বালিয়াড়িতে ‘প্লট-বাণিজ্য’!
বালিয়াড়িতে গড়ে তোলা হয়েছে ঘর। গত বুধবার দুপুরে তোলা ছবি। প্রথম আলো |
কক্সবাজার সৈকতের সমিতিপাড়া এলাকায় ঝাউবাগান গেটে বালিয়াড়িতে ছোট-বড় বিভিন্ন আয়তনের ‘প্লট’ বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ১০ শতকের একটি প্লট বিক্রি করা হচ্ছে এক লাখ টাকায়। এসব প্লটে ঘর তুলে বসবাস করছে বেশ কয়েকটি পরিবার। এ ছাড়া বালিয়াড়িতে কয়েক হাজার নারকেলগাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বন বিভাগের অসাধু কিছু কর্মচারী প্লট-বাণিজ্য ও চারা রোপণের সঙ্গে জড়িত। গত বুধবার নাজিরারটেক সৈকতের সমিতিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়,
প্রায় ২০০ একরের বালিয়াড়ি দখল করে কয়েক হাজার নারকেলগাছের চারা রোপণের পাশাপাশি ৮০টির বেশি অস্থায়ী ঘর তৈরি করা হয়েছে। বালিয়াড়িতে বাঁশ ও কাঠের বেড়া দিয়ে ঘিরে বিক্রির জন্য ছোট ছোট শতাধিক প্লট তৈরি করে রাখা হয়েছে। পাশের কুতুবদিয়াপাড়া ও নাজিরারটেক সৈকতেও ঘর তৈরির জন্য বানানো হয়েছে ছোট ছোট প্লট। সমিতিপাড়ায় সৈকতে বাঁশের ঘর তৈরি করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকার জেলে আবদু শুক্কুর (২৯)। তিনি বলেন, ছয় মাস আগে বন বিভাগের অস্থায়ী কর্মী মোস্তাক আহমদসহ দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ১০ শতক জমি এক লাখ টাকায় কিনেছেন। এরপর ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। আরেকটি ঘরের মালিক কুতুবদিয়ার আকবরবলীপাড়ার জেলে শফিউল আলম (৩৪) বলেন, তিনিও মোস্তাকসহ দুই ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতি শতক জমি ১০ হাজার টাকা করে কিনে তিন মাস আগে ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এই সৈকতের বালিয়াড়ি রক্ষার জন্য সরকার বিপুল অর্থ খরচ করে ঝাউবাগান সৃজন করলেও এখন দুর্বৃত্তরা তা উজাড় করছে। ঝাউবাগান ও বালিয়াড়ি দখল করে ঘরবাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। এতে পরিবেশ-প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সমিতিপাড়ায় প্লট কিনে ঘর তৈরি করা কয়েকজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বন বিভাগের কর্মী মোস্তাক আহমদসহ দুই ব্যক্তি সৈকতের বিশাল এলাকা দখল করে নারকেলগাছের চারা রোপণ করেছেন। তাঁরা প্লট তৈরি করে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাক আহমদ বলেন,
‘সৈকতের বালিয়াড়ি খালি পড়ে আছে। তাই ব্যক্তি-উদ্যোগে সংগ্রহ করা ১৫ লাখ টাকা দিয়ে সাড়ে তিন হাজার নারকেলগাছের চারা রোপণ করেছি। বাগানটি দেখাশোনার জন্য ১৫ জন শ্রমিকও নিয়োগ দিয়েছি। এর দেখাদেখি অনেকে সৈকত দখল করে ঘরবাড়ি তৈরি করছেন। কেউ কেউ ঝাউবাগান উজাড় করছেন। এর সঙ্গে আমি মোটেও জড়িত নই।’ মোস্তাক আহমদ বলেন, নারকেলবাগান সৃজনের জন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়নি। নারকেলবাগান সৃজনের সঙ্গে কস্তুরাঘাট বিট কর্মকর্তাসহ আরও একজন বন কর্মকর্তার হাত আছে। জানতে চাইলে কস্তুরাঘাট বন বিট কর্মকর্তা সেলিম মিয়া বলেন, ‘আমি সবেমাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। সৈকত দখল করে নারকেল চারা রোপণ ও ঘরবাড়ি তৈরির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’ তিনি আরও বলেন, মোস্তাক আহমদ বন বিভাগের দিনমজুর। সৈকতে সৃজন করা ঝাউগাছ দেখভালের জন্য তাঁকে ‘ওয়াচার’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁর অপকর্মের দায়ভার বন বিভাগ নেবে না। কক্সবাজার (দক্ষিণ) বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আলী কবির বলেন, ‘সৈকতে সৃজিত ঝাউবাগান দেখশোনার দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু সৈকতের বালিয়াড়ির মালিক জেলা প্রশাসক। সৈকত দখলের বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও সদরের ইউএনওর সঙ্গে আলোচনা হবে।’ এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আনোয়ারুল নাসের বলেন, নারকেলগাছের চারা রোপণ অথবা ঘরবাড়ি তৈরির জন্য সৈকতের বালিয়াড়ি কাউকে ইজারা বা অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সৈকত দখলমুক্ত করা হবে।
No comments