মধ্যপ্রাচ্যে মহাদেবপুরের টুপি by এম সাখাওয়াত হোসেন
নওগাঁর
মহাদেবপুরের টুপি রপ্তানি হচ্ছে সৌদি আরব, কুয়েত, ওমান, দুবাই, কাতারসহ
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। সংসারের কাজের পাশাপাশি টুপি তৈরি করে এই
উপজেলার ১০ হাজার নারী স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। সারা বছর টুপি তৈরি
হলেও পবিত্র ঈদ উপলক্ষে রমজান মাসে বেড়েছে কাজের চাপ। ইতোমধ্যেই নওগাঁর
মহাদেবপুরের টুপি মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। বিশেষ করে
মহাদেবপুর উপজেলা তৈরি টুপি ওমানের জাতীয় টুপির চাহিদা মিটাচ্ছে। নিপুণ
কায়দায় সেলাই ও ভাঁজ করে কাপড় দিয়ে বানানো হচ্ছে টুপি। সুইয়ের ফোড়ে
নান্দনিক নকশা ফুটে উঠেছে এক এক কাপড়ে এক এক রকম টুপি। এসব টুপি তৈরি করছেন
মহাদেবপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নারীরা। টুপি তৈরীর আয় থেকে অভাবেব
সংসারের সচ্ছলতা ফিরেছে, এসেছে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য। উপজেলার শিবরামপুর,
রামচন্দ্রপুর, মধুবন, খাজুর, বিলমোহাম্মদপুর, চাঁন্দাশ, রামরায়পুর,
চককন্দরপুর, শিবপুর, শিবগঞ্জ, বাগডোব, ডিমজাউনসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে
প্রায় ১০ হাজারেরও অধিক নারী টুপি সেলাই করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন
দেখছেন। ঈদকে সামনে রেখে তাদের বেড়েছে কাজের ব্যস্ততা। কেউ বাড়ির উঠানে
আবার কেউ দলবদ্ধ ভাবে টুপি তৈরী করছেন। এসব কারিগরদের কাছে মহাদেবপুরের
খুচরা ব্যবসায়ীরা বিদেশী ব্যবসায়িদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন নকশার ছাপ
দেওয়া সাদা রঙের টুপির কাপড় ও সতা কারিগরদের পৌছে দেন। আগে যে পরিবারগুলো
শুধুমাত্র পুরুষ সদস্যের আয়ের উপর নির্ভরশীল ছিল সেই পরিবারে মেয়েরা এখন
টুপি সিলাই এর মাধ্যমে বাড়তি আয় করে সংসারে এনেছেন স্বচ্ছলতা। শিবরামপুর
গ্রামের দক্ষিণপাড়া, চককন্দরপুর, ডিমজাউন, মধুবনসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে
দেখা যায় বাড়ি বাড়ি চলছে টুপি তৈরির কাজ। এখানকার টুপি তৈরির কারিগর
তানজিমা, জ্যোস্না, মিলি, মরিয়ম, কল্পনাসহ আরো অনেকেই জানান, তারা অবসর
সময়ে টুপি তৈরি করে ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় করছেন। শুধু
এরাই নয় ঐ গ্রামগুলোর বেলী, মুক্তা, মাসুদা, রেবেকা, বর্ষা, চাঁদনি, আশাসহ ৫
শতাধিক গৃহবধূ টুপি তৈর করে বাড়তি আয়ের মাধ্যমে সংসারের ব্যয় মিটানোর
পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগাচ্ছেন। এলাকার অনেক ছাত্রীও এখন
লেখাপড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে টুপি সিলাই করে লেখাপড়ার খরচ যোগাচ্ছেন বলে
তারা জানান। বাগডোব গ্রামের স্কুলছাত্রী মেহেরোন ও আয়েশা জানান, তাদের
দরিদ্র পিতার পক্ষে জামাকাপড়সহ লেখাপড়ার খরচ যোগানো সম্ভব হচ্ছিল না।
প্রতিবেশীদের কাছে টুপি সেলাই করা শিখে এখন তারা বাড়তি আয় করে লেখাপড়ার
খরচসহ নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয় মিটাতে পারছেন। টুপির কারিগর মুক্তা জানান,
মহাজনরা তাদের টুপি তৈরির সুতা, কাপড়সহ জাবতীয় কিছু সরবরাহ করেন। সেই কাপড় ও
সুতা দিয়ে টুপি সিলাই হলে মহাজনরা এসে নিয়ে জায়। প্রতিটি টুপি সেলাইয়ের
জন্য তাদের দেওয়া হয় ৩৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি । তারা জানান,
কাজ ও নকশর উপর টাকার পরিমান কমবেশি হয়। একজন নারী তার সংসারের কাজ কর্মের
পরও অবসর সময়ে কাজ করে প্রতি মাসে ৩ থেকে ৫টি টুপি সিলাই করতে পারেন। টুপি
ব্যবসায়ি জাহিদুল ইসলাম জানান,মহাদেবপুর উপজেলার ১০ হাজারেরও অধিক নারী
টুপি তৈরি করেন। তাদের তৈরি টুপি সৌদি আরব, দুবাই ও কাতার, ওমানসহ
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। এ বিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী
অফিসার মোবারক হোসেন পারভেজ জানান, এ উপজেলার তৈরি টুপি দুবাই, কুয়েত,
সৌদি আরব, ওমান, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিশেষ
করে মহাদেবপুর উপজেলা তৈরী টুপি ওমান এর জাতীয় টুপির চাহিদা মিটাচ্ছেন। এতে
দেশের সুনাম অর্জনসহ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে মহাদেবপুর উপজেলার টুপির কারিগররা
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এদের অচিরেই একটি সেমিনারের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ
করে ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে রূপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে।
No comments