থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন, জানেনই না তিন কোটি মানুষ by তাসকিনা ইয়াসমিন
দেশে
অন্তত পাঁচ কোটি মানুষ থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যায় ভুগছেন। তবে তাদের প্রায়
৩ কোটি অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি রোগীই জানেন না, তাদের এই সমস্যা রয়েছে।
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির (বিইএস) তথ্য অনুযায়ী, নারীদের থাইরয়েড
হরমোনজনিত সমস্যা পুরুষদের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি।
এই অবস্থার পরিবর্তনে রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি এবং প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জানার ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা।
থাইরয়েড গ্রন্থিটি গলার সামনের দিকে অবস্থিত। এটি দেখতে প্রজাপতির মতো এবং ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালীকে পেঁচিয়ে থাকে। যদিও এটি একটি ছোট গ্রন্থি, কিন্তু এর কার্যকারিতা ব্যাপক।
থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন মানব পরিপাক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ হরমোনের তারতম্যের ফলে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, হঠাৎ করে শরীর মোটা বা চিকন হওয়া, ত্বক, হার্ট ও ঋতুস্রাবের বিভিন্ন সমস্যা, চোখ ভয়ংকর আকারে বড় হয়ে যাওয়া, বন্ধ্যাত্ব, এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। সাধারণত, একজন পুরুষের বিপরীতে ১০ জন নারী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হন। শারীরিক কার্যক্ষমতা সঠিক রাখার জন্য এ হরমোন শরীরে নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকা একান্ত জরুরি।
বিইএসের তথ্য অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের প্রায় ২ ভাগ এবং পুরুষদের প্রায় শূন্য দশমিক ২ শতাংশ হাইপারথাইরয়েডিজম অর্থাৎ থাইরয়েড হরমোনের বৃদ্ধিজনিত রোগে ভোগেন। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারীদের মধ্যে ৩ দশমিক ৯ ভাগ থেকে ৯ দশমিক ৪ ভাগ হারে হাইপোথাইরয়েডিজম অর্থাৎ থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিজনিত সমস্যা থাকতে পারে। আরও প্রায় ৭ ভাগ নারী ও পুরুষ সাবক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়েডিজমে ভুগে থাকে। নবজাতক শিশুদেরও থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতিজনিত সমস্যা হতে পারে। তার হার প্রতি ১০ হাজার জীবিত নবজাতকে ২-৮ জনের হতে পারে। বাড়ন্ত শিশুরাও থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিতে ভুগতে পারে। এ সময় থায়রয়েডের হরমোন ঘাটতি হলে শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
দেশে বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে হরমোন বিশেষজ্ঞরা এ রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক; নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ; গাইনি বিশেষজ্ঞ; শিশু বিশেষজ্ঞরা থাইরয়েড চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। দেশে আয়োডিনের ডোজ মাত্র ৩০০ টাকা আর সিঙ্গাপুরে তার খরচ ৫০ হাজার টাকা। অন্যান্য দেশে খরচ আরও বেশি। এই রোগের পরীক্ষা করাতে দেশের সরকারি হাসপাতালে খরচ মাত্র ২৫০ টাকা আর বেসরকারিতে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস) এর সাধারণ সম্পাদক ডা. হাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সচেতনতার ওপর বেশি জোর দিচ্ছি। কিছু থাইরয়েড আছে, যেগুলো কিছুদিন পর অর্থাৎ তিন মাস, ছয় মাস পর ভালো হয়ে যায়। কিছু আছে দীর্ঘমেয়াদি। প্রাথমিকভাবে যদি শিশুদের শরীরে থাইরয়েডের পরিমাণ কমে যায় তাহলে তার চিকিৎসা করলে ক্ষতি হবে না। শিশুটি ‘হাবাগোবা’ হবে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা জনগণকে বিষয়টি নিয়ে সচেতন করতে চাইছি। চিকিৎসকদেরও সচেতন করতে কাজ করছি। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে কারা আক্রান্ত, কারা আক্রান্ত না সেটা খুঁজে বের করা। কারণ ২৫-৩০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে তো সরাসরি চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তাই যদি প্রতিরোধ করা যায় সেটা ভালো কাজ হবে।’
এ রোগ নির্ণয়ের ঘাটতি নারীদের বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতি ১০ জন নারীর বিপরীতে একজন পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত অনেক নারী সন্তান নিতে ব্যর্থ হন। তাদের চিকিৎসার শুরুতেই যদি তার থাইরয়েড অস্বাভাবিক কিনা, আর অস্বাভাবিক হলে সেটা কী ধরনের তা নির্ণয় করে চিকিৎসা করা যায়, তাহলে তাদের আর ছুটোছুটি করতে হয় না।’
ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘এ রোগের ক্ষেত্রে আয়োডিনের ঘাটতি অনেক বড় ইস্যু। আয়োডিনের ঘাটতি পূরণ করা গেলে থাইরয়েড সমস্যার সমাধান করা যাবে। আবার লবণে আয়োডিন ঠিকমতো মেশানো গেলে শুধু খাদ্যের লবণ দিয়েই এক থেকে দেড় কোটি মানুষকে নিরাপদ রাখা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামুদ্রিক খাদ্য আমাদের দেশে ততটা জনপ্রিয় নয় এখনও। সামুদ্রিক খাবার জনপ্রিয় করা গেলে তা থেকে অনেক আয়োডিন পাওয়া যাবে। এগুলো টার্গেট করে যদি এগোনো যায়, তাহলে থাইরয়েডে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক কমে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘সব বয়সের মানুষের স্ক্রিনিং, আয়োডিনের অভাব, ভেজাল খাদ্য ও আর্সেনিকযুক্ত পানি পান না করা–এ রোগের প্রধান প্রতিরোধক বিষয়। এছাড়া, সরকার খুব সহজে থাইরয়েডের বাধ্যতামূলক স্ক্রিনিং চালু করতে পারে। পাশাপাশি বাজারে বিক্রি হওয়া লবণে আয়োডিনের মান নিশ্চিত করতে পারে। জন্মের পরই শিশুর বাধ্যতামূলকভাবে থাইরয়েড পরীক্ষা নিশ্চিত করা উচিত।’
এই অবস্থার পরিবর্তনে রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি এবং প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জানার ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা।
থাইরয়েড গ্রন্থিটি গলার সামনের দিকে অবস্থিত। এটি দেখতে প্রজাপতির মতো এবং ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালীকে পেঁচিয়ে থাকে। যদিও এটি একটি ছোট গ্রন্থি, কিন্তু এর কার্যকারিতা ব্যাপক।
থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন মানব পরিপাক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ হরমোনের তারতম্যের ফলে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, হঠাৎ করে শরীর মোটা বা চিকন হওয়া, ত্বক, হার্ট ও ঋতুস্রাবের বিভিন্ন সমস্যা, চোখ ভয়ংকর আকারে বড় হয়ে যাওয়া, বন্ধ্যাত্ব, এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। সাধারণত, একজন পুরুষের বিপরীতে ১০ জন নারী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হন। শারীরিক কার্যক্ষমতা সঠিক রাখার জন্য এ হরমোন শরীরে নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকা একান্ত জরুরি।
বিইএসের তথ্য অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের প্রায় ২ ভাগ এবং পুরুষদের প্রায় শূন্য দশমিক ২ শতাংশ হাইপারথাইরয়েডিজম অর্থাৎ থাইরয়েড হরমোনের বৃদ্ধিজনিত রোগে ভোগেন। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারীদের মধ্যে ৩ দশমিক ৯ ভাগ থেকে ৯ দশমিক ৪ ভাগ হারে হাইপোথাইরয়েডিজম অর্থাৎ থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিজনিত সমস্যা থাকতে পারে। আরও প্রায় ৭ ভাগ নারী ও পুরুষ সাবক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়েডিজমে ভুগে থাকে। নবজাতক শিশুদেরও থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতিজনিত সমস্যা হতে পারে। তার হার প্রতি ১০ হাজার জীবিত নবজাতকে ২-৮ জনের হতে পারে। বাড়ন্ত শিশুরাও থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিতে ভুগতে পারে। এ সময় থায়রয়েডের হরমোন ঘাটতি হলে শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
দেশে বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে হরমোন বিশেষজ্ঞরা এ রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক; নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ; গাইনি বিশেষজ্ঞ; শিশু বিশেষজ্ঞরা থাইরয়েড চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। দেশে আয়োডিনের ডোজ মাত্র ৩০০ টাকা আর সিঙ্গাপুরে তার খরচ ৫০ হাজার টাকা। অন্যান্য দেশে খরচ আরও বেশি। এই রোগের পরীক্ষা করাতে দেশের সরকারি হাসপাতালে খরচ মাত্র ২৫০ টাকা আর বেসরকারিতে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস) এর সাধারণ সম্পাদক ডা. হাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সচেতনতার ওপর বেশি জোর দিচ্ছি। কিছু থাইরয়েড আছে, যেগুলো কিছুদিন পর অর্থাৎ তিন মাস, ছয় মাস পর ভালো হয়ে যায়। কিছু আছে দীর্ঘমেয়াদি। প্রাথমিকভাবে যদি শিশুদের শরীরে থাইরয়েডের পরিমাণ কমে যায় তাহলে তার চিকিৎসা করলে ক্ষতি হবে না। শিশুটি ‘হাবাগোবা’ হবে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা জনগণকে বিষয়টি নিয়ে সচেতন করতে চাইছি। চিকিৎসকদেরও সচেতন করতে কাজ করছি। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে কারা আক্রান্ত, কারা আক্রান্ত না সেটা খুঁজে বের করা। কারণ ২৫-৩০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে তো সরাসরি চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তাই যদি প্রতিরোধ করা যায় সেটা ভালো কাজ হবে।’
এ রোগ নির্ণয়ের ঘাটতি নারীদের বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতি ১০ জন নারীর বিপরীতে একজন পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত অনেক নারী সন্তান নিতে ব্যর্থ হন। তাদের চিকিৎসার শুরুতেই যদি তার থাইরয়েড অস্বাভাবিক কিনা, আর অস্বাভাবিক হলে সেটা কী ধরনের তা নির্ণয় করে চিকিৎসা করা যায়, তাহলে তাদের আর ছুটোছুটি করতে হয় না।’
ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘এ রোগের ক্ষেত্রে আয়োডিনের ঘাটতি অনেক বড় ইস্যু। আয়োডিনের ঘাটতি পূরণ করা গেলে থাইরয়েড সমস্যার সমাধান করা যাবে। আবার লবণে আয়োডিন ঠিকমতো মেশানো গেলে শুধু খাদ্যের লবণ দিয়েই এক থেকে দেড় কোটি মানুষকে নিরাপদ রাখা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামুদ্রিক খাদ্য আমাদের দেশে ততটা জনপ্রিয় নয় এখনও। সামুদ্রিক খাবার জনপ্রিয় করা গেলে তা থেকে অনেক আয়োডিন পাওয়া যাবে। এগুলো টার্গেট করে যদি এগোনো যায়, তাহলে থাইরয়েডে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক কমে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘সব বয়সের মানুষের স্ক্রিনিং, আয়োডিনের অভাব, ভেজাল খাদ্য ও আর্সেনিকযুক্ত পানি পান না করা–এ রোগের প্রধান প্রতিরোধক বিষয়। এছাড়া, সরকার খুব সহজে থাইরয়েডের বাধ্যতামূলক স্ক্রিনিং চালু করতে পারে। পাশাপাশি বাজারে বিক্রি হওয়া লবণে আয়োডিনের মান নিশ্চিত করতে পারে। জন্মের পরই শিশুর বাধ্যতামূলকভাবে থাইরয়েড পরীক্ষা নিশ্চিত করা উচিত।’
No comments