন – ‘Examples of abuse included beatings, deliberate burnings with hot irons, threats, insults, and forms of humiliation such as shaving a domestic worker’s head. We interviewed women who reported rape, attempted rape, and sexual harassment, typically by male employers and their sons…’
আমরা এসব জানি, তবুও কেন নারী শ্রমিক পাঠাই সেখানে? বেশ কিছু এনজিও, আদম ব্যবসায়ীও সরকারের লোকজন বলছেন, নারী গৃহকর্মীদের ওপর যৌন ও শারীরিক নির্যাতন রোধে সৌদি আরবে নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে অভিবাসী নারী শ্রমিকদের বাসায় না রেখে বিভিন্ন হোস্টেলে রাখা হবে। সেখান থেকে তারা কাজে যাতায়াত করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সভ্যতার বাইরে থাকা সৌদিরা এর কোনও তোয়াক্কা করবে না। ভালো সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক না পাঠানো। শ্রীলংকা, ফিলিপাইনসহ অনেকেই এর মধ্যে তা বন্ধ করেছে।
কিন্তু আমরা কী দেখলাম? বিপন্ন এসব নারীর প্রতি কোনও সহানুভূতি তো নেই, নিজের দেশের মর্যাদা নিয়েও এরা ভাবে না বলেই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব নিজে নারী হয়েও বলতে পেরেছেন এসব নারী গল্প ফাঁদছে। কতটা অসংবেদনশীল হলে আমলা হওয়া যায়, সেটা হয়তো ভাবনার আরেকটি বিষয়।
এই নারীদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাদের অনেকেই তিন মাস পর্যন্ত সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের সেফ হোমে ছিলেন। ফেরার অপেক্ষায় আছে আরও অসংখ্য নারী।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে গৃহ খাতে কর্মী নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে সৌদি আরব। অবশ্য যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ কয়েকটি দেশ মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ রেখেছে। অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি বলেছে, সৌদি আরবে নারী শ্রমিকরা যে ধরনের পরিস্থিতিতে থাকে, তা আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগকেও হার মানায়।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) দেওয়া তথ্য বলছে, গত বছর ১৮টি দেশে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা ছিল এক লাখের বেশি। এরমধ্যে শুধু সৌদি আরবে যান ৮৩ হাজার ৩৫৪ জন।
নারী শ্রমিকদের প্রায় সবাই যৌন নির্যাতনের শিকার হয় সৌদি আরবে। এরা ঠিকমতো খাবার পায় না। শারীরিক নির্যাতনও খুব স্বাভাবিক সৌদিদের কাছে। ফেরত আসা একাধিক নারী বলেছে, বাসার মালিক সুযোগ পেলেই যৌন সহিংসতা করে। মালিকের স্ত্রীদের জানালে তারাও পেটাতে শুরু করে। এটাই সৌদিদের সংস্কৃতি।
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দেওয়াই উত্তম। জীবিকার তাগিদে বিদেশ-বিভুঁইয়ে গিয়ে শোষণের পাশাপাশি যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া, এমনকি জীবন হারানোর ঘটনাও যদি ক্রমেই বাড়তে থাকে, তাহলে বিষয়টি অবশ্যই পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।
সৌদি আরবে আমাদের নারী গৃহকর্মীদের ন্যায্য বেতন থেকে বঞ্চিত করা ও শারীরিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ অতি পুরনো। দালালদের প্রতারণায় সর্বস্বান্ত নারীদের বন্দিদশা, প্রাণ হাতে করে পালিয়ে স্বদেশে ফেরা ইত্যাদি অভিযোগেরও প্রতিকার হয়নি। শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণসহ নানা ধরনের যৌন নিপীড়নের ঘটনাও প্রতিকারহীনভাবে বেড়ে চলেছে। সৌদি আরবে কর্মরত আমাদের নারী গৃহকর্মীদের মধ্যে ধর্ষণের ঝুঁকি প্রকট, তাদের মধ্যে ধর্ষণ-আতঙ্ক একটা সাধারণ বিষয়। এভাবে অন্তত ২২ জন নারী গৃহকর্মী মারা গেছে। অনেকে অপমান-নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। সরকারি উদ্যোগে দেশে ফিরে আসতে পেরেছে অনেকে, অনেকে পারছেন না। পারিবারিক ও সামাজিক দিক থেকে তারা এক দুর্বিষহ জীবনের মুখোমুখি হয়েছেন।
নারী গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতনসহ নানা ধরনের অভিযোগে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবের সঙ্গে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়ে চুক্তি করেছে এবং তারপর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ নারী গৃহকর্মী সৌদি আরবে গেছেন।
সৌদি আরবের নারী শ্রমিক পাঠাতে যে চুক্তি করা হয়েছে, তাতে নারী গৃহকর্মীদের অধিকারের বিষয়গুলোর আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি। কেউ কেউ বলেন, চুক্তিটি তাড়াহুড়ো করে করা হয়েছে।
নির্যাতন বন্ধে সরকারের বড় ভূমিকা আছে। তবে জানা গেলো যে আমাদের নারী গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন বৃদ্ধির বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিকার চাওয়া হয়নি। দুই দেশের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ কারিগরি কমিটিতে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করার কথা।
কিন্তু এখনও তা করা হয়নি। দেড় লাখ নারীর জন্য অত্যন্ত বিরূপ ও সব বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণ একটা কর্মপরিবেশে তাঁদের স্বাভাবিক মানবিক ও শ্রমিক অধিকারগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০১০ সালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করছে, পৃথিবীতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে সৌদি আরবে থাকা বিদেশি নারী শ্রমিকরা। “As If I Am Not Human” শীর্ষক সেই প্রতিবেদনে বলা হয়– বেশিরভাগ গৃহকর্মীকে ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা বিরামহীন কাজ করতে হয়। অসুস্থ হলেও কাজ করতে হয়, এবং এদের জন্য কোনও চিকিৎসার দায়িত্ব আর নেয় না সৌদি পরিবারগুলো।
রিপোর্টের একটি অংশ এমন – ‘Examples of abuse included beatings, deliberate burnings with hot irons, threats, insults, and forms of humiliation such as shaving a domestic worker’s head. We interviewed women who reported rape, attempted rape, and sexual harassment, typically by male employers and their sons…’
আমরা এসব জানি, তবুও কেন নারী শ্রমিক পাঠাই সেখানে? বেশ কিছু এনজিও, আদম ব্যবসায়ীও সরকারের লোকজন বলছেন, নারী গৃহকর্মীদের ওপর যৌন ও শারীরিক নির্যাতন রোধে সৌদি আরবে নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে অভিবাসী নারী শ্রমিকদের বাসায় না রেখে বিভিন্ন হোস্টেলে রাখা হবে। সেখান থেকে তারা কাজে যাতায়াত করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সভ্যতার বাইরে থাকা সৌদিরা এর কোনও তোয়াক্কা করবে না। ভালো সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক না পাঠানো। শ্রীলংকা, ফিলিপাইনসহ অনেকেই এর মধ্যে তা বন্ধ করেছে।
লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি ও সারাবাংলা
No comments