সুযোগ পেয়েও মেডিকেলে পড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে
তাঁরা দুজনেই মেধাবী ছাত্র। তবে গরিব ঘরের। খেয়ে না-খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে এসেছেন। দুজনেই এবার মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু টাকার অভাবে তাঁরা মেডিকেলে পড়তে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার এক সবজিবিক্রেতার ছেলে আবদুল আলিম রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। আর জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার এক ফেরিওয়ালার ছেলে রাসেল মাহমুদ ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন বরিশাল মেডিকেল কলেজে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা দারুস সুন্নাত ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল আলিম এবার আলিম পরীক্ষায় তাঁর মাদ্রাসা থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। দাখিল পরীক্ষায়ও তিনি জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। গত ৩০ বছরে এ মাদ্রাসা থেকে পাস করে এই প্রথম কোনো ছাত্র মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এ কারণে আলিমকে নিয়ে তাঁদের গর্বের সীমা নেই।
একই মাদ্রাসার শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি আলিমের ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আবদুল আলিম বলেন, ‘ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে মা-বাবার মুখে হাসি ফোটানোর পাশাপাশি আমি মানুষের সেবা করতে চাই।’ আলিমের বাবা হজরত আলী বলেন, তাঁর ২২ শতক আবাদি জমি রয়েছে। তাতে চাষাবাদের পাশাপাশি সবজি বিক্রি করে তিনি সংসার চালান। তাঁর আরেক ছেলে দশম শ্রেণি ও এক মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তারাও মেধাবী। আলিম মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তিনি গর্বিত। তবে তাঁর পড়াশোনার খরচ নির্বাহ করা নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। রাসেল মাহমুদের বাড়ি জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার দড়িপাড়া এলাকায়। তাঁর বাবা মোতালেব মিয়া ফেরি করে কাপড় বিক্রি করেন। রাসেল বলেন, তিনি বকশীগঞ্জ উপজেলার আলিরপাড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান। এবার গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। চলতি মাসের ৩১ তারিখের মধ্যে বরিশাল মেডিকেলে ভর্তি হতে হবে। এ জন্য ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা লাগবে। কিন্তু এত টাকা তাঁর হতদরিদ্র মা-বাবার পক্ষে দেওয়া অসম্ভব। রাসেল মাহমুদের বাবা মোতালেব মিয়া বলেন, তাঁর জমি বলতে ভিটেটুকুই আছে। কাপড় বিক্রি করে কোনো রকম সংসার চলে। এর মধ্যে রাসেলের মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন একেবারেই অসম্ভব। ছেলের মুখের দিকে তাকালে তাঁর চোখে পানি চলে আসে। কেমন বাবা তিনি যে ছেলের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে পারবেন না। তিনি নানাজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে সাত হাজার টাকা জোগাড় করেছেন। কিন্তু এ টাকায় তো রাসেল ভর্তিই হতে পারবে না, পড়াশোনা চালানো তো পরের কথা।
No comments